শৃঙ্খলাবােধ প্রবন্ধ রচনা – বাংলা ২ য় পত্র।
শৃঙ্খলাবােধ রচনা সংকেত : সূচনা, প্রকৃতির বুকে শৃঙ্খলা, ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে শৃঙ্খলা, ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা, শৃঙ্খলাবােধ অর্জনের উপায়, শৃঙ্খলার তাৎপর্য, শৃঙ্খলাবােধ ও যান্ত্রিকতা, উপসংহার।
সূচনা
শৃঙ্খলা হলাে মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শৃঙ্খলার নানা বন্ধন তৈরি করেই মানুষ অর্জন করেছে শ্রেষ্ঠত্ব, নির্মাণ করেছে সভ্যতা। এভাবেই ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে শৃঙ্খলার পাঠ নিয়েছে মানুষ। সে অভিজ্ঞতায় দেখেছে, তার প্রতিটি কর্মের জন্যে প্রয়ােজন হয় সুষম সমন্বয়ের। তার জন্য দরকার শৃঙ্খলা। সুশৃঙ্খল জাতিই নিশ্চিত করতে পারে জাতীয় জীবনে ব্যাপক উন্নতি ও অগ্রগতি।
প্রকৃতির বুকে শৃঙ্খলা
প্রকৃতির সর্বত্র শৃঙ্খলা বিরাজমান। সেখানে কোথাও শৃঙ্খলার অভাব নেই। তার সবকিছুই সুশৃঙ্খল ও সুনিয়ন্ত্রিত। প্রকৃতির সুশৃঙ্খল নিয়মে সকালে সূর্য ওঠে, সন্ধ্যায় অস্ত যায়। রাতের আকাশে উঁকি দেয় চাঁদ ও তারা। দিবারাত্রির এই পরিক্রমার পথ বেয়ে প্রকৃতিতে চলে ষড়ঋতুর আবর্তন। প্রকৃতির এই নিয়মের বন্ধনে বাঁধা মানুষের জীবন ও অস্তিত্ব। তাই প্রকৃতির মতােই মানুষের জীবনে অনিবার্যভাবে এসে পড়ে শৃঙ্খলার দায়।
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে শৃঙ্খলা
ব্যক্তিজীবনের বিকাশের সঙ্গে রয়েছে শৃঙ্খলার যােগ। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত মানুষের ব্যক্তিজীবন নানা নিয়ম-শৃঙ্খলার বন্ধনে বাঁধা। এই শৃঙ্খলা যেন মানুষের জীবনে চলার ছন্দ। সে ছন্দ ব্যক্তিজীবনকে শান্ত, সুস্থির, ফলপ্রসূ করার অবলম্বন। তা যেন সমাজ ও জাতীয় জীবনে অগ্রগতি নিশ্চিত করার চালিকাশক্তি। তাই মানুষের উন্নতি ও কল্যাণ নিশ্চিত করার স্বার্থেই অনেক নিয়ম গড়ে তুলেছে সমাজ। সেসব নিয়ম-শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে বিকশিত হয় মানুষের ব্যক্তিত্ব, মনুষ্যত্ব ও প্রতিভা।
ছাত্রজীবনে শৃঙ্খলা
শিক্ষিত মানুষের সুশৃঙ্খল জীবনের ভিত্তি রচিত হয় ছাত্রজীবনে। যতটুকু মেধা নিয়েই মানুষ জন্মাক না কেন, সুশৃঙ্খল জীবনছন্দের অভাবে প্রায় ক্ষেত্রেই সেসব মেধা ও শক্তির অপচয় হয়। সময়ানুবর্তিতা ও নিয়মানুবর্তিতার মেলবন্ধনে ছাত্রজীবনে অর্জিত হয় শৃঙ্খলার ছন্দ। এক্ষেত্রে ছন্দপতন ঘটলে জীবনে বিপর্যয় ঘটতে পারে। বস্তুত, জীবনের গঠনপর্বে শৃঙ্খলাবােধের বীজ আবাদ করলেই মানবজীবনে একসময় সােনা ফলে।
শৃঙ্খলাবােধ অর্জনের উপায়
শৃঙ্খলাবােধ আত্মস্থ করার জন্যে অবশ্যই কতিপয় রীতিনীতি অনুসরণ করা জরুরি। প্রথম প্রয়ােজন সামাজিক রীতিনীতি মেনে চলা। দ্বিতীয়ত প্রয়ােজন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। মর্যাদা অনুসারে মানুষের সঙ্গে শ্রদ্ধা, প্রীতি ও স্নেহের সম্পৰ্ক অনুসরণ হয়। প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ ধর্মমোতাবেক শিক্ষা অর্জন করা। প্রত্যেক পরিবারের অভিবাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের পড়াশুনার পাশাপাশি শৃঙ্খলাবােধের প্রতি গুরুতারোপ করা। কারণ ছাত্রজীবনই হলো শৃঙ্খলা অর্জনের প্রথম ধাপ।
শৃঙ্খলার তাৎপর্য
আমাদের অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দিতে পারে বিশৃঙ্খলা। আর তাই স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া ও মাদকমুক্ত জীবনযাপন অবশ্যই শৃঙ্খলাবােধের পর্যায়ভুক্ত। কায়িক পরিশ্রম কখনাে মানুষকে ছােট করে না বরং স্বাস্থ্যের জন্যে তা জরুরি। এভাবে শারীরিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশৃঙ্খলা পরিহার করে জীবনকে সুন্দর করার জন্যে শৃঙ্খলাবােধের বিকল্প নেই। সুশৃঙ্খল জীবনে প্রতিটি মুহূর্তের সদ্ব্যবহার হয়। মহান ব্যক্তিদের জীবনে তার দেখা যায়। চিন্তা ও কর্মে শৃঙ্খলা অনুসরণ করলে মানুষ মহৎ এবং কর্তব্যপরায়ণ ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে পারে। দায়িত্বের প্রতি সৎ ও একাগ্র থাকাটাও শৃঙ্খলার এক মৌলিক অংশ। নাগরিক জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য নিশ্চিত করার জন্যে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন অপরিহার্য।
শৃঙ্খলাবােধ ও যান্ত্রিকতা
শৃঙ্খলা কাম্য হলেও কখনাে কখনাে শৃঙ্খলার বাড়াবাড়ি জীবনের স্বাভাবিক গতিচ্ছন্দের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। নিয়ম ও নিয়ন্ত্রণের আতিশয্য যদি শৃঙ্খলা না হয়ে শৃঙ্খল হয়ে পড়ে তাহলে জীবনের স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত হতে বাধ্য। মানুষের জীবন তখন যন্ত্রের জীবনে পরিণত হয়। এ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। মনে রাখতে হবে, জীবন-অনুগামী শৃঙ্খলার স্বাভাবিক ধাউঠতেই জীবন স্বচ্ছন্দে বিকশিত সৌন্দর্য। অশিষ্ট আচরণ, অন্যায় জবরদস্তি, অবৈধ পেশিশক্তি মানুষের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্যকে তছনছ করে দেয়। এসব জাতীয় অগ্রগতির পথেও মারাত্মক বাধা হয়ে দাঁড়ায়। পক্ষান্তরে, জাতীয় উন্নতি আর সার্বিক অগ্রগতির ভিত্তি হচ্ছে ব্যক্তির শৃঙ্খলাবােধ। প্রতিটি ব্যক্তির সুশৃঙ্খল চিন্তা, কর্ম ও আচরণের শক্তিতেই জাতি বিশ্বসভায় মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার
শৃঙ্খলা মানুষকে সমৃদ্ধির দিকে ধাবিত করে। শৃঙ্খলাই হচ্ছে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনের সুষমাময় করতে শেখা সামাজিক শৃঙ্খলার প্রাথমিক পদক্ষেপ। শৃঙ্খলাবােধ অর্জনের ক্ষেত্রে উত্তম নৈতিকতা ও শিষ্টাচারের অনুশীলন দরকার। জ্ঞান ও চিন্তার প্রসারতাও শৃঙ্খলাবােধ অর্জনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।