ইসলাম ও জীবন

সেহরি ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

Rate this post

সেহরি ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ: আসসালামু আলাইকুম, আশা করছি মহান আল্লাহপাকের রহমতে সবাই ভালো আছেন। আজকে পবিত্র রমজান মাসের সেহরি ও ইফতারের দোয়া সম্পর্কে আলোচনা করব। রমজান মাস বরকতের মাস। এই মাসে মহান আল্লাহ তার বান্দাদের উপর রহমত ঢেলে দেন। তাই রমজান মাসে আমরা যে রোজা রাখছি, ইফতার, সেহরি করছি তা যেন সহীহ শুদ্ধ হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।

রোজা কি

রোজা শব্দের অর্থ হল “বিরত থাকা”। আরবিতে রোজাকে “সাওম” বলা হয়। যার বহুবচন হল “সিয়াম”। সিয়াম অর্থ হল উপবাস থাকা, রক্ষা করা। রমজন মাস সিয়াম সাধনার মাস। ইইসলামি শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহপাকের হুকুম পালনার্থে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুবহে সাদিক থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সঙ্গম,পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সিয়াম। পবিত্র কুরআনে আল্লহপাক শুধুমাত্র একটি আয়াতে রোজার কথা বলেছেন। দ্বিতীয়বার এর পুনরাবৃত্তি করেননি। সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

রমজান মাস কেন ফজিলতপূর্ণ

অন্যান মাসের তুলনায় রমজান মাসের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অত্যন্ত মর্যাদাবান। আরবি ১২ টি মাসের মধ্যে রমজান মাস হল শ্রেষ্ঠ মাস। এ মাস শ্রেষ্টত্বের পিছনে অনেক কারণ আছে। তার মধ্যে সর্বশ্রেঠ যে কারণ তা হল – আল্লাহপাক এই পবিত্র মাসে কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। কুরআন সর্বপ্রথম লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ ছিল। সেখান থেকে আল্লাহপাক রমজানুল মোবারকের কোন একটি রজনীতে বাইতুল ইজ্জাতে (যেটি প্রথম আসমানে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত জায়গা) সম্পূর্ণ কুরআন ট্রান্সফার করেন।

এরপর গোটা ২৩ বছর ধরে সময়ের প্রেক্ষিতে ঘটনার প্রেক্ষিতে আল্লাহপাক নবীজির (স) উপর কখনো এক আয়াত, এখনো পাঁচ আয়াত আবার কখনো একটি সূরা নিযিল করতে থাকেন। কুরআনুল কারীম নাযিল হওয়ার কারণে এই মাসটির মর্যাদা সবচেয়ে বেশি। কুরআন হল পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মর্যাদাবান কিতাব।

মানবজাতির জন্য এটি একটি বড় নিয়ামত। অন্য মাসে একটি নফল আদায় করলে যে সওয়াব পাওয়া যাবে রমজান মাসে সে নফল ফরজের সমতুল্য। আবার একটি ফরজ পালন করলে আল্লাহ্পাক ৭০ গুন সওয়াব তার আমলনায় নিলে দিবেন (সুবাহানাল্লাহ)। মুমিনদের উচিত হল রমজান মাসের জন্য অপেক্ষা করা।

এ মাসে যত বেশি আমল করা যায় ততবেশি নেকীর ভাগিদার হয় যায়। এ মাসের আরও মর্যাদা হল আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের জন্য আকাশের দরজাগুলোকে খুলে দেওয়া হয় এবং শয়তাকে শৃখল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়। যার কারণে মুমিনেরা গুন্নাহমুক্তভাবে জীবন পাড় করতে পারেন। এ মাসে আল্লাহ্পাক জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেন এবং সমস্ত কবরের আজাবকে আল্লাহ্পাক বন্ধ করে দেন। এক হাদিসে আল্লাহর নবী (স) বলেছেন:

রমজান মাসে আল্লাহ্পাক তার বান্দাদের জন্য সমস্ত রহমতের দরজা খুলে দেন। এবং জান্নাতের সকল দরজা তার বান্দাদের জন্য খুলে দেন।

 

সেহরির দোয়া বাংলা উচ্চারণ অনুবাদ

نويت ان اصوم غدا من شهر رمضان المبارك فرضا لك ياالله فتقبل منى انك انت السميع العليم

উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাজানাল মুবারাকি ফারদাল্লাকা, ইয়া আল্লাহু ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আগামীকাল পবিত্র রমযান মাসে তোমার পক্ষ থেকে ফরয করা রোজা রাখার নিয়ত করলাম, অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।

সেহরীর মাসায়েল

সেহরী রোযার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আসুন জেনে নেই সেহরীর মাসায়েল সম্পর্কে। 

  • সেহরী খাওয়া জরুরি নয় তবে সেহরী খাওয়া সুন্নাত, অনেক ফযীলতের আমল, তাই ক্ষুধা না লাগলে বা খেতে ইচ্ছে না করলেও সেহরীর ফযীলত হাছিল করার নিয়তে যা-ই হােক কিছু পানাহার করে নিবে।
  • নিদ্রিার কারণে সেহরী খেতে না পারলেও রােযা রাখতে হবে । সেহরী না খেতে পারায় রােযা না রাখা অত্যন্ত পাপ ।
  • সেহরীর সময় আছে বা নেই নিয়ে সন্দেহ হলে সেহরী না খাওয়া উচিত। এরূপ সময়ে খেলে রােযা কাযা করা ভাল। আর যদি পরে নিশ্চিতভাবে জানা যায় যে, তখন সেহরীর সময় ছিল না, তাহলে কাযা করা ওয়াজিব।
  • সেহরীর সময় আছে মনে করে পানাহার করল অথচ পরে জানা গেল যে, তখন সেহরীর সময় ছিল না, তাহলে রােযা হবে না। তবে সারাদিন তাকে রােযাদারের ন্যায় থাকতে হবে এবং রমযানের পর ঐ দিনের রােযা কাযা করতে হবে।
  • বিলম্বে সেহরী খাওয়া উত্তম। আগে খাওয়া হয়ে গেলেও শেষ সময় নাগাদ কিছু চা-পানি ইত্যাদি করতে থাকলেও বিলম্বে সেহরী করার ফযীলত অর্জিত হবে।

ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অনুবাদ

ইফতার করার পূর্বে নিমােক্ত দুআ পাঠ করবে। দুআ পাঠ করা মােস্তাহাব।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু।

ইফাতের পর নিন্মের দোয়া পড়তে হবেঃ

সেহরি ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ

উচ্চারণ : জাহাবাজ জামাউ; ওয়াবতাল্লাতিল উ’রুকু; ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহ।
অর্থঃ (ইফতারের মাধ্যমে) পিপাসা দূর হলো, শিরা-উপসিরা সিক্ত হলো এবং যদি আল্লাহ চান সাওয়াবও স্থির হলো।

ইফতার-এর মাসায়েল

ইফতার রোযাদারের জন্য খুশির বিষয়। সারাদিন পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতারের মাধ্যমে রোযাদার তার ক্ষুধা নিবারন করে থাকেন। ইফতার করার কিছু মাসায়েল রয়েছে।

  • সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর বিলম্ব না করে তাড়াতাড়ি ইফতার করা মােস্তাহাব। বিলম্বে ইফতার করা মাকরূহ।
  • মেঘের দিনে কিছু দেরি করে ইফতার করা ভাল । মেঘের দিনে ঈমানদার ব্যক্তির অন্তরে সূর্য অস্ত গিয়েছে বলে সাক্ষ্য না দেয়া পর্যন্ত ছবর করা ভাল । শুধু ঘড়ি বা আযানের উপর নির্ভর করা ভাল নয়, কারণ তাতে ভুলও হতে পারে।
  • সূর্য অস্ত যাওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকা পর্যন্ত ইফতার করা দুরস্ত নেই।
  • সবচেয়ে উত্তম হল খােরমার দ্বারা ইফতার করা, তারপর কোন মিষ্টি জিনিস দ্বারা, তারপর পানি দ্বারা ।
  • লবণ দ্বারা ইফতার শুরু করা উত্তম-এই আকীদা ভুল।
  • ইফতার-এর সময় দুআ কবুল হয়, তাই ইফতারের পূর্বে বা কিছু ইফতার করে বা ইফতার থেকে সম্পূর্ণ ফারেগ হয়ে দুআ করা মােস্তাহাব।
  • পশ্চিম দিকে প্লেনে সফর শুরু করার কারণে যদি দিন লম্বা হয়ে যায় তাহলে সুবহে সাদেক থেকে নিয়ে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সূর্যাস্ত ঘটলে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইফতার বিলম্ব করতে হবে, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেও সূর্যাস্ত না ঘটলে ২৪ ঘণ্টা পূর্ণ হওয়ার সামান্য কিছু পূর্বে ইফতার করে নিবে।
  • পূর্ব দিকে প্লেনে সফর করলে যখনই সূর্যাস্ত পাবে তখনই ইফতার করবে।

সেহরি ও ইফতারের দোয়া বাংলা উচ্চারণ অর্থসহ লিখাটি আপনাদের ভালো লেগেছে। ভালো লাগলে অবশ্যই বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button