বাংলা রচনা

রচনাঃ তোমার জীবনের লক্ষ্য

3/5 - (5 votes)
তোমার জীবনের লক্ষ্য রচনা, আমার জীবনের লক্ষ্য রচনা
ছবিঃ iStockphoto

ভূমিকা

মানবজীবন খুবই সংক্ষিপ্ত। এই সংক্ষিপ্ত জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে গড়ে তোলার জন্য দরকার সুনির্দিষ্ট জীবনের লক্ষ্য। লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মতো। তাই জীবনের শুরুতে একটা লক্ষ্য স্থির করে নেওয়া উচিত।
তবে সকলেই জীবনে সফলতা অর্জন করতে পারে না। তবুও বড় হওয়ার জন্য সব মানুষেরই স্বপ্ন থাকে, এবং তা থাকা দরকার। সফলতা অর্জনের প্রথম শর্ত হলো লক্ষ্য ঠিক করা। মহাসমুদ্রে নাবিকরা যেমন দ্রুবতারাকে লক্ষ্য করে বিশাল সমুদ্র পাড়ি দেয়, তেমনি শৈশব থেকেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে এগিয়ে চলা উচিত।
লক্ষ্য স্থিরের মাধ্যমেই শৈশবের জীবন হতে পারে সুন্দর এবং দিকভ্ৰষ্টহীন। আমাদের মনে রাখতে হবে – 
‘সংসার সিন্ধুতে ধ্রুবতারা সমস্থির লক্ষ্য চাই,
লক্ষ্যবিহীন জীবনতরণী কূল নাহি কভু পায়।’

জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা

শৈশব থেকেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করার প্রয়োজনীয়তা অনেক গুরুত্ব বহন করে। শৈশব থেকেই জীবনের উদ্দেশ্য নিয়ে ভাবা উচিত। কারণ একটি সুদৃঢ় লক্ষ্য জীবনে সার্থক ও সুন্দর করতে পারে।
এ জন্যে যথাসময়ে বীজ বপন এবং আনুষঙ্গিক পরিশ্রম ও সাধনার দরকার। তেমনি জীবনের উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়ােজন সাধনার, প্রয়ােজন একনিষ্ঠ শ্রমের। ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘An aimless life is like a boat without a rudder.’ তাই জীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথরেখা। লক্ষ্য ঠিক রেখে শ্রম, নিষ্ঠা, অধ্যাবসায় ও একাগ্রতা নিয়ে অগ্রসর হলে জীবনের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। 

জীবনের লক্ষ্য স্থিরের উপযুক্ত সময় 

বলা হয়ে থাকে ছাত্রজীবন হলো বীজ বপনের আসল সময়। ছাত্রজীবন পরিণত জীবনেরপূর্ব প্রস্তুতি। ছাত্রাবস্থার স্বপ্ন ও কল্পনা পরিণত জীবনে বাস্তবের মাটিতে ফুলে-ফলে সুশােভিত হয়ে সার্থক হয়। কিন্তু স্বপ্নতো সবাই দেখে। কয়জন সার্থক হয়?
স্বপ্ন কেবল স্বপ্ন হলেই, কিংবা কল্পনা, অবাস্তব ও উদ্ভট হলেই চলে না; পরিণত জীবনের লক্ষ্যবাহী হওয়া চাই। সেজন্যে ছাত্রাবস্থাতেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করতে হয়। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে অগ্রসর হতে হবে। 

জীবনের লক্ষ্য স্থিরের ভিত্তি

মনে রাখতে হবে বিচিত্র পথে মানুষের কর্মজীবন বিকশিত হতে পারে। এক এক মানুষের চিন্তা তাদের চাওয়া পাওয়া ভিন্ন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের সাধনা, চিকিৎসা-সেবা দান, শিল্প-কলকারখানাস্থাপন, ব্যবসায়-বাণিজ্যের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা পালন- নানাভাবে মানুষ কর্মজীবনে ভূমিকা রাখতে পারে। কেউ নিজিকে একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে দেখতে চায় কেউ আবার চায় এখন ভালো ডাক্তার আবার কেউ বা সরকারি বা বেসরকারি চাকরি কেউ বা আবার ব্রতী হতে পারে শিক্ষকতার মহান পেশায়।
ব্রতী যেটাই হোক না কেন, জীবনের লক্ষ্য স্থিরের ভিত্তি হতে হবে নিজের শারীরিক সামর্থ্য, শিক্ষাগত যোগ্যতা , আর্থিক সচ্ছলতা এবং উপযুক্ত পরিবেশ। 

জীবনের লক্ষ্য ও পাঠ্যক্রম

পাঠ্যক্রম জীবনের লক্ষ্য স্থিরের পিছনে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশে সাধারণত মাধ্যমিক পর্যায়েই পাঠক্রমকে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায়ে সাধারণ শিক্ষা পাঠক্রমকে প্রধানত তিনটি শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে। তা হলো –

    ক) বিজ্ঞান শাখা
    খ) মানবিক শাখা
    গ) ব্যবসায় শাখা 
এই শাখাগুলাের অন্তর্গত এমন অনেক শাখা-উপশাখাভিত্তিক বিষয় রয়েছে যেগুলাের কোনাে একটির অধ্যয়ন ও গবেষণার পরিসর অনেক বিশাল এবং সেগুলােকে কেন্দ্র করে উচ্চতর শিক্ষার পাঠক্রম গড়ে উঠেছে। পাঠক্রম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ইচ্ছাকেই গ্রহণ করতে হয়। যার যে বিষয়ে আগ্রহ আছে তাকে সে বিষয়ে পড়তে দেওয়াই যুক্তিসংগত।
শুধু আগ্রহ থাকলেই চলে না, তা বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্যে শিক্ষার্থীকে নিবিড়ভাবে অধ্যয়ন করতে হয়। কেননা এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলাের জন্যে তীক্ষ্ণ মেধা ও পড়াশােনা প্রয়ােজন হয়। যেমন- কম্পিউটার বিজ্ঞান, চিকিৎসা বিজ্ঞান, প্রকৌশল বিজ্ঞানের কোনাে শাখায় অধ্যয়নের জন্যে শিক্ষার্থীকে কেবল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অসাধারণ ভালাে ফলাফল করলেই চলে না, প্রতিযােগিতামূলক পরীক্ষায়ও কৃতিত্ব প্রদর্শন করতে হয়। 

আমার জীবনের লক্ষ্য 

আমার জীবনের লক্ষ্য আমি একজন সুদক্ষ কৃষক হব। আমার লক্ষ্য জেনে অনেকে হয়ত আমাকে উপহাস করবে। কিন্তু আমার জীবনের স্থির লক্ষ্যই হল কৃষক হওয়া। আমার লক্ষ্যকে অনেকে সামান্য এবং ছোট মনে করতে পারে। যারা এ রকম মনে করে, আমি তাদের দোষ দিই না। কারণ দোষ তাদের নয়, দোষ তাদের দৃষ্টির সংকীর্ণতার এবং উন্নত বিশ্ব ও কৃষির উন্নয়নের সঙ্গে দেশ ও জাতির উন্নয়ন যে জড়িত সে সম্পর্কে অজ্ঞতার।
কৃষক বললে সবাই আমাদের দেশের গতানুগতিক ধারার মান্ধাতার আমলের সেই কৃষক, যাদের শিক্ষা নেই, স্বাস্থ্য নেই, দুই বেলা দুই মুঠো পেট ভরে খাওয়ারও সংস্থান নেই, আর্থিক সচ্ছলতা নেই তাদের কথা ভেবে থাকে। আমি সে-রকম কৃষক হওয়ার কথা ভাবছি।
আমি আধুনিক যুগের শিক্ষিত, সুদক্ষ, বিজ্ঞাননির্ভর প্রগতিশীল কৃষক হতে চাই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলাে আজ বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষ-আবাদ করে কৃষিক্ষেত্রে এনেছে বিপুল পরিবর্তন। দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করেছে। দারিদ্রকে চিরবিদায় দিয়েছে। সােনার বাংলায় আমি আবার সােনার ফসলে ভরে দিতে চাই। চাই দরিদ্রতার অভিশাপ থেকে আমাদের দেশের শতকরা আশি ভাগ কৃষককে মুক্তি দিতে। এদেশে ঘটাতে চাই কৃষিবিপ্লব।
এই মুহূর্তে মনে পড়ে বঙ্কিমচন্দ্রের (Bankim Chandra Chatterjee) অবিস্মরণীয় পঙক্তিগুলাে – 

“দেশের মঙ্গল কাহার মঙ্গল? তােমার আমার মঙ্গল দেখিতেছি, কিন্তু তুমি আমি কি দেশ? তুমি আমি দেশের কয়জন? আর এই কৃষিজীবী কয়জন? তাদের ত্যাগ করিলে দেশে কয়জন থাকে? হিসাব করিলে তাহারাই দেশ- দেশের অধিকাংশ লোকই কৃষিজীবী।”

এরকম লক্ষ্য স্থির করার কারণ

বন্ধুমহলের কেউ হতে চায় ডাক্তার, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ ম্যাজিস্ট্রেট, কেউবা অর্থনীতিবিদ। সকলে চাকরিকেই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেছে। বাংলাদেশে (Bangladesh) এই চাকরিপ্রিয়তা এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে, তার ফলে সমস্ত দেশে কৃষি বিমুখতা দেখা দিয়েছে। যে কৃষি আমাদের দেশের অর্থনীতির মূল উৎস এবং যে কৃষি নানা উপায়ে আমাদের দেশে লােকসংখ্যার অধিকাংশের জীবিকার আয়ােজন করে দেয়, তার পরিচালনার দায়িত্ব।
মুষ্টিমেয় নিরক্ষর, রুগ্ণ, পরিবর্তন বিমুখ, দরিদ্র কৃষকের হাতে তুলে দিয়ে আমরা নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছি। এটা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, দুঃখের বিষয়, লজ্জার বিষয়! আমাদের শিক্ষিত যুবসমাজের কেউ কি সেই মাটির ডাকে সাড়া দেবে না? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আহ্বানও কি কেউ শুনবে না?- “ফিরে চল ফিরে চল মাটির টানে” 
আমি কবিগুরুর আহ্বানে মাটির কোলেই ফিরে যেতে চাই। আমি পেতে চাই নজরুলের (Kazi Nazrul Islam) বন্দনা

“শ্রম-কিণাঙ্ক-কঠিন যাদের নির্দয় মুঠিতলে
এস্থা ধরণী নজরানা দেয় ডালি ভরে ফুলে ফলে।
তারই তরে ভাই গান রচে যাই, বন্দনা করি তারে।’

দেশের অবস্থার সঙ্গে আমার লক্ষ্যের যােগসূত্র

আজ আমাদের শিল্পবিধ্বস্ত-কৃষি অত্যন্ত দুর্দশাগ্রস্ত। দিনের পর দিন শােষক-শাসকেরা এ দেশকে কামধেনুর মতাে দোহন করে নিয়ে গেছে। ক্ষমতার অতিরিক্ত উৎপাদন করে বাংলাদেশের কৃষি আজ সর্বস্বান্ত। অথচ স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের লক্ষ্য ছিল- ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা একটি সােনার বাংলাদেশ গড়ে তােলার। স্বপ্নের বাংলাকে বাস্তবিক সােনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে আমার লক্ষ্যের বিকল্প নেই। 

সার্থকতা

আমাদের দেশের কৃষক ভোতা লাঙ্গল, রুগ্ণ হাল-বলদ ও নিকৃষ্ট বীজ নিয়ে সারহীন জমিতে যথাসম্ভব স্বল্প পরিমাণ ফসল ফলিয়ে চলছে। সেচের জল তারা ঠিকমত পায় না। এখনও তারা দৈব-নির্ভর। চোখের জলে আর ঘামে মাটি ভিজে ওঠে, তবুও নদীর জল এসে আমাদের জমিতে পৌছায় না। আমি নতুন উদ্যমে এই হতাশাক্লিষ্ট কৃষকদের পাশে দাঁড়াতে চাই। উন্নত সারের ব্যবহার সম্পর্কে আজও তারা অজ্ঞ। উন্নত বীজ সংগ্রহে এখনও তাদের উদাসীনতা।
আজও অভাব, দারিদ্র্যের এক নিষ্করুণ চিত্র। তার ওপর অশিক্ষার অন্ধকার। কুসংস্কারের আনুগত্য। রােগ-মহামারীর অভিশাপ। বস্তুতঃ কৃষকদের উন্নতি ব্যতীত কৃষিপ্রধান এই দেশের সামগ্রিক উন্নতি সম্ভব নয়। তাই আমি কৃষি সেবার মাধ্যমে যতটুকু সাধ্য দেশ সেবা করে যাব। আর এর মাঝেই আমার জীবনের স্বপ্ন ও লক্ষ্যের সার্থকতা নিহিত বলে আমি মনে করি। 

উপসংহার

কৃষিসাধনাই দেশের সমৃদ্ধি সাধনার মূল চাবিকাঠি। কৃষিই দেশের সকল উন্নয়নের রুদ্ধদ্বার খুলে দিবে। মানুষের মুখে হাসি ফোটাবে। আমার বিশ্বাস, যদি আমার চেষ্টায় কোনাে ত্রুটি না থাকে এবং মনের একাগ্রতা অটুট থাকে, তবে আমি এ বিষয়ে নিশ্চয়ই সফল হব।
‘মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পাতন।’-এ শপথ বাক্য আমাকে সাফল্যের সিংহদ্বারে পৌছে দেবে, আমার প্রাণে নতুন উদ্যম ও নতুন প্রেরণা জোগাবে। স্রষ্টার কাছে প্রার্থনা করি
‘তােমার পতাকা যারে দাও
তারে বহিবারে দাও শকতি।’

আমাকে শক্তি দাও, সামর্থ্য দাও, প্রাণে আর মনে দাও স্বপ্ন সাধনার অপরাজেয় উৎসাহ।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button