ইসলাম ও জীবনফজিলত

সালাত/নামাজের গুরুত্ব ফজিলত। Benefits of Salat

Daraz cupon Code
সালাত শব্দের অর্থ হল – দোয়া বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। সালাত মহান আল্লাহ পাকের নিকট থেকে আসা এক বিশেষ নেয়ামত। প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর উপর দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরজ করা হয়েছে। তাই আল্লাহর কাছে নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রিয় ইবাদাত। কালেমার পর নামাজ হল ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ব। জান্নাত লাভের প্রধান উপায় হল সালাত। যারা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে পরকালে তাদের স্থান হবে জান্নাতের উত্তম স্থানে। আর যারা নিয়মিত সালাত আদায় করবে না তাদের স্থান হবে জাহান্নামে।
হাদিসে বর্ণিত আছে, নবীজি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ ) বলেছেন “সালাত ইসলামের খুঁটি সরূপ” এখানে বুঝতে বাকি নেই যে নামাজের গুরুত্ব কতটুকু। খুঁটি ছাড়া যেমন একটি সুন্দর ঘর নির্মাণ করা যায় না ঠিক তেমনি সালাত ছাড়া ইসলাম পাকাপোক্ত হয় না। যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করলো সে যেন ইসলামের খুঁটিকে শক্ত করলো আর যে সালাতে অবহেলা করলো সে ইসলামকে ধ্বংস করে দিলো।
যে ব্যক্তি ভালোভাবে ওজু করে ভক্তি আর ভয়ের সহিত আল্লাহকে খুশি করার জন্যে সালাত আদায় করবে আল্লাহ তার সগীরা গুনাহ সমূহ মাফ করে দিবেন। এবং জান্নাতের উত্তম জায়গা দান করবেন।
প্রিয় বন্ধুরা, সালাতকে প্রত্যেক মুসলিমের জন্যে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর এমনভাবে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে যে এর থেকে কারো কোনো মাফ নেই।  একজন যে অবস্থাতেই থাকুক না কেন  তাকে সালাত পড়তেই হবে।  সে যদি অন্ধ, রোগী, বধির, আঁতুরও হয় তও তার জন্যে নামাজ মাফ নেই। 
বিচারের দিনে আল্লাহ সর্বপ্রথম বান্ধাদের নিকট থেকে সালাতের হিসাব নিবেন। সেইদিন সালাত আদায়কারী ব্যক্তিত্বের এমনেই চিনতে পারা যাবে। তাদের মুখ, হাত-পা সূর্যের আলোর মতো উজ্জ্বল হবে।  হাশরের মাঠে নামাজ আদায়কারী ব্যক্তিরা থাকবে নবী, শহীদ ও আলেমদের সাথে। অন্যদিকে বেনামাজির থাকবে ফেরাউন আর কাফেরদের সাথে।
প্রিয় বন্ধুরা, লিখার শুরুতেই কেন বললাম সালাত আল্লাহ পাকের নিকট থেকে আসা অনেক বড় নিয়ামত জানেন? আসুন একটু ব্যাখ্যা করি। 
হযরত আদম (আ:) থেকে শুরু করে শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ ) পর্যন্ত সকল নবীদের উপর সালাতকে ফরয করা হয়েছিল। কোনো কোনো নবীদের উপর ৫০ ওয়াক্ত, কখনো ৪০ ওয়াক্ত, কখনো ৩০ ওয়াক্ত আবার কখনো ১০ ওয়াক্ত ফরয করা হয়েছিল। শেষ নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যখন ৬১৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে রজব তারিখে মিরাজে গেলেন আল্লাহপাক ৫০ ওয়াক্ত নামাজের বিধান দিয়েছিলেন। পর্যায়ক্রমে নবীজির অনুরোধে তা ৫ ওয়াক্ত  করা হয়। কিন্তু রহমতের বিষয় হলো আখেরী জামানার উম্মতগণ ৫ ওয়াক্ত নামায পড়লেই ৫০ ওয়াক্ত নামাযের সওয়াব পাবেন। (সুবহানাল্লাহ )
নামাজের ফজিলত নিয়ে আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেনঃ 
وَالَّذِيْنَ هُمْ عَلَى صَلَوتِهِمِِ  يُحَا  فِظُوْنَ اُولَئِكَفِىْ جَنَّتِمُّكْرَمُوْنَا
অনুবাদঃ যে সকল ব্যক্তি যত্ন সহকারে নামায আদায় করবে তারাই বেহেশতে যাবে এবং অশেষ সম্মানের অধিকারী হবে ।
নবী পাক (সঃ ) বলেন “নামাজ হলো তোমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর মত।  তোমরা যদি দৈনিক ৫ বার ওই নদীতে গোসল করলে তোমাদের শরীরে কোনো ময়লা থাকবে না ঠিক তেমনি কোনো ব্যাক্তি যদি দৈনিক ৫ বার নামাজ আদায় করে তাকে কোনো পাপ স্পর্শ করতে পারে না।” এখানে ওযুর কথাও  বলা হয়েছে। আমরা দৈনিক ৫ বার নামাজ আদায় করার জন্যে ৫ বার ওযু করে থাকি। সেই ওজুরও অনেক বরকত রয়েছে। ওযু করলে গুনাহ মাফ হয়। 
নবী পাক (সঃ ) বলেছেন – “যে ব্যক্তি শুদ্ধ করে ওযু করে এবং ভক্তি নিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে নামাজ আদায় করে, আল্লাহ তার জন্যে জাহান্নামের আগুনকে হারাম করে দেন।
অর্থাৎ, শেষ বিচারের দিন নামাজই ওই ব্যক্তিকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচিয়ে জান্নাতে নিয়ে যাবে।

হযরত আয়েশা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “একদা নবী করীম (সঃ) এর সাথে আলাপ চলাকালে নামাজের ওয়াক্ত শুরু হয়। তখন তিনি উঠে গেলেন। এবং তার শরীর ও চেহারা রং পরিবর্তন হয়ে গেলো। উনার ভাব এমন ছিলো যে উনি আমাকে চিনতেই পারছেন না। আমি কারণ জানতে চাইলে নবীজি উত্তরে বললেনঃ হে আয়েশা! আল্লাহ্পাকের আদেশ প্রতিপালনের সময়। এসময় প্রত্যেক মুসলিমদের এই আহ্বানে ভয় করা উচিত।”
নবী করীম (সঃ) বলেছেনঃ যখন কোন বান্দা ওজু করে নামাজে দাঁড়ায় যায় তখন আল্লাহ্পাক একজন ফেরেশতাকে আদেশ করেন বলেন, আমার অমূক বান্দা নামাজ পড়ার জন্যে প্রস্তুত হচ্ছে, কিন্তু তার শরীরে  পূর্বের পাপ আছে। নাপাক জিনিস সাথে নিয়ে নামাজ পড়লে তার নামাজ শুদ্ধ হবে না। তাই তার  শরীরের সমস্ত পাপ তুমি মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকো আর আমার বান্দা নিষ্পাপ অবস্থায় নামাজ আদায় করুক। আল্লাহ্পাকের আদেশ মতো ফেরেশতা উক্ত ব্যক্তির পাপ মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। তারপর ব্যক্তির নামাজ শেষ হলে ফেরেশতা বলে হে আল্লাহ! আপনার বান্দার নামাজ শেষ হয়েছে। এখন পাপগুলো তার  শরীরে ছড়িয়ে দেই। আল্লাহ বলেনঃ আমি হলাম ‘রহমানুর রাহীম’ আমার বান্দার শরীর থেকে পাপের বোঝা নামিয়ে আবার যদি তার শরীরে দিয়ে দেই তাহলে আমার রাহমান নামের স্বার্থকতা থাকেনা। হে ফেরেশতা! যাও আমার এই বান্দার পাপের বোঝা জাহান্নামের আগুনে ফেলে জ্বালিয়ে দাও।  এখন থেকে আমার বান্দা নিষ্পাপ। (সুবহানাল্লাহ )

প্রিয় বন্ধুরা, আল্লাহ্পাক নামাজের মধ্যে এতো বরকত দিয়েছেন যে তার প্রতিদান হলো জান্নাত। হাদীসে এসেছে, যে বান্দা একটিবার হলেও আল্লাহকে সেজদা দিবে সেও একদিন জান্নাতে যাবে।

একদা নবী করীম (সঃ) সাহাবীদের সাথে বসে ছিলেন। তখন এক ইহুদী নবীজির কাছে এসে বললেন হে মুহাম্মদ, আপনাকে একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবো? তবে আপনি যদি তার উত্তর দিতে পারেন তাহলে বুঝবো আপনি সত্যি আল্লাহর নবী। কেননা কোন নবী ব্যতীত কেউ আমার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবে না। তখন নবী করীম (সঃ) বললেন তোমার প্রশ্ন কি? ইহুদী বললো: আপনার ও আপনার উম্মতের উপর যে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ নির্দিষ্ট করা হয়েছে ইহার তত্ত্ব কি? নবী করীম (সঃ) বললেন সূর্য যখন পশ্চিম আকাশে চলে যায় তখন প্রথম আসমানের একদল ফেরেশতা আল্লাহর ইবাদাতে লিপ্ত হয়। ওই সময় সমস্ত আসমানের সকল দরজা খোলা থাকে। মানুষ ও ফেরেশতাদের ইবাদাত আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়। যোহরের সময় আল্লাহ তাআলার কাছে ইবাদাত কবুল হয়। ওই সময়ে নামাজের আদেশ দেওয়ার উদ্দেশ্য হল উক্ত সময়ে নামাজ পড়িলে শয়তান কোন ধোকা দিতে পারে না। মাগরিবের সময় হযরত আদম (আ:) এর তাওবা আল্লাহ কবূল করেছিলেন। উক্ত সময়ে নামাজ পড়ে আল্লাহর নিকট যাই চাওয়া হয় আল্লাহ তাই কবূল করেন। এশার ওয়াক্ত হল এমন এক ওয়াক্ত যা আমার এবং আমার পূর্ববর্তী নবীদের উপর ও সাহাবাদের উপর এশার নামাজ ফরয ছিল। এই নামাজ পড়িলে সমস্ত পয়গাম্বরের উপর নির্দিষ্ট নামাযের ছওয়াব পাওয়া যায়।  আর ফজরের ওয়াক্তের মর্ম হল যখন সূর্য উঠে তখন তা শয়তানের মাথার উপর দিয়ে উঠে ওই সময় কাফের মুশরিকগণ দেব দেবীর উদেশ্যে শয়তানকে সিজদা দেয়। তাই আল্লাহ্পাক আমাকে এবং আমার উম্মতগণকে এর আগেই নামাজ পড়ার আদেশ করেছেন। নবীজির উত্তর শুনে  ইহুদী বললো, আমি বুঝিলাম আপনি সত্যই আল্লাহ্র  নবী। তারপর সেই ইহুদী তার দলবল নিয়ে মুসলমান হয়ে গেল।

নবী করীম (সঃ) বলেছেন তুমি যখন নামাজে দাঁড়াবে তখন মনে মনে এইরূপ ধারণা করিবে যে তুমি আল্লাহর সামনে দাঁড়িয়ে আছো যদি আল্লাহ কে তুমি দেখছোনা কিন্তু আল্লাহ তোমাকে দেখছেন।

প্রিয় বন্ধুরা, নামাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদাত। নামাজে আমরা আল্লাহর সামনে দাঁড়াই। তাই পাক পবিত্র ও ভালো পোশাক পরে নামাজে দাঁড়ানো উচিত। ধরুন, আপনি কোন দাওয়াতে গেলে সবচাইতে ভালো সুন্দর পোশাকটি পরে যান যাতে দেখতে ভালো লাগে ঠিক তেমনি আপনি সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে যখন যাবেন আপনার উচিত সর্বোত্তম পোশাকটি পরে যাওয়া। কারণ সব প্রশংসা আল্লাহ তাআলার জন্যে।

একদা এক সাহাবী নবী করীম (সঃ) এর কাছে আসলেন। তাকে দেখে নবীজি জিজ্ঞাসা করলেন তোমার আর্থিক অবস্থা কেমন। তখন সাহাবীটি বললো হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহর রহমতে আমার আর্থিক অবস্থা ভালো। তখন নবীজি বললেন তোমার পোশাক দেখে তো এমনটা মনে হয় না।  যাও ভালো পরিষ্কার পোশাক পরে আসো।

প্রিয় পাঠকগণ, আসলে ইসলামে নামাজের গুরুত্বের কথা বলে শেষ করা যাবে না। নামাজ শুধু ইবাদত না, নামাজ ভালো একটি ব্যায়ামও বটে। একজন নামাজ আদায়কারী ব্যক্তি অন্যায় কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখে কারণ সে জানে একটু পরেইতো আল্লাহর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো তখন কি জবাব দিব। আল্লাহ আমাদের নিকট থেকে তেমন কিছুই চান না।  শুধু চায় যাদের জন্যে এতো সুন্দর পৃথিবী সৃষ্টি করলাম তারা যেন এক আল্লাহকে সিজদা দেয়, এক আল্লাহর ইবাদাত করে এবং প্রশংসা করে।

আসুন আমরা সবই নামাজ পড়ি, যদি এক ওয়াক্ত পারি সেটাই যেন পড়ি। ওই এক ওয়াক্ত পড়তে পড়তে বাকি ওয়াক্তগুলোও পড়ার অভ্যাস হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।  কারণ আল্লাহ বলেছেন যে আমাকে সন্তুষ্টি করার জন্যে ভালো কাজ করে আমি তাকে আরো ভালো কাজ করার সুযোগ করে দেয়।  আর উত্তম কাজের প্রতিদান উত্তম ছাড়া আর কি হতে পারে।

যদি লিখাটি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে শেয়ার করে অন্যদের পড়ার সুযোগ করে দিবেন।

সম্পর্কিত টপিক

মন্তব্য করুন

Back to top button