বাংলা রচনা

রচনা: সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম এবং এর অপব্যবহার

4.1/5 - (31 votes)

ভূমিকা

প্রযুক্তির কল্যাণে পৃথিবী আজ আমাদের হাতের মুঠোয়। আর এটি অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের কল্যাণে । বর্তমানে ইন্টারনেট সুবিধা ব্যবহার করে আমরা পৃথিবীর যেকোনাে প্রান্তের সাথে মুহূর্তেই সংযােগ স্থাপন করতে পারি। আর তার সহজ উপায় হলাে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম। মূলত পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে সংযােগ সাধনের মানসেই সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের সূচনা হয়েছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আজ নানা ধরনের যােগাযােগ মাধ্যম ব্যবহার করে যােগাযােগের ক্ষেত্রে আমরা ভৌগােলিক দূরত্বের বাধাকে অতিক্রম করতে পারছি।

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম কী

যে মাধ্যমের সাহায্যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষ একে অন্যের সাথে দ্রুততম সময়ে যােগাযােগ স্থাপন করতে পারে তা-ই সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম। এই যােগাযােগ মাধ্যমগুলাে মূলত অনলাইন নির্ভর হয়ে থাকে। বর্তমানে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম হিসেবে ফেসবুক, টুইটার, লিঙ্কডইন প্রভৃতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিশ্বজুড়ে সকল বয়সের মানুষের মাঝেই সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছে। বর্তমান যুগে কর্মব্যস্ততার কারণে মানুষ আগের মতাে সামাজিক যােগাযােগের জন্য সেভাবে সময় দিতে পারছে না। আর তাই পরিচিত মহলে যােগাযােগের সহজ ও বিশ্বস্ত মাধ্যম হিসেবে তারা সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমকেই বেছে নিয়েছে। সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের মধ্যে বর্তমানে ফেসবুক সবচেয়ে জনপ্রিয়।

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের ইতিহাস

৭০-এর দশকে প্রথম ই-মেইল প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হয়। তবে গত শতাব্দীর শেষ দিকে ইন্টারনেট প্রযুক্তি একটা পরিণত পর্যায়ে এসে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলাের আবির্ভাব ঘটে। ১৯৯৪ সালে Geocities এর মাধ্যমে সর্বপ্রথম সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের যাত্রা শুরু। সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের ক্ষেত্রে ২০০৪ সালে ফেসবুক আবিষ্কার এক নতুন মাত্রা যােগ করে। খুব অল্প সময়ে এই মাধ্যমটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। এছাড়াও টুইটার, হােয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউবসহ আরও নানা ইলেকট্রনিক মাধ্যম যােগাযােগের মাধ্যম হিসেবে জনপ্রিয়তা লাভ করে।

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের বিস্তৃতি

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম মূলত মানুষের পারস্পরিক যােগাযােগের উদ্দেশ্যে তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা খুব সহজে একে অন্যের সাথে যুক্ত হতে পারি। বর্তমানে নানা ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমকে কেন্দ্র করে। বিভিন্ন সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের সহায়তায় এখন ঘরে বসেই মানুষ আয় করতে | পারছে। তাছাড়া এগুলাের সহায়তার আমরা স্বল্পখরচে ঘরে বসেই নানা ধরনের সেবা লাভ করতে পারছি। সামাজিক নানা অসংগতির বিরুদ্ধে ঐকমত্য তৈরিতে যােগাযােগ মাধ্যমগুলাে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। ইতিবাচক ও নেতিবাচক নানা মতাদর্শ এবং রাজনৈতিক আদর্শের বিস্তৃতি ঘটছে এসব মাধ্যমে।

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের অপব্যবহার

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম সামাজিক যােগাযােগের বিষয়টিকে সহজ করে তুললেও এর অপব্যবহার অনেক সময় ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে বিপর্যয় ডেকে আনছে। দেশের আর্থসামাজিক ক্ষেত্রেও তা নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। নিচে এ বিষয়ে আলােচনা করা হলােঃ-

  • ব্যক্তিগত নিরাপত্তাঃ এক্ষেত্রে সবার প্রথমে যে বিষয়টি সামনে আসে তা হলাে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। স্বভাবতই মানুষ এসব সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত নানা তথ্য, ছবি ও ঘটনার কথা শেয়ার করে থাকে। এ সকল ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধীরা নানা অপরাধ সংঘটিত করছে।
  • অনৈতিক ও বেআইনি ঘটনাঃ সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ব্যবহার করে বর্তমানে নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। অনেকক্ষেত্রে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে ব্যক্তিগত তথ্য আদায় করে পরে ব্ল্যাকমেইল ও চাঁদাবাজির মতাে ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। তাছাড়া অপরাধীরা পারস্পরিক যােগাযােগের জন্য ভুয়া একাউন্ট খুলে এসব মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে।
  • গুজবঃ সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে গুজব বা অপপ্রচারের বিষয়টি অনেকদিন আগে থেকে শুরু হলেও বর্তমান সময়ে এটি ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। একটি গােষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে নানা ধরনের গুজব এবং অপপ্রচার চালায়। পরিণতিতে সেসব স্থানে জীবননাশের মতাে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে, নষ্ট হয় সম্প্রীতির পরিবেশ।
  • রাজনৈতিক অপপ্রচারঃ সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের অপব্যহারের আরেকটি বড় উদাহরণ রাজনৈতিক অপপ্রচার। একটি অসাধু চক্র দেশে এ অস্থিরতা সৃষ্টির লক্ষ্যে সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিবিশেষের নামে অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। এছাড়াও বিভিন্ন নিষিদ্ধ দল ও গােষ্ঠী ভুয়া আইডি ব্যবহার করে তাদের মতাদর্শ ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রায়শই অপপ্রচার চালায়। এ সকল অপপ্রচার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

তরুণ সমাজের অনলাইন আসক্তি

অনলাইন আসক্তি আমাদের তরুণ  সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। পড়ালেখা ও সুস্থ বিনােদন ছেড়ে তারা স্মার্টফোনে অধিক সময় ব্যয় করছে। শুধু তাই নয়, অনেকক্ষেত্রে ফেসবুকের মতাে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমগুলােতে অধিক লাইক পাওয়ার আশায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ কাজে লিপ্ত হচ্ছে। ফলে মূল্যবান সময় যেমন নষ্ট হচ্ছে তেমনই তাদের প্রাত্যহিক জীবনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।

মানসিকতার পরিবর্তন এবং বিচ্ছিন্নতা

সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমে বুঁদ হয়ে থাকার কারণে মানুষের ভেতরে হতাশা ও বিষন্নতা বাড়ছে। ক্রমেই তারা অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে। অনলাইনে যােগাযােগের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়ায় সরাসরি যােগাযােগের ক্ষেত্রে তাদের পারস্পরিক ঘনিষ্ঠতা কমছে। অনেকক্ষেত্রে অন্যদের ছবিতে লাইক বা কমেন্ট বেশি হলে তারা ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ছে। তাছাড়া প্রেম সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে কেন্দ্র করে খুন, মারামারি এবং আত্মহত্যার প্রবনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এসবকিছুই হচ্ছে অধিক সময় সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম ব্যবহার করার কারণে।

উত্তরণের উপায়

মানুষের সঙ্গে মানুষের যােগাযােগের বিষয়টিকে সহজতর করে তােলার উদ্দেশ্যেই সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যমের সৃষ্টি। আর তাই এর ব্যবহার হতে হবে পরিমিত । অর্থাৎ প্রয়ােজনের তাগিদেই এর ব্যবহার হতে হবে। অতিরিক্ত ব্যবহার করা যাবে না। কেননা, এতে সময়ের অপচয় হয়, মানসিকতায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাছাড়া শিশুদের এসব মাধ্যম ব্যবহার করা থেকে দূরে রাখতে হবে। অন্যথা, তাদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হবে। ব্যক্তিগত তথ্যসহ যেকোনাে তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। কোনাে তথ্যে লাইক বা কমেন্ট করার ক্ষেত্রেও তথ্যটি যাচাই করে নিতে হবে। এতে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যেমন বজায় থাকবে তেমনই ভুল তথ্যের জন্য অন্যরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। সর্বোপরি অনলাইনভিত্তিক সম্পর্কের চেয়ে পরিবার-পরিজনকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এভাবে সচেতনতা অবলম্বন করে এবং যথাযথ উপায়ে পরিমিত ব্যবহারের মধ্য দিয়েই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব হবে।

উপসংহার

প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই যুগে সামাজিক যােগাযােগ মাধ্যম বিজ্ঞানের এক অভূতপূর্ব সংযোজন। এর কল্যাণে কর্মব্যস্ততার মাঝেও মানুষ একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে, খোঁজখবর নিতে পারছে। তবে সামাজিক যোগাযােগের এ সকল মাধ্যম যে কেবল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে তা-ই নয়, অনেকক্ষেত্রে এসব মাধ্যমের অপব্যবহার করে অসামাজিক ও বেআইনি কর্মকাণ্ড সংঘটিত হচ্ছে । সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই আমরা এর অপব্যবহার রােধ করতে পারি।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button