কুটির শিল্প অনুচ্ছেদ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ শ্রেণি। Cottage industry Paragraph for class 6 7 8 9 10 11
কুটির শিল্প
আমাদের দেশের অতীত ঐতিহ্য কুটিরশিল্প। আমাদের দেশের পূর্বে অর্থনীতির চালিকাশক্তি ছিল এ কুটিরশিল্প। কুটিরশিল্প আমাদের গৌরব, আমাদের ঐতিহ্য। অল্প মূলধনে স্বল্পসংখ্যক ঘরে বসে যে শিল্প গড়ে তােলে তাই কুটিরশিল্প। এদেশের কুটিরশিল্পের অতীতের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবের। কামার, কুমার, তাতি, কাঁসারি, স্বর্ণকার প্রভৃতি শ্রেণি জীবিকার্জনের জন্য ঘরে বসে যেসব জিনিস উৎপাদন করে থাকে তাও কুটিরশিল্পজাত পণ্য। বাঁশ ও বেতের গৃহস্থালি ও শৌখিন সামগ্রী, হস্তজাত চামড়া সামগ্রী, সূচিকর্মের বিভিন্ন জিনিস কুটিরশিল্পজাত পণ্য। ইউরােপে আঠারাে শতকে শিল্পবিপ্লবের আগে কুটিরশিল্পই ছিল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের ভিত্তি। এদেশে ইংরেজ আমলের আগে কুটির শিল্প বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। ঢাকার মসলিনের এক সময় দুনিয়াজোড়া খ্যাতি ছিল। বর্তমানে আমাদের দেশের তাতিরা লুঙ্গি, গেঞ্জি, ধুতি, গামছা, শাড়ি, বিছানার চাদর প্রভৃতি উৎপাদন করে থাকে। তাঁতশিল্পের পরেই আমাদের দেশে মৃৎশিল্পের স্থান। আমাদের দেশের গ্রামের কুমােররা মাটির তৈরি হাঁড়ি পাতিল, বাসন-কোসন, কলস ইত্যাদি ব্যাপকভাবে তৈরি করে থাকে। আগে শৌখিন দালান, মসজিদ, মন্দির প্রভৃতিতে টেরাকোটার কাজ করা হতাে। এখন টেরাকোটা বিলুপ্ত প্রায়। তাম, কাঁসা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতু দিয়ে নিত্য ব্যবহার্য হাঁড়ি, পাতিল, জগ, গ্লাস প্রভৃতি তৈরি করা হয় আমাদের দেশে। বাংলাদেশের কুটিরশিল্পের মধ্যে চামড়া শিল্প বিশেষভাবে উল্লেখযােগ্য। সঠিক ব্যবস্থাপনা ও উদ্যোগের অভাবে আমাদের কুটিরশিল্প আজ মৃতপ্রায়। কুটিরশিল্প তার স্বীয় ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। আধুনিক যন্ত্রনির্ভর শিল্পের পাশাপাশি কুটিরশিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলতে হবে। এর জন্য দরকার সরকারি উদ্যোগ। সাম্প্রতিককালে ব্র্যাক, প্রশিকা প্রভৃতি বেসরকারি সংস্থা গ্রাম পর্যায়ে কুটিরশিল্পে বিনিয়ােগ করছে এবং পণ্যসামগ্রী প্রদর্শনী করছে। কুটিরশিল্পের পৃষ্ঠপােষকতার মাধ্যমে বেকারত্ব লাঘব ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে সচেষ্ট হতে হবে।