Uncategorized

“বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা” সপ্তম সপ্তাহ এসএসসি ২০২১ এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

Rate this post
"বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা" সপ্তম সপ্তাহ এসএসসি ২০২১ এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

 “বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা” সপ্তম সপ্তাহ এসএসসি ২০২১ এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর – Bangladesh o Bishosovota 7th week SSC 2021 Assignment answer.

অ্যাসাইনমেন্ট নম্বরঃ ৫
অধ্যায়ঃ  একাদশ
অধ্যায়ের শিরোনামঃ ভাষা আন্দোলন ও পরবর্তী রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ

অ্যাসাইনমেন্ট শিরোনামঃ ঃ “ভাষা আন্দোলন ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ” শীর্ষক প্রবন্ধ


নিধারিত কাজঃ

"বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা" সপ্তম সপ্তাহ এসএসসি ২০২১ এর অ্যাসাইনমেন্ট উত্তর

“বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা” সপ্তম সপ্তাহ

ভাষা আন্দোলনের পটভূমি (১৯৪৭-১৯৫২): 

১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলন –  পশ্চিম পাকিস্তানে শতকরা ৯৭ ভাগ এবং পূর্ব বাংলায় শতকরা ৮০ ভাগ অধিবাসী ছিল মুসলমান। অধিকাংশ অধিবাসীর ধর্ম এক হলেও ভাষা ছিল ভিন্ন। তাই পাকিস্তান সৃষ্টির সময় রাষ্ট্রভাষা কী হওয়া উচিত এ বিষয়ে বিতর্ক শুরু হয়। ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসে আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করার প্রস্তাব করলে পূর্ব বাংলার বুদ্ধিজীবীমহল, ছাত্রসমাজ, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী প্রমুখ বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পাল্টা প্রস্তাব করে।

১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত নবগঠিত রাজনৈতিক সংগঠন পূর্বপাকিস্তান গণতান্ত্রিক যুবলীগের কর্মী সম্মেলনে বাংলাভাষাকে পূর্বপাকিস্তানের শিক্ষার বাহন ও আইন-আদালতের ভাষা করার দাবি জানানাে হয়। একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন ভাষার প্রশ্নে সােচ্চার হয়। সংগঠনটির নাম ছিল ‘তমদ্দুন মজলিশ’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাসেম ২ সেপ্টেম্বর ১৯৪৭ তারিখে উক্ত সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সংগঠন ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে একটি পুস্তিকা প্রকাশ করে। পুস্তিকাটির নাম ছিল : ‘পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা – বাংলা না উর্দু’।

তমদ্দুন মজলিশ ছাত্র-শিক্ষক মহলে বাংলাভাষা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে। ১৯৪৭ সালের মধ্যেই বহু প্রখ্যাত এবং অখ্যাত লেখক বাংলা রাষ্ট্রভাষার প্রতি তাদের দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানিয়েছিলেন। কিন্তু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ বাঙালিদের দাবি উপেক্ষা করে উর্দুকে পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়। যদিও পাকিস্তানের শতকরা মাত্র ৩.২৭ ভাগ লােকের মাতৃভাষা ছিল উর্দু তথাপি পাকিস্তানের মুদ্রা, ডাকটিকেট, মানি অর্ডার ফরম, রেলের টিকেট প্রভৃতিতে কেবল ইংরেজি ও উর্দুভাষা ব্যবহার করা হয়।

পাকিস্তানের পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বিষয়তালিকা থেকে এবং নৌ ও অন্যান্য বিভাগের নিয়ােগ পরীক্ষায় বাংলাকে বাদ দেয়া হয়। এমনকি পাকিস্তানের গণপরিষদের সরকারি ভাষা হিসেবে ইংরেজি ও উর্দুকে নির্বাচন করা হয়। ফলে বাঙালিরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। 

১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলন – পাকিস্তান গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হয় ২৩ ফেব্রুয়ারি (১৯৪৮)। অধিবেশনে কংগ্রেস দলীয় সদস্য ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজি ও উর্দুর সঙ্গে বাংলাকেও গণপরিষদের সরকারি ভাষা করার প্রস্তাব দেন।  তিনি যুক্তি দিয়ে বলেন যে, যেহেতু পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ লােকের মাতৃভাষা বাংলা, সুতরাং সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষাই পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। 

কিন্তু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান  তার এই প্রস্তাব্রে বিরােধিতা করেন । অধিবেশনে লিয়াকত আলী খান মন্তব্য করেন যে, যেহেতু পাকিস্তান একটি মুসলিম রাষ্ট্র তাই পাকিস্তানের সরকারি ভাষা মুসলমানের ভাষা হওয়া উচিত। বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি গণপরিষদে অগ্রাহ্য হওয়ায় পূর্বাংলায় ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাত হয়। 

উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘােষণার প্রতিবাদে ১৯৪৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট পালন করা হয়। বালা ভাষার সংগ্রামকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার উদ্দেশ্যে ২ মার্চ (১৯৪৮) ঢাকার ফজলুল হক হলে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ১১ মার্চ (১৯৪৮) পূর্ব বাংলার সর্বত্র সাধারণ ধর্মঘট আহবান করে। কিন্তু পূর্ববাংলার সরকার বাংলাভাষার আন্দোলনকে রাষ্ট্রবিরােধী ষড়যন্ত্র হিসেবে প্রচার করে। সরকারী পুলিশ বাহিনী ছাত্রদের মিছিল ও সমাবেশে ব্যাপক লাঠিচার্জ করে। শেখ মুজিবুর রহমান, শামসুল আলমসহ ৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলের ভিতর থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু ভাষা আন্দোলন এগিয়ে নেওয়ার ভূমিকা পালন করেছিলেন। 

সাধারণ জনসাধারণ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করতে থাকে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দীন রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে ১৫ মার্চ আলােচনায় বসেন এবং ৮ দফা চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন। চুক্তির মূল বিষয় ছিল ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত যাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদেরকে মুক্তি দেয়া হবে, পুলিশি অত্যাচার নির্যাতনের বিষয়ে তদন্ত করা হবে, পূর্ব বাংলার ব্যবস্থাপক পরিষদের সভায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব উত্থাপন করা হবে, সংবাদপত্রের উগ্র থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হবে ইত্যাদি। কিন্তু পূর্ববাংলা সরকার চুক্তির শর্তগুলি বাস্তবায়ন না করায় ভাষা আন্দোলন অব্যাহত থাকে। ২১ মার্চ (১৯৪৮) ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে আয়ােজিত এক বিশাল জনসভায় মােহাম্মদ আলী জিন্নাহ স্পষ্ট করে ঘােষণা করেন যে, পাকিস্তানের সরকারি ভাষা হবে উর্দু, অন্য কোনাে ভাষা নয়। 

জিন্নাহর ঘােষণায় পাকিস্তান সরকারের প্রতি পূর্ববাংলার মানুষের মনে সন্দেহ ও অবিশ্বাসের ভাব সৃষ্টি হয়। ফলে ভাষার আন্দোলন ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে পরিণত হয়।

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন – ১৯৫২ সালের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে ভাষা আন্দোলন পুনরজ্জীবিত হয়। পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন ২৭ জানুয়ারি (১৯৫২) এক জনসভায় ঘােষণা দেন যে, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। তার এই ঘােষণায় ছাত্র-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবী মহলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩০ জানুয়ারি (১৯৫২) ছাত্র ধর্মঘট ও সভা আহবান করে। ৩০ জানুয়ারির সভায় ৪ ফেব্রুয়ারি (১৯৫২) ঢাকা শহরে ছাত্রধর্মঘট, বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্রসভা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিক্ষোভ ঠেকাতে সমস্ত ঢাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। সরকারি ঘােষণায় ছাত্ররা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এবং তাঁরা ১৪৪ ধারা ভাঙার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

১৪৪ ধারা ভাঙার পন্থা হিসেবে দশজন দশজন করে ছাত্র রাস্তায় মিছিল বের করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অনেকেই এদিন গ্রেফতার হন। পুলিশ মিছিলকারীদের উপর বেপরােয়া লাঠিচার্জ করে এবং কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। কিন্তু সব বাধা উপেক্ষা করে ছাত্ররা মেডিকেল হােস্টেলের প্রধান ফটকের কাছে জমায়েত হন। তখন ছাত্ররা দলবদ্ধ হয়ে শ্লোগান দিতে থাকলে পুলিশ বাহিনী এসে তাদের তাড়া করে এবং ছাত্রদের উপর কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করে। প্রতিবাদে ছাত্ররা ইট পাটকেল ছুড়তে থাকে। একদিকে ইট পাটকেল, আর অন্য দিক থেকে তার পরিবর্তে কাঁদুনে গ্যাস আর লাঠি চার্জ চলতে থাকে। এক পর্যায়ে পুলিশ ছাত্রদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে। ঘটনাস্থলেই সালাম, জব্বার ও রফিক, বরকত শহীদ হন।

ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু, অন্যান্য নেতৃত্ব ও নারী সমাজের ভূমিকা

মূলত বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের মধ্য  দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক তৎপরতার বিকাশ ঘটে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের ১৯৪৮ সনের ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে অধিবেশনে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলার পরিপেক্ষিতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। 

তখন বঙ্গবন্ধু এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। এ বছর ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ‘বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করে পূর্ববঙ্গ পরিষদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে’- এ মর্মে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নাজিমুদ্দিন সরকার চুক্তিবদ্ধ হলে তিনি মুক্তি লাভ করেন।

ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে। অনেক রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ফলে পূর্ববাংলায় স্বাধিকারের চিন্তাচেতনা শুরু হয়। পরবর্তী আন্দোলনসমুহে ভাষা আন্দোলন প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ভাষা আন্দোলন একধরনের প্রাদেশিকতাবাদের জন্ম দেয়। এরপর যখনই পূর্ব বাংলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনাে দাবি উচ্চারণ বা হয়েছে তখনই পূর্ববাংলাবাসীর সমর্থন অর্জন করেছে।

ভাষা আন্দোলন ছাত্রসমাজকে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ছাত্ররা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের মাত্র দুইমাসের মধ্যেই (এপ্রিল, ১৯৫২) ‘পূর্ববাংলায় ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে ছাত্র সংগঠন জন্মলাভ করে। পরবর্তীকালের আন্দোলনসমূহে ছাত্রসমাজই ছিল মূল শক্তি।

ভাষা আন্দোলন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, কর্মচারী প্রভৃতি সকল পেশার লােকদের মধ্যে ঐক্যের এক ঐতিহ্য সৃষ্টি করে। পরবর্তী আন্দোলনসমূহে আমরা তার পুনরাবৃত্তি দেখি।

৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ছাত্রীদের | বােরখা পরার অভ্যাস কমে যায়। পরবর্তী সভা সমিতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের ধারা সৃষ্টি হয়। রাজনীতিতেও মেয়েরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকে। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা চৌধুরীসহ আরও অনেকে পােস্টার, ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।

জাতীয়তাবাদ বিকাশে ৫২’এর ভাষা আন্দোলনের তাৎপর্যঃ

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্যসাধারণ ঘটনা। পাকিস্তান রাষ্ট্রের বৈষম্যমূলক আচরণের বিরুদ্ধে এটি ছিল বাঙালি জাতির প্রথম প্রতিবাদ ও বিদ্রোহ, বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রথম প্রেরণা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালি জাতি পশ্চিম পাকিস্তানি সরকারের অবহেলা, বঞ্চনা, শোষণের যাতাকলে পিষ্ট হচ্ছিল। মাতৃভাষা বাংলার প্রতি অবমাননা বাঙালির মনকে প্রবল নাড়া দিয়েছিল। তারা বুঝতে পেরেছিল পাকিস্তানিদের হাতে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি কিছুই নিরাপদ নয়। এভাবেই বাঙালির মাঝে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বীজ বপিত হয়।

ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূচনা হয়। ভাষা আন্দোলনের সময় পার্লামেন্টের মধ্যে কংগ্রেস দলীয় হিন্দু নেতৃবৃন্দ ভাষার দাবিতে কথা বলেছেন, আর রাজপথে অকংগ্রেসয়ীরা ধর্মীয় আঁওতাবাজির বিরুদ্ধে বক্তব্য রেখেছেন। ফলে পূর্বাংলায় হিন্দু-মুসলমান সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৫৫ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দ বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ করা হয়। ফলে এ ভূখণ্ডে ধর্মনিরপেক্ষ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির সূত্রপাত হয়।

ভাষা আন্দোলন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, কর্মচারী প্রভৃতি সকল পেশার লােকদের মধ্যে ঐক্যের এক ঐতিহ্য সৃষ্টি করে। পরবর্তী আন্দোলনসমূহে আমরা তার পুনরাবৃত্তি দেখি। ভাষা আন্দোলনের সময় কেন্দ্রীয় গণপরিষদে পূর্ববাংলার জনসংখ্যানুপাতিক আসনসংখ্যা দাবি করা হয়, প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়। কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিসে বাঙালিদেরকে অধিকসংখ্যক নিয়ােগ দেয়ার দাবি করা হয় এবং পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটানাের দাবি করা হয়।

ভাষা আন্দোলন ছাত্রসমাজকে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ছাত্ররা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের মাত্র দুইমাসের মধ্যেই (এপ্রিল, ১৯৫২) ‘পূৰ্বালায় ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে ছাত্র সংগঠন জন্মলাভ করে। পরবর্তকালের আন্দোলনসমূহে ছাত্রসমাজই ছিল মূল শক্তি।

বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিকায়নঃ 

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পরের বছর থেকে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারির একুশে দিনটি বাঙালির শহিদ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে ২১শে ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহিদমিনারে ভাষাশহিদদের প্রতি পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। একুশের  প্রভাতফেরি ও প্রভাতফেরির গান বাঙালি সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ২১শে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন ঘােষণা করা হয়। এদিন শহিদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে বাঙালি চেতনাকে লালন করার প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হয়। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি বাঙালি জাতি রক্তের বিনিময়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করে। বিশ্বের ইতিহাসে অনন্যসাধারণ ঘটনা হিসেবে আমাদের ভাষা ও শহিদ দিবস আজ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি লাভ করেছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর প্যারিসে ইউনেস্কোর অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘােষণা করা হয়। ২০১০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি থেকে এই দিনটি সারাবিশ্বে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Back to top button