বাংলা রচনা

রচনাঃ বর্ষায় বাংলাদেশ (SSC HSC)

2/5 - (39 votes)

বর্ষায় বাংলাদেশ রচনা: ঋতুবৈচিত্র্যের রূপসী বাংলা আমাদের এই দেশ। বর্ষায় বাংলাদেশ ভিন্ন রুপের আমাদের মঝে আসে। প্রায় ১২ টি পয়েন্ট নিয়ে রচনাটি সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে যা ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১২ শ্রেণি শিক্ষার্থীদের উপকারে আসবে।

রচনাঃ বর্ষায় বাংলাদেশ

ভূমিকা

বাংলাদেশ ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ। নানা ঋতুতে এর প্রকৃতি নানান সাজে সজ্জিত হয়। এদেশের প্রতিটি ঋতুই নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। ঠিক তেমনি বর্ষায় বাংলাদেশ যেন এক অপরূপ চিত্রে ফুটে ওঠে। ঋতুচক্রের পালায় এক সময় বর্ষা আসে বাংলাদেশে। আসে তার সিন্গ্ধ  সজল রূপ নিয়ে। বসন্তকে আমরা ঋতুরাজ বলি, কিন্তু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বর্ষাই বাংলার প্রিয় ঋতু। তাছাড়া এদেশে বর্ষার রূপ যতটা সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়ে অন্য কোনাে ঋতুর ক্ষেত্রে তা ঘটে না। সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত তাঁর ছন্দ-হিন্দোল কবিতায় বর্ষার রূপ বর্ণনা করেছেন এভাবে-

গ্রীষ্ম নিঃশেষ! জাগছে আশ্বাস। লাগছে গায়িকার গৈরি নিঃশ্বাস।
চিত্ত-নন্দন দৈবী চন্দন ঝরছে, বিশ্বের ভাসছে দিগপাশ।

বর্ষাকালের সীমারেখা

আমি বর্ষা, আসিলাম গ্রীষ্মের প্রদাহ শেষ করি 
মায়ার কাজল চোখে, মমতার বর্মপুট ভরি। – সুফিয়া কামাল 

 ব্যাপ্তিতে, বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের বর্ষাকালের তুলনা নেই। ঠিক কোন দিনটিতে যে বর্ষার আবির্ভাব, আর কোন দিনটিতে যে তার সমাপ্তি, হিসেবের খড়ি দিয়ে তার সীমারেখা টানা দুষ্কর। মহাকবি কালিদাস “আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে” মেঘের আবির্ভাব দেখেছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ থেকে অশ্বিনের মাঝামাঝি পর্যন্ত বর্ষার পরিধি বিস্তার। তবে আষাঢ়-শ্রাবণেই বর্ষার পরিপূর্ণ রূপ দেখা যায়। গর্জনে, বর্ষণে, চিত্রবিন্যাসে এ দু মাসেই তার পূর্ণনতা। 

ঋতুচক্রে বর্ষার স্থান 

ঋতুচক্রে গ্রীষ্মের পরই বর্ষার অবস্থান। আষাঢ় – শ্রাবণ মাস বর্ষার লীলাখেলার প্রশস্থ সময়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায়, বর্ষাকাল এ দুমাসের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকে না। কালবৈশাখীর গুরুগর্জনে তার আগমনবার্তা সূচিত হয়। আর ভরা ভাদ্র পেরিয়ে আশ্বিন পর্যন্ত রূপের পসরা সাজিয়ে সে অবস্থান করে। আষাঢ় এবং শ্রাবণ মাসেই ঘটে তার উন্মুক্ত প্রকাশ। এসময় সে আপন মনের মাধুরী সাজিয়ে বাংলার প্রকৃতিকে সবুজে সবুজে একাকার করে তোলে। কবির ভাষায় – 

মেঘলা থম থম সূর্য ইন্দু
ডুবল বদলায় দুলল সিন্ধু।
হেম-কদম্বে তৃণ-স্তম্বে
ফুটল হর্ষের অশ্রুবিন্দু!

 বর্ষার আগমন

বর্ষার আগমনরীতি যেমন বিচিত্র, তেমনি অভিনব। লুকোচুরি যেন সে পছন্দ করে না। এক মনােহর সংগীতের তালে রুমুঝুম ছন্দ তুলে সময় চরাচরকে জানিয়ে সে আসে। আকাশে নবীন মেঘের সমারােহে, গুরুগুরু গর্জনে, বিদ্যুতের শিহরনে, অশান্ত বারিপাতের শব্দে ঘােষিত হয় তার আগমনি বার্তা। তার সুশীতল স্পর্শে প্রকৃতি যেন প্রাণ ফিরে পায়। 

বর্ষায় ফুটে থাকা কদম ফুল গাছের দৃশ্য।
বর্ষায় ফুটে থাকা কদম ফুল গাছের দৃশ্য। ছবিঃ shutterstock

বর্ষার অবিরল অবিচ্ছিন্ন ধারায় নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট সব পানিতে একাকার হয়ে যায়। এ সময় গ্রামগুলাে তরুলতা সমাচ্ছন্ন দ্বীপের আকার ধারণ করে। বনে বনে ফুটে জুঁই, কেয়া, কদম ইত্যাদি সুরভিত ফুল। রূপ-রস, বর্ণ-গন্ধ আর অপূর্ব সংগীতে ভরে ওঠে বাংলার আকাশ বাতাস। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বর্ষার রূপে মুগ্ধ হয়ে তাই তাে গেয়েছেন – 

ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে
জল সিঞ্চিত ক্ষিতি সৌরভ রসে 
ঘন-গৌরবে নব যৌবন বরষা,
শ্যাম গম্ভীর সরষা।

বর্ষায় গ্রাম-বাংলার চিত্র

এদিক দিগন্তে যতদূর চাহি, পাংশু মেঘের জাল,
পায়ে জড়াইয়া পথে দাঁড়াইয়াছে আজিকার মহাকাল।

যতদূর দৃষ্টি যায় আকাশে পাংশুটে মেঘের জাল বােনা, প্রকৃতি নিথর নিস্তদ্ধ। বর্ষায় গ্রাম-বাংলার অপরূপ শ্যামশ্রী সত্যিই অনির্বচনীয়। তার ধূলি-মলিন বিবর্ণতার অবসান হয়েছে। শুক্ষতার দীনতা গেছে মুছে। দগ্ধ তৃণভূমিতে জেগেছে প্রাণের হিল্লোল। সর্বত্রই শ্যামল সবুজের নয়ন নন্দন সমারােহ। বর্ষাকালে পল্লির মাঠ-ঘাটে জল থইথই করে। এ দৃশ্য যেন নিপুণ শিল্পীর হাতে আঁকা কোনাে ছবি । দিগন্ত বিস্তৃত পানিতে একাকার মাঠের প্রান্তদেশে বাড়িগুলাে তালতমাল, নারকেল, আম-জাম গাছের কুঞ্জ নিয়ে পানির ওপর ভাসতে থাকে। বর্ষার বারিধারা নদীতে যে প্লাবন সৃষ্টি করে তাতে সমগ্র পথ-ঘাট, বন-প্রান্তর ভরে যায়। বর্ষাপ্লাবিত গ্রামবাংলার এ সৌন্দর্যের কোনাে তুলনা নেই। ভরা নদনদীর বুকের ওপর দিয়ে মৃদুমন্দ বাতাসের দোলায় যে ঢেউ খেলে যায়, তা এক অসাধারণ সৌন্দর্যের আধার। বর্ষায় বাংলাদেশ সাজে এক অপরূপ সাজে। কবির দৃষ্টিতে তা ধরা দেয় এভাবে-

ধান্যশীষ তার করছে বিস্তার
তলিয়ে বন্যায় জাগছে জুলজুল।

নদীর বুকে অজস্র নৌকার ছুটাছুটি, ডিঙি-নৌকায় জেলেদের মাছ ধরা, ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে পদ্মার ইলিশ শিকার, কলার ভেলায় চড়ে ছােট ছেলে-মেয়েদের শাপলা ফুল আহরণ সবই বর্ষার দান। কদম, কেয়া, জুই, কামিনী, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার বিচিত্র বর্ণ ও গন্ধের উৎসবে বক্ত-প্রকতির হৃদয়ের দ্বার যেন খুলে যায়। তাই কবি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছে-

গুরু গুরু ডাকে দেয়া, ফুটিছে কদম কেয়া
ময়ূর পেখম তুলে সুখে তান ধরছে
বর্ষার ঝরঝর সারাদিন ঝরছে।

চারদিকেই বর্ষার মুক্তা-মুরগ-মুরগীর সুর-মূৰ্ছনা। কখনাে অবিরাম ধারাবর্ষণ, কখনাে ক্ষণবর্ষণ। কখনাে আলো আঁধার। মেঘ-রৌদ্রের সকৌতুক থেলা। বার্ষিক মােট বৃষ্টিপাতের ৮০ ভাগেরও অধিক বর্ষাকালেই সংঘটিত বৃষ্টিপাতের কারণে অধিকাংশ প্রবনভূমিই বর্ষাকালে প্লাবিত হয়।

বর্ষার কারণ

বাংলাদেশে বর্ষা ঋতুর সমারােহপূর্ণ আগমনের পেছনে ভৌগােলিক কারণ রয়েছে। গ্রীষ্মকালে মৌসুমি বায়ু ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগর হতে প্রচুর জলীয়বাষ্প ধারণ করে উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়। এ বায়ুপ্রবাহ হিমালয়ে বাঁধা পেয়ে নিম্ন অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। বাংলাদেশ হিমালয়ের নিম্নাঞ্চলে অবস্থিত বলে, এখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। এ বৃষ্টির ফলে নদীনালাগুলাের দুকূল প্লাবিত হয়। প্রতিবছরই বর্ষা বাংলাদেশের তৃষিত ভূমিকে জলদানে পরিতৃপ্ত করে এবং ফুলে ও ফসলে পরিপূর্ণকরে তােলে।

জনজীবনে বর্ষার প্রভাব

পল্লিবাসী কৃষকের জন্য বর্ষা নিয়ে আসে সবুজ শস্যের সওগাত। বর্ষার জলে ধান ও পাট পরিপুষ্ট হয়। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে ক্লিষ্ট পল্লিবাসীর জীবনে বর্ষা আনে অনাবিল শান্তি ও পরিতৃপ্তি। কৃষক এ সময়ে বৃষ্টির জলে মনের আনন্দে কাজ করে। তবে বর্ষা গ্রামীণ মানুষের জীবনে আনন্দের সঙ্গে দুঃখ এবং কষ্টও বয়ে আনে। 

প্রবল বর্ষায় রাস্তা ডুবে যাওয়ার একটি দৃশ্য।
প্রবল বর্ষায় রাস্তা ডুবে যাওয়ার একটি দৃশ্য। ছবি: ShutterStock

এসময় অনবরত বৃষ্টিপাতের ফলে রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়। নদীগুলােতে সর্বনাশা বান ডেকে কৃষকের সব আবাদি ফসল এবং গবাদি পশু কেড়ে নিয়ে যায়। বাড়িঘর ডুবে যায়, কিংবা অর্ধ ডুবন্ত অবস্থায় পানির ওপর ভাসতে থাকে। পায়ে হেটে চলাচল করা এসময় অসম্ভব হয়ে পড়ে। ডিঙি নৌকা কিংবা কলার ভেলাই হয় পারাপার কিংবা যাতায়াতের একমাত্র বাহন। এ সময় নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিসপত্রের দাম অত্যধিক বেড়ে যায়। গ্রামের বহু লােককেই এসময় অনাহার কিংবা অর্ধাহারে দিন কাটাতে হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে জ্বর, আমাশয়, ডায়রিয়া ইত্যাদি রােগের প্রকোপ অত্যধিক বেড়ে যায়। এ সময় ডায়রিয়া এবং আমাশয়ে বহু লােকের মৃত্যু হয়। বিশেষ করে শিশুদের মধ্যে এসব রােগ ছড়িয়ে পড়ে বেশি। মাঝে মাঝে এ রােগগুলাে মহামারি রূপ ধারণ করে। বন্যার করা গ্রাসে নিপতিত হয়ে এ সময় বহু লােক সর্বস্বান্ত হয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরে এসে ভিড় করে। বেঁচে থাকার জন্য তারা ব্যস্ত নগরী পূতিগন্ধময় বস্তি কিংবা রাজপথ আঁকড়ে পড়ে থাকে। বর্ষাকাল, তাই অবিমিশ্র আশীর্বাদ নয়। বড়লােকের আরামে দিন কাটাবান উপযুক্ত সময় এ বর্ষাকাল। কিন্তু গরিবের জন্য বর্ষাকাল যথেষ্ট দুর্ভোগের কারণ। শহরের চঞ্চল মানুষের জন্য বর্ষা বেশ বিঘ্ন ঘটায় । অফিসে যাওয়ার পথে ঝুমঝুম করে বৃষ্টি নামা কিংবা অফিস থেকে ফেরার পথে বৃষ্টিতে আটকে যাওয়া বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু মাঝে মাঝে মানুষের কাছে বর্ষা নিয়ে আসে স্বস্তি, আরামের এক সিন্গ্ধ পরিবেশ।

বর্ষা ও বাংলার অর্থনৈতিক জীবন

বর্ণবিলসিত ঋতুচক্রের মধ্যে বর্ষাই বাঙালির সবচেয়ে আদরের ঋতু। সজল মেঘমেদুর অপরূপ বর্ষার সঙ্গে রয়েছে বাঙালির আজন্মকালের হূদয়বন্ধন। এ ঋতু বাঙালির জীবনে এনে দেয়  অর্থনৈতিক সচ্ছলতা। তার ভাবজীবনকে করেছে বিচিত্র রসসম্পদে সমৃদ্ধ। বর্ষার ক্লান্তিহীন ধারাবর্ষণ, বজ্রবিদ্যুৎ, ঝড়, বন্যা-তাণ্ডব, উপেক্ষা করেও বাংলার কৃষক মাঠে মাঠে সবুজ সতেজ প্রাণের করে আবাহন। রৌদ্র-জলে মাখামাখি হয়ে সে বীজ বােনে। রােপণ করে চারাগাছ। শস্যশিশুর কলকল উচ্ছ্বাসে তার চোখে লাগে অনাগত দিনের স্বপ্ন-নেশা। ভরে ওঠে নতুন দিনের আশ্বাসে। বর্ষার অকৃপণ প্রসন্ন দাক্ষিণ্যে বাংলার মাঠ-প্রান্তর হয় শস্যশ্যামলা। বর্ষাকালই আনন্দ-ঘন নবান্ন উৎসবের নেপথ্য মঞ্চ। আবার তারই অপ্রসন্ন, অভিমানী দৃষ্টিতে ঘরে ঘরে অন্তহীন দুঃখের আঁধার হাহাকার। অতি বর্ষণে তার ভয়াল সংহাররূপে মানুষ আতঙ্কিত, ভীত সন্ত্রস্ত। শ্যাম-গম্ভীর বর্ষা একদিকে যেমন গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে আশীর্বাদ, অন্যদিকে সে-ই আবার দরিদ্র পল্লিবাসীর দুঃখের কারণ। তবু বর্ষা বাংলাদেশের অর্থনীতিসমৃদ্ধ জীবন-প্রবাহের এক অপরিহার্য কল্যাণী-ঋতু। 

বর্ষা ও সাংস্কৃতিক জীবন

শুধু অর্থনৈতিক জীবনে নয়, বাঙালির সাংস্কৃতিক, ভাবগত জীবনেও বর্ষা ঋতুর রয়েছে অনন্য ভূমিকা। বর্ষার সরস সজল স্পর্শ, শুধু বাংলার রুক্ষ ধূসর প্রান্তরকেই অসীম প্রাণপ্রবাহে স্পন্দিত করে নি, বাঙালির মনকে করেছে সরস। করেছে নব নব সৃষ্টি-সুখের উল্লাসে উদ্বুদ্ধ। তার শ্যামল নীলিমায় দূর-দিগন্তে বাঙালি ছড়িয়ে দিয়েছে তার মুক্ত মনের বিহঙ্গ ডানা। বর্ষা শুধু তৃষ্ণার্ত ধরিত্রীর মরুবক্ষকেই সিক্ত করে নি, মর্তমানুষের মনকেও করেছে বিচিত্র ভাবরসে সঞ্জীবিত। বাঙালির গৃহাঙ্গন পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে নানা উৎসব-আনন্দে। রচিত হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। উৎসব আয়ােজন এই ঋতুরই উপযুক্ত পটভূমি। রচনা করেছে কত সঙ্গীত, কত কাহিনি। স্নিগ্ধ-সজল পটভূমিতে সে আয়ােজন করেছে বর্ষামঙ্গল, বৃক্ষরােপণ ইত্যাদির অনুষ্ঠান, বর্ষা বাঙালির জীবনে এনে দিয়েছে নতুন ছন্দ-সুষমা। তার মনয়ে করেছে কল্পনা বিলাসী। হৃদয়কে দিয়েছে নিত্য নতুন ভাব-সম্পদের সন্ধান। চরিত্রকে করেছে কোমলে-কঠোরে সহনীয়।

বর্ষা ও বাংলা সাহিত্য

বর্ষা বাঙালিকে দিয়েছে প্রয়ােজনের জগৎ থেকে অপ্রয়ােজনের জগতে অনন্ত অভিসার-বাসনা। তার মনােভূমি হয়েছে নিত্য নবীন ভাবরসে সিক্ত। বর্ষার স্নিগ্ধ-সজল মায়াঙ্গনে যুগে যুগে কবি-হৃদয় উদ্বেল হয়েছে। বর্ষাকে সে জানিয়েছে স্বাগত অভিবাদন। পাড়ি দিয়েছে সৌন্দর্যের নিরুদ্দেশ পথে। বর্ষা বাঙালির মনভূমিকে করে সরস এবং কাব্যময়। বর্ষার মনােরম প্রাকৃতিক দৃশ্য আমাদের মনকে বিমােহিত করে। বাংলাদেশের বহু কবির জীবনে বর্ষার প্রভাব সুস্পষ্ট। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কাব্যে বর্ষা বিরাট স্থান দখল করে আছে। তাছাড়া গােবিন্দ দাস, অক্ষয় কুমার বড়াল, জসিমউদ্দীন প্রমুখ কবি বর্ষা সম্বন্ধে প্রচুর কবিতা লিখেছেন।

মানবমনে বর্ষার প্রভাব

বর্ষার মেঘমেদুর আবহাওয়া, বৃষ্টির অবিরল ধারা, টাপুরটুপুর শব্দ মানুষের মনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। এ সময় মানুষ হারানাে অতীতকে রােমন্থন করে আনন্দ পায় । অতীত দিনের স্মৃতিগুলাে একের পর এক ভেসে ওঠে তার মানসপটে। উদাস দৃষ্টিতে সে জলপতনের দৃশ্য দেখে। কবিগুরু মানবমনে বর্ষার প্রভাব সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাই বলেছেন –

এমন দিনে তারে বলা যায়,
এমন ঘন ঘাের বরিষায়।

কবির দৃষ্টিতে বর্ষা গভীর অর্থব্যঞ্জনায় বিধৃত। বর্ষা হল অবকাশের, নিষ্প্রয়ােজনের ঋতু। কবি বলেছেন-

আজি ঝরঝর মুখর বাদল দিনে জানিনে জানিনে
কিছুতে কেন যে মন লাগে না।

ঝরঝর মুখর বাদল দিনে। 

 উপসংহার

বর্ষায় বাংলাদেশ যেন  রূপ-বৈচিত্র্যে তুলনাহীন। বর্ষাকাল বাঙালির প্রাণের ঋতু। ভালােবাসার উষ্ণ স্পর্শে তা সজীব। মানষের মনে সঞ্চার করে অনন্ত বিরহ-বেদনা। মনকে দেয় চির সৌন্দর্যলােকের আভাস। বর্ষাঋতুর প্রভাবকে কোনােক্রমেই অস্বীকার করার উপায় নেই। যদি বর্ষা না আসতাে, তাহলে আমাদের এ দেশ মরুভূমিতে পরিণত হতাে। বর্ষার কারণেই এদেশ সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা। বাংলাদেশের এ যে অপরূপ প্রাকৃতিক নিসর্গতা বর্ষারই অবদান। বর্ষার এক হাতে বরাভয়, অন্য হাতে ধ্বংসের প্রলয়-ডমরু। এক পদপাতে সৃজনের প্রাচুর্য, অন্য পদপাতে ধ্বংসের তাণ্ডব। একচোখে অশ্রু, অন্য চোখে হাসি। বর্ষা তাই, আমাদের কাছে চির আদরের ঋতু, অনন্ত বেদনার ঋতু। 


এই রচনার সাথে সম্পৃক্ত কিছু বিষয়ঃ

বাংলা ষড়ঋতু (রচনা)

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য (রচনা)

একটি বর্ষণমুখর সন্ধ্যা (রচনা)

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রচনা)

↬ জসীম উদ্দীন (Jasimuddin) 

↬ গোবিন্দ দাস (Govindadasa)

↬ অক্ষয় কুমার বড়াল (Akshay Kumar Baral)


Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button