অনুচ্ছেদঃ ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা |
ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা
গত শীতের ছুটিতে আমি এবং আমার কিছু বন্ধু চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর একটি ট্রেন ভ্রমণ করেছিলাম। সেদিনের সেই ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা আজও আমার মনে জীবন্ত হয়ে আছে। বন্ধুর ভাইয়ের বিয়েতে যোগ দিতে বন্ধুরা মিলে চাঁদপুর গিয়েছিলাম। এটি ছিল আমার প্রথম রেল ভ্রমন। তাই আমি অনেক আন্দোলিত ছিলাম। নির্ধারিত দিনে সকাল সাতটায় আমরা নিউমার্কেট রেলস্টেশনে পৌঁছলাম। রেল স্টেশনের টিকেট কাউন্টারে প্রচুর লোকের সমাগম। আমার এক বন্ধু টিকেট কাটার জন্য লাইনে দাঁড়ালো। এরপর আমরা প্রয়োজনীয় খবার যেমনঃ পানি, কলা, চিপস কিনে ট্রেনে উঠলাম। ভাগ্যক্রমে জানালার পাশে আমার আসন পেলাম। কয়েক মিনিট পর গার্ড বাঁশি বাজাল এবং ট্রেনটি চলতে শুরু করল। তখন সময় সকাল ৭:৩০ মিনিট। সে এক আনন্দের অনুভূতি। ট্রেনের শব্দ শুনে হঠাৎ মনে পরে গেলো শামসুর রাহমানের ট্রেন কবিতাটি:
ঝক ঝক ঝক ট্রেন চলেছেরাত দুপুরে অই।ট্রেন চলেছে, ট্রেন চলেছেট্রেনের বাড়ি কই ?
ট্রেন থেকে তোলা সবুজ মাঠের ছবি। |
ট্রেন চলছে তো চলছে সেই সাথে আমার মন ছুটছে দূর তেপান্তরে ঘন সবুজ মাঠে। তারপর ট্রেনটি সবুজ মাঠের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। সেদিনই প্রথম বাংলা মায়ের নির্মল রুপ অনেক কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করলাম। চারদিক সবুজ আর সবুজ। যেন শিল্পীর নিপুন হাতের তুলিতে আঁকা কোন ছবি। সবুজ ঘাসের ওপর শিশির বিন্দুগুলো মুক্তার মতো চকচক করছিল। গাছপালা এবং বাড়িঘরগুলোকে মনে হলো যেন পেছনের দিকে দৌড়াচ্ছে। আমরা কৃষকদের মাঠে কাজ করতে দেখলাম। গবাদি পশুগুলো এখানে সেখানে চরছিল। ট্রেনটি ফেনী স্টেশন ছাড়ার পর আমি চট্টগ্রামের পাহাড়গুলো দেখতে পেলাম। ডানদিকে আমি বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশি দেখতে পেলাম। দেখতে দেখতে আমরা লাকসাম জংশনে এসে পৌঁছালাম। জংশনটি অনেক বড়ো এবং প্রচুর লোকের সমাগম ছিল। অনেকক্ষন যাত্রা বিরতির পর ট্রেন আবার চলতে শুরু করলো। অবশেষে কুমিল্লা কালীবাড়ি রেল স্টেশনে পৌঁছালাম। এক অদ্ভুত অনুভূতি নিয়ে আমি এবং বন্ধুরা ট্রেন থেকে নামলাম। আমার বন্ধু আমাদেরকে সাদরে অভ্যর্থনা জানাল। এটি ছিল আমার জীবনে সবচেয়ে আনন্দদায়ক ট্রেন ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। ভ্রমণটির স্মৃতি আমার মনে চিরসজীব হয়ে থাকবে।
হযবরল উইকিঃ
- শামসুর রাহমান (Shamsur Rahman) – সূত্র: উইকিপিডিয়া