১. শ্রমিকের যুক্তি সংগত মজুরী নির্ধারণ করাঃ এই মজুরি নির্ধারণের ক্ষেতে পুঁজিবাদীদের যে নীতি- অর্থাৎ, চাহিদা বেশি হলে মজুরি বেশি হবে কিন্তু চাহিদার তুলনায় শ্রমিক বেশি পাওয়া গেলে মজুরি কমে যাবে, কিংবা সমাজতন্ত্রের যে নীতি- অর্থাৎ, প্রত্যেকেরই দক্ষতা অনুযায়ী তার থেকে কাজ নেয়া হবে কিন্তু মজুরি দেয়ার সময় শুধু তার প্রয়ােজনের প্রতি লক্ষ রেখে তাকে মজুরি দেয়া হবে, তার দক্ষতার মূল্যায়ন করা হবে না। এর কোনােটাই গ্রহণযােগ্য নয়। বরং ইসলামী নীতিতে এমন মজুরি দিতে হবে, যা দ্বারা পরিবেশ, চাহিদা ও জীবন যাত্রার স্বাভাবিক মান অনুযায়ী শ্রমিকের প্রয়ােজন পূর্ণ হয়, সেই সাথে সাথে শ্রমিকের দক্ষতার মূল্যায়নও করতে হবে।
২. দ্রুত মজুরি পরিশােধ করাঃ ইসলামের দৃষ্টিতে শ্রমিক কাজ করা মাত্রই পারিশ্রমিক দাবি করতে পারে। তবে অগ্রিম বা অন্য কোনাে রকম শর্ত থাকলে সে শর্তানুসারেই কাজ হবে।
৩. কাজের সময় নির্ধারিত থাকতে হবেঃ মালিক যতক্ষণ ইচ্ছা শ্রমিকদের দ্বারা খেয়াল খুশিমত কাজ করিয়ে নিতে পারবে না।
৪. কাজের প্রকৃতি নির্ধারণ করতে হবেঃ যে কাজের জন্য কোন শ্রমিককে নিয়ােগ করা হবে, তার সম্মতি ছাড়া তাকে অন্য কাজে নিয়ােগ করা যাবে না । করতে হলে তার সম্মতি পূর্বশর্ত।
৫. অধিকতর সুবিধার জন্য অন্য স্থানে চলে যাওয়ার অধিকার থাকবে শ্রমিকের এবং শ্রম সম্পর্কীয় চুক্তি বিশেষ অসুবিধার কারণে সে বাতিল। করতে পারবে।
৬. শ্রমিককে এমন স্থানে রাখা যাবে না, যাতে তার স্বাস্থ্যহানি ঘটবে। মালিককে শ্রমিকের স্বাস্থ্যের প্রতি লক্ষ রাখতে হবে।
৭. শ্রমিকের শিক্ষা-দীক্ষা লাভের অধিকার রয়েছে। তবে এর দায়িত্ব মালিকের নয় বরং ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী শিক্ষা সাধারণত অবৈতনিক এবং রাষ্ট্রই তার সকল ব্যয়ভার বহন করবে।
৮. ক্ষতির বােঝা শ্রমিকের ঘাড়ে চাপানাে যাবে না। পারিশ্রমিকের বিনিময়ে যে শ্রমিক নিয়ােগ করা হয় উৎপাদনের ঘাটতির কারণে সে শ্রমিকের সম্মতি ব্যতীত তার মজুরিতে কোনাে প্রকার কমতি করা যাবে না ।
৯. শ্রমিকের চাকরির নিরাপত্তা থাকতে হবে। কোনাে কারণে তার চাকরি চলে গেলে তার প্রতি অবিচার করা হয়েছে কি না তা দেখে ন্যায়ভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইসলাম প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দিয়েছে। এরূপ ক্ষেত্রে শ্রমিক আইনের আশ্রয় গ্রহণ করার অধিকার রাখে।
১০. ইসলামী সরকার বৃদ্ধ, পঙ্গু, অসুস্থ নিঃসহায় প্রভৃতি দুঃস্থ শ্রেণীর লােকদের ভরণ-পােষণ ও তাদের যাবতীয় দায়িত্বভার গ্রহণ করে থাকে। এভাবে ইসলামে শ্রমিকদের বৃদ্ধ বা অসুস্থকালীন ভাতা ও সামাজিক নিরাপত্তা বিধান করা হয়েছে
(ইসলামী ফিকাহ ও ইসলামে শ্রমিকের অধিকার গ্রন্থসমূহ থেকে গৃহীত।)