ইসলাম ও জীবনদোয়াফজিলতযিকির

সালাতের আগে-পরে ও মাঝে জিকিরসমূহ – পর্ব ১

Rate this post
প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তাই আল্লাহর কাছে নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় ইবাদাত। কালেমার পর নামাজ হল ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ব। জান্নাত লাভের প্রধান উপায় হল সালাত। যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে পরকালে তাদের স্থান হবে জান্নাতের উত্তম স্থানে। আর যারা নিয়মিত সালাত আদায় করবে না তাদের স্থান হবে জাহান্নামে। সালাতের গুরুত্ব আরো বেশি গুনে বৃদ্ধি পায় যদি তার সাথে জিকির যোগ করা হয়। সালাতের গুরত্ব জানতে এই পোষ্টটি পড়ুন।

১. ওযুর পূর্বে জিকির:

بِسْمِ اللّٰهِ
বিস্‌মিল্লাহ্
অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে
[আবূ দাউদ, নং ১০১; ইবন মাজাহ্‌, নং ৩৯৭; আহমাদ নং ৯৪১৮। আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল ১/১২২।]

২. ওযু শেষ করার পর জিকির #১

أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللّٰهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ
আশ্‌হাদু আল্লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্‌দাহু লা- শারীকা লাহূ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আব্দুহূ ওয়া রাসূলুহূ
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
[মুসলিম ১/২০৯, নং ২৩৪।]

২.১ ওযু শেষ করার পর জিকির #২

اللّٰهُمَّ اجْعَلْنِيْ مِنَ التَّوَّابِيْنَ وَاجْعَلْنِيْ مِنَ الْمُتَطَهِّرِيْنَ
আল্লা-হুম্মাজ‘আলনী মিনাত্ তাওয়াবীনা ওয়াজ‘আলনী মিনাল মুতাতাহ্‌হিরীন
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে তাওবাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করুন এবং পবিত্রতা অর্জনকারীদেরও অন্তর্ভুক্ত করুন।
[তিরিমিযী-১/৭৮, নং ৫৫। আরও দেখুন, সহীহুত তিরমিযী, ১/১৮।]

২.২ ওযু শেষ করার পর জিকির #৩

سُبْحانَكَ اللّٰهُمَّ وَبِحَمْدِكَ، أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، أَسْتَغْفِرُكَ وَأَتُوْبُ إِلَيْكَ 
সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা ওয়া বিহামদিকা আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লা আন্তা আস্তাগফিরুকা ওয়াআতূবু ইলাইকা
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনার প্রশংসাসহ পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি। আমি সাক্ষ্য দেই যে, আপনি ছাড়া কোন হক্ব ইলাহ নেই, আমি আপনার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনার নিকট তওবা করছি
[নাসাঈ, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ, পৃ. ১৭৩। আরও দেখুন, ইরওয়াউল গালীল, ১/১৩৫, ৩/৯৪।]

৩. মসজিদে যাওয়ার সময়ে পড়ার দো‘আ

للّٰهُمَّ اجْعَلْ فِيْ قَلْبِيْ نُوْراً، وَفِيْ لِسَانِيْ نُوْراً، وَفِيْ سَمْعِيْ نُوْراً، وَفِيْ بَصَرِيْ نُوْراً، وَمِنْ فَوْقِيْ نُوْراً، وَمِنْ تَحْتِيْ نُوْراً، وَعَنْ يَّمِيْنِيْ نُوْراً، وَعَنْ شِمَالِيْ نُوْراً، وَمِنْ أَمَامِيْ نُوْراً، وَمِنْ خَلْفِيْ نُوْراً، وَاجْعَلْ فِيْ نَفْسِيْ نُوْراً، وَأَعْظِمْ لِيْ نُوْراً، وَعَظِّمْ لِيْ نُوْراً، وَاجْعَلْ لِيْ نُوْراً، وَاجْعَلْنِيْ نُوْراً، اللّٰهُمَّ أَعْطِنِيْ نُوْراً، وَاجْعَلْ فِيْ عَصَبِيْ نُوْراً، وَفِيْ لَحْمِيْ نُوْراً، وَفِيْ دَمِيْ نُوْراً، وَفِيْ شَعْرِيْ نُوْراً، وَفِيْ بَشَرِيْ نُوْراً، 
আল্লা-হুম্মাজ‘আল ফী ক্বালবী নূরান, ওয়া ফী লিসানী নূরান, ওয়া ফী সাম্‘য়ী নূরান, ওয়া ফী বাসারী নূরান, ওয়া মিন ফাওকী নূরান, ওয়া মিন তাহ্‌তী নূরান, ওয়া ‘আন ইয়ামীনী নূরান, ওয়া ‘আন শিমালী নূরান, ওয়া মিন আমামী নূরান, ওয়া মিন খলফী নূরান, ওয়াজ‘আল ফী নাফ্‌সী নূরান, ওয়া আ‘যিম লী নূরান, ওয়া ‘আয্‌যিম লী নূরান, ওয়াজ‘আল্ লী নূরান, ওয়াজ‘আলনী নূরান; আল্লা-হুম্মা আ‘তিনী নূরান, ওয়াজ‘আল ফী ‘আসাবী নূরান, ওয়া ফী লাহ্‌মী নূরান, ওয়া ফী দামী নূরান, ওয়া ফী শা‘রী নূরান, ওয়া ফী বাশারী নূরান।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার অন্তরে নূর (বা আলো) দান করুন, আমার যবানে নূর দান করুন, আমার শ্রবণশক্তিতে নূর দান করুন, আমার দর্শনশক্তিতে নূর দান করুন, আমার উপরে নূর দান করুন, আমার নীচে নূর দান করুন, আমার ডানে নূর দান করুন, আমার বামে নূর দান করুন, আমার সামনে নূর দান করুন, আমার পেছনে নূর দান করুন, আমার আত্মায় নূর দান করুন, আমার জন্য নূরকে বড় করে দিন, আমার জন্য নূর বাড়িয়ে দিন, আমার জন্য নূর নির্ধারণ করুন, আমাকে আলোকময় করুন। হে আল্লাহ! আমাকে নূর দান করুন, আমার পেশীতে নূর প্রদান করুন, আমার গোশ্‌তে নূর দান করুন, আমার রক্তে নূর দান করুন, আমার চুলে নূর দান করুন ও আমার চামড়ায় নূর দান করুন।
[এ শব্দগুলোর জন্য দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১১৬, নং ৬৩১৬; মুসলিম ১/৫২৬, ৫২৯, ৫৩০, নং ৭৬৩। ]

اللّٰهُمَّ اجْعَلْ لِيْ نُوْراً فِيْ قَبْرِي… وَنُوْراً فِيْ عِظَامِيْ 
আল্লা-হুম্মাজ‘আল লী নূরান ফী কাবরী… ওয়া নূরান ফী ‘ইযামী
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমার জন্য আমার কবরে নূর দিন, আমার হাড়সমূহেও নূর দিন
[তিরমিযী ৫/৪৮৩, নং ৩৪১৯।]

وَزِدْنِيْ نُوْراً، وَزِدْنِيْ نُوْراً، وَزِدْنِيْ نُوْراً
ওয়া যিদ্‌নী নূরান, ওয়া যিদনী নূরান, ওয়া যিদনী নূরান
অর্থঃ আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন, আমাকে নূরে বৃদ্ধি করে দিন
[ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ, নং ৬৯৫; পৃ. ২৫৮; আর আলবানী সেটার সনদকে সহীহ আদাবিল মুফরাদে সহীহ বলেছেন, নং ৫৩৬।]

وَهَبْ لِيْ نُوْراً عَلَى نُوْرٍ
ওয়া হাবলী নূরান ‘আলা নুর
আমাকে নূরের উপর নূর দান করুন
[হাফেয ইবন হাজার এটাকে তার ফতহুল বারীতে উল্লেখ করেছেন এবং ইবন আবী আসেমের ‘কিতাবুদ দো‘আ’ এর দিকে সম্পর্কিত করেছেন। দেখুন ফাতহুল বারী, ১১/১১৮। আরও বলেছেন, বিভিন্ন বর্ণনা থেকে মোট ২৫ (পঁচিশটি) বিষয় পাওয়া গেল।]
[post_ads_2]

৪. মসজিদে প্রবেশের দো‘আ

আনাস ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সুন্নাত হচ্ছে, যখন তুমি মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন তোমার ডান পা দিয়ে ঢুকবে, আর যখন বের হবে, তখন বাম পা দিয়ে বের হবে” [১] তাই ডান পা দিয়ে ঢুকবে এবং বলবে,
أَعُوْذُ بِاللّٰهِ العَظِيْمِ، وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيْمِ، وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيْمِ، مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
আ‘ঊযু বিল্লা-হিল ‘আযীম, ওয়া বিওয়াজহিহিল কারীম, ওয়াসুলতা-নিহিল ক্বদীম, মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম।
অর্থঃ আমি মহান আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর সম্মানিত চেহারা ও প্রাচীন ক্ষমতার ওসীলায় বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। [২]
بِسْمِ اللّٰهِ
বিসমিল্লা-হি
অর্থঃ আল্লাহ্‌র নামে (প্রবেশ করছি) [৩]
وَالصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ عَلَى رَسُوْلِ اللّٰهِ
ওয়াসসালাতু ওয়াসসালা-মু ‘আলা রাসূলিল্লা-হি
অর্থঃ সালাত ও সালাম আল্লাহ্‌র রাসূলের উপর। [৪]

اللّٰهُمَّ افْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ
আল্লা-হুম্মাফ্‌তাহ লী আবওয়া-বা রাহ্‌মাতিকা
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন। [৫]
[১] হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন, হাকিম ১/২১৮; এবং একে মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সহীহ বলেছেন, আর ইমাম যাহাবী সেটার সমর্থন করেছেন। আরও উদ্ধৃত করেছেন বাইহাকী, ২/৪৪২; আর শাইখ আলবানী তার সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহা গ্রন্থে এটাকে হাসান বলেছেন, ৫/৬২৪; নং ২৪৭৮। 
[২] আবূ দাউদ, নং ৪৬৬; আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ৪৫৯১। 
[৩] ইবনুসসুন্নি কর্তৃক উদ্ধৃত, নং ৮। আর শাইখ আলবানী তার আস-সামারুল মুস্তাতাব গ্রন্থে একে হাসান বলেছেন, পৃ. ৬০৭। 
[৪] আবূ দাউদ ১/১২৬; নং ৪৬৫; আরও দেখুন, সহীহুল জামে‘ ১/৫২৮। 

[৫] মুসলিম ১/৪৯৪, নং ৭১৩; আর সুনান ইবন মাজায় ফাতিমা রাদিয়াল্লাহু আনহার হাদীসে এসেছে, “হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দ্বারসমূহ অবারিত করে দিন”। আর শাইখ আলবানী অন্যান্য শাহেদ বা সম অর্থের বর্ণনার কারণে একে সহীহ বলেছেন। দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ্ ১/১২৮-১২৯।


আরও দেখুনঃ [পর্ব #২]

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button