Uncategorized

Foreign Exchange Reserves: বৈদেশিক রিজার্ভ কী? কেন প্রয়োজন? কি পরিমাণ রিজার্ভ রাখা প্রয়োজন

Rate this post

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হল একটি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা বৈদেশিক মুদ্রা। একে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা বৈদেশিক রিজার্ভও বলা হয়। ব্যাংকের রিজার্ভ রাখার সাতটি কারণ রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল দেশের নিজস্ব অর্থের মান ঠিক রাখা

বৈদেশিক রিজার্ভ কী?

কোন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট বৈদেশিক মুদ্রার গচ্ছিত বা জমাকৃত পরিমাণকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা Foreign Exchange Reserves বলা হয়। বৈদেশিক ঋণ ও ঋণের সুদ, আমদানি মূল্য পরিশোধের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাবহার করা হয়। একটি দেশ বিভিন্ন মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থ উপার্জন করতে পারে। যেমন, বিদেশে কর্মরত শ্রমিকদের স্বদেশে পাঠানো অর্থ (রেমিট্যান্স), নিজ পণ্য বা সেবা বিদেশে রপ্তানি করে, বৈদেশিক বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ, বৈদেশিক ঋণবাবদ প্রাপ্ত অর্থ। আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা হল ডলার। যেকোন দেশ চাইলে নিজ দেশে অথবা বিদেশে অবস্থিত ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ সংরক্ষণ করতে পারে।

Foreign Exchange Reserves: বৈদেশিক রিজার্ভ কী? কেন প্রয়োজন? কি পরিমাণ রিজার্ভ  রাখা প্রয়োজন
ছবি: iStockphoto

বৈদেশিক মুদ্রার ইতিহাস

অতীতেও মুদ্রার মজুদ ব্যবস্থা চালু ছিল। তবে সে সময় স্বর্ণকে মজুদ করা হত। স্বর্ণকে মজুদ  করার মূল কারণ ছিল যতই অর্থনৈতিক মন্দা আসুক না কেনো স্বর্ণের মানের কোন তারতম্য হত না। ১৯৭১ সালে সোনার দাম পড়তে থাকে কারণ ওই সময় ব্রেটন উডস ব্যবস্থার পতন শুরু হয়। 

কিন্তু কি এই ব্রেটন-উডস ব্যবস্থা? ব্রেটন উডস ব্যবস্থাকে আধুনিক আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৪৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যের ব্রেটন উডস শহরে ৪৪ টি দেশের প্রতিনিধিগণ বসে নতুন আন্তর্জাতিক অর্থব্যবস্থার রূপরেখা তৈরি করেন। সম্মেলনে আন্তর্জাতিক বাজারে মুদ্রাগুলি সোনা বা মার্কিন ডলারের সাথে বেঁধে দেওয়া হয়। তখন বিশ্বের মোট সোনার অর্ধেক ছিল যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন। পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৭তম রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সন মার্কিন ডলার থেকে সোনায় সম্পদ রূপান্তরের ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। এর পর থেকেই মার্কিন ডলার বর্তমান রিজার্ভে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত বৈদেশিক মুদ্রা।

বৈদেশিক মুদ্রার মাধ্যম

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সাধারণত শক্তিশালী বা অনমনীয় মুদ্রা (হার্ড কারেন্সি) বা আন্তর্জাতিক বাজারে সহজে বিনিময়যোগ্য মুদ্রায় (যেমন মার্কিন ডলার, ব্রিটিশ পাউন্ড, ইউরো, ইয়েন) তৈরি করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রার  বলতে যে শুধু ডলারকে ভাবা হয় এমনটি নয়,  ব্যাংক নোট, বন্ড, ট্রেজারি বিল এবং অন্যান্য সরকারী সিকিউরিটি হতে পারে। কখনও কখনও সোনার মজুদও এর আওতায় আসে।

প্রায় সব দেশেই কম-বেশি বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ রয়েছে। তবে সবেচেয়ে মজার বিষয় হল বিশ্বের সব রিজার্ভের অর্ধেকেরও বেশি অংশ মার্কিন ডলারে রাখা হয়েছে। এর কারণ আর কিছুই না, বিশ্ববাজারের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মুদ্রা হল মার্কিন ডলার। 

বৈদেশিক রিজার্ভ কীভাবে কাজ করে

কোন দেশ চাইলেই নিজে নিজে বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়াতে পারে না। বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়াতে হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রয়োজন হয়। এটি হতে পারে পণ্যের বাণিজ্য অথবা সেবা দান করে। সুতরাং নিজ দেশের মধ্যে লেনদেন বা আন্তঃলেনদেন করে বৈদেশিক রিজার্ভ কখনই বাড়ানো সম্ভব নয়। 

রপ্তানি-বাণিজ্য করার মাধ্যমে অধিক হারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা হয়। অন্যদিকে দেশ যদি অধিকহারে আমদানি করে তখন বৈদেশিক রিজার্ভ কমতে থাকে। 

ধরুন, দেশের অভ্যান্তরে আপনি একটি কারখানা পরিচালনা করেন। উৎপাদনের কাঁচামাল আপনাকে অন্যদেশ থেকে জোগাড় করতে হয়। আমি ধরে নিচ্ছি আপনি জাপানের একটি কোম্পানি থেকে আপনার কাঁচামাল কিনবেন। আপনার দেশের মুদ্রা টাকা এবং জাপানের মুদ্রা ইয়েন। এখন আপনি সরাসরি যদি তাকে টাকা দেন তাহলে তার কোন উপকারেই আসবে না কারণ জাপানে টাকার ব্যাবহার নেই।  সুতরাং আপনাকে কাঁচামাল ক্রয়ের জন্য বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাবহার করতে হবে। পূর্বেই উল্লেখ করেছি বিশ্ববাজারের সবচেয়ে বেশি প্রচলিত মুদ্রা হল মার্কিন ডলার। 

এখন প্রশ্ন হল আপনি এত ডলার কীভাবে পাবেন আর কিভাবেবেই দিবেন? এর জন্য আপনাকে স্থানীয় ব্যাংকের ধারস্ত হতে হবে। রপ্তানিকারক আপনাকে (আমদানিকারক) কাঁচামাল ক্রয়বাবদ খরচের যে রশিদ দিবে তার মূল্য ডলারে কনভার্ট যা হয় সে পরিমাণ টাকা স্থানীয় ব্যাংকের নিকট জমা দিতে হবে। স্থানীয় ব্যাংক তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে পাঠায় এবং পরবর্তীতে কাঁচামাল লেনদেন সম্পন্ন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট ডলার পাঠিয়ে দেয় এবং জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তা স্থানীয় ব্যাংক-এ রপ্তানিকারকের ব্যাংক হিসাবে প্রেরন করে। অর্থাৎ বিষয়টি হল বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় বাঙ্ক-এর নিকট থাকা সঞ্চিত ডলার জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট চলে গেল। বাংলাদেশের রিজার্ভ কমলো অন্য দিকে জাপানের রিজার্ভ বেড়ে গেলো। 

এভাবেই, আমদানি-রপ্তানির মাধ্যমে কোন দেশের রিজার্ভের উঠানামা করে। 

বৈদেশিক রিজার্ভ কেন প্রয়োজন

কোন দেশই এককভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। কোন দেশ প্রয়োজনীয় সকল কিছু নিজ দেশে উৎপাদন করতে পারে না। আবার অনেক দেশের আবহাওয়ার অনুকূলতার অভাবে অনেক কিছুই উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে অন্য দেশ থেকে তা ক্রয় করতে হয়। বেশ কিছু কারণে বৈদেশিক রিজার্ভ রাখতে হয় যেমনঃ

দেশীয় অর্থের মান ঠিক রাখা

নিজ দেশের অর্থের মান ঠিক রাখতে বৈদেশিক রিজার্ভ ব্যাবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চীন ডলারের মান বৃদ্ধির জন্য তাঁদের দেশীয় মুদ্রা ইয়েনের সাথে ডলারের মানকে মিলিয়ে দেয়। এবং অধিক পরিমানে ডলার মজুদ করা শুরু করে। এতে করে ইয়েনের দাম কমে যায়। ফলে আমেরিকান তৈরি পণ্যের রপ্তানি ব্যয়ের তুলনায় চীনা পণ্যের রপ্তানি ব্যয় কমে যায়, বিক্রি বৃদ্ধি পায়।

ডলারের মান ঠিক রাখা

ডলারের মান ঠিক রাখতে অনেক দেশ ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম ব্যবহার করার জন্য  বৈদেশিক রিজার্ভ রাখে। এর ফলে মুদ্রার মূল্য ডলারের চেয়ে কম থাকে। এটা অনেকটা ফিক্সড-রেট সিস্টেমের মতো কাজ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপানের মুদ্রা ইয়েন, ফিক্সড-রেট সিস্টেমে নিয়ন্ত্রিত হয়। জাপানের সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ইয়েনের মান ডলার থেকে কম রাখার জন্য ইউএস ট্রেজারি ক্রয় করা শুরু করে। যার ফলে জাপানের রপ্তানি তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়ে যায়, সেই সাথে বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ায়।

অর্থের তারল্য বজায় রাখা

বৈদেশিক রিজার্ভ বড় ও প্রধান একটি উদ্দেশ্য হল অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে তারল্য বজায় রাখা। অনেক সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগ সাময়িকভাবে স্থানীয় রপ্তানিকারকদের পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতা স্থগিত হতে পারে। যার ফলে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের স্থানীয় মুদ্রার জন্য তার বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে পারে, যাতে তারা আমদানির জন্য অর্থ প্রদান এবং গ্রহণ করতে পারে।

Foreign Exchange Reserves: বৈদেশিক রিজার্ভ কী? কেন প্রয়োজন? কি পরিমাণ রিজার্ভ  রাখা প্রয়োজন
ছবিঃ iStockphoto

অর্থনীতিক স্থিতিশীল

বাজার স্থিতিশীল রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করে। অনেক সময় অর্থের মান ঠিক রাখতে স্থানীয় মুদ্রাও ক্রয় করে। এভাবে মুদ্রাস্ফীতি রোধ হয়। এটি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে। 

বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাস প্রদান করা

কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করে যে তারা তাদের বিনিয়োগ রক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত। আর এটি নিশ্চিত হয় যখন দেশের বৈদেশিক রিজার্ভ শক্তিশালী হয়। 

বাণিজ্যিক ঋণ ও অর্থ প্রদান

একটি দেশ তার বাহ্যিক বাধ্যবাধকতা পূরণ করবে তা নিশ্চিত করার জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ সবসময় প্রয়োজন। এর মধ্যে সার্বভৌম এবং বাণিজ্যিক ঋণ সহ আন্তর্জাতিক অর্থ প্রদানের বাধ্যবাধকতা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

একটি দেশের জন্য কি পরিমাণ বৈদেশিক রিজার্ভ রাখা প্রয়োজন

কমপক্ষে তিন থেকে ছয় মাসের আমদানির জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ রাখা প্রয়োজন বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা। আবার অনেক অর্থনীতিবিদরা মনে করেন একবছর ঋণ পরিশোধ এবং চলতি অ্যাকাউন্টের ঘাটতি পূরণ করার জন্য যথেষ্ট। ২০১৫ সালে গ্রীস ঋণ পরিশোধের জন্য বৈদেশিক রিজার্ভ নির্ধারিত পরিমাণ রাখতে ব্যর্থ হয়েছিল। ফলে দেশটি তাদের রিজার্ভের বিনিময়ে আইএমএফের কাছ থেকে ঋণ নেয় এবং এভাবে তাদের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করে। গ্রীক সরকার যে বিশাল সার্বভৌম ঋণ বহন করেছিল তা গ্রীক ঋণ সংকটের দিকে পরিচালিত করেছিল।

আশা করছি, বৈদেশিক রিজার্ভ এবং এটি কিভাবে কাজ করে সে সম্পর্কে আপনাদের স্বচ্ছ একটি ধারণা হয়েছে। পরবর্তী কোন পোস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ নিয়ে আলোচনা করবো। 

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Back to top button