বাংলা রচনা

বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন নিয়ে রচনা [ PDF সহ ] -১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন রচনা

4.2/5 - (38 votes)

ভূমিকা

 বাংলার ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অনবদ্য নাম। তিনি বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ নেতা এবং বিশ্বের শ্রেষ্ঠ নেতাদের অন্যতম। তাঁর বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই ১৯৭১ সালের ১৬ই | ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। বাংলার এই অবিসংবাদিত নেতা আজীবন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার চেষ্টা করে গেছেন। তাই তো কবি কণ্ঠে উচ্চারিত হয়—

যতদিন রবে গৌরি, যমুনা, পদ্মা-মেঘনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

 

জন্ম

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার পাটগাতি ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা শেখ লুৎফর রহমান গোপালগঞ্জ দায়রা আদালতের সেরেস্তাদার (যিনি আদালতের হিসাব সংরক্ষণ করেন) ছিলেন এবং মা’র নাম সায়েরা খাতুন। চার কন্যা এবং দুই পুত্রের সংসারে তিনি ছিলেন তৃতীয় সন্তান।

বঙ্গবন্ধুর ছেলেবেলা

টুঙ্গিপাড়ার শ্যামল পরিবেশে শেখ মুজিবের জীবন কাটে দুরন্তপনা করে। মধুমতির ঘোলাজলে গ্রামের ছেলেদের সাথে সাঁতার কাটা, দল বেঁধে হা-ডু-ড়, ফুটবল, ভলিবল খেলায় তিনি ছিলেন দস্যি বালকদের নেতা। তখন কে জানত এই দস্যি বালকদের নেতাই একদিন বিশ্বনেতা, বাঙালি জাতির পিতা হবেন?

১৯২৭ সালে সাত বছর বয়সে বঙ্গবন্ধু গিমাডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা শুরু করেন। নয় বছর বয়সে তথা ১৯২৯ সালে গোপালগঞ্জ পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই ১৯৩৪ সাল পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। এখানে বছর দেড়েক যেতে না যেতেই খোকা আক্রান্ত হন বেরিবেরি রোগে।

এ রোগ থেকেই তার চোখে জটিল অসুখ দেখা দেয়। যার নাম ‘গ্লোফুমা।’ বাবা লুৎফর রহমান অস্থির হয়ে পড়েন। শুভাকাঙ্ক্ষীদের পরামর্শে খোকাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যান। সেখানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিশেজ্ঞ ডা. টি আহমেদ তার চোখের সার্জারি করেন। গ্লোফমা থেকে সুস্থ হলেও চিকিৎসক তাঁকে চোখে চশমা ব্যবহারের পরামর্শ দেন।

এই কারণে ১৯৩৪ থেকে চার বছর তিনি বিদ্যালয়ের পাঠ চালিয়ে যেতে পারেন নি। ১৯৩৭ সালে গোপালগঞ্জে মাথুরানাথ ইনস্টিটিউট মিশন স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন। গোপালগঞ্জ মিশনারি স্কুল থেকে তিনি ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করেন৷

বাবুই পাখি বাসা কেমন করে গড়ে তোলে, মাছরাঙা কীভাবে ডুব দিয়ে মাছ ধরে, কোথায় দোয়েল পাখির বাসা, দোয়েল পাখির সুমধুর সুর এসব বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করত। আর তাই গ্রামের ছোট ছোট ছেলের সঙ্গে করে মাঠে-ঘাটে ঘুরে প্রকৃতির সাথে মিশে বেড়াতে তার ভালো লাগত। ছোট্ট শালিক পাখির ছানা, পাখির সুমধুর সুর এসব বঙ্গবন্ধুকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করত।

আর তাই গ্রামের ছোট ছোট ছেলের সঙ্গে করে মাঠে-ঘাটে ঘুরে প্রকৃতির সাথে মিশে বেড়াতে তার ভালো লাগত। ছোট্ট শালিক পাখির ছানা, ময়না পাখির ছানা ধরে তাদের কথা বলা ও শিস দেওয়া শেখাতেন। বানর ও কুকুর পুষতেন, তারা তার কথামতো যা বলতেন তাই করত।

ভাত, মাছের ঝোল আর সবজি ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রিয় খাবার। এই মহান নেতা শৈশবে রোগা হলে কী হবে, খেলাধুলার ব্যাপারে তাঁর ছিল দারুণ আগ্রহ। আর প্রিয় খেলা ছিল ফুটবল। আর মজাটা হতো ফুটবল খেলতে গেলেই। এমনিতেই তো তিনি ছিলেন ভীষণ রোগা, তাই যখন তিনি বলে জোরে কিক করতেন, নিজেও উল্টো গড়িয়ে পড়তেন!

অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, আমি খেলাধুলাও করতাম। ফুটবল, ভলিবল ও হকি খেলতাম। খুব ভালো খেলোয়াড় ছিলাম না। তবুও স্কুলের টিমের মধ্যে ভালো অবস্থান ছিল। এই সময় আমার রাজনীতির খেয়াল তত ছিল না ৷

একবার তার গ্রামের চাষিদের ফসল নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকদের অনেক বাড়িতেই দু’বেলা ভাত রান্না বন্ধ হয়ে যায়। সারা গ্রামেই প্রায়-দুর্ভিক্ষাবস্থা নিয়ে চাপা গুঞ্জন কিশোর মুজিব এ রকম পরিস্থিতিতে দুঃখ-ভারাক্রান্ত। একটা কিছু করার জন্য তিনি ছটফট করছিলেন। পরে নিজের পিতাকে তিনি তাদের গোলা থেকে বিপন্ন কৃষকদের মধ্যে ধান বিতরণের জন্য অনুরোধ জানালেন।

তাদের নিজেদের ধানের মজুদ কেমন, এই অনুরোধ তার বাবা রাখতে পারবেন কিনা, সেসব তিনি ভাবেননি। কৃষকদের বাঁচিয়ে রাখার চিন্তাটিই ছিল তখন তার কাছে মুখ্য।

তৎকালীন অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক যখন গোপালগঞ্জ মাথুরানাথ ইনিস্টিউট মিশন স্কুল পরিদর্শনে আসেন তখন তাঁর সাথে ছিলেন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী। শেখ মুজিব যখন মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সাথে বাদানুবাদ করছিলেন।

শেখ মুজিবের সৎসাহস,কর্তব্যবোধ তাঁর মনোযোগ আকর্ষণ করে। পরে ডাক বাংলোতে ফেরেই তিনি শেখ মুজিবকে ডেকে পাঠালেন। তিনি তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা বললেন এবং কলকাতায় তাঁর সাথে দেখা করতে বললেন। পরবর্তীতে তিঁনি এই হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর হাত ধরেই শেখ মুজিব রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

উপসংহার

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্থপতি। দেশের মানুষের হৃদয়ে তাঁর স্থান ছিল সংগ্রাম ও স্বাধীনতার প্রেরণা হিসেবে। তাঁর দূরদর্শী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে। এ জন্য তিনি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, তত দিন তিনি স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে থাকবেন। এ কারণেই কবি অনুদাশঙ্কর রায় বলেছেন—

যতদিন রবে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গৌরী বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।

 

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button