মা দিবস বা মাতৃ দিবস: মা শব্দটিতে যেন এক গভীর মায়া-মমতা আর ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। মা আমাদের সকলের প্রিয় শব্দ।সন্তান ভূমিষ্ট দেওয়া থেকে শুরু করে তাকে বড় করে তোলা পর্যন্ত মা অক্লান্ত পরিশ্রম করে। তাই ইসলামে মায়ের সম্মান অনেক বেশি। মায়েদের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। সমাজে মায়েদের সম্মান আরও মজবুত করার লক্ষে প্রতি বছর মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার (২০২৩ সালে মা দিবস ১৪ মে) আন্তর্জাতিকভাবে মা দিবস উদযাপন করা হয়। যা Mother’s Day নামে পরিচিত। এটি একটি অনুষ্ঠান যেখানে মা কে সম্মান জানানো হয়। বস্তুতপক্ষে মাকে সম্মান ও ভালোবাসার জন্য নির্দিষ্ট কোন দিনের প্রয়োজন নেই। বরং স্বয়ং ইসলামই মাকে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। নবী করীম (সা:) বলেছে:
নফল নামায পড়া অবস্থায় যদি পিতা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছাড়া যাবে না, কিন্তু যদি তোমার মা তোমাকে ডাকে তাহলে নামায ছেড়ে দাও।
মা দিবসের ইতিহাস
মা দিবসের ইতিহাস খুবই প্রাচীন। তাই এর সঠিক ইতিহাস বলা খুবই কঠিন। ঠিক কবে থেকে মা দিবসের সূত্রপাত হয়েছে তা সঠিকভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় দিনটির সূত্রপাত হয় প্রাচীন গ্রিসে। সে সময় প্রাচীন গ্রিসে মাতৃ আরাধনার প্রথা চালু ছিল। তারা গ্রিক দেবতাদের মধ্যে এক বিশিষ্ট দেবী সিবেল এর উদ্দেশ্যে একটি উৎসব পালন করত। পরবর্তীতে রোমেও ১৫ মার্চ থেকে ১৮ মার্চের মধ্যে এ উৎসবটি পালিত হত। এই উৎসব ছাড়াও প্রাচীন রোমানদের তাদের দেবীর জন্যউৎসর্গকৃত একটি ছুটির দিন ছিল এবং ঐদিন মায়েদের উপহার দেওয়া হত। প্রাচীন এই প্রথাকে ধরে রাখতে ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে যুগ যুগ ধরে মায়েদের সম্মান জানানোর জন্য অনেক অনুষ্ঠান পালন করতো। আচারানুষ্ঠানের জন্য একটি নির্দিষ্ট রবিবার আলাদা করে রাখা হত। মা দিবস ছাড়াও বহু দেশে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস পালন করা হয়।
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মা দিবস পালনের মুখ্য ভূমিকা রাখে জুলিয়া ওয়ার্ড হোই রচিত “মাদার্স ডে প্রক্লামেশন” বা “মা দিবসের ঘোষণাপত্র” জুলিয়া ওয়ার্ড হোইএটি ১৮৭০ সালে আমেরিকান গৃহযুদ্ধ ও ফ্রাঙ্কো-প্রুশীয় যুদ্ধের নৃশংসতার বিরুদ্ধে রচিত করেন।
আন্তর্জাতিক রূপ
শুরুর দিকে মা দিবস আন্তর্জাতিক রূপ পায় নি। কারণ দিবসটির জন্য নির্দিষ্ট কোন দিন ছিল না। তবে ১৯১২ সালে মা দিবস পূর্নাঙ্গ রূপ লাভ করে “মাদারস ডে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোশিয়েশন (আন্তর্জাতিক মা দিবস সমিতি)” স্থাপনের মাধ্যমে। যার নেপথ্যে ছিলেন আনা জার্ভিস (১৮৬৪ – ১৯৪৮)। আনা জার্ভিস হলেন আমেরিকার মাদার্স ডে এর প্ৰতিষ্ঠাতা। তিনি মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস এর বহুল প্রচার করেন। পরে মা দিবসটি সর্বজনীন করে তোলার লক্ষ্যে এগিয়ে আসেন জুলিয়া ওয়ার্ড নামের এক আমেরিকান। ১৯১৪ সালে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। এরপর থেকে আস্তে আস্তে মা দিবস পালনের রেওয়াজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরে।
বাংলাদেশে মা দিবস
সারাবিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও প্রতিবছর মা দিবস উদযাপন করা হয়। বাংলাদেশে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার মা দিবস পালন করা করা। বাংলাদেশে মা দিবসের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই দিন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতি আন্তর্জাতিকভাবে বিশ্বের সকল মাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে থাকেন।
ইসলামে মায়ের মর্যাদা
একমাত্র ইসলাম ধর্মেই মা কে দেওয়া হয়েছে অভাবনীয় মর্যাদা। মহান আল্লাহপাক রাসূল (সাঃ) এর পরে মাকে সর্বোচ্চ আসন দিয়েছেন। বলা হয়েছে “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত”
হযরত মুহাম্মদ (সা:) নিকট এক সাহাবী জানতে চাইলেন আমার উপর কার অধিকার সবচেয়ে বেশি? রাসুলুল্লাহ (সা:) বললেন- তোমার মায়ের। এভাবে তিনবার প্রশ্ন করলে তিনবারই তিনি উচ্চারণ করেন মা। চতুর্থবার রাসুলুল্লাহ (সা:) উচ্চারণ করেন বাবা।
রাসূলে কারিম (সা:) বলেছেনঃ নারীর প্রতি সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার স্বামীর, আর পুরুষের উপর সবচেয়ে বেশি অধিকার হচ্ছে তার মায়ের। ( কানযুল উম্মালঃ ৪৪৭৭১, মুনতাখাবে মিযানুল হিকমাহঃ ২৫৪ )
পবিত্র কুরআন শরীফে অনেক আয়াতে পিত-মাতার অধিকার ও সম্মানের কথা বলা হয়েছে।
“আর তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক কোরো না এবং পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করো।” (সুরা-৪ নিসা, আয়াত: ৩৬)।
‘আর আমি (আল্লাহ) মানবজাতিকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন তাদের পিতা-মাতার সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে; তার মা তাকে অতিকষ্টে গর্ভে ধারণ করেছেন ও অতিকষ্টে প্রসব করেছেন এবং লালন-পালন করেছেন।’ (সুরা-৪৬ আহকাফ, আয়াত: ১৫)।
‘আমি তো মানুষকে তার পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে; সুতরাং আমার (আল্লাহর) প্রতি এবং তোমার পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সুরা-৩১ লুকমান, আয়াত: ১৪)।
‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং মাতা-পিতার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাঁদের একজন অথবা উভয়ে তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাঁদের উফ্ (বিরক্তিও অবজ্ঞামূলক কথা) বলবে না এবং তাঁদের ধমক দেবে না; তাঁদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলবে। মমতাবশে তাঁদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো, “হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।”’ (সুরা-১৭ ইসরা-বনি ইসরাইল, আয়াত: ২৩-২৪)।
উপরের আয়াতগুলো থেকে স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে যে ইসলামে মায়ের অধিকার ও সম্মান অনেক বেশি। আল্লাহ্পাক নারীদের জন্য জান্নাত সহজ করে দিয়েছেন।
পরিশেষে বলব, মা এর প্রতি সম্মান ভালোবাসা শুধু যেন একটি দিনের জন্য না হয় বরং প্রতিটি দিনই যেন হয় মায়ের জন্য।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।