জুম্মার দিনের ১৫টি গুরুত্বপূর্ণ আমল । জুমার দিনের ফযিলত
জুম্মার দিনের আমল ও ফযিলত : জুম্মার দিন অধিক ফযিলতপূর্ণ। জুম্মার দিনের বিশেষ কিছু আমল রয়েছে, যা আদায় করলে অনেক ফযিলত ও সওয়াব হাসিল করা যায়। আজ জুমার দিনের ১৫ টি বিশেষ আমল সম্পর্কে জানবো। আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে।
জুম্মার দিন
শুক্রবার দিন জুহর নামাজের পরিবর্তে জুম্মার নামাজ হয়ে থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে জুম্মা ও জুম্মাবারের রাত- দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জুমার দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়ে থাকে। কারণ জুম্মার দিনের ফজিলত ও মর্যাদা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মতোই।
জুম্মার নামায কত রাকাত?
জুম্মার নামায প্রথমে চার রাকআত “কাবলাল জুমআ” সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, তারপর জুমার খুবতা ফরয, তারপর দুই রাকাত ফরয, তারপর চার রাকআত “বা’দাল জুমা” সুন্নাতে মুয়াক্কাদা, এরপর দুই রাকআত সুন্নাতে গায়র মুয়াক্কাদা।
অর্থাৎ, জুম্মার নামায সর্বমোট ১২ রাকআত। জুম্মার নামাযে ফরয দুই রাকআত।
আরও পড়ুনঃ জুমআর খুতবা চলাকালীন সময়ে নামায পড়া কী জায়েয?
জুম্মার দিনের বিশেষ আমলসমূহ
জুম্মার দিনের বিশেষ কয়েকটি আমল রয়েছে যার মাধ্যমে অগনিত সওয়াব হাসিল করা যায়। আসুন জেনে নেই জুম্মার দিনের শ্রেষ্ঠ আমলগুলো কি কি।
- অন্য দিনের তুলনায় ফজরের সময় ঘুম থেকে আগে উঠা ।
- গোসল করা । (মেসওয়াকও করবে ।)
- উত্তম ও পরিষ্কার কাপড় পরিধান করা ।
- আতর বা খুশবূ লাগানো ।
- পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়া ।
- ইমাম সাহেবের কাছাকাছি বসা ।
- মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা ।
- খুতবার সময় কোনোরূপ কাজ না করা বা কথা না বলা ।
- সূরা কাহাফ তিলাওয়াত করা । (জুমুআর নামাযের আগে হোক বা পরে ।) এরূপ করলে এক রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ী তার জন্য তার থেকে কা’বা শরীফ পর্যন্ত দীর্ঘ নূর প্রকাশ পাবে । অন্য এত রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ী তার জন্য এক জুমুআ থেকে অন্য জুমুআ পর্যন্ত নূর চমকাতে থাকবে।
- জুমুআর দিন বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করা ও বেশি বেশি যিকির করা মোস্তাহাব । হাদীছ শরীফে জুমুআর দিন ও জুমুআর রাত (বৃহষ্পতিবার দিবাগত রাত) হলে বিশেষভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠের কথা বর্ণিত হয়েছে। এমনিতেও যেকোনো সময় একবার দুরূদ শরীফ পাঠ করলে আল্লাহ তাআলা তাকে দশটি রহমত দান করেন এবং ফেরেশতারা তার জন্য দশবার রহমতের দুআ করেন।
আরও পড়ুনঃ দুরূদ শরীফ – বাংলা অনুবাদ, উচ্চারণ ও অর্থ - দুই খুতবার মাঝখানে হাত উঠানো ব্যতীত মনে মনে দুআ করা ।
- সূর্য ডোবার কিছুক্ষণ পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত গুরুত্বের সাথে যিকির, তাসবীহ ও দুআয় লিপ্ত থাকা।
- জুমুআর দিন চুল কাটা, নখ কাটা, বগল ও নাভির নিচের পশম সাফ করা ।
- জুমুআর দিন জুমুআর নামাযের জন্য যত শীঘ্র মসজিদে যাবে তত বেশি ছওয়াব হবে । সর্বপ্রথম যে যাবে একটা উট কুরবানীর ছওয়াব পাবে । তারপরের জন একটা গাভী কুরবানীর, তারপরের জন দুম্বা কুরবানীর, তারপরের জন একটা মুরগি দানের এবং তারপরের জন একটা ডিম দানের ছওয়াব পাবে।
- যে ব্যক্তি জুমুআর দিন ফজর নামাযের পূর্বে তিনবার নিম্নোক্ত এস্তেগফারটি পাঠ করবে তার সমস্ত গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে ।
اَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِى لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ وَاتُوبُ إِلَيْه
জুমার দিনের ফযিলত হাদিসের আলোকে
পূর্বেই বলেছি জুমার দিন অধিক গুরুত্বপূর্ণ দিন কারণ এদিনের রয়েছে অনেক বরকত ও ফযিলত।
১. হযরত আবু উমামা রা: থেকে বর্ণিত নবীজি (সা) বলেছেনঃ ‘
আমার ওপর জুমার দিন বেশি বেশি দরুদ পড়ো। কারণ, আমার উম্মতের দরুদ জুমার দিন আমার কাছে পৌঁছানো হয়।
আরও পড়ুনঃ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর ৬৫ টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস
২. হযরত আনাস রা: বলেন, নবীজি (সা) বলেছেন যে তোমরা জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পড়ো৷ কারণ, জিবরাঈল আ: এইমাত্র আল্লাহ তায়ালার বাণী নিয়ে হাজির হলেন। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, পৃথিবীতে যখন কোনো মুসলমান আপনার ওপর একবার দরুদ পড়ে, আমি তার ওপর দশবার রহমত নাজিল করি এবং আমার সব ফেরেশতা তার জন্য দশবার ইস্তেগফার করে। – তারগিব : ৩/২৯৯
আরও পড়ুনঃ সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ ও ফজিলত (Sayyidul Istighfar)
৩. দ্রুত মসজিদে যাওয়া এই দিনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। মহান আল্লাহ বলেন-
হে মুমিনরা, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো। (সুরা জুমআ, আয়াত : ৯)
৪. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা জুম্মার দিনের বিশেষ আমল। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তেলাওয়াত করবে তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর উজ্জ্বল করা হবে।’ (আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইল, হাদিস : ৯৫২)
৫. জুমার দিন আল্লাহ বিশেষ কিছু মুহূর্তে দোয়া কবুল করে থাকেন। হাদিসে বলা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জুমার দিনের বারো ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে, যখন আল্লাহ মুসলমানের যেকোনো দোয়া কবুল করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১০৪৮)
আরও পড়ুনঃ দোয়া কবুলের ২০ টি উত্তম সময়
৬. হযরত আলি (রাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি নবীজি সা:-এর ওপর জুমার দিন ১০০ বার দরুদ পড়বে, কেয়ামতের দিন সে এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় নূরের জ্যোতি দেখে লোকেরা বলাবলি করতে থাকবে এই ব্যক্তি কী আমল করেছিল! – কানজুল উম্মাল : ১৭৪
৭. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে যদি তার কাছে থাকে, তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের টপকে সামনের দিকে না গিয়ে নির্ধারিত নামাজ আদায় করে, তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে, তাহলে তার এই আমল আগের জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সমস্ত সগিরা গুনাহর জন্য কাফ্ফারা হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩৪৩)
উপরের হাদিস থেকে এটা স্পষ্ট যে, জুমার দিনের আমলের ফজিলত অনেক। বেশি বেশি দুরুদ শরীফ পড়ার কথা বলা হয়েছে অধিকাংশ হাদিসে। তাই আমাদের উচিত হাদিসের আলকে আমলগুলো করা। আল্লাহ আমাদের সবাইকে জুম্মার দিনের বিশেষ আমল করার তৌফিক দান করুন। আমিন।