Uncategorized

১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কালে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর অবদান

Rate this post
১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কালে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধুর অবদান
শ্রেণি ষষ্ট, বিষয়ঃ বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়। ২য় সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ এর সমাধান
১৯৫২ সাল থেকে শুরু করে ১৯৭১ এর সময় পর্যন্ত অনেক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল বাঙালি জাতিকে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তানের রাজধানী ছিল পশ্চিম পাকিস্তানে, ক্ষমতাও ছিল পশ্চিম পাকিস্তানীদেরই হাতে। অনেক আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশদের কাছ থেকে অর্জিত স্বাধীনতা সত্বেও পূর্ব পাকিস্তানীরা স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। অনেক ত্যাগ আর রক্তের বিনিময়ে আমরা পেলাম স্বাধীনতা। তবে এ স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। একটু একটু করে বহু আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অবশেষে আমরা পাই স্বাধীনতার স্বাদ। 

১৯৫২ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত সময়কালে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলন

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের গোড়াপত্তন হয়েছিল মূলত ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ৫২’তে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে পেলেও স্বাধীনতার স্বাদ তখনও আমরা পাইনি। অবশেষে ১৯৭১ সালে আমরা পেলাম স্বাধীনতার স্বাদ। স্বাধীনতা পর্যন্ত সময়কালে মুক্তিযুদ্ধের আন্দোলনের পিছনে সাক্ষী হয়ে আছে অনেক কাল।

৫২’র ভাষা আন্দোলন (১৯৫২)

১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ২১শে মার্চ মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার ঘোষণা দেন এতে পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ফলে ১১ই মার্চ ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় ধর্মঘট পালিত হয়।

২১শে ফেব্রুয়ারি ১৯৫২: ১৪৪ ধারা ভঙ্গের
প্রশ্নে পুরাতন কলাভবন প্রাঙ্গণে
আমতলায় ঐতিহাসিক ছাত্রসভা।

ধর্মঘট পালনকালে শেখ মুজিবসহ আরও কয়েকজন রাজনৈতিক কর্মীকে সচিবালয়ের সামনে থেকে গ্রেফতার করা হয়। আন্দোলন আরও জোরদার হতে থাকে।  আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে। ২০শে ফেব্রুয়ারি রাতে সভা করে ছাত্ররা ১৪৪ ধারা ভেঙে মিছিল বের করার সিদ্ধান্ত নেয়। ২২শে  ফেব্রুয়ারি পুলিশ ছাত্র জনতার মিছিলে গুলি বর্ষণ করে। সালাম-রফিক-বরকতসহ অনেকেই নিহত হন। ভাষার জন্য তাদের প্রান বৃথা যায় নি। অবশেষে ১৯৫৪ সালের ৭ মে মুসলিম লীগের সমর্থনে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষার মর্যাদা দেয়া হয়

৬ দফা আন্দোলন (১৯৬৬)

এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় এবং শােষণ-বঞ্চনার প্রতিবাদ করতে গিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বহুবার গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন।

শেখ মুজিবুর রহমান
১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি 
লাহোরে ছয় দফা পেশ করছেন।

১৯৬৬ সালে তিনি পেশ করেন বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ছয় দফা। এ সময় নিরাপত্তা আইনে তিনি বারবার গ্রেফতার হতে থাকেন। আজ গ্রেফতার হয়ে আগামীকাল জামিনে মুক্ত হলে সন্ধ্যায় তিনি আবার গ্রেফতার হন। এরকমই চলে পর্যায়ক্রমিক গ্রেফতার। তিনি কারারুদ্ধ জীবনযাপন করতে থাকেন। তাঁকে প্রধান আসামি করে দায়ের করা হয় আগরতলা মামলা।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান (১৯৬৯)

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ১৯৬৯ সালের জানুয়ারি ৫ তারিখে দফা দাবি পেশ করে যার মধ্যে শেখ মুজিবের ছয় দফার সবগুলোই দফাই অন্তর্ভুক্ত ছিল। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে দেশব্যাপী ছাত্র আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হয়। যা পরবর্তীতে গণ আন্দোলনের রূপ নেয়। এই গণ আন্দোলনই ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান নাম পরিচিত। মাসব্যাপী চলতে  থাকে আন্দোলন, কারফিউ, ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, পুলিশের গুলিবর্ষণ। পরবর্তীতে এই আন্দোল চরম রূপ ধারণ করলে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খান তাদের রাজনৈতিক নেতাদের দিয়ে গোলটেবিলে বৈঠকে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। 

৭০’ এর সাধারণ নির্বাচন (১৯৭০)

বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মাইলফলক। সামরিক শাসন এবং পাকিস্তানী সামরিক গণতন্ত্র বিরোধী অপশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ আন্দোলনের পর আসে এই নির্বাচন। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক আইনসভায় নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। জাতীয় পরিষদের ১৬৯টি আসনের মধ্যে ১৬৭টিতে এবং প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে জয় লাভ করে আওয়ামী লীগ।

৭১’র মুক্তিযুদ্ধ (১৯৭১)

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকবাহিনীর হত্যাযজ্ঞে সারা বাংলাদেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। এমনি অবস্থায় গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে স্বাধীনতার ঘােষণা দেন তা ওয়ারলেসের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম.এ. হান্নান কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে পাঠ করলে সারাদেশে ব্যাপক আলােড়ন সৃষ্টি হয়। পূর্ব বাংলা রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের হয়ে ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম প্রচার করে, ফলে বিশ্ব বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ঘোষণা সম্পর্কে জানতে পারে।

বঙ্গবন্ধুর অবদান

ভাষা আন্দোলনের সময় থেকে স্বাধীনতার সময় পর্যন্ত যে মানুষটি সামনে থেকে বাংলার ধামাল ছেলেদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে ছিল তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজকের যে স্বাধীন সোনার বাংলাদেশ আমরা পেয়েছি তার পিছনে সবচেয়ে বড় কারন হল বঙ্গবন্ধু। হাজার বছরের ইতিহাসে বাঙালির শ্রেষ্ঠতম অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। আর এই স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে যার নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে, তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 
ক) “উর্দুই পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হবে।” এ ঘোষণার পর বঙ্গবন্ধু জেলে থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে পরোক্ষভাবে পরিচালনার মাধ্যমে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ আয়োজনে তিনি সাহসী ভূমিকা রাখেন। 
খ)  ১৯৫৫ সালের ৫ জুন আইন পরিষদের সদস্য মনোনীত হলে তিনি  পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে ২১ দফা দাবি পেশ করেন, যার মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল।
গ) সেনাবাহিনী প্রধান আইয়ুব খান দেশে সামরিক আইন জারি করলে বঙ্গবন্ধু সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন করেন। যার ফলে  তাকে কয়েকবার কারাগারে যেতে হয়েছিল।
ঘ) ১৯৬৬ সালে তিনি পেশ করেন বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক মুক্তির সনদ ছয় দফা দাবি পেশ করেন। যা বৈষম্য নিরসনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিল। 
ঙ) ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দের ৫ই ডিসেম্বর শহীদ সোহ্‌রাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় শেখ মুজিব পূর্ব পাকিস্তানকে “বাংলাদেশ” নামে নামকরণের ঘোষণা দেন
চ) উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান পথিকৃৎ ছিলেন বঙ্গবন্ধু। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক মুক্তি সংগ্রামের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় থাকা আইয়ুব খান সরকারের পতন ঘটে এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে।
ছ) ৭ ই মার্চ ১৯৭১ এর বঙ্গবন্ধুর  ঐতিহাসিক ভাষণ বাঙালিদেরকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান জানায়।
জ) ১৯৭১ সালের  ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। তারই ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সাহস করেছি। 
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের হাজার বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তিনি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। মুক্তির দিশারি। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কখনও বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Back to top button