
পরিবেশ বাঁচলে বাঁচবে পৃথিবী
প্রতিবেদন
ভূমিকা
পৃথিবী আমাদের আবাসভূমি। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে রয়েছে নানা রকম পরিবেশ ও প্রকৃতি এবং মানুষ ও মানুষের বিভিন্ন রকম সামাজিক সাংস্কৃতিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এসবকিছুই আধুনিক ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। মানুষের আবাসভূমি হিসেবে পৃথিবীর বর্ণনা হলো ভূগোল। ইংরেজি Geography শব্দটি থেকে ভূগোল শব্দ এসেছে। প্রাচীন গ্রিসের ভূগোলবিদ ইরাটসথেনিস প্রথম Geography শব্দের ব্যবহার করেন। Geo শব্দের অর্থ পৃথিবী এবং Graphy শব্দের অর্থ হলো বর্ণনা। সুতরাং Geography শব্দটির অর্থ পৃথিবীর বর্ণনা। ভূগোল একদিকে প্রকৃতির বিজ্ঞান আবার অন্যদিকে পরিবেশ ও সমাজের বিজ্ঞান।
পরিবেশের উপাদান
মানুষ যেখানে বাস করুক তাকে ঘিরে একটি পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিরাজমান। প্রকৃতির সকল দান মিলে মিশে তৈরি হয় পরিবেশ। পরিবেশের উপাদান দুই প্রকার। যেমনঃ জড় উপাদান ও জীব উপাদান। যাদের জীবন আছে, যারা খাবার খায্ যাদের বৃদ্ধি আছে জন্ম আছে মৃত্যু আছে তাদের বলে জীব উপাদান। গাছপালা পশুপাখি কীটপতঙ্গ মানুষ ও অন্যান্য প্রাণী হল এরা পরিবেশের জীব উপাদান। জীবদের নিয়ে গড়া পরিবেশ হল জড় পরিবেশ। মাটি, পানি, বায়ু, পাহাড়-পর্বত, নদী, সাগর, আলো, উষ্ণতা, আদ্রতা হলো পরিবেশের জড় উপাদান এই জড় উপাদান নিয়ে গড়া পরিবেশ হলো জড় পরিবেশ।
ভূগোলের শাখা
![]() |
ভূগোলের শাখা |
ভূগোলের শাখা কে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১) প্রাকৃতিক ভূগোল ও
২) মানব ভূগোল
প্রাকৃতিক ভূগোল
ভূগোলের যে শাখায় ভৌত পরিবেশ ও এর মধ্যে কার্যরত বিভিন্ন প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত থাকে তাকে প্রাকৃতিক ভূগোল বলে। যেমনঃ ভূমিরূপবিদ্যা, জলবায়ুবিদ্যা, জীবভূগোল, মৃত্তিকাভূগোল, সমুদ্রবিদ্যা।
মানব ভূগোল
পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন পরিবেশে মানুষ কিভাবে বসবাস করছে, কিভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছ্ কেন এভাবে জীবনযাত্রা নির্বাহ করছে তার কার্যকরণ অনুসন্ধান মানব ভূগোলের আলোচ্য বিষয়। যেমনঃ অর্থনৈতিক ভূগোল, জনসংখ্যা ভূগোল, আঞ্চলিক ভূগোল, রাজনৈতিক ভূগোল, সংখ্যাতাত্ত্বিক ভূগোল, পরিবহন ভূগোল, নগর ভূগোল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা।
ভূগোল ও পরিবেশের আন্তঃসম্পর্ক
ভূগোল ও পরিবেশ দুইটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবেশ বিহীন ভূগোলের অস্তিত্ব থাকেনা। আলেকজান্ডার ফন হামবোল্ট (Alexander Von Humbolt) মতে, ভূগোল হলাে প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত বিজ্ঞান, প্রকৃতিতে যা কিছু আছে তার বর্ণনা ও আলােচনা এর অন্তর্ভুক্ত। মানুষ পৃথিবীতে বাস করে এবং এই পৃথিবীতেই তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক পরিবেশ তার জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করে। পৃথিবীর জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি, উদ্ভিদ, প্রাণী, নদ-নদী, সাগর, খনিজ সম্পদ তার জীবনযাত্রাকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। তার ক্রিয়াকলাপ তার পরিবেশে ঘটায় নানান রকম পরিবর্তন। ঘরবাড়ি, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাট, শহর-বন্দর নির্মাণ প্রকৃতি ও পরিবেশকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে। বনভূমি কেটে তৈরি হয় গ্রাম বা শহরের মতাে লােকালয়। খাল, বিল, পুকুর ভরাট হয়। মানুষ ও পরিবেশের মধ্যে এই মিথস্ক্রিয়ার একটি সম্বন্ধ আছে। এই সম্বন্ধের মূলে আছে কার্যকারণের খেলা। ভূগােলের প্রধান কাজ হলাে এই কার্যকারণ উদঘাটন করা। পৃথিবীর পরিবেশের সীমার মধ্যে থেকে মানুষের বেঁচে থাকার যে সগ্রাম চলছে সে সম্পর্কে যুক্তিপূর্ণ আলােচনাই ভূগােল।
পরিবেশ সংরক্ষণে আমাদের ভূমিকা
পৃথিবীতে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী অস্তিত্বের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশের সংরক্ষণ অত্যাবশ্যক। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা এবং স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে জীবনযাপন করতে হলে পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা দরকার। পরিবেশ সংরক্ষণ বলতে বােঝায় মানুষ, অন্যান্য প্রাণি ও উদ্ভিদের স্বাভাবিক জীবন বিকাশের নিশ্চয়তা। পরিবেশ সংরক্ষণ মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। ক) ভৌত সংরক্ষণ, যেমন-ভূ-গর্ভস্থ পানি, খনিজ, রূপা, সােনা, তামা, সীসা, কয়লা, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস সুরক্ষিত করা ও গুণমান বজায় রাখা। খ) জীব সংক্রান্ত সংরক্ষণ, যেমন-বিভিন্ন জীব বা জীব প্রজাতি। পরিবেশ সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্য প্রকৃতি এবং প্রাকৃতিক সম্পদসমূহের যথাযথ ব্যবহার সুরক্ষা এবং পরিচালনা। পরিবেশ সংরক্ষণের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ বিচক্ষণতার সঙ্গে ব্যবহার করা যায় এবং যাবতীয় ভারসাম্যও নিয়ন্ত্রিত থাকে।
উপসংহার
মানুষ বিভিন্ন পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে পৃথিবী পরিমন্ডলের বাস করে। এই পারিপার্শ্বিক অবস্থাই মানুষের পরিবেশ। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলতে আমাদের চারপাশের আকাশ, বাতাস, মাটি, জল, গাছপালা এবং পশুপাখিকে বােঝায়। পরিবেশের এই উপাদানগুলােই মানুষকে প্রভাবিত করে এবং পরিবেষ্টিত রাখে। মানব সভ্যতার এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং প্রকৃতির দান এই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর ভিত্তি করে মানুষ বেঁচে থাকে, জীবনীশক্তি পায় ও সভ্যতার বিকাশ সাধিত হয়। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও সভ্যতা আজ হুমকির সম্মুখীন। দেখা দিচ্ছে নানা ধরনের বিপর্যয় বা দুর্যোগ। প্রাকৃতিক দুর্যোগ জীবনযাত্রাকে কখনও কখনও বিপর্যস্ত ও দুর্বিষহ করে তােলে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ রােধ করা মানুষের পক্ষে এখনও অসাধ্য। তাই আমাদের উচিৎ দুর্যোগের প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিকভাবে জানা এবং এর মােকাবেলা, প্রস্তুতি, সতর্কতা ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সম্যক জ্ঞান নিয়ে এর ঝুঁকি ও ক্ষতি যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করা। সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে হলে, পরিবেশের উন্নয়ন ঘটাতে হলে এই বিপর্যয় রােধ করা প্রয়ােজন। আর এজন্য দরকার পরিবেশ সংরক্ষণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা অর্জন ও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
onek valo