সূরা আল কাওসার পবিত্র কুরআনের ১০৮ তম সূরা। সূরাটির আয়াত সংখ্যা ৩। যা পবিত্র কুরআনের সবচেয়ে ছোট সূরা। সূরা আল কাওসার মক্কায় অবতীর্ণ হয় তাই সূরাটি মাক্কী সূরার শ্রেণীভুক্ত। সূরাটির অর্থ হচ্ছে প্রভূত কল্যাণ। এ সূরাকে সূরা নাহারও বলা হয়। সূরাটি মুসলিম উম্মাহর জন্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ কারণ, সূরাটিতে জান্নাতের হাউযে কাউসার এর কথা বলা হয়েছে যা আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (স) কে দান করা হয়েছে।
শানে নুযূল
মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হোসাইন থেকে বর্ণিত, তৎকালীন আরবে যে ব্যক্তির পুত্রসন্তান মারা যায় তাকে “আব্তার্” বা নির্বংশ বলে। হযরত মুহাম্মদ (স) এর পুত্র কাসেম অথবা ইবরাহীম শৈশবে মারা যাওয়ার পর কাফেররা নবীজিকে নির্বংশ বলে ঠাট্টা বিদ্রুপ করতে লাগলো। ওদের মধ্যে ‘আস ইবনে ওয়ায়েল’র নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার সামনে রাসুলুল্লাহ্ (সা.) এর কোনও আলোচনা হলে সে বলত, আরে তার কথা বাদ দাও, সে তো কোনও চিন্তারই বিষয় নয়। কারণ, সে নির্বংশ। তার মৃত্যু হয়ে গেলে তার নাম উচ্চারণ করারও কেউ থাকবে না। এর পরিপ্রেক্ষিতে সূরা কাউসার অবতীর্ণ হয় ইবনে। (ইবনে কাসির, মাযহারি)।
আয়াতসমূহ
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ
(আরবি উচ্চারণ)-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
(বাংলা অনুবাদ)-
পরম করুণাময় অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
(১) إِنَّا أَعْطَيْنَاكَ الْكَوْثَرَ
(বাংলা অনুবাদ)- নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার দান করেছি।
(আরবি উচ্চারণ)- ইন্না আ’তাইনা-কাল্ কাওছার
(২) فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ
(বাংলা অনুবাদ)- অতএব আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।
(আরবি উচ্চারণ)ফাসাল্লি লিরাব্বিকা ওয়ান্’হা’র ৷
(৩)إِنَّ شَانِئَكَ هُوَ الْأَبْتَرُ
(বাংলা অনুবাদ)- যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।
(আরবি উচ্চারণ)ইন্না শানিয়াকা হুয়া’আলআবতার ৷
ফজিলত
সূরা কাউসার হচ্ছে দোজাহানের অফুরন্ত কল্যাণের সুখবর! এই সূরা হতে জানা যায় হাউজে কাউসার সম্পর্কে, যা কিয়ামতের মাঠে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে প্রদান করা হবে। যে মুহূর্তে সূরা আল কাউসার নাজিল হয় সে মুহূর্তে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামের চেহরা মোবারকে হাসির নূরানি ঝটা দেখতে পান সাহাবায়ে কেরামগণ।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘কাউসার’ সেই অজস্র কল্যাণ যা আল্লাহ তায়ালা রাসূল (সা.)-কে দান করেছেন। কাউসার জান্নাতের একটি প্রস্রবণের নাম। সহিহ হাদিসে বলা হয়েছে যে, ‘এটা একটি নহর যা বেহেশতে নবী (সা.)-কে দান করা হবে।’
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, একদিন মসজিদে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের সামনে উপস্থিত হলেন। হঠাৎ মহানবীর (সা.) মাঝে তন্দ্রা অথবা একধরনের অচেতনতার ভাব দৃশ্যমান হলো। এরপর নবীজি (সা.) হাসিমুখে মস্তক উত্তোলন করলেন। আমরা জিজ্ঞেস করলাম, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনার হাসির কারণ কী?’ তিনি বললেন, ‘এই মুহূর্তে আমার নিকট একটি সূরা অবতীর্ণ হয়েছে’। অতঃপর তিনি বিসমিল্লাহসহ সূরা কাউসার পাঠ করলেন এবং বললেন, ‘তোমরা জান, কাউসার কী?’ আমরা বললাম, ‘আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসূল ভালো জানেন’। তিনি বললেন, ‘এটা জান্নাতের একটি নহর। আমার পালনকর্তা আমাকে এটা দেবেন বলে ওয়াদা করেছেন। এতে অজস্র কল্যাণ আছে এবং এই হাউজে কেয়ামতের দিন আমার উম্মত পানি পান করতে যাবে। এর পানি পান করার পাত্র সংখ্যা আকাশের তারকাসম হবে। তখন কতক লোককে ফেরেশতাগণ হাউজ থেকে হটিয়ে দেবে। আমি বলবো, পরওয়ারদেগার, সে তো আমার উম্মত। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, আপনি জানেন না, আপনার পরে সে কী নতুন মত ও পথ অবলম্বন করেছিল?’ (হাদিসে সহিহ বোখারি, মুসলিম শরিফ, আবু দাউদ, নাসায়ী)।
আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। সূরা আল কাউসারে আল্লাহর তাওহীদ তথা একত্ববাদের বাণী এসেছে। আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে অন্য কোনো কিছুর শরীক না করার কথা পবিত্র কোরআনে বারবার এসেছে। সূরা কাউসারেও এ সম্পর্কিত নির্দেশ এসেছে। সূরা কাউসারের দ্বিতীয় আয়াতে এই নির্দেশ এবং একিসঙ্গে আল্লাহা তায়ালার উদ্দ্যেশ্যে কোরবানি দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তৃতীয় আয়াত যেসব কাফের নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লামকে নির্বংশ বলে দোষারোপ করত তাদের সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। অধিকাংশ রেওয়ায়েত মতে এই আয়াতে,‘আস ইবনে ওয়ায়েল এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত মতে ওকবা এবং কোনো কোনো রেওয়ায়েত মতে, কা’ব ইবনে আশরাফকে বোঝানো হয়েছে।
শেষকথা
প্রিয় পাঠক, সূরাটি ছোট হলেও এর গুরুত্ব অনেক। আসুন আমরা এই সূরাটি নিয়মিত পাঠ করি। মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআন বুঝে পড়ার ও আমল করার তৈফিক দান করুন।
Very good & its awesome
thanks a lot