আজকের বিষয় – বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখা, পরিমাপের পদ্ধতি ও একক
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শব্দ দুটি একে অপরের সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই দুইটির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কর্মপদ্ধতি তুলনা করলে আমরা দুইটির পার্থক্য ও মিল বুঝতে পারব। বিজ্ঞানী হলেন তিনি, যিনি কোনাে বস্তু বা ঘটনা সম্পর্কে গবেষণা, তথ্য সংগ্রহ, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেমন- পদার্থ বিজ্ঞানী, রসায়ন বিজ্ঞানী, উদ্ভিদ বিজ্ঞানী ও প্রাণী বিজ্ঞানী। প্রযুক্তিবিদ হলেন তিনি যিনি বিজ্ঞানের আবিষ্কারকে মানুষের কল্যাণে ব্যবহার করেন। যেমন- চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আবহাওয়া বিজ্ঞানী।
বিজ্ঞানের শাখা-প্রশাখা
পৃথিবীর সকল জ্ঞান পরস্পরের সাথে নিবিড়ভাবে সম্পর্কযুক্ত। জ্ঞানকে একে অন্যের সাথে সম্পর্কহীনভাবে বিভক্ত করা যায় না। যেমন : জীববিজ্ঞানী যখন কোনাে কোষ সম্পর্কে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন তখন তাকে উন্নত ধরনের প্রাণ রাসায়নিক কৌশল অবলম্বন করতে হয়। আবার পদার্থবিজ্ঞানী যখন নিউক্লিয়াস সম্পর্কে গবেষণা করেন তখন রসায়নের জ্ঞানের প্রয়ােজন হয়। তবুও পাঠের সুবিধার জন্য বিজ্ঞানকে প্রধানত দুটি শাখায় ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ (ক) জড়বিজ্ঞান ও (খ) জীববিজ্ঞান।
জড়বিজ্ঞান
যাদের জীবন নেই, তাদের সম্পর্কে যে বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয়, তাকে জড়বিজ্ঞান বলে। জড়বিজ্ঞানের দুটি প্রধান শাখা হল পদার্থবিদ্যা ও রসায়নবিদ্যা।
জীববিজ্ঞান
যাদের জীবন আছে, তাদের সম্পর্কে যে বিজ্ঞানে গবেষণা করা হয়, তাকে জীববিজ্ঞান বলে। জীববিজ্ঞানের দুটি প্রধান শাখা হল- উদ্ভিদবিদ্যা ও প্রাণিবিদ্যা।
নিচে চিত্রাকারে বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখাগুলােকে দেখানাে হল:
বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে বর্তমানে বিজ্ঞানের অনেক নতুন নতুন শাখার জন্ম হয়েছে। যেমন- জ্যোতির্বিদ্যা, ভূবিদ্যা, আবহাওয়া বিদ্যা, ভেষজ বিজ্ঞান, প্রাণ-পদার্থবিদ্যা, স্বাস্থ্য-পদার্থবিদ্যা, মহাকাশ-জীববিদ্যা, ভূ-পদার্থবিদ্যা ইত্যাদি।
পরিমাপের পদ্ধতি ও একক
কোনাে কিছুর মাপ-জোখের নাম পরিমাপ। আর যে সকল জিনিসের পরিমাপ করা সম্ভব তাদের রাশি বলে। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা অনেক রাশি বা জিনিসের পরিমাপ করে থাকি। যেমন সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় হল কিনা তা ঘড়ি দেখে ঠিক করি। নিজের ওজন তুলাযন্ত্রের সাহায্যে মাপি, আবার ফিতা দিয়ে মেপে দেখি নিজের উচ্চতা। সুতরাং সময়, ওজন, উচ্চতা প্রত্যেকটি এক একটি রাশি। আবার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আয়তন, ভর, বেগ ইত্যাদি প্রত্যেকটিও রাশি। বিজ্ঞান জগতে এসব রাশির পরিমাপ সঠিকভাবে জানা প্রয়ােজন। কেবল লােকটি লম্বা, পাথরটি ভারী, পােস্ট-অফিস বাড়ি থেকে কিছু দূরে জানলে হবে না, বরং সঠিকভাবে জানতে হবে লােকটি কত লম্বা, পাথরটি কত ভারী এবং পােস্ট অফিস থেকে বাড়ি কত দূরে। আর সঠিকভাবে জানার জন্য স্কেল, নিক্তি ইত্যাদি তৈরি হয়েছে।
পরিমাপের একক
কোনাে বস্তু পরিমাপ করার জন্য তার একটি ক্ষুদ্র নির্দিষ্ট অংশকে আদর্শ হিসেবে ধরা হয় এবং ক্ষুদ্র অংশটির সাথে তুলনা করে বস্তুটির পরিমাপ করা হয়। অর্থাৎ বস্তুটি ক্ষুদ্র অংশের যতগুণ তাই বস্তুটির পরিমাপ। ধরি, একটি ব্যাগে ২০ কেজি চাল রয়েছে। এখানে কেজি নামের নির্দিষ্ট ভরকে একক হিসেবে ধরা হয়েছে এবং ব্যাগে চাল রয়েছে তার তুলনায় ২০ গুণ। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন রাশি পরিমাপের জন্য সাধারণত মেট্রিক নামক একটি পদ্ধতি ব্যবহার করেন। এ পদ্ধতির সুবিধা হল দশমিক ভিত্তিতে এর সব হিসেব করা যায়। এজন্য এ পদ্ধতিকে দশমিক পদ্ধতিও বলা হয়। এ পদ্ধতিতে পরিমাপের জন্য আমরা মিটার, কিলােগ্রাম, সেকেন্ড (Meter, Kilogram, Second, বা M.K.S) ও সেন্টিমিটার, গ্রাম, সেকেন্ড (Centimeter, Gram, Second, বা C.G.S) এ দু ধরনের একক ব্যবহার করে থাকি। MKS পদ্ধতিকে আন্তর্জাতিক পদ্ধতি (S.I বা System International) বলে।
দৈর্ঘ্য
S. I পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্যের একক মিটার। ৯০ ভাগ প্লাটিনাম এবং ১০ ভাগ ইরিডিয়াম মিশ্রিত সংকর ধাতুর তৈরি একটি দন্ডের উপর দুইটি নির্দিষ্ট দাগের মধ্যবর্তী দূরত্বকে মিটার বলে। ফ্রান্সের প্যারিস শহরে “ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরাে অব ওয়েটস এন্ড মেজারস” এর অফিসে দন্ডটি বিশেষভাবে রক্ষিত রয়েছে। তাপমাত্রা হ্রাস বা বৃদ্ধির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখার জন্য এটিকে 273° (কেলভিন) বা 0°C তাপমাত্রায় রাখা হয়। দন্ডটির দুই দাগের মধ্যবর্তী দূরত্বের একশত ভাগের এক ভাগকে এক সেন্টিমিটার বলা হয়।
ভর
S.I পদ্ধতিতে ভরের একক কিলােগ্রাম। প্লাটিনাম-ইরিডিয়াম সংকর ধাতু দিয়ে তৈরি একটি সমান উচ্চতা ও ব্যাস বিশিষ্ট নিরেট চোঙের ভরকে এক কিলােগ্রাম বা কেজি বলে। ফ্রান্সের প্যারিস শহরে “ইন্টারন্যাশনাল ব্যুরাে অব ওয়েটস এন্ড মেজারস” এর অফিসে চোঙটি সংরক্ষিত রয়েছে। এক কিলােগ্রামের এক হাজার ভাগের এক ভাগকে এক গ্রাম বলা হয়। এক শত কিলােগ্রামে এক কুইন্টাল এবং এক সহস্র কিলােগ্রামে এক মেট্রিক টন হয়।
সময়
SI পদ্ধতিতে সময়ের একক সেকেন্ড। ৬০ সেকেন্ডে এক মিনিট এবং ৬০ মিনিটে এক ঘণ্টা হয়। ২৪ ঘণ্টায় এক দিন এবং ৩০ দিনে এক মাস হয়। পর পর দুইবার মধ্যরেখা (Meridian) অতিক্রম করতে সূর্য যে সময় নেয়, তাকে একদিন বলে। বর্তমানে ১৩৩ পারমাণবিক ভরবিশিষ্ট সিজিয়াম পরমাণু থেকে নির্গত আলাের নির্দিষ্ট সংখ্যক স্পন্দন কাল থেকে সেকেন্ডের মান পাওয়া যায়।
আয়তন
S.I পদ্ধতিতে আয়তনের একক ঘনমিটার। এক মিটার দৈর্ঘ্য, এক মিটার প্রস্থ এবং এক মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট বস্তুর আয়তন এক ঘনমিটার। তরল পদার্থের আয়তনের একক লিটার। এক লিটার, ১০০০ ঘন সেন্টিমিটার এবং ৪ ডিগ্রী সে, তাপমাত্রায় রক্ষিত ১ কিলােগ্রাম পানির আয়তনের সমান।