টিউটোরিয়াল

বাংলায় এসইও (SEO) Friendly আর্টিকেল কীভাবে লিখবো

4.6/5 - (34 votes)

আমরা যারা ব্লগ বা ওয়েবসাইট চালাই তারা সবাই কমবেশি এসইও (SEO) শব্দটির সাথে পরিচিত। জি হ্যাঁ, এসইও হল “সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন”। অর্থাৎ আমাদেরকে এমনভাবে আর্টিকেল লিখতে হবে যা খুব সহজেই গুগল সার্চে রাঙ্ক করে। তবে যারা বাংলায় ব্লগ লিখেন তারা অনেকেই আর্টিকেল কীভাবে লিখবো তা নিয়ে চিন্তায় পরে যান।

বিষয়টি আসলে বাংলা বা ইংরেজি বলে কথা না। এসইও করার নিয়ম একই। তবে অনেকেই অনেকভাবে এসইও করে থাকেন। আজ আপনাদের দেখাবো আমি কীভাবে বাংলায় এসইও (SEO) Friendly আর্টিকেল লিখি।

বাংলায় এসইও (SEO) Friendly আর্টিকেল লেখার কৌশল

বাংলায় আর্টিকেল লেখার জন্য কয়েকটি কৌশল বা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অবশ্যই আপনাদেরকে মেনে চলতে হবে। যেমনঃ

কিওয়ার্ড বাছাই (Keyword)

আর্টিকেল লিখার শুরুতেই কয়েক মিনিট ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে আপনার আর্টিকেল এর জন্য সঠিক কিওয়ার্ড বাছাই বাছাই করুন। কিওয়ার্ড এসইও এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ কিওয়ার্ড এর উপর ভিত্তি করেই আপনার পুরো আর্টিকেলটি সাজাতে হবে।  কিওয়ার্ড বাছাই করার সময় নিচের কিছু বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • কখনই একটি শব্দের কিওয়ার্ড বাছাই করবেন না। লং টেইল কিওয়ার্ড অর্থাৎ দুই শব্দের বা এর বেশি হলে ভালো।
  • কি ওয়ার্ডের সার্চ ভলিয়ম যেন অবশ্যই কমপক্ষে তিন হাজারের (মাসে) উপরে হয়।
  • কি ওয়ার্ডের সার্চ কম্পেটিশন যেন কম থাকে। (২০ থেকে ২৫ এর মধ্যে হল ভালো)
কিওয়ার্ড বাছাই করা হয়ে গেলে, বাছাইকৃত কিওয়ার্ড নিয়ে একটু রিসার্চ করুন। কিভাবে কিওয়ার্ড রিসার্চ করবেন তা জানতে নিচের লিংকে গিয়ে পোস্টটি পড়ে আসতে পারেন।

পোস্ট টাইটেল (Post Title)

টাইটেল হল আপনি যে পোষ্টটি লিখছেন তার একটি শিরনাম যা গুগল সার্চে দেখানো হয়। সার্চ রেংকিং এর জন্য পোস্ট টাইটেল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টাইটেল যদি আকর্ষণীয় না হয় তাহলে সেই পোস্ট থেকে বেশি ইউজার পাওয়া সম্ভব নয়। তাই পোস্ট টাইটেল সঠিকভাবে লেখার জন্য নিচের কয়েকটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • পোস্ট টাইটেল অবশ্যই ৫০ থেকে ৬০ বর্ণের মধ্যে লিখতে হবে। তবে অনেক সময় ৭০ বর্ণেও লেখা যেতে পারে।
  • নির্বাচনকৃত কি ওয়ার্ডটি যেন টাইটেল এর শুরুতে থাকে।
  • একের অধিক কিওয়ার্ড টাইটেলে লিখবেন না।
  • টাইটেল যেন আকর্ষণীয় হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

মেটা ডেসক্রিপশন (Meta Description)

মেটা ডেসক্রিপশন হল আপনি যে আর্টিকেলটি লিখছেন তার একটি সারসংক্ষেপ। মেটা ডেসক্রিপশন বিচক্ষণতার সাথে লিখতে হবে। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গুগল ডেসক্রিপশন এর উপর ভিত্তি করে রেজাল্ট দেখিয়ে থাকে। মেটা ডেসক্রিপশন লেখার সময় নিচের বিষয়গুলো অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।

  • মেটা ডেসক্রিপশন ১৫০ থেকে ২০০ বর্ণের মধ্যে লিখতে হবে। তবে ১৫০ হলে খুবই ভালো।
  • নির্বাচনকৃত কি ওয়ার্ডটি যেন অবশ্যই মেটা ডেসক্রিপশনে থাকে। কমপক্ষে একবার। তবে দুইয়ের অধিক নয়।
  • অনেকে কমা দিয়ে দিয়ে মেটা ডেসক্রিপশনে কি ওয়ার্ড লিখে। এমনটি করবেন না। অধিক কি ওয়ার্ড লিখলে তা কি ওয়ার্ড স্টাফিং বা ব্লেকহেট্ এসইও হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

আর্টিকেল বডি (Post Body)

আর্টিকেল বডি অন-পেজ এসইও এর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুন্দর ও গুছিয়ে আর্টিকেলটি লিখতে পারলে একদিকে যেমন ভিসিটররা পড়ে তৃপ্তি পান অন্যদিকে সার্চ বট অতি সহজে আপনার আর্টিকেলটিকে ইনডেক্স করে নিতে পারে। তাই অন-পেজ এসইও এর ক্ষেত্রে আর্টিকেল বডিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাই আর্টিকেল বডি লিখার সময় নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেনঃ

ইউনিক কনটেন্ট (Unique Content)

অন-পেজ এসইও’র জন্য যে জিনিসটি বেশি গুরুত্ব বহন করে তা হল ইউনিক কনটেন্ট। চেষ্টা করবেন ফ্রেশ এবং ইউনিক কনটেন্ট লিখতে। অন্য সাইট থেকে কনটেন্ট কপি করবেন না। এতে আপনার সাইট রাঙ্কতো পাবেই না বরং উল্টো প্যলান্টি খেতে পারেন। নিজে যা পারেন তাই লিখবেন। যে বিষয়ে আপনি জানেন বুঝেন সে বিষয় নিয়ে লিখবেন। কমপক্ষে ৭০%  ইউনিক রাখার চেষ্টা করবেন।

আর্টিকেলের দৈর্ঘ্য (Article Length)

আর্টিকেলের দৈর্ঘ্য অর্থাৎ আপনার লিখাটি কত শব্দের তা এসইও এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কত শব্দে লিখবেন তা আপনার উপরই নির্ভর করে। তবে আমি বলব আপনি যে কি ওয়ার্ড নিয়ে লিখছেন সে কিওয়ার্ডটি প্রথমে সার্চ দিন। এরপর সার্চে আশা প্রথম তিনটি পোষ্ট দেখুন। তারা কত শব্দে লিখেছে এবং কি কি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেনি তা খুঁজে বের করুন। এরপর আপনি চেষ্টা করুন তাদের চাইতে বেশি শব্দে এবং বেশি তথ্য দিয়ে পোস্টটি লিখতে। যদি জানতেন চান কত শব্দে লিখলে ভালো তাহলে বলব কমপক্ষে ৫০০ শব্দে।

ছবি (Image)

অনেকেই পোস্টের ভিতর ছবি দিতে চান না। বা দিলেও এত গুরুত্ব দিয়ে ছবি দেন না। কপিরাইট এর ভয়ে অনেকেই ছবি এড়িয়ে চলেন। গুগলে কপিরাইট ফ্রী ছবি পাওয়া যায়। যাই হোক, ছবি দেওয়ার কিছু নিয়ম রয়েছে। যেমন:
  • পোস্টের সাথে মিল রেখে ছবি দেওয়া।
  • ছবিতে Alt text & Title text দেওয়া।
  • ছবির কেপশন দেওয়া।
  • যদি পোস্টের দৈর্ঘ্য বেশি হয় তাহলে একাধিক ছবি দেওয়া যেতে পারে।
মনে রাখবেন, গুগলে ছবি সার্চ করার জন্য আলাদা সার্চ বোট রয়েছে। সুতরাং ছবিকে অবহেলা করবেন না।

সাব-টাইটেল (Sub-title)

সাব-টাইটেল হল H2 tag. গুগল হেডিং ট্যাগকে গুরুত্ব দেয়। প্রশ্ন হল হেডিং ট্যাগ কীভাবে দিবেন আপনি H2,H3 ট্যাগ ব্যাবহার করতে পারেন। তবে হেডিং ট্যাগে আপনার কি ওয়ার্ডটি অবশ্যই দিবেন। এত করে গুগলের কাছে কিওয়ার্ডটি চিনা সহজ হবে। সব ট্যাগেই কিওয়ার্ড দিবেন না। লক্ষ্য রাখবেন যে শব্দগুলো হেডিং এ দিয়েছেন সে শব্দগুলো যেন বিবরণে থাকে।

কিওয়ার্ড ডেনসিটি (Keyword Density)

কিওয়ার্ড ডেনসিটি হল আপনি আপনার আর্টিকেলে কতবার কিওয়ার্ডকে ব্যাবহার করেছেন। আসলে কিওয়ার্ড কতবার ব্যাবহার করবেন তা নির্ভর করে আপনার আর্টিকেলের উপর। আর্টিকেলে যদি ১৫০০ শব্দের হয় তাহলে আপনি ৭ থেকে ৮ বার কিওয়ার্ড ব্যাবহার করতে পারেন। আর মঝারি সাইজের আর্টিকেলে ৪ থেকে ৫ বার। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষ্য রাখবেনঃ
  • আর্টিকেল লেখার শুরতে প্রথম ৫০ শব্দের মধ্যে একবার কিওয়ার্ডটি রাখার চেষ্টা করবেন।
  • ঘন ঘন কিওয়ার্ড ব্যাবহার করবেন না। কিওয়ার্ড স্টাফিং বা Black Hat technique আপনার পোস্টের বা সাইটের সার্চ ইম্প্রেসান কমিয়ে দিতে পারে।
  • হেডার ট্যাগ বা H2 ট্যাগে একাবার হলেও আপনার কিওয়ার্ডটিকে রাখার চেষ্টা করুন।
  • পোস্টের শেষে একাবার হলেও আপনার কিওয়ার্ডটিকে রাখার চেষ্টা করুন।
  • পোস্টের ছবিতে (Alt text /Title text) কিওয়ার্ডটি ব্যাবহার করুন।

অনুচ্ছেদ (Paragraph)

অনেক সময় দেখা যায় খুব ভালো পোষ্ট লেখার পরেও তা সার্চে আসে না। আসলেও প্রথম পাতায় থাকে না। তার মূল কারণ হল পোষ্টটির Readability স্কোর কম। Readability স্কোর ঠিক রাখতে নিচের বিষয়গুলো মাথায় রাখবেন।
  • আর্টিকেল ভাগ ভাগ করে লিখুন অর্থাৎ Paragraph আকারে লিখুন। <p> ট্যাগ ব্যাবহার করে সহজেই তা করতে পারেন।
  • Paragraph যেন বেশি বড় হয়ে না যায়। ১৫০ শব্দে রাখার চেষ্টা করুন।
  • ২০ শব্দে একেকটি বাক্য লিখুন।

মনে রাখবেন অনুচ্ছেদ আকারে লিখলে ভিসিটররা সহজে আপনার লিখাটি পড়তে পারবেন এবং আপনি কি বুঝাতে চাইছেন তা সহজেই বোধগম্য হবে। এতে করে বাউন্স রেটও কমে যাবে।

ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল লিংক (Internal & External Link)

গুগল লাভস ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল লিংক। অনেক পোস্টে এক্সটারনাল লিংক দিতে চান না। কারণ এতে ভিসিটর অন্য সাইটে জাম্প করবে। আসলে বিষয়টি তা নয়। এক্সটারনাল লিংক আপনার পোস্টের এসইঅ স্কোর বাড়াতে সাহায্য করে। তবে ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল লিংক এর ক্ষেত্রে নিচের বিষয়গুলো লক্ষ্য রাখবেনঃ
  • আর্টিকেলে কমপক্ষে ২টি ইন্টারনাল লিংক (নিজের সাইটের লিংক) দেওয়ার চেষ্টা করবেন। অবশ্যই তা যেন আর্টিকেলের সাথে সামঞ্জস্য হয়।
  • চেষ্টা করবেন ১টি এক্সটারনাল লিংক (অন্য সাইটের লিংক) দেওয়ার।
  • অতিরিক্ত এক্সটারনাল লিংক ব্যাবহার করবেন না।

ভিডিও (Video)

আর্টিকেলে ছবি, ইন্টারনাল ও এক্সটারনাল লিংক ইত্যাদি দিলেই যে অন-পেজ এসইওর কাজ শেষ তা কিন্তু নয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি যেসকল আর্টিকেলে ভিডিও সংযুক্ত করা হয় সেসব আর্টিকেল খুব তাড়াতাড়ি সার্চ রেসাল্টে আসে। তাই চেষ্টা করুন আর্টিকেলে নিজের করা বা অন্যের করা প্রসঙ্গিক ভিডিও দেওয়ার।

ইউআরএল (URL)

অন-পেজ এসইওর জন্য ইউআরএল ফরম্যাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই ইউআরএল ফরম্যাট এর উপর জোর দিতে হবে। নিচের নিয়মগুলো লক্ষ্য রাখবেনঃ
  • ইউআরএল যেন বেশি বড় না হয়।
  • ইউআরএল এ অবশ্যই আপনার কিওয়ার্ডটি রাখবেন। যেমনঃ youdomain.com/your-key-word
আশা করি কীভাবে বাংলায় এসইও ফ্রেন্ডলি কনটেন্ট বা আর্টিকেল লিখবেন তা বুঝতে পেরেছেন। পূর্বেই বলেছি এসইও করার ধরণ একেকজনের একেকরকম। তবে আমার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি উপরের বর্ণিত বিষয়গুলো যদি আপনার আর্টিকেলে থাকে তবে ১০০% আপনার পোস্টটি গুগলে রেংক পাবে। এই ছিল আমার এসইও (SEO) Friendly আর্টিকেল লিখার কৌশল। এসইও নিয়ে আপনাদের কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট করে জানাবেন।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

5 Comments

  1. Its really nice work. this guy really genius. আমি অনেক SEO নিয়ে পড়েছি। কিন্তু আপনার লিখাটি পড়ার পর আপনার ফ্যান হয়ে গেলাম। এত সুন্দর করে লিখছেন তাই কমেন্ট না করে পারলাম না। এগিয়ে যান ভাই। পাশে আছি।

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button