বিসিএস প্রস্তূতিসাধারণ জ্ঞান
জানেন কি? “চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকবে” টাকায় এটা লিখা কেন থাকে

সবাই হয়তো জেনে থাকবেন বাংলাদেশের (Bangladesh) টাকায় “চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে দিতে বাধ্য থাকবে” কথাটি লিখা থাকে। কিন্তু আমারা ঠিক জানিনা না এ লিখাটি কেন লিখা হয়। আমারা যারা জানিনা আজকের লিখাটি তাদের জন্য।
উত্তরটি জানার আগে, প্রথমে জানতে হবে টাকার ইতিহাস সম্পর্কে। আমারা সবাই জানি টাকার প্রচলনের পূর্বে স্বর্ণ মুদ্রার প্রচলন ছিল। কিন্তু ধাতুর তৈরি এই মুদ্রা ধিরে ধিরে ক্ষয় হতে থাকে এবং এর পরিমাণও কমে আসতে থাকে। অন্যদিকে নিজের সাথে অধিক পরিমান স্বর্ণমুদ্রা বহন করাটাও অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। সময়ের বিবর্তনে মানুষ শুরু করল বিকল্প উপায়। শুরু হল স্বর্ণ বন্ধক রেখে তার বিপরীতে ধাতব মুদ্রা বিনিময় করা। মজার বিষয় হল যার কাছে স্বর্ণ বন্ধক রাখা হত তিনি স্বর্ণের মালিকে একটি রশিদ দিতে। বর্তমানে অনেকটা চেকের মত। সেই রশিদ স্বর্ণকারের কাছে জমা দিলে তাকে দেওয়া হত ধাতব মুদ্রা।
কারন সেই রশিদে এই কথাটা লেখা থাকতো, চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে —মুদ্রা দিতে বাধ্য থাকিবে।
এরপর ধিরে ধিরে সভ্যতার বিকাশ ও আধুনিকায়নের ফলে ধাতব মুদ্রার বা স্বর্ণমুদ্রার প্রচলনকে ভেঙে দিল কাজগের টাকা বা ছাপা নোট। তবে প্রশ্ন হল চাইলেই কি যেকোনো দেশ তাদের ইচ্ছামত টাকা ছাপাতে পারে? উত্তর হল না। কারন মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) বলে অর্থনীতিতে একটি বিষয় রয়েছে। তাহলে কিসের উপর ভিত্তি করে দেশে টাকা ছাপানো হয়। ১৯৭১ সালের আগ পর্যন্ত টাকা ছাপানো হত ওই দেশের নিকট ঠিক কি পরিমাণ স্বর্ণ মজুদ আছে এটার ওপর ভিত্তি করে। ধরুন বাংলাদেশ সরকারের কাছে যদি ১০০ টন স্বর্ণ মজুদ থাকে তাহলে ১০০ টন স্বর্ণের বর্তমান বাজার মূল্যের সমপরিমান টাকা বাংলাদেশ সরকার ছাপাতে পারবে। এটা ছিল একটি আন্তর্জাতিক নিয়ম।
কি হবে যদি কোন দেশ এই নিয়মকে না মানে? উত্তরটি হল নেমে আসবে মুদ্রাস্ফীতি। ১৯৭১ সালে আমেরিকার (United States) সরকার আন্তর্জাতিক নিয়মকে তোয়াক্কা করে নিজেদের ইচ্ছামত টাকা ছাপিয়েছিল এবং অবশেষে মুদ্রাস্ফীতির স্বীকার হয়। ঠিক একই কাজটি করেছিল জিম্বাবুয়ে (Zimbabwe)। দেশটিতে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি চরমে।
তবে বর্তমানে স্বর্ণের উপর ভিত্তি করে টাকা ছাপানো হয় না। ছাপানো হয় দেশটির জিডিপির উপর।
অন্যদিকে বলা যায়, ছাপানো টাকা হল এক ধরনের বিল অফ এক্সচেঞ্জ। বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার বিপরীতে নোট ছাপে। এই কারনে এটা বাংলাদেশের জনগণের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়। বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলছি, ধারুন আপনার নিকট ৫০০ টাকার একটি নোট রয়েছে যাতে কোন সমস্যা রয়েছে। অর্থাৎ আপনি কোনমতেই টাকাটি ব্যবহার বা এক্সচেঞ্জ করতে পারছেন না। এমতাবস্থায় আপনি যদি বাংলদেশ ব্যাংকের নিকট ৫০০ টাকাটি জমা দেন তাহলে চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে অর্থাৎ আপনাকে সমপরিমাণ ১ ও ২ টাকা দিতে বাংলদেশ ব্যাংক বাধ্য থাকবে। এখন প্রশ্ন হল ১ ও ২ টাকা কেন? কারন হল ১ ও ২ টাকার নোট কিংবা কয়েন হলো সরকারি মুদ্রা।