বাংলা রচনা

জনসেবা প্রবন্ধ রচনা (JSC SSC HSC)

Rate this post

জনসেবা/ সমাজসেবা প্রবন্ধ রচনা ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ শ্রেণি। JSC SSC HSC
জনসেবা/ সমাজসেবা প্রবন্ধ রচনা ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ শ্রেণি। JSC SSC HSC
সূত্রঃ iStockphoto @ হ য ব র ল

ভূমিকা

“পরের কারণে স্বার্থ দিয়া বলি

এ জীবন মন সকলি দাও,

তার চেয়ে সুখ কোথাও কি আছে

আপনার কথা ভুলিয়া যাও।”

সকলের সঙ্গে মিলেমিশে জীবনধারণ এবং সুখে-দুঃখে একে অপরের পাশে এসে দাঁড়ানাের মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। নিজের স্বার্থের জন্যেই কেবল জীবন নয়। এ প্রসঙ্গে ডা. লুৎফর রহমান বলেন : “প্রকৃত সুখ কোথায়? পরকে ফাঁকি দিয়ে নিজের সুখটুকু ভাগ করে নেওয়াতে কি সত্যিকারের সুখ আছে? আত্মার সাত্ত্বিক তৃপ্তির কাছে জড় দেহের ভােগ সুখের মূল্য কিছুই না। যতদিন না মানুষ পরকে সুখ দিতে আনন্দবােধ করবে ততদিন তার যথার্থ কল্যাণ নাই।” মানুষ সমাজবদ্ধ, সহানুভূতিশীল জীব বলেই আত্মস্বার্থে মগ্ন থাকা তার স্বভাব-বিরুদ্ধ। মানুষ হয়ে জন্মালেই মানুষ হয় না। চাই মনুষ্যত্ব অর্জনের দীক্ষা। জনসেবা সামাজিক মানুষের সেই দীক্ষার যথার্থ মন্ত্র। সমাজের সহায় সাহায্যহীন সর্বহারা হতাশাগ্রস্তকে প্রাণবন্ত করে তােলাই মানুষের ধর্ম। আর তাই নিজের স্বার্থত্যাগ করে অপরের সেবায় আত্মনিয়ােগ করার নামই জনসেবা

জনসেবার অর্থ

জনসেবা কথাটি ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ একটি শব্দ। এর দ্বারা শুধু আর্ত-পীড়িত, দুঃখী-দরিদ্রকে সাহায্য করা বুঝায় না বরং সকল মানুষের কল্যাণ সাধনকেও বুঝিয়ে থাকে। মানুষমাত্রই সামাজিক জীব। একে অপরের ওপর নির্ভরশীল। ভেতরে বাইরে এক অদৃশ্য যোগসূত্রে গ্রথিত। সমাজস্থ মানুষের কল্যাণে যেকোনাে কাজই জনসেবা হিসেবে স্বীকৃত। এ প্রসঙ্গে কবি কামিনী রায়ের কবিতার চরণ দুটি স্মরণযােগ্য – 

“আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে আসে নাই কেহ অবনী পরে
সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।”

জনসেবার বৈশিষ্ট্য

বৃহত্তর জনগােষ্ঠীর উপকার করার নামই জনসেবা। Ruskin বলেন, ‘There are three kinds of duties- duties towards God, duties towards parents and duties towards mankind.’ মানুষ স্বভাবতই স্বার্থ ত্যাগ করতে চায় না। এ কারণে নিজের মঙ্গলকে লক্ষ করে অপরের মঙ্গল করার নামই জনসেবা। মানুষ সামাজিক জীব, সে কখনােই একা বাস করতে পারে না। সকলকে নিয়েই তার জীবন। কেননা সে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এ কারণে পরােপকারের মহান ব্রতে মানুষের মন উদ্দীপ্ত হয়। পরােপকারের মাধ্যমেই সে আনন্দ লাভ করে। আর তখন সমাজজীবন হয়ে ওঠে সুন্দর। স্বার্থমগ্নতা মনুষ্যত্বের পরিপন্থী। স্বার্থপর ব্যক্তি বৃহত্তর জীবনাঙ্গন থেকে স্বেচ্ছানির্বাসিত। 

পৃথিবীর ভালাে-মন্দ, সুখ-দুঃখ, মঙ্গল-অমঙ্গল তার হৃদয়মন স্পর্শ করে না। সে নিজেকে নিয়েই বিব্রত থাকে। মানবধর্মের অবমাননাকারী ব্যক্তি পৃথিবীর জঞ্জাল। সে কখনােই সুখকর জীবনযাপনের স্বাদ পায় না। এ ধরনের স্বার্থপর মানুষ সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং সে সমাজের কোনাে উপকারে আসে না। আর মানুষ যদি মানুষের উপকারেই না আসে তবে তাঁর জীবন ব্যর্থ। সেজন্যে সত্যিকারের ভালােমানুষ বলতে তাকেই বােঝায় যে নিজের স্বার্থের কথা বিবেচনা না করে পরােপকারে নিয়ােজিত থাকে। সেই মহৎ মানুষ যে নিজের জন্য নয়, সে বিশ্বমানবের জন্যে নিবেদিত তাই বলা হয়েছে –

আপনা রাখিলে ব্যর্থ জীবন সাধনা

জনম বিশ্বের তরে পরার্থে কামনা।

জনসেবার ক্ষেত্র

জনসেবার কথাটি যেমন ব্যাপক তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি এর প্রয়ােগ ক্ষেত্রও বিস্তৃত। সারাবিশ্বে এমন কোনাে কাল ও সমাজ নেই বা ছিল না যে সমাজে বা কালে আর্ত-পীড়িত, দুঃখী-দরিদ্র অসহায়-সম্বলহীন, অনাথ-প্রতিবন্ধী মানুষ ছিল না। এসব মানুষদের সেবা করা জনসেবা বলে স্বীকৃত হয়ে আসছে। সমাজের কেউ না কেউ এসব অসহায় মানুষদের সেবা করে আসছে। তাছাড়া রাস্তা-ঘাট, পুল-সাঁকো নির্মাণ, পুকুর-দিঘি খনন ইত্যাদিও জনসেবার পর্যায়ভুক্ত। সুতরাং জনসেবার ক্ষেত্র কোনাে বিশেষ কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। 

জনসেবার পদ্ধতি

বিশ্বের সব সমাজের প্রকৃতি যেমন এক নয় তেমনি সমস্যাও এক রকম নয়। সমাজের প্রকৃতি অনুসারে সমস্যার প্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের হয় বলে জনসেবার পদ্ধতিও বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন- একজন ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেওয়া যেমন জনসেবার পর্যায়ে পড়ে তেমনি সংশ্লিষ্ট ভিক্ষকে ভিক্ষা না দিয়ে তাকে কোনাে কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়াও জনসেবার পর্যায়ভুক্ত। তাছাড়া রুগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, মৃতদেহ সৎকারের জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গঠন, অনাথ-আতুরদের জন্য পুনর্বাসন কেন্দ্র স্থাপন, দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান ইত্যাদিও জনসেবার পর্যায়ভুক্ত।

জনসেবার মানসিকতা অর্জনে সহায়তা

জনসেবা মূলত একটি মানবিক গুণ। এর জন্য কোনাে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়ােজন হয় না। তাছাড়া স্কুল-কলেজসমূহে অগ্নিকাণ্ড, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, মহামারি, যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি প্রাকৃতিক ও মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগে কীভাবে জনসেবা করা যায় তার একটি দিক-নিদের্শনা দেওয়া যায়। এতে ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যেকে জনসেবার মানসিকতাসম্পন্ন হয়ে উঠতে পারে। 

জনসেবা যুগে যুগে

পূর্বে আমাদের দেশে জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডসমূহ সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত উদ্যোগের ওপর নির্ভরশীল ছিল। বর্তমানে তা পরিবর্তিত হয়ে সামষ্টিকরূপে উন্নীত হয়েছে। আগেকার দিনে জনসেবামূলক কর্মকাণ্ড সীমাবদ্ধ ছিল রাস্তা নির্মাণ, খাওয়ার পানির জন্য পুকুর বা দিঘি খনন, পথিকদের জন্য পান্থশালা নির্মাণ, অতিথিশালা নির্মাণ, দাতব্য চিকিৎসালয় স্থাপন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ইত্যাদি কর্মকাণ্ডের মধ্যে। কিন্তু বর্তমানে মানুষের প্রয়ােজনের দিকে লক্ষ রেখে জনসেবামূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তৃতি লাভ করেছে। এখন নানাভাবে জনসেবা চলছে। তন্মধ্যে উল্লেখযােগ্য হচ্ছে- যাত্রী ছাউনি, সংবাদপত্র কেন্দ্র, পাঠাগার, পার্ক, চিত্তবিনােদন কেন্দ্র নির্মাণ ইত্যাদি। বর্তমানে বিশ্বমানবতার কল্যাণে নানা আন্তর্জাতিক সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যেমন রেডক্রস, রেডক্রিসেন্ট ইত্যাদি গড়ে ওঠেছে। কোনাে আকস্মিক বিপদ এসে জনজীবনকে বিপর্যস্ত করলে আর্ত-মানবতার সেবায় এসব প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ সূচনা পালন করে। 

জনসেবা ও ধর্মীয় চেতনা

‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ মানুষের এই সেবাব্রত প্রাচীনকাল থেকেই ধর্মাশ্রিত। ধর্মীয় চেতনাই মানুষকে সেবাধর্মে অনুপ্রাণিত করেছে। জগতের ধর্মগুরু ও ধর্মপ্রবক্তরা সেবাধর্মকেই জীবনের শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলেছেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স) বলেছেন: মানুষের মধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ যিনি মানুষের উপকার করেন।” ধর্মীয় চেতনাই মানুষকে সেবাধর্মে অনুপ্রাণিত করেছে। ধর্মপ্রবণতাই প্রাচীন ও মধ্যযুগের মানুষের জীবন-প্রত্যয়। বিভিন্ন ধর্মশাত্রে, কুরআনে, রামায়ণ-মহাভারতে, মহাকাব্যে, পুরাণে জনসেবাই শ্রেষ্ঠধর্মের মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে। মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের অস্তিত্ব। স্বামী বিবেকানন্দের কণ্ঠে তাই উচ্চারিত হয়েছে –

“জীবে প্রেম করে যেইজন সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”


জনসেবার গুরুত্ব

বঙ্কিমচন্দ্র বলেছেন : ‘পুষ্প আপনার জন্য ফোটে না, পরের জন্য তােমার হৃদয়-কুসুমকে প্রস্ফুটিত করিও’  পরার্থে জীবন উৎসর্গ করার মাধ্যমে মানবজীবন সার্থকতায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। ফুলের মতােই মানুষের জীবন। ফুল ফুটে সুবাস ছড়ায়। তার সৌরভে চারদিক আমােদিত হয়। এভাবে সৌরভ ছড়ানাের মধ্যেই সে তার সার্থকতা খুঁজে পায়। তদ্রপ, অপরের কল্যাণে নিজকে নিয়ােজিত করতে পারলেই জীবন সুখময় ও আনন্দময় হয়ে ওঠে। ইতিহাস থেকে দেখা যায়, যে জাতিতে খাটি জনসেবকের সংখ্যা যত বেশি সে জাতির ঐক্য, জাতীয়তাবােধ এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে তত বেশি। সমাজের উন্নতির মূলে যেসব বিষয় গুরুত্বপূর্ণ সেগুলাের মধ্যে শিক্ষা, সময়ােপযােগী চেতনা, অর্থনৈতিক অগ্রগতি এবং সাংস্কৃতিক বিকাশ অন্যতম। কিন্তু সমাজের সচেতন এবং যােগ্য ব্যক্তিগণ এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন না করলে সাধারণ জনগণ তা যথাসময়ে যথাযােগ্যভাবে অর্জন করতে পারে না।

এ ক্ষেত্রে দেশ ও জাতির সার্বিক অগ্রগতির জন্যে কাউকে না কাউকে সমাজসেবার মহৎ ব্রত নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনসাধারণের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে এবং তাদের সাধ্যমত সাহায্য করতে হবে। দেশের চরম দুর্গতির সময় জনসেবার মহান ব্রতে নিজেকে উৎসর্গ করতে হবে । সর্বোপরি যে ব্যক্তি যেখানে, যে কর্মে নিয়ােজিত আছে তার সে অবস্থান থেকেই মানুষের সেবা করতে হবে। তবেই মানবজীবন থেকে দুঃখ দূরীভূত হবে। 


জনসেবার পদ্ধতি ও জনসেবার চেতনা

জনসেবায় সকলেরই অধিকার আছে। মানুষের সবকটি মহৎ গুণাবলির মধ্যে সেবাব্রত অন্যতম। ‘অন্নহীনে অন্নদান, বস্র বস্রহীনে, 
তৃষ্ণাতুরে জল দান, ধর্ম ধর্মহীনে, 
মূর্খজনে বিদ্যাদান, বিপন্নে আশ্রয়
রােগীরে ঔষধ দান, ভয়ার্তে অভয় 
গৃহহীনে গৃহ দান, অন্ধেরে নয়ন,
পীড়াতে আরােগ্যদান, শোকার্তে সান্ত্বনা,
স্বার্থশূন্য হয় যদি এ দ্বাদশ দান,
স্বর্গের দেবতা নহে দাতার সমান।
রজনীকান্ত সেনের এই দ্বাদশ দানের মধ্যেই প্রকৃত জনসেবার পরিচয় ও পদ্ধতি ফুটে উঠেছে। যারা বিত্তবান, তাঁরা দীনদুঃখীর ক্লেশ মােচনে প্রভূত অর্থ ব্যয় করতে পারেন। যাদের সে সামর্থ্য নেই, তারা তাদের সাধ্যমত শ্রম দিয়ে হােক, ভালােবাসা দিয়ে হােক, সান্ত্বনা দিয়ে হােক-অপরের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে পারলে তবেই জীবনের সার্থকতা। জনসেবায় কায়িক শ্রমের মূল্য অপরিসীম। এই ব্রত উদ্‌যাপনে ব্যক্তিগত প্রচেষ্টার চেয়ে সম্মিলিত বা সংঘবদ্ধ প্রচেষ্টার গুরুত্ব বেশি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন স্থানে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দুস্থ মানুষের সেবাই এসব প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, ভূমিকম্প ইত্যাদি প্রকৃতির রুদ্ররােষে, যুদ্ধে বা সাম্প্রদায়িক মত্ততায় মানুষ যেখানে অসহায় সেখানে এসব প্রতিষ্ঠান নিঃশর্ত সাহায্যের হাত প্রসারিত করে ছুটে যান। তারা বিপক্ষের জাতি ধর্মের বিচার করেন। না। আর্তের সেবার মধ্য দিয়েই এঁরা মানব জন্মের মহিমাকে প্রচার করেন। আমাদের দেশের সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহের মধ্যে। বিভিন্ন এন. জি. ও, রেড ক্রিসেন্ট, রামকৃষ্ণ মিশন প্রভৃতির নাম উল্লেখযােগ্য।

সেবা প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দল

জনসেবায় রাজনৈতিক দলগুলাের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। রাজনৈতিক দলগুলাে সংঘবদ্ধ শক্তি। এঁরাও, দুর্গতদের সাহায্যে প্রয়ােজনীয় ভূমিকা গ্রহণ করে থাকেন। তবে এদের মধ্যে অনেকের ধারণা জনসেবার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ কোনাে চিরস্থায়ী সমাধান নয়। সমাজের বুকে দীর্ঘদিনের যে হৃদয়হীন অন্যায়-অনাচারের পাহাড় সঞ্চিত হয়েছে, তার সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সর্বাত্মক সমাধানের জন্যে তারা বিপ্লবের স্বপ্ন দেখেন। কিন্তু যতদিন সমাজে দারিদ্র্য, শােষণ, বৈষম্য থাকবে ততদিন জনসেবার প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য। কিছু কিছু রাজনৈতিক দল জনসেবাকেই জীবনের একমাত্র মহৎ ব্রত মনে করেন না। ক্ষমতা দখল এবং অধিকৃত ক্ষমতা বজায় রাখার দিকেই তাদের প্রাণান্ত প্রয়াস। ফলে দুর্গত, বিপন্নের সেবাতেও দেখা যায় সংকীর্ণ, দলীয় মনােভাব। জনসেবা অনেক সময় রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার ছদ্মবেশ মাত্র।

উপসংহার

জনসেবা প্রত্যেক মানুষেরই এক সৎ ও মহৎ হৃদয়বৃত্তি। এই হৃদয়-বৃত্তির জাগরণই মনুষ্যত্বের পরিচায়ক। মানুষ কেবল স্বার্থ আর সম্পদের যন্ত্র নয়। মানুষ সুন্দরের আরাধনা করে। বিরাট মহিমার উপলব্ধিতে সে জীবনকে সার্থক ও অর্থময় করে তুলতে চায়। যে মানুষ আপনার আত্মার মধ্যে অন্যের আত্মাকে ও অন্যের আত্মার মাঝে আপনার আত্মাকে জানে, সে-ই জানে সত্যকে। নিঃস্বার্থ সমাজসেবা মানুষের এক দুর্লভ গুণ। মানুষের জীবনে যদি মহৎ সেবাব্রতের পূর্ণ দীক্ষা থাকে, যদি দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়ে সেই মহাপ্রাণতার অঙ্গীকার, তবেই এই ধূলার ধরণীতে একদিন প্রেমের দেবতার হবে অভিষেক। আজ দিকে দিকে যেখানে প্রমত্তের রণসাজ, যেখানে কপটতা-ভণ্ডামির ছদ্মবেশ, যেখানে আত্মসর্বস্ব ধ্যানধারণায় মানুষ নিয়ত কুণ্ঠিত, যেখানে হিংসায় উন্মত্ত পৃথিবী, সেই হিংস্র প্রলাপের মধ্যে এই সহায়-সম্বলহীন আর্ত, দুর্গতদের সেবাই যেন হয় সভ্যতার শেষ পুণ্যবাণী।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button