ইসলাম ও জীবন

কোরবানি সম্পর্কে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা | ইসলামিক প্রশ্নোত্তর | শায়খ আহমাদুল্লাহ

4.9/5 - (41 votes)

কোরবানি বলা হয় ঈদুল আজহার দিনগুলোতে নির্দিষ্ট প্রকারের গৃহপালিত পশু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য জবেহ করা। ইসলামি শরিয়তে এটি এবাদত হিসেবে সিদ্ধ, যা কোরআন, হাদিস ও মুসলিম উম্মাহর ঐক্যমত দ্বারা প্রমাণিত। কোরআন মজীদে যেমন এসেছে।

তোমারা প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাতা আদায় করো ও পশু কোরবানি কর। (সুরা কাওসারঃ ২)

কোরবানি নিয়ে ১০টি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা 

প্রশ্নঃ কোরবানি কখন থেকে  করা যায় এবং কত সময় পর্যন্ত কোরবানি করা যায়?

উত্তরঃ  আমরা অনেকেই মনে করি শুধুমাত্র কোরবানির ঈদের দিনই কোরবানি করা যায়। আসলে কোরবানি ঈদের দিন ছাড়াও ঈদের পরের দুই দিন অর্থাৎ মোট তিনদিন পর্যন্ত করা যায়। আর কোরবানি করার সময় হল ঈদের নামাযের পর থেকে পরবর্তী দুই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত। 

প্রশ্নঃ দাত দেখে পশুর বয়স নির্ধারণ করলে তা গ্রহণযোগ্য কিনা?

উত্তরঃ কোরবানির ক্ষেত্রে গরু হলে দুই বছর, ছাগল হলে এক বছর, উট হলে পাঁচ বছর বয়স হতে হবে। অনেকেই পশুর দাত দেখে পশুর বয়স নির্ধারণ করে থাকেন। অর্থাৎ, এক দাত হলে এক বছর, দুই দাত হলে দুই বছর। দাত দেখে পশুর বয়স নির্ধারণ এটা গ্রহণযোগ্য। যেহেতু এটা অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। 

প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া যায় কিনা?

উত্তরঃ সহজ উত্তর যায়। এ নিয়ে কোন দ্বিমত নেই। 

প্রশ্নঃ কোরবানির দিন হাস-মুরগি জবেহ করা যাবে কিনা?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেকেই মনে করেন কোরবানির দিন  হাস-মুরগি জবেহ যাবে না। এটা নিতান্তই একটি ভুল ধারণা। কোরবানির দিন হাস-মুরগি জবেহ করা যাবে, এতে কোন সমস্যা বা নিষেধ নেই।

প্রশ্নঃ নিজের নামে কোরবানি না দিয়ে মা-বাবার নামে কোরবানি দেওয়া যাবে কিনা?

উত্তরঃ আমাদের দেশে অনেকেই আছেন নিজে উপার্জন করেন কিন্তু মা-বাবার নামে কোরবানি দিয়ে থাকেন। এটা ভুল। কারণ কোরবানির সাথে যিনি উপার্জন করছেন তার সম্পর্ক এখানে সম্মানের কোন সম্পর্ক নেই। 

প্রশ্নঃ কোরবানির গোশত কী তিনভাগে ভাগ করতে হবে?

উত্তরঃ এই প্রশ্নের উত্তর হল যিনি কোরবানি দিচ্ছেন তার ইচ্ছা অনুযায়ী তিনি খেতে পারেন বা বণ্টন করতে পারেন। তবে আল-কোরানের একটি আয়াতে আল্লাহ্‌পাক বলেছেনঃ তোমরা নিজেরা কোরবানির পশু থেকে খাও এবং যা অভাবী ও চায় তাদের দাও আর যারা চাইতে পারে না তাদেরকেও দাও। এখান থেকে বুঝা যায় তিনভাগে ভাগ করা মুস্তাহাব বা উত্তর। কিন্তু এটি আবশ্যক বা জরুরি কোন বিষয় নয়। 

প্রশ্নঃ কোরবানির গোশত দীর্ঘ দিন রেখে খাওয়া যাবে কিনা?
উত্তরঃ এর উত্তর হল হ্যাঁ, যাবে। আপনি ফ্রিজে রেখে বা অন্য যেকোনভাবে সংরক্ষন করে খেতে পারেন। এতে  কোন অসুবিধা নেই। 

প্রশ্নঃ কোরবানি এবং আকিকা একই পশুতে দেওয়া যাবে কিনা?
উত্তরঃ খুবই কমন একটি প্রশ্ন। এ ব্যপারে ভিন্ন মত রয়েছে। অনেক আলেম বলেছেন, কোরবানি এবং আকিকা দুটি পৃথক ইবাদাত। অনেক দিক থেকে মিল থাকলেও ভিন্নতা রয়েছে। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে তারা বলেন যে, হযরত মুহাম্মদ (সঃ) কোরবানির ক্ষেত্রে এক পশুতে সাত ব্যক্তির কথা বলেছেন। আকিকার বিষয়ে তিনি এমন কোন কথা বলেননি। যার কারণে আকিকাকে কোরবানির মধ্যে ইনক্লুড করা জায়েয হবে না। তবে অনেকে ঈদের দিনে আকিকা দিয়ে থাকেন। এটাও সুন্নাহ বিরোধী হবে। কারণ যদি কারো সামর্থ্য থাকে তিনি ৭তম দিনে অথবা ১৪তম দিনে অথবা ২১তম দিনে আকিকা দিবেন। কোরবানি পর্যন্ত আকিকাকে দেরি করা উচিত নয়। আবার অনেক ওলামায়ে একেরামের মতে কোরবানি এবং আকিকা একই পশুতে দেওয়া যাবে। তবে এ ব্যাপারে সরাসরি কোন হাদিস আমার জানা নেই। তবে এটা ওলামায়ে একেরাম কিয়াসের মাধ্যমে প্রমাণ করে থাকেন। এটাও একটি ইস্তিহাদ।

প্রশ্নঃ কোন কারণে কেউ কোরবানি করতে না পারলে তিনি কী করবেন?
উত্তরঃ যদি কেউ পশু কিনে থাকেন কিন্তু কোরবানি করার কোন সুযোগ বা পরিবেশ পাচ্ছেন না অথবা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনভাবেই তিনি পশু কোরবানি করতে পারছেন না তাহলে তিনি সেই পশুটি কোন অভাবী মানুষকে তিনি সাদাকা দিয়ে দিবেন। অথবা আরেকটি মাসাআলা হল পশু কিনার সমপরিমান অর্থ তিনি সাদাকা দিয়ে দিবেন। 

প্রশ্নঃ কোরবানি পশুর চর্বি, হাড্ডি বিক্রি করা যাবে কিনা?
উত্তরঃ আমরা আজকাল দেখি অনেকেই কোরবানির এক দুই দিন পর ভ্যানে করে পশুর চর্বি, হাড্ডি ইত্যাদি ভ্যানে করে বিক্রি করে থাকেন। কোরবানি পশুর কোনকিছুই বিক্রি করা জায়েজ নেই। সবগুলো হয় নিজে খাবেন না হয় দান করে দিবেন। কিন্তু বিক্রি করার জায়েজ নেই। কোরবানি করলেন মানে আল্লাহকে তা দিয়ে দিলেন। আর এটা বিক্রি করার কোন অধিকার আপনার নেই। 

আল্লাহপাক আমাদের সকলে সঠিক ও শুদ্ধভাবে কোরবানি করার তৌফিক দান করুন। আমিন

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button