২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের “পৌরনীতি ও নাগরিকতা” পাঠ্য বইয়ের দ্বিতীয় “নাগরিক ও নাগরিকতা” অধ্যায় থেকে একাদশ সপ্তাহের জন্য অ্যাসাইনমেন্ট দেওয়া হয়েছে। আজ সুনাগরিকের গুণাবলি উত্তরটি নিয়ে হাজির হয়েছি।
সুনাগরিকের গুণাবলি
সু শব্দের অর্থ হল ভালাে বা আদর্শ। তাহলে সুনাগরিক মানে হল আদর্শ নাগরিক। যেকোন রাষ্ট্রের উন্নতি ও মৃদ্ধির জন্য সুনাগরিকের প্রয়ােজনীয়তা অপরিহার্য। আবার এই সুনাগরিক গড়ে তােলাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কেউ একজন খুব সহজে একটা রাষ্ট্রের নাগরিক হলেও কেবল সুনাগরিকই রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। তাহলে প্রশ্ন হল সুনাগরিক কে বা কারা? এ বিষয়েও বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন মত দিয়েছেন। অধ্যাপক ই.এম. হােয়াইট এর মতে সাধারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞা ও নিষ্ঠা এ তিনটি গুন যদি কোন নাগরিকের থাকে তাহলে সে-ই সুনাগরিক। বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর বক্তব্যে নাগরিকের অনেকগুলাে গুণের উল্লেখ রয়েছে। তবে লর্ড ব্রাইস প্রদত্ত উপাদানগুলােই এ পর্যন্ত সবেচেয়ে গ্রহণযােগ্য। তিনি মনে করেন কোন নাগরিক সুনাগরিক হিসেবে পরিগণিত হবে যদি তিনটি গুণ যথা- (১) বুদ্ধি (২) আত্নসংযম (৩) বিবেক থাকে। এখন তিনটি গুণ সম্পর্কে সংক্ষেপে জানা যাক।
১. বুদ্ধি (Intelligence) : বুদ্ধিমান নাগরিক রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য। এটি সুনাগরিকের প্রথম ও প্রধান গুন। নাগরিক হিসেবে প্রত্যেকেরই রাষ্ট্রের প্রতি অনেক দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকে। আধুনিক রাষ্ট্র নাগরিকদের অনেক সুযােগ-সুবিধা প্রদান করে থাকে। একজন সচেতন ও বুদ্ধিমান নাগরিক এইসব সেবাগুলাে কি, কোথা থেকে পাওয়া যায় ও কিভাবে পাওয়া যায় তা ভালােভাবে জানে। তাছাড়া রাষ্ট্রের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কেও অনেক জ্ঞান রাখে যা তাকে রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত করতে সাহায্য করে। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা প্রত্যেক নাগরিকের অপরিহার্য কর্তব্য। তাছাড়া রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব সুন্দরভাবে পালনের জন্যও একজন নাগরিককে প্রথমত বুদ্ধিমান হওয়া প্রয়ােজন।
২. আত্নসংযম (Self-control) : ব্যক্তিস্বার্থ ত্যাগ করা ও অন্যের মতামতের প্রতি সহিষ্ণুতাই হলাে আত্নসংযম। আত্নসংযম ছাড়া কেউ সুনাগরিক হতে পারে না। এটি নাগরিককে সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল করে। অনেক ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করতে উৎসাহ যােগায়। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আত্নসংযম অপরিহার্য। অন্যকে মত প্রকাশের সুযােগ দেয়ার মধ্য দিয়ে প্রকৃত গণতান্ত্রিক চেতনার প্রকাশ ঘটে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সচল রাখতে হলে বিরােধী দল, সংখ্যালঘু ও সুবিধাবঞ্চিত সকল গােষ্ঠীর মতামত এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল ও সহমর্মি হতে হয়। আত্নসংযমের অভাবে জাতীয় নির্বাচনে সহিংসতা ঘটতে দেখা যায়। অর্থাৎ নাগরিকের আত্নসংযমের অভাবে একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও জানমালের অনেক ক্ষতি হয়। তাই আত্নসংযমী হয়ে কোন নাগরিক জীবনে সমৃদ্ধি, কল্যাণ ও সুনাম বয়ে নিয়ে আসে, তেমনি জাতির জীবনে আসে সফলতা। তাই সুনাগরিক হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই আত্নসংযমী হতে হবে।
৩. বিবেক (Conscience): বিবেক আছে বলেই মানুষ সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। তবে সকল মানুষের বিবেক এক রকমভাবে কাজ করে না। এটি স্বকীয় ও মৌলিক একটি সত্তা। এই বিবেকই মানুষকে ভাল-মন্দের মাঝে পার্থক্য করতে শেখায়। অর্থাৎ বিবেকসম্পন্ন মানুষ সাধারণত অন্যের ক্ষতি না করে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণ সাধনে কাজ করে। অন্যদিকে বিবেকহীন মানুষ অপরের ভালমন্দ চিন্তা না করে নিজ স্বার্থে লিপ্ত থাকে। সুনাগরিক সবসময় নিজের বিবেক বুদ্ধি দিয়ে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে। বিবেক পথ প্রদর্শকের ন্যায় ব্যক্তির জীবনকে সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত করে। চলার পথে সব সময় হয়তাে অগ্রজদের নির্দেশনা পাওয়া সম্ভব হয় না, সেসব ক্ষেত্রে নিজের বিবেক অনুযায়ী কাজ করা উচিত।
লর্ড ব্রাইস প্রদত্ত তিনটি গুণাবলি সুনাগরিকের জন্য অবশ্যম্ভাবী। এছাড়াও আরও কিছু গুনাবলি থাকা উচিত। যেমনঃ বড়দের শ্রদ্ধা করা, ছােটদের স্নেহ করা, কাউকে ঘৃনা না করা, হিংসা না করা, অপরের ক্ষতি চিন্তা না করা, শিক্ষিত ও সংস্কৃতিবান হওয়া, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষার জন্য সচেতন থাকা, শৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতার প্রতি অনুরাগী হওয়া, সাধারণ জ্ঞান, প্রজ্ঞার অধিকারী হওয়া। নিজ সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকাও সুনাগরিকের গুণ।