ইসলাম ও জীবনকুরআন

সূরা আল-ফালাক বাংলা উচ্চারণ অর্থ, নামকরণ ও ফজিলত | Surah Al-Falaq

Daraz cupon Code

সূরা আল-ফালাক পবিত্র কুরআনের ১১৩ তম সূরা। সূরাটির আয়াত  সংখ্যা ৫। সূরাটি মদীনায় অবতীর্ণ হয় তাই এটি মাদানী সূরার শ্রেণীভুক্ত। সূরাটি মূলত প্রার্থনামুলক সূরা। এই সূরার মাধ্যমে শয়তানের অনিষ্ট থেকে মহান আল্লাহ তা’আলার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা হয়। 

সূরা ফালাক নামকর

আল-ফালাক শব্দের অর্থ হল “নিশিভোর” সূরা আন-নাস ও সূরা আল-ফালাক সূরা দুটি ভিন্ন হলেও এদের সাথে গভীর সম্পর্ক রয়েছে।  সূরা দুটির বিষয়বস্তু একই এবং একই ঘটনার প্রেক্ষিতে নাযিল করা হয়েছে। আসুন ঘটনাটি জেনে নেওয়া যাক।

শানে নুযূল

মুসনাদে আহমদে বর্ণিত আছে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) উপর এক ইহু্দী জাদু করেছিল। এর ফলে তিনি অনেক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর আল্লাহর হুকুমে  ফেরেশতা জিব্রাইল নবীজির কাছে এসে সংবাদ দিলেন জনৈক ইহু্দী উনার উপর জাদু করেছে এবং যে জিনিসের মাধ্যমে জাদু করেছে তা অমুক কূপে আছে। পরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) লোক পাঠিয়ে কূপ থেকে তা উদ্ধার করেন। তাতে কয়েকটি গিট ছিল। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) সূরা আন-নাস ও সূরা আল-ফালাক পরে ফুক দেওয়ার সাথে সাথেই গিটগুলো খুলে গেলো এবং নবীজি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলেন।

হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত – একবার রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) এর উপর জাদু করা হয় যার প্রভাবে তিনি দিশেহারা হয়ে যেতেন। যে কাজটি তিনি করেননি তাও করেছেন বলে অনুভব করতেন। এরপর আয়েশা (রাঃ) কে তিনি বললেন আল্লাহ তা’আলা আমাকে বলেছেন আমার রোগটা কি।  আমি সপ্নে দেখলেন দুজন লোক তার কাছে আসলেন এবং একজন শিয়রের কাছে ও অন্যজন পায়ের কাছে বসে গেলো। শিয়রের কাছে থাকা ব্যক্তিটি অন্য ব্যক্তিটিকে প্রশ্ন করলো উনার রোগটা কি? অন্য ব্যক্তিটি বললেন উনি জাদুগ্রস্থ, উনার উপর জাদু করা হয়েছে। প্রথম ব্যক্তি জানতে চাইলেন কে জাদু করেছে? উত্তরে বললেন লবীদ ইবনে আ’সাম (ইহুদীদের মিত্র মুনাফিক) জাদু করেছে। আবার প্রশ্ন করা হল কি দিয়ে জাদু করা হয়েছে? উত্তরে বলা হল একটি চিরুনীতে। আবার প্রশ্ন আসলো চিরুনীটি কোথায়? উত্তরে বলা হল খেজুর ফলের আবরণীতে ‘বির যরোয়ান’ কূপে একটি পাথরের নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) সেই কূপের কাছে গেলেন যা তিনি স্বপ্নে দেখেছিলেন। পরে  চিরুনীটি সেখান থেকে বের করে  আনলেন।

সূরা ফালাক বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
(1
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ
ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক।
বলুন, আমি আশ্রয় গ্রহণ করছি প্রভাতের পালনকর্তার,
(2
مِن شَرِّ مَا خَلَقَ
মিন শাররি মাখালাক্ব।
তিনি যা সৃষ্টি করেছেন, তার অনিষ্ট থেকে,
(3
وَمِن شَرِّ غَاسِقٍ إِذَا وَقَبَ
ওয়া মিন শাররি গাসিক্বিন ইযা অক্বাব।
অন্ধকার রাত্রির অনিষ্ট থেকে, যখন তা সমাগত হয়,
(4
وَمِن شَرِّ النَّفَّاثَاتِ فِي الْعُقَدِ
ওয়া মিন শাররিন নাফ্‌ফাসাতি ফিল্‌ উকাদ।
গ্রন্থিতে ফুঁৎকার দিয়ে জাদুকারিনীদের অনিষ্ট থেকে
(5
وَمِن شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
ওয়া মিন শাররি হাসিদিন ইযা হাসাদ।
এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে।

[box type=”note” align=”” class=”” width=””]আরও পড়ুনঃ সূরা নাস (Al-Nas) বাংলা উচ্চারণ অর্থ এবং ফযিলত[/box]

সূরা ফালাক অডিও

ফজিলত

➤ আবু দাউদ, তিরমিযী ও নাসায়ীর এক দীর্ঘ রেওয়ায়েতে রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

যে ব্যক্তি সকাল-বিকাল সূরা এখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করে তা তাকে বালা-মিসীবত থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যে যথেষ্ট হয়। – (ইবনে-কাসীর)

➤ সহীহ মুসলিমে ওকবা ইবনে আমের (রাঃ)- এর বর্ণিত হাদীসে রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ

তোমরা লক্ষ্য করেছ কি, অদ্য রাত্রিতে আল্লাহ তা’আলা আমার প্রতি এমন আয়াত নাযিল করেছেন, যার সমতুল্য আয়াত দেখা যায় না। অর্থা ক্বুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক এবং ক্বুল আউযু বিরাব্বিল নাস আয়াতসমূহ। অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, তওরাত, ইঞ্জীল, যাবুর এবং কোরআনেও অনুরূপ অন্য কোন সূরা নেই।

➤ এক সফরে রসূলুল্লাহ (সাঃ) ওকবা ইবনে আমেন (রাঃ)-কে সূরা ফালাক এবং সূরা নাস পাঠ করালেন, অত:পর মাগরিবের নামাযে এ সূরাদ্বয়ই তেলাওয়াত করে বললেনঃ এই সূরাদ্বয় নিদ্রা যাওয়ার সময় এবং নিদ্রা শেষে বিছানা থেকে উঠার সময়ও পাঠ করো।

➤ অন্য হাদীসে তিনি প্রত্যেক নামাযের পর সূরাদ্বয় পাঠ করার আদেশ করেছেন। – (আবু দাউদ, নাসায়ী)

➤ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হাবীব (রাঃ) বর্ণনা করেন, এক রাত্রিতে বৃষ্টি ও ভীষণ অন্ধকার ছিল। আমরা রসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে খুঁজতে বের হলাম। যখন তাকে পেলাম, তখন প্রথমেই তিনি বললেনঃ বল। আমি আরয করলাম, কি বলব? তিনি বললেনঃ সূরা এখলাস ও কূল আউযু সূরাদ্বয়। সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো তিন বার পাঠ করলে তুমি প্রত্যেক কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। – (মাযহারী)

সুবহানাল্লাহ, আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন সূরা আল-নাস এ অসংখ্য নেয়ামত এবং ফজিলত দিয়েছেন। আসুন সবাই ছোট এই সূরাকে গুরুত্বের সাথে আমল করি এবং শেয়ার করে অন্য ভাই বোনদেরকে তা আমল করার সুযোগ করে দেই।

সম্পর্কিত টপিক

১ টি মন্তব্য

  1. আরবির বাংলা সংকলন করার পরেও আরবি এর কঠিন শব্দের পাশে এর বাংলা অর্থ লিখে দিবেন। কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক (ঊষা)
    বাংলা অর্থ- বলুন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি ঊষার স্রষ্টার

মন্তব্য করুন

Back to top button