ইসলাম ও জীবন

কোন সময় দোয়া করলে আল্লাহ্‌ কবুল করেন

5/5 - (3 votes)

দোয়া করাও একটি উত্তম ইবাদাত। বান্দা যেকোন সময় আল্লাহ্‌র নিকট দোয়া করতে পারে। তবে দোয়া কবুলের বিশেষ কিছু সময় রয়েছে। ওই সময় দোয়া করলে তা কবুল হয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আসুন জেনে নেই কোন কোন সময় দোয়া করলে তা কবুল হয়।

১। রাতের শেষ তৃতীয়াংশঃ এই সময় দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে সহীহ হাদীসে অত্যন্ত জোরালাে রেফারেন্স আছে। এটা প্রতিটি রাতের জন্যই প্রযােজ্য, শুধুমাত্র শবে বরাত, শবে মিরাজ বা কদর রাতে নয়। আবু হুরাইরা রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “প্রত্যেক দিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব (আল্লাহ) সবচেয়ে নীচের আকাশে নেমে আসেন এবং বলেন, ‘কে আমাকে ডাকছাে, আমি তােমার ডাকে সাড়া দেবাে। কে আমার কাছে চাইছাে, আমি তাকে তা দেবাে। কে আছাে আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী, যে আমি তােমাকে ক্ষমা করে দেবাে?” (সহীহ বুখারী)

রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আল্লাহর কাছে তাঁর একজন উপাস্য সবচেয়ে নিকটতম যে সময়টাতে আসতে পারে তা হলাে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। সুতরাং তােমরা যদি পারাে তাহলে তােমরা তাদের একজন হও যারা সে সময় আল্লাহর স্মরণ করে”। (তিরমিজি, নাসায়ী, আল হাকিম-সহীহ)

২। শেষ রাতের যে কোন একটি সময়ঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রাতে এমন একটি সময় আছে যে সময়টাতে কোন মুসলিমের এমনটা হয়না যে সে এই পৃথিবী কিংবা পরকালের জীবনের জন্য আল্লাহর কাছে কিছু চাইলাে আর তাকে তা দেয়া হলাে না। আর এটা প্রতিটি রাতেই ঘটে”। (মুসলিম-৭৫৭)

৩। আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ঃ মক্কা কিংবা মদীনার নামাজের জামায়াত শুরু হবার মাঝখানে অনেক মুসলিমকে দেখা যায় নামাজ শুরুর আগে হাত তুলে দোয়া করতে। এ সময়টা দোয়া কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়। আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “আযান ও ইকামাতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয়না”। (আবু দাউদ-৫২১, তিরমিজি-২১২)

৪। জুম্মার দিন যে কোন একটি সময়েঃ জুম্মার দিনে এমন অসাধারণ একটি নিয়ামাতের সময় আছে যে সময়টাতে দোয়া কবুল হবার বিশুদ্ধ বর্ণনা রাসুল সাঃ থেকে এসেছে। আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আমাদের একদিন শুক্রবার নিয়ে আলোচনা করলেন। এবং বললেন, ‘জুম্মার দিনে একটি সময় আছে যে সময়টা কোন মুসলিম সালাত আদায়রত অবস্থায় পায় এবং আল্লাহর কাছে কিছু চায়, আল্লাহ অবশ্যই তার সে চাহিদা মেটাবেন’, এবং তিনি (রাসুল সাঃ) তাঁর হাত দিয়ে ইশারা করে সে সময়টা সংক্ষিপ্ততার ইঙ্গিত দেন”। (সহীহ বুখারী)।

কোন কোন স্কলার সে সময়টার ব্যপারে বলেছেন, তা হলাে-ইমাম যখন মসজিদে প্রবেশ করেন সে সময় থেকে সালাত শেষ হবার সময় পর্যন্ত, কেউ বলেছেন দুই খুতবার মাঝখানে, কেউ আবার জোর দিয়ে বলেছেন তা হলাে আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা। আল্লাহই ভাল জানেন।

৫। জমজমের পানি পান করার সময়ঃ জাবির রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জমজম পানি হলাে তার জন্য, যার জন্য এটি পান করা হয়”। (ইবন মাজাহ ৩০৬২, আহমাদ ৩/৩৫৭)। অর্থাৎ, জমজমের পানি খাবার সময় আল্লাহর কাছে যা চাওয়া হয়, তা পাবার সম্ভাবনা আছে।

কোন কোন সময় দোয়া কবুল হয়
কোন কোন সময় দোয়া কবুল হয়।

৬। সিজদাহর সময়েঃ আবু হুরাইরাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে সমটাতে বান্দা আল্লাহর সবচেয়ে নিকটতম অবস্থায় থাকে তা হলাে সিজদাহর সময়। সুতরাং তোমরা সে সময় আল্লাহর কাছে বেশী বেশী চাও”। (মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ)

৭। রাতের বেলা ঘুম থেকে জেগে উঠলেঃ উবাদা ইবনুস সামিত রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “যে কেউ রাতের বেলা ঘুম থেকে জাগে আর বলে-‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়াহুয়া আলা কিল্লি শায়িন কা’দির, আলহামদুলিল্লাহি ওয়া সুবহানাল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়া লা হাওলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ’ এবং এরপর বলে “আল্লাহুম মাগফিরলি (আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করুন) এবং আল্লাহর কাছে চায়, তাহলে তার ডাকে সাড়া দেয়া হবে এবং সে যদি অজু করে সালাত আদায় করা, তাহলে তার সালাত কবুল করা হবে”। (সহীহ বুখারী)

৮। ফরজ সালাতের পরের সময়টাতেঃ আবু উমামাহ রাঃ বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জিজ্ঞেস করা হলাে, “ইয়া রাসুলুল্লাহ, কো সময়ের ডাক শােনা হয়?” তিনি বললেন, “রাতের শেষ সময়ে এবং ফরজ সালাতের পরে”। (তিরমিজি)। অনেক স্কলারগন বলেছেন, এ সময়টা হলাে সালাম ফেরানাের আগের সময় (আত্তাহিয়াতুর পর)।

৯। কদরের রাতেঃ নিঃসন্দেহে লাইলাতুল কদর হলাে একটি বছরে কোন মানব সন্তানের পাওয়া শ্রেষ্ঠ রাত। আল্লাহ বলেছেন, “আমরা এটিকে (আল-কুরআন) কদরের রাত্রিতে অবতীর্ণ করেছি। তুমি কি জানাে কদরের রাত্রি কি? কদরের রাত্রি হাজার মাসের চেয়েও অধিক উত্তম”। বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত একাধিক বিশুদ্ধ হাদীসে এ রাতের সকল ইবাদত ও আল্লাহর কাছে চাহিদা পূরণের কথা বলা হয়েছে।


১০। বৃষ্টি হবার সময়ঃ সাহল ইবন সা’দ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুই সময়ের দোয়া ফেরানাে হয়না। আযানের সময়ের দোয়া আর বৃষ্টি পড়ার সময়কার দোয়া”। (আবু দাউদ ২৫৪০)


১১। আযানের সময়ঃ পূর্ববতি হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী আযানের সময় দোয়া কবুল হবার ভালাে সময়।


১২। মজলুম ও নির্যাতিত ব্যক্তিঃ মজলুমের দোয়া এবং বদ দোয়া দুটোই আল্লাহর কাছে কবুল হবার সম্ভাবনা শতভাগ। রাসুলুল্লাহ সাঃ মুয়াজকে বলেছেন, ‘মজলুমের দোয়া থেকে সবসময় সতর্ক থেকো, কেননা মজলুমের দোয়া ও আল্লাহর মধ্যে কোন পর্দা বা আশ্রয় থাকে না”। (সহীহ বুখারী)


১৩। মুসাফিরের দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিনটি দোয়া (আল্লাহর দ্বারা) ফিরিয়ে দেয়া হয়না। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়া, রােজাদার ব্যক্তির দোয়া, মুসাফিরের দোয়া”। (বায়হাকি, তিরমিজি)


১৪। সন্তানের জন্য পিতামাতার দোয়াঃ পূর্ববরির্ত হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী।


১৫। রােজাদার ব্যক্তির দোয়াঃ পূর্ববরির্ত হাদীসের রেফারেন্স অনুযায়ী। এছাড়া সমস্ত রমজান মাসই হলাে আল্লাহর কাছে চাইবার শ্রেষ্ঠ সময়। রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “রমজান মাসে করুণার দরজা খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়”। (সহীহ বুখারী ১৮৯৯)


১৬। অনুপস্থিত মুসলিম ভাই বা বােনের জন্য অন্তর থেকে উৎসরিত দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “এমন কোন বিশ্বাসী বান্দা নেই, যে তার অনুপস্থিত কোন ভাইয়ের জন্য দোয়া করে আর ফেরেশতারা বলে না তােমার জন্যও তা হােক”। (মুসলিম)


১৭। আরাফাতের দিনের দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দোয়ার ভেতর শ্রেষ্ঠ হলাে আরাফাতের দিনের দোয়া”। (তিরমিজি, মুয়াত্তা মালিক)


১৮। জিহাদের মাঠে শত্রুর মুখােমুখি হলেঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দুটি দোয়া কখনো ফিরিয়ে দেয়া হয়না অথবা খুবই কম ফিরিয়ে দেয়া হয়। আযানের সমকার দোয়া আর সেই ভয়ংকর সময়কার দোয়া যখন দু’টি বাহিনী পরস্পর মুখােমুখি হয়”। (আবু দাউদ ২৫৪০, ইবন মাজাহ)


১৯। জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিনঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন ছাড়া আর এমন কোন দিন নেই, যে সময়ের সৎকাজ আল্লাহর কাছে তার চেয়ে বেশী প্রিয়”। (সহীহ বুখারী ৯৬৯)।


২০। রােজদার ব্যক্তির ইফতারের সময়কার দোয়াঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “তিন ব্যক্তির দোয়া কখনও আল্লাহর দ্বারা ফিরিয়ে দেয়া হয়না। যখন রােজাদার ব্যক্তি ইফতার করে (অন্য বর্ণনায় এসেছে, রােজাদার ব্যক্তি যতক্ষণ ইফতার না করে), ন্যায়পরায়ণ শাসক, নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া”। (আহমাদ, তিরমিজি)।

প্রিয় পাঠক আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন কোন সময় দোয়া করলে আল্লাহ্‌ কবুল করেন। আমরা সে অনুযায়ী আমল করার চেষ্টা করবো। ইনশাআল্লাহ্‌।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button