ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণঃ অদৃষ্টেরে শুধালেম, চিরদিন পিছে / অমােঘ নিষ্ঠুর বলে কে মােরে ঠেলিছে?

4.4/5 - (20 votes)

অদৃষ্টেরে শুধালেম, চিরদিন পিছে
অমােঘ নিষ্ঠুর বলে কে মােরে ঠেলিছে?
সে কহিল, ফিরে দেখাে । দেখিলাম থামি
সম্মুখে ঠেলিছে মােরে পশ্চাতের আমি।
বিষয়ঃ ভাবসম্প্রসারণ
শ্রেণিঃ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ SSC HSC JSC

মানুষ নিজেই তার নিজের জীবনের প্রকৃত রূপকার। প্রতিকূল শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে এগােতে হয় মানুষকে। তাতে জয়-পরাজয়ের আনন্দ-দুঃখ, উল্লাস-বেদনা আছে। কিন্তু কিছু পরাভূত ভাগ্যহত মানুষের ধারণা তাদের পরাভবের পেছনে আছে এমন এক অদৃশ্য অমােঘ দৈব শক্তি, যা তাদের বিড়ম্বিত ভাগ্যবিপর্যয়ের কারণ। এই অদৃশ্য শক্তিই ‘অদৃষ্ট’ বা ‘নিয়তি’ বলে অভিহিত। এ শক্তি নাকি মানুষের করায়ত্তের বাইরে, সাধ্যের অতীত, এর হাতে মানুষ ক্রীড়নক, মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রিত। বস্তুত যারা ভীরু, দুর্বল, যাদের আত্মবিশ্বাস কম, শুধু তারাই অদৃষ্টবাদী। মানুষ অধ্যবসায় ও একনিষ্ঠ শ্রমের দ্বারা তার নিজ ভাগ্যকে সার্থক করে তােলে। 
এ জগৎ সংসারে প্রতিটি মানুষের অগ্রযাত্রা নির্ভর করে তার সচেতন ও সক্রিয় কর্মপ্রয়াসের ওপর। কর্মজীবনে সফল প্রতিটি মানুষই নিজেদের চেষ্টা, সাধনা ও শ্রমে রচনা করেছেন নিজেদের সৌভাগ্য। কিন্তু আজও কোন কোন বিপন্ন মানুষকে ভাগ্যের দোহাই দিয়ে নিশ্চেষ্ট হতে দেখা যায়। আজও বিপর্যয়ের মুখােমুখি দাঁড়িয়ে কেউ কেউ নিজেকে সমর্পণ করে অদৃষ্টের অলীক হাতে। তাদের ধারণা এক অদৃশ্য দৈবশক্তি নেপথ্য থেকে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে চালনা করে চলেছে। বস্তুত নিয়তি, দৈবশক্তি বা অদৃষ্ট মানুষের জীবনধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। মানুষের কর্মধারাই গড়ে তােলে তার জীবনকে। অতীতের কর্মই তাকে ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, আর বর্তমানের কর্মের ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েই সে ভবিষ্যৎপানে এগুচ্ছে। এটাই জগতের কর্মচক্র ও জীবনচক্রের গতি। 
যৌবনশক্তির দুর্বার গতিবেগে প্রাণচঞ্চল যারা, দুর্মর সংগ্রামের ক্ষুরধার পথে হাঁটাই তাদের ধর্ম। অদৃশ্য দৈবী শক্তিতে তারা বিশ্বাসী নয়, সংগ্রামে-সংঘাতের মধ্য দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ ফসলটি তুলে নেওয়াই তাদের লক্ষ্য। তাদের দৃঢ় প্রত্যয় হলাে ভাগ্য মানুষকে চালিত করে না, মানুষই ভাগ্য গড়ে। কর্ম হল সুপ্রসন্ন সৌভাগ্যের জনক। অদৃষ্টের দোহাই দিয়ে কর্মবিমুখতা নিজের শক্তিমত্তার কাছ থেকে পলায়নী মনােবৃত্তির নামান্তর। কর্মবীর মানুষই সৌভাগ্যের স্বর্ণশীর্ষে হয় আসীন। অপরদিকে অদৃষ্টনির্ভর মানুষ তার নিশ্চেষ্ট আলস্যহেতু পদে পদে বরণ করে পরাজয়, জীবনভর তাকে হতাশায় নিরাশায় দীর্ঘশ্বাসের সেতু রচনা করতে হয়। এজন্য ভবিষ্যৎ জীবনকে সহজ ও সুন্দর, সুখ ও আনন্দময় করতে হলে মানুষকে বর্তমান মুহূর্তকে কাজে লাগাতে হয়। একনিষ্ঠ শ্রমে ও সাধনায় রচনা করতে হয় ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত্তি। সে কাজ যদি ভালাে হয় তবে তার ফলও হয় ভালাে। কর্মমুখর অতীত রচনা করে সুন্দর বর্তমান ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ।কর্মহীন অতীত জন্ম দেয় অন্ধকারাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের। অতীত মানবজীবনের অবিচ্ছেদ্য অধ্যায়। অতীত নীরবে মানুষের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের ওপর তার প্রভাব রাখে। অতীতের ওপর ভিত্তি করেই মানুষের আগামী দিনের জীবন গড়ে ওঠে। 
অতীতের কৃতকর্ম, কর্মপ্রেরণা, অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই মানুষ সামনের দিকে এগিয়ে যায়। তাই জীবনের ব্যর্থতার দায় অদৃষ্টের ওপর চাপিয়ে হা-হুতাশ না করে প্রত্যেকেরই উচিত আত্মশক্তিতে বলীয়ান হয়ে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্মাণে সচেষ্ট ও ব্রতী হওয়া।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button