বাংলা রচনা

রচনা: তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ

4.8/5 - (801 votes)
তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ
অথবা, বাংলাদাশে তথ্যপ্রযুক্তি
অথবা, জাতীয় উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তি
অথবা, তথ্যপ্রযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ

[সংকেত : সূচনা, অতীত পটভূমি, তথ্যপ্রযুক্তির ধরন ও বৈশিষ্ট্য, রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক, তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে করণীয়, গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রসার, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নয়ন, উপসংহার। ]

সূচনা

বর্তমান যুগ তথ্যপ্রযুক্তির যুগ। এ যুগে বিশ্বের প্রতিটি দেশ তথ্যপ্রযুক্তির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশ আজ তাদের সকল কর্মকাণ্ড তথ্যপ্রযুক্তি দ্বারা পরিচালনা করে জীবনযাত্রাকে সহজ ও উপভােগ্য করে তুলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। যদিও বাংলাদেশে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে দেরিতে তারপরও আমাদের উচিত যত দ্রুত সম্ভব আমাদের দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করে সকল ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়ােগ ঘটানাে। 

অতীত পটভূমি

বাংলাদেশ তার ও টেলিযােগাযােগ বাের্ড সূচনালগ্ন থেকেই জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক টেলিযােগাযােগ ক্ষেত্রে সেবা প্রদান করে আসছে। যোগাযোগ উপগ্রহ প্রযুক্তি চালু হওয়ার পূর্বে HF প্রযুক্তি ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক টেলিফোন সেবা প্রদান করা হতাে, যার ক্ষমতা ছিল অত্যন্ত সীমিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৪ জুন ১৯৭৫ সালে রাঙ্গামাটি জেলার কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ায় দেশের প্রথম ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র চালু হয়। অতঃপর পর্যায়ক্রমে তালিবাবাদ, মহাখালী এবং সিলেটে আরও ৩টি উপগ্রহ কেন্দ্র চালু করা হয়। দেশে বেসরকারি খাতে ইন্টারনেট এবং আইসিটি বিষয়ক কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৯০-এর দশকে ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্রের পাশাপাশি দেশে ভি-স্যাটের ব্যবহার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে ভি-স্যাটের ব্যবহার উন্মুক্ত করা হয়। ইতােমধ্যে বাংলাদেশ সরকারের টেলিযােগাযােগ নীতিমালা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং আইসিটি টাস্কফোর্সের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশকে গ্লোবাল ইনফরমেশন সুপার হাইওয়ের সাথে সংযােগের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিযােগাযােগ নীতিমালা অনুযায়ী আন্তর্জাতিক নেটওয়ের সাথে সংযােগের জন্য সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক টেলিযােগাযােগ ব্যবস্থা শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য এবং পশ্চিম ইউরােপের ১৪টি দেশের মােট ১৬টি কোম্পানির সমন্বয়ে গঠিত কনসাের্টিয়ামে (SEA-ME-WE-4) যােগ দিতে ২০০২ সালে একটি সমঝােতা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। 

তথ্যপ্রযুক্তির ধরন ও বৈশিষ্ট্য

তথ্যপ্রযুক্তির বড় বৈশিষ্ট্য হচ্ছে যথেষ্ট শক্তিশালী প্রযুক্তি হওয়ায় এটাকে সাধারণ মানুষের ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসা সম্ভব। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ সহজেই দূরত্বকে জয় করতে পারছে। তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীর একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে শব্দ, ছবি ও লেখা আদানপ্রদান করা সম্ভব হচ্ছে। এটা এমন এক প্রযুক্তি, যা পৃথিবীর যেকোনাে দেশের মানুষ আয়ত্ত করতে পারে এবং এক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এর দ্বারা সৃষ্ট নতুন কর্মক্ষেত্রগুলাে অধিকাংশই গরিব দেশগুলাের জন্য বিশেষভাবে উপযােগী। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করার জন্য কাউকে শহরের দিকে ছুটতে হয় না; বরং যে যেখানে আছে, সেখান থেকেই নতুন ধরনের উপার্জনশীল কাজে শরিক হতে পারে। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে সকল শ্রেণির মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে কোনাে বাধা নেই। 

রপ্তানি বাণিজ্যে সম্ভাবনা সৃষ্টি 

রপ্তানি বাণিজ্যের ক্রমাগত সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি একটি বড় ধরনের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে এর সত্যতা সহজেই প্রমাণিত হয়। এ কাজে বহু দূর এগিয়ে গেছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। বর্তমানে ভারতের মােট রপ্তানি বাণিজ্যের একটি বড় অংশ আসে সফটওয়ার শিল্প থেকে। এ শিল্প খুব দ্রুত পােশাক শিল্প থেকে অর্জিত আয়কে ছাড়িয়ে যাবে একথা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। 

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক

তথ্যপ্রযুক্তির ফলে সফটওয়্যার রপ্তানি ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের আরও অনেক পথ উন্মুক্ত হবে। তথ্যপ্রযুক্তির মূল চালিকাশক্তি হচ্ছে স্বল্প পারিশ্রমিকসম্পন্ন প্রশিক্ষিত জনবল। এ ব্যবস্থায় যত বেশি স্বল্প পারিশ্রমিকসম্পন্ন প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টি করা যাবে, তত বেশি কাজ বিদেশ থেকে আনা সম্ভব হবে।
জনবল সৃষ্টি করা কোনাে সমস্যা নয়। চাহিদা সৃষ্টি হলে সেই সুযােগ গ্রহণ করার উপযুক্ততা সৃষ্টি করতে মােটেও বিলম্ব হবে না। পৃথিবীব্যাপী উন্নয়নশীল দেশগুলােতে যে পরিমাণ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবসা হচ্ছে, তার ৫ শতাংশ ব্যবসাও যদি আমাদের দেশে করা সম্ভব হয় তাহলে আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের অভাব হবে না।

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারে করণীয়

তথ্যপ্রযুক্তির প্রসারের জন্য টেলিফোন ও ইন্টারনেট কাঠামাে শক্তিশালী করতে হবে। সবার জন্য তথ্যপ্রযুক্তি নিশ্চিত করতে হলে টেলিফোন সার্ভিসকে বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিটিটিবিকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত এবং ফিক্সড টেলিফোনের খাতকে বেসরকারি খাতের বিনিয়ােগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। দেশের অর্থনীতিতে গতিশীলতা আনতে টেলিফোনই হতে পারে সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম। বেসরকারি উদ্যোক্তারা এক্ষেত্রে এগিয়ে আসলে তাদেরকে পৃষ্ঠপােষকতা প্রদান করতে হবে। তথ্যপ্রযুক্তির অবাধ প্রবাহকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে আমাদের দেশে অবিলম্বে টেলিফোনের আন্তর্জাতিক সংযােগ ব্যবস্থা (ইন্টারন্যাশনাল গেইটওয়ে)-কে উন্মুক্ত করে দিতে হবে, যাতে দেশের যেকোনাে ব্যবসায়ী এ ব্যবসাকে আইনসম্মতভাবে পরিচালনা করতে পারে। এসব পদক্ষেপ গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করতে পারলে আন্তর্জাতিক যােগাযােগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ব্যবসায় যথেষ্ট গতি সঞ্চার হবে এবং দেশের জন্য অসামান্য সুফল বয়ে আনবে। 

গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেটের প্রসার

টেলিফোন ও ইন্টারনেট যত সস্তা হবে, এগুলাে তত বেশি সাধারণ মানুষের দোরগােড়ায় তথা প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে যাবে। মানুষ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সুযােগ পাবে। সুতরাং সরকারের লক্ষ্য হওয়া উচিত তথ্যপ্রযুক্তি মানুষের দোরগােড়ায় পৌছে দেওয়ার জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা। তথ্যপ্রযুক্তিগত অবকাঠামাে স্থাপন ও পরিচালনা থেকে কর সংগ্রহ করে রাজস্ব বৃদ্ধি সরকারের লক্ষ্য হওয়া মােটেই উচিত হবে না। সরকারের লক্ষ্য হতে হবে তথ্যপ্রযুক্তির দ্রুত সম্প্রসারণকে উৎসাহ প্রদান এবং অধিকতর প্রতিযােগিতা সৃষ্টি। 

শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রের উন্নয়ন

তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াও দেশের অভ্যন্তরে জনসাধারণের জন্য বহু সুযােগ সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য কাউকে স্কুল-কলেজ পাশ করার আবশ্যকতা নেই বলে তাৎক্ষণিকভাবে এ প্রযুক্তিতে সকলকেই কাজে লাগানাে সম্ভব। যে অশিক্ষিত লােকটি জীবনে কোনােদিন তথ্যপ্রযুক্তির কথা শােনেনি, সেও নির্ভয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে। তথ্যপ্রযুক্তি স্বাস্থ্যসেবা, জ্ঞান-বিজ্ঞান সকলের কাছে পৌছে দিতে সক্ষম। এর জন্য প্রয়ােজন উদ্যোগ ও আন্তরিকতা।
সাবমেরিন ক্যাবল-এর অভাব, টেলিফোনের অপ্রতুলতা, ইন্টানেটের সীমাবদ্ধতা এবং ব্যান্ডউইথ-এর অপর্যাপ্ততা অতিক্রম করতে পারলে মানুষের জীবনযাপনের জন্য প্রয়ােজনীয় সকল ধরনের সেবা নিশ্চিত করা যাবে। রেলওয়ে ফাইবার অপটিক ব্যবহারের ওপর যেসব নিষেধাজ্ঞা আরােপ করা হয়েছিল, বর্তমান সরকার সেসব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদকে সকল মানুষের ব্যবহারের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির জন্য এটি একটি বিরাট সুযােগ। এর ফলে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী দেশের যেকোনাে স্থানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরস্পর মুখখামুখি মিটিং করতে পারবে নিজস্ব দপ্তরে বসেই। ঢাকা শহরের চিকিৎসক অন্য শহরে অবস্থানরত রােগীর চিকিৎসা করতে পারবে। ঢাকার ব্যবসায়ীরা স্বীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বসেই দেশের সর্বত্র ছড়ানাে-ছিটানাে অসংখ্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে মুখােমুখি আলাপ করে ব্যবসার খোঁজখবর নিতে পারবে, কিংবা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাদের প্রয়ােজনীয় তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। 

উপসংহার

তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে সারা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে এখানে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। দেশের প্রতিটি জেলা ও থানা পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লাগাতে হবে। তাহলেই তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ তাদের জীবনমান উন্নত করে দেশের উন্নয়নে সূচনা রাখতে পারবে। তাই এ ব্যাপারে সরকারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সবিশেষ সূচনা রাখা অত্যাবশ্যক।
#রচনা, #তথ্যপ্রযুক্তি ও বাংলাদেশ #SSC #HSC #বাংলা ২য় #বাংলা রচনা #বাংলা প্রবন্ধ #Rochona #Totthoprojukti o Bangladesh

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

One Comment

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button