Uncategorized

শহীদ আসাদ দিবস কবে? শহীদ আসাদ কে ছিলেন?

1/5 - (1 vote)

 শহীদ আসাদ দিবসঃ শহীদ আসাদ দিবসটির সম্পর্কে অনেকেই জানেন। তবে ঠিক কি কারণে এই দিবসটি পালন করা হয়? আসাদ কে ছিলেন সে সম্পর্কে আমারা অনেকেই জানিনা। শহীদ আসাদ দিবসটির সাথে জড়িয়ে আছে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস।

শহীদ আসাদ কে ছিলেন?

আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তবে তিনি সকলের কাছে “শহীদ আসাদ” নামে বেশি পরিচিত। ১৯৪২ সালের ১০ জুন নরসিংদী জেলার শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামের হাতিরদিয়ায় এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পিতা আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বি.এ.বি.টি হাতিরদিয়া সাদত আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাষ্টার ছিলেন। 

শহীদ আসাদের পিতার পরিচয় অনেকেরই অজানা। তিনি একজন আলেম ছিলেন। বৃটিশ আমলে গুটি কতক ইংরেজী শিক্ষিত লোকের মধ্যে সে এলাকায় প্রথম মুসলমান গ্রাজুয়েট ছিলেন আসাদের পিতা। তিনি শিক্ষকতা পেশা বেছে নিয়েছিলেন কারণ, তিনি বুঝতে পেরেছিলেন অনগ্রসর ও ডুবন্ত মুসলমান জাতিকে আলোর পথে আনার জন্য তাঁদের কাছে শিক্ষার আলো ছড়াতে হবে। এলাকার লোকজন তাকে অনেক সম্মান ও ভালবাসতেন । ১৯৯৬ সালের ২৫ জানুয়ারী ৯৬ বছর বয়সে শহীদ আসাদের পিতা ইন্তেকাল করেন ।

পরিবার

শহীদ আসাদ তার পিতার আদর্শে বেড়ে উঠেছিলেন। তার পিতা অত্যন্ত ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। জানা যায়, আসাদের পিতা মিথ্যা বলতেন না, ছবি তুলতেন না, ধূমপান করতেন না, নামাজ কাযা বা দেরি করতেন না। পিতার গুণগুলো আসাদ আয়ত্ব করেছিলেন। শহীদ আসাদ নামাজী ও ধর্মপ্রাণ ছিলেন। শুদ্ধ আরবি শিখার জন্য তিনি মাদ্রাসায় অভিজ্ঞ ক্বারী ও হাফেজ সাহেবদের কাছে যেতেন। ছোটবেলা থেকেই আসাদ শান্ত নম্র স্বভাবের ছিলেন। সকলের প্রিয় পাত্র ছিলেন তিনি। 

আসাদের মায়ের নাম মতি জাহান খাদিজা খাতুন। তিনি নারায়নগঞ্জ আই.ই.টি (ইসলামি এডুকেশন ট্রাষ্ট) গার্লস প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন। আসাদের জন্মের পর তিনি শিক্ষকতা ছেড়ে দেন।তাঁর ছয় পুত্র ও দুই কন্যার মধ্যে আসাদ ছিলেন চতুর্থ। তাঁর ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চ শিক্ষিত ও সুপ্রতিষ্ঠিত। আসাদের বড় ভাই রশিদুজ্জামান ছিলেন প্রকৌশলী। আরেক বড় ভাই  কে.এম.খুরশীদুজ্জামান সাহেব একজন উচ্চ পদস্থ সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। শহীদ আসাদের ছোট ভাই ডা. এ এম নূরুজ্জামান নুর। বোনের নাম আনোয়ারা ফেরদৌসী। 

শিক্ষা জীবন

আসাদের শিক্ষা জীবন শুরু হয় শিবপুর হাই স্কুলে। ১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯৬১ সালে বিজ্ঞান পড়ার জন্য জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। এক বছর পড়ার পর জগন্নাথ কলেজ ছেড়ে দিয়ে সিলেটে মুরারী চাঁদ কলেজে গিয়ে আই.এসসি ভর্তি হন। কারণ বড় ভাই  কে.এম.খুরশীদুজ্জামান সরকারি কর্মকর্তা হওয়ায় জেলা মৎস কর্মকর্তা হিসাবে সিলেট বদলি হন। সে সময় আসাদ ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে। 

রাজনীতিতে স্বক্রিয় ভূমিকা রাখার জন্য পরিবারকে না জানিয়ে বিজ্ঞান পড়া ছেড়ে দেন। পরে আই.এ ভর্তি হন। ১৯৬৩ সালে মুরারী চাঁদ কলেজ থেকে আই.এ পাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাসে অনার্স সহ বি.এ ভর্তি হন। ১৯৬৬ সালে বি.এ (অনার্স) এবং ১৯৬৭ সালে এম.এ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকায় সিটি ল কলেজে এল.এল. বি ক্লাশে ভর্তি হন। ভালো ফলাফলের জন্যে দ্বিতীয়বার মানোন্নয়ন-মূলক এম.এ বা বা স্নাতকোত্তর পরীক্ষা দেন। কিন্তু পরীক্ষার ফলাফল আসাদের আর দেখা হল না। 

আসাদের রাজনৈতিক জীবন

ছোট বেলা থেকেই আসাদ ছিলেন প্রতিবাদী। আসাদ ছিলেন কৃষক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক এবং মওলানা ভাসানীর অনুসারী। শৈশবে প্রতিবাদী আসাদ স্কুল-কলেজ জীবনে রাজনৈতিক অঙ্গনে পুরোপুরি সম্পৃক্ত না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে পুরোপুরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। অত্যন্ত মেধাবী এই ছাত্রনেতার অসাধারণ সাংগঠনিক দক্ষতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন ঢাকা হল শাখার সভাপতির গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব অর্পণ করেন।

১৯৬৭ সালে এমএম পাস করার পর মওলানা ভাসানীর নির্দেশে কৃষক সমিতি গঠন করতে গ্রামে যান। মাত্র এক বছরে তিনি শিবপুর, মনোহরদী, রায়পুরা, নরসিংদী অঞ্চলে ব্যাপক হারে কৃষক সমিতি গড়ে তোলেন। “জাগরণী” এবং শিবপুর নৈশবিদ্যালয় নামে একটি সাংস্কৃতিক সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। পিতার নির্দেশে তিনি শিবপুর কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রস্তুতি গ্রহণ করেন এবং অর্থ সংগ্রহ শুরু করেন।

১৯৬৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মওলানা ভাসানী হাট হরতালের ডাক দেন। নরসিংদীর মনোহরদী থেকে ওই হাট হরতালে অংশ নেন আসাদ। আর এতেই পুলিশের গুলিতে তিনি গুরুতর আহত হন।

শহীদ আসাদ দিবস কবে?

২০ জানুয়ারি, শহীদ আসাদ দিবস। ১৯৬৯ সালের এই দিনে পাকিস্তানি স্বৈরশাসক আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে এ দেশের ছাত্রসমাজের ১১ দফা কর্মসূচির মিছিলে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে জীবন দেন ছাত্রনেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র আসাদ। ১৯৬৯ এর উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের এর অন্যতম পথিকৃৎ শহীদ আসাদ। সেসময় আরো দুজন ছিলেন আসাদের সারিতে।  শহীদ রুস্তম ও শহীদ মতিউর। ২০১৮ সালে শহীদ আসাদকে  স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়। 

কি হয়েছিল জানুয়ারি ২০, ১৯৬৯ সালে?

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ অন্যান্য আসামীদের মুক্তির দাবী, বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দাবীর সাথে শহীদ আসাদের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। 

শহীদ আসাদ দিবস কবে শহীদ আসাদ কে ছিলেন

৬ ডিসেম্বর, ১৯৬৮: মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাষাণী হরতাল ডাকেন। 

৪ জানুয়ারি, ১৯৬৯: সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ছাত্রদের ১১ দফা এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফা দাবীর সাথে একাত্মতা পোষণ করে। সংগঠনের প্রধান ছিলেন শহীদ আসাদ।

১৭ জানুয়ারি, ১৯৬৯: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা বৈঠক করে। সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয়। সে সময়ে গভর্নর ছিলেন মোনেম খান। তিনি ১৪৪ ধারা আইন জারী করেন। 

 ২০ জানুয়ারি, ১৯৬৯: দুপুরে আসাদের নেতৃত্বে চাঁন খাঁ’র পুল এলাকায় মিছিল নিয়ে ছাত্ররা অগ্রসর হচ্ছিল। পুলিশ তাদের দেয় ও চলে যেতে বলে। কিন্তুরা ছাত্ররা পুলিশের বাধার তোয়াক্কা না করে প্রায় এক ঘন্টা সেখানে অবস্থান করে। সেসময় আসাদ ও তার সহযোগীরা স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান তোলে। বাহাউদ্দিন ডিএসপি নামের জনৈক পুলিশ অফিসারের পিস্তলের গুলি আসাদের বক্ষ বিদীর্ণ করে। আসাদকে হাসপাতালে  নিয়ে যাওয়া হয়। আসাদের বড় ভাই ডা.এন.এম.মুরশীদুজ্জামান খবর শুনে হাসপাতালে ছুটে যান।  আসাদকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান। হাসপাতালের সব ডাক্তাদের সম্মিলিত চেষ্টা দিয়েও তাঁকে বাঁচানো যায়নি। পিস্তলের গুলি আসাদের হৃদপিন্ডের বাম নিলয় বিদীর্ন করেছে। ডাক্তাররা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিজ গ্রাম ধানুয়ায় পারিবারিক গোরস্থানে আসাদকে সমাহিত করা হয়।

শহীদ আসাদ দিবস কবে শহীদ আসাদ কে ছিলেন

আসাদের মৃত্যুর পরের দিন ২১ জানুয়ারি, ঢাকায় সকাল সন্ধ্যা হরতাল পালন করা হয়। এবং পল্টন ময়দানে এক বিশাল গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। আসাদের রক্তমাখা টিশার্ট নিয়ে মৌন মিছিল বের করা হয়। আসাদের মৃত্যু উপলক্ষে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ২২,২৩ ও ২৪ জানুয়ারি এই তিন দিন “শোক কাল” হিসেবে ঘোষণা করে। ২৪ জানুয়ারি সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। জনতা উত্তাল হয়ে উঠে। অবশেষে আইয়ুব খানের এক দশকের এক নায়কতন্ত্রের অবসান ঘটে। 

দেশমাতৃকার সেবায় মুক্তি এবং স্বাধীনতার লক্ষ্যে শহীদ আসাদের মহান আত্মত্যাগ ও অবদানের জন্য প্রতি বছর ২০শে জানুয়ারি বাঙালি জাতি শহীদ আসাদ দিবস পালন করে।

১৯৭০ সালে আসাদের নামে শিবপুরে শহীদ আসাদ কলেজ স্থাপন করেছে। বর্তমানে ইহা একটি সরকারী কলেজ। 

বাংলাদেশের অনেক জায়গায়, লোকেরা আইয়ুব খানের নামফলককে শহীদ আসাদের নামে পরিবর্তন করে, বিশেষ করে জাতীয় সংসদ ভবনের ডান পাশে অবস্থিত আইয়ুব গেটটি আসাদ গেট দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। এছাড়াও, আইয়ুব এভিনিউ এর পরিবর্তে আসাদ এভিনিউ, আইয়ুব পার্কের নামকরণ করা হয় আসাদ পার্ক।

নতুন প্রজন্মের কাছে আসাদ এক অপরিচিত ব্যক্তি। কিন্তু যাদের কারণে আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ, আসাদ তাদের একজন। গণঅভ্যুত্থানে আসাদের আত্মত্যাগের পথ ধরেই আমাদের দেশে মুক্তিযুদ্ধের পথ সুগম হয়েছিল। কিন্তু আসাদ দিবসে শুধু তার সমাধিতে ফুল দেওয়া আর আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়, এগুলো তার অবদানের তুলনায় নগণ্য।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Back to top button