২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের প্রথম সপ্তাহ অ্যাসাইনমেন্ট ব্যবসায় উদ্যোগ এর উত্তর। বাংলাদেশে ব্যবসায় সম্প্রসারণের ব্যবসায় পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ।
নির্ধারিত কাজ
বাংলাদেশে ব্যবসায় সম্প্রসারণের ব্যবসায় পরিবেশের প্রভাব বিশ্লেষণ।
নমুনা উত্তর
(ক) উদাহরণসহ ব্যবসায়ের ধারণা যথাযথভাবে ব্যাখ্যা করা।
সাধারণত মুনাফার উদ্দেশ্যে পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যবসায় বলে । গত কয়েকদিন আগে আমি মাঠে খেলতে গিয়ে কয়েকজন বন্ধুদের কাছ থেকে জিঞ্জেস করলাম যে, তাদের কার বাবা কি করে। অনেকেই বলল ঔষধের দোকান, মুদির দোকান, শাড়ির দোকান, কসমেটিকস এর দোকান ইত্যাদি পেশায় নিয়ােজিত থাকে। তাদের অভিভাবকদের সবগুলাে অর্থনৈতিক কাজ ব্যবসায়ের অন্তর্ভূক্ত হবে যদি তারা জীবিকা নির্বাহ ও মুনাফার আশায় উক্ত কাজগুলাে করে থাকেন। মূলত মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে ব্যবসায় বলে। পরিবারের সদস্যদের জন্য খাদ্য উৎপাদন করা, হাস-মুরগি পালন করা, সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলা যায় না। কিন্তু যখন কোনাে কৃষক মুনাফার আশায় ধান চাষ করে বা সবজি চাষ করাকে ব্যবসায় বলে গণ্য হবে। তবে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যবসা বলে গণ্য হবে যদি সেগুলাে দেশের আইনে বৈধ ও সঠিক উপায়ে পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ের আরও কিছু বৈশিষ্ট্য আছে যা একে অন্য সব পেশা থেকে আলাদা করেছে। ব্যবসায়ের সাথে জড়িত পণ্য বা সেবার অবশ্যই আর্থিক মূল্য থাকতে হবে। ব্যবসায়ের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলাে এর সাথে ঝুঁকির সম্পর্ক। মূলত মুনাফা অর্জনের আশাতেই ব্যবসায়ী অর্থ বিনিয়ােগ করে। ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডর মাধ্যমে মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি অবশ্যই সেবার মনােভাব থাকতে হবে।
(খ) উদাহরণসহ ব্যবসায়ের প্রকারভেদ ছকে পরিদর্শনসহ শিল্প, বাণিজ্য ও প্রত্যক্ষ সেবার ব্যাখাঃ
প্রযুক্তির আধুনিকায়নের সাথে পাল্লা দিয়ে ব্যবসায়ের পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে ব্যবসায় শুধু পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। ব্যবসায়ের ধরনে পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। একটি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ঘরে উঠেছে কয়েকটি ব্যবসা। ব্যবসাকে তিনটি ভাবে ভাগ করা যায়।
(ক) শিল্প
(খ) বাণিজ্য
(গ) প্রত্যক্ষ সেবা
|
ব্যবসায়ের প্রকারভেদ। (সূত্রঃ ব্যবসায় উদ্যোগ বইয়ের পৃষ্ঠা নং ৩) |
(নোটঃ তোমারা উত্তরপত্রে অবশ্যই চিত্রটি অংকন করবে।)
শিল্পের উদাহরণঃ প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ ও তা কাঁচামালে রুপদান এবং প্রক্রিয়াজাত করণের মাধ্যমে তা মানুষের ব্যবহার উপযোগী পণ্যতে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে শিল্প বলা হয়। শিল্পকে উপাদনের বাহন বলা হয়। শিল্পকে পাঁচভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমনঃ
- প্রজনন শিল্প (নার্সারি, হ্যাচারি ইত্যাদি)
- নিষ্কাশন শিল্প (খনিজ শিল্প)
- নির্মাণ শিল্প (রাস্তাঘাট, সেতু নির্মাণ)
- উৎপাদন শিল্প (পোশাক শিল্প)
- সেবা শিল্প (ব্যাংকিং সেবা, স্বাস্থ্য সেবা, বিদ্যুৎ সেবা ইত্যাদি)
বাণিজ্যের উদাহরণঃ বাণিজ্য হল পণ্য ও সেবা বন্টন করার মাধ্যম। পণ্য উৎপাদনের কাঁচামাল সংগ্রহ থেকে শুরু করে উৎপাদিত পণ্য চুড়ান্ত ভোক্তার নিকট পৌঁছানো পর্যন্ত সকল কার্যাবলি বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত। বাণিজ্যের কয়েকটি উদাহরণ উল্ল্যেখ করা হল: পরিবহন, ব্যাঙ্কিং, বীমা, ইন্সুরেন্স, গুদামজাতকরণ, বিজ্ঞাপন, বিপণন ইত্যাদি।
প্রত্যক্ষ সেবাঃ আধুনিক ব্যসায়ের বড় একটি অংশ হচ্ছে সেবা। অর্থ উপার্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হয়ে সেবা কর্মকে সেবা শিল্প বলে। সেবা শিপ্লের কয়েকটি উদাহরণ উল্ল্যেখ করা হল: ডাক্তারি, ক্লিনিক, হাসপাতাল, প্রকৌশলী ফার্ম, অডিট ফার্ম, আইন চেম্বার ইত্যাদি।
(গ) ব্যবসায় পরিবেশের ধারণাঃ
পরিবেশ দ্বারা মানুষের জীবনধারা, আচার-আচরণ, শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং ব্যবসা প্রভাবিত হয়। পরিবেশ হলাে কোনাে অঞ্চলের জনগণের জীবনধারা ও অর্থনৈতিক কার্যবিলিকে প্রভাবিত করে এমন সব উপাদানের সমষ্টি। পারিপার্শ্বিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, নদ-নদী, পাহাড়, বনভূমি, জাতি, ধর্ম, শিক্ষা ইত্যাদি। যে সব প্রাকৃতিক ও অপ্রাকৃতিক উপাদান দ্বারা ব্যবসায়িক সংগঠনের গঠন, কার্যাবলি, উন্নতি ও অবনতি প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে প্রভাবিত হয় সেগুলাের সমষ্টিকে ব্যবসায়ির পরিবেশ বলে। কোনাে স্থানের ব্যবসায়-ব্যবস্থার উন্নতি নির্ভর করে ব্যবসায়িক পরিবেশের উপর। বহু প্রকারের ব্যবসায়িক পরিবেশ দেখতে পাওয়া গেলেও ব্যবসায়িক পরিবেশের উপাদান গুলােকে প্রধানত ছয়ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ।
খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ।
গ) রাজনৈতিক পরিবেশ।
ঘ) সামাজিক পরিবেশ।
ঙ) আইনগত পরিবেশ।
চ) প্রযুক্তিগত পরিবেশ।
(ঘ) ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানঃ
পরিবেশের উপর নির্ভর করে ব্যবসায়ের তারতম্য হয়। এক এক পরিবেশে বা অঞ্চলে এক এক ধরণের ব্যবসায় গড়ে উঠে। ব্যবসায় পরিবেশের উপাদানগুলো ছকে তুলে ধরা হলঃ
(তোমরা উত্তরপত্রে ছক অবশ্যই দিবে।)
(ঙ) বাংলাদেশের ব্যবসায়িক পরিবেশের প্রভাবঃ
বর্তমান প্রতিযােগিতামূলক বিশ্বে ব্যবসায়িক পরিবেশের সকল উপাদান অনুকূল না হলে ব্যবসায়-বাণিজ্যে উন্নতি লাভ করে টিকে থাকা কঠিন। নিম্নে ব্যবসায়িক পরিবেশের প্রভাব বিস্তারকারী পরিবেশের ৪টি উপাদান উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করা হলাে:
প্রাকৃতিক উপাদানঃ প্রাকৃতিক পরিবেশের অধিকাংশ উপাদানই বাংলাদেশে ব্যবসায় স্থাপনের জন্য অনুকূল। দেশের প্রায় সকল অংশই নদী বিধৌত। ফলে সহজেই এখানে কৃষিজাত বিভিন্ন শিল্প ভােগ্য পণ্যের কাঁচামাল উৎপাদন করা সম্ভব।
অর্থনৈতিক উপাদানঃ দেশে বিরাজমান কার্যকর অর্থ ও ব্যাংকিং ব্যবস্থা, কৃষি ও শিল্পের অবদান, জনগণের সঞ্চয় ও বিনিয়ােগ মানসিকতা ও সরকারের পৃষ্ঠপােষকতা ব্যবসায় পরিবেশের সুদৃঢ় অর্থনৈতিক উপাদান হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক উপাদানগুলাের কয়েকটির ভিত্তি বেশ মজবুত হলেও অনেকগুলাের ভিত্তি তেমন সুদৃঢ় নয়।
সামাজিক উপাদানঃ জাতি, ধর্মীয় বিশ্বাস, ভােক্তাদের মনােভাব, মানব সম্পদ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবসায়ের সামাজিক উপাদানগুলাের বেশিরভাগ বাংলাদেশে ব্যবসায় প্রসারের ক্ষেত্রে অনুকূল। এ দেশের মানুষ জাতিগত ঐতিহ্যগত এবং সাংস্কৃতিকভাবে উদার, পরিশ্রমী এবং সৃজনশীল। অতীতে জাহাজ নির্মাণ করে এবং মসলিন কাপড় উৎপাদন করে এ দেশের মানুষ তাদের প্রতিভা ও পরিশ্রমের স্বাক্ষর রেখেছে।
রাজনৈতিক উপাদানঃ সুষ্ঠু আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং অনুকূল শিল্প ও বাণিজ্যনীতি, প্রতিবেশী ও অন্যান্য দেশের সাথে সুসম্পর্ক ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারে সহায়তা করে। অন্যদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, ঘন ঘন সরকার পরিবর্তন, হরতাল, ধর্মঘট, ব্যবসায়-বান্ধব শিল্প ও বাণিজ্য নীতির অভাব ইত্যাদি প্রতিকূল রাজনৈতিক উপাদান শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসারে বাধা সৃষ্টি করে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্যবসায় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব বিস্তারকারী পরিবেশগত উপাদানসমূহের উন্নয়ন করা প্রয়োজন। সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি আমাদের সকলকে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ সৃষ্টিতে এগিয়ে আসতে হবে।
এইচএসসি পরীক্ষায় অস্যাইনমেন্ট উত্তর পাওয়া যাবে।।