মুকুট পরা শক্ত কিন্তু মুকুট ত্যাগ আরও কঠিন ভাবসম্প্রসারণ লিখন
ক্ষমতা অর্জন করা কঠিন। কিন্তু ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানাে আরও কঠিন। রাজমুকুট ক্ষমতা ও দায়িত্বের প্রতীক। কিন্তু লােভী, উচ্চাকাঙ্ক্ষী মানুষ রাজকীয় ক্ষমতা দখলের জন্যে উন্মাদ হয়ে ওঠে। ফলে তার পক্ষে রাজমুকুট ত্যাগ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
মুকুট পরা অর্থাৎ কোনাে জাতি বা সমাজের কর্ণধার হওয়া সহজ ব্যাপার নয়। বিশেষ গুণের অধিকারী না হলে সে দায়িত্ব কেউ পালন করতে পারে না। কঠোর সাধনা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে সর্বসাধারণের আস্থাভাজন হতে পারলেই জাতি ও সমাজের নেতৃত্ব দেয়া সম্ভব হতে পারে। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় যারা ক্ষমতায় এসেছিলেন, তাদের বহু সাধনা, শক্তি ও সামর্থ্যের প্রয়ােজন হয়েছে। আর ক্ষমতায় আসার পর তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সে সব কর্তব্য শেষ না করা পর্যন্ত ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়া মােটেই বাঞ্ছনীয় নয়। প্রকৃত রাজার কাছে রাজমুকুট এক বিশাল দায়িত্ব। কেননা অজস্র ঐশ্বর্যের মধ্যেও তাকে বিলাসবিমুখ জীবনযাপন করতে হয়। প্রজাদের সুখ-দুঃখ নিয়েই তাঁর সার্বক্ষণিক চিন্তা। এই দৃষ্টিকোণ থেকে রাজমুকুট পরা এক কঠিন দায়িত্ব। অপরপক্ষে লােভী মানুষ একবার ক্ষমতায় আসতে পারলে তার নেশায় সে মত্ত হয়ে ওঠে। এ ক্ষমতার গৌরব থেকে সে কিছুতেই সরে যেতে চায় না। তখন সে অন্যায়ভাবেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেষ্টা করে। ক্ষমতা ও ভােগের মায়া সে ত্যাগ করতে পারে না। কাজেই মুকুট পরা যেমন শক্ত তেমনি মুকুট পরিত্যাগ আরও কঠিন।
ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া নিঃসন্দেহে কঠিন ব্যাপার, কিন্তু তার চেয়েও কঠিন ক্ষমতা ত্যাগ করা। কারণ ক্ষমতায় গেলে মানুষের দায়িত্ব-কর্তব্য বেড়ে যায়, তা ছাড়া ক্ষমতার মােহও ক্ষমতা ছাড়তে বাধা দেয়।