ইসলাম ও জীবনরমজান

রোযা না রাখা জায়েজ কোন কোন কারণে

5/5 - (1 vote)

ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে রোযা একটি এবং এটি আত্ম-শুদ্ধি, আত্ম-উন্নতি, দয়া এবং ইবাদাতের জন্য একটি বিশেষ মাস। তাই রমজান মাসে রোযার বিশেষ বরকত রয়েছে। কিন্তু অনেক সময় অনেক কারণে অনেকেই রোযা রাখতে পারেন না। আবার অনেকে শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখেন। আসুন জেনে নেই কোন কোন কারণে রোযা না রাখা জায়েজ বা অনুমতি আছে।

রোযা কি

রোযা শব্দের অর্থ হল “বিরত থাকা”। আরবিতে রোজাকে “সাওম” বলা হয়। যার বহুবচন হল “সিয়াম”। সিয়াম অর্থ হল উপবাস থাকা, রক্ষা করা।

রমজন মাস সিয়াম সাধনার মাস। ইইসলামি  শরীয়াতের পরিভাষায় আল্লাহপাকের হুকুম পালনার্থে এবং সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য  সুবহে সাদিক  থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার, সঙ্গম,পাপাচার এবং সেই সাথে যাবতীয় ভোগ-বিলাস ও অপ্রয়োজনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নামই হচ্ছে সিয়াম।

পবিত্র কুরআনে  আল্লহপাক শুধুমাত্র একটি আয়াতে রোজার কথা বলেছেন। দ্বিতীয়বার এর পুনরাবৃত্তি করেননি। সূরা বাকারার ১৮৩ নং আয়াতে আল্লাহ বলেনঃ

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেযগারী অর্জন করতে পার।

যেসব কারণে রোযা না রাখা জায়েজ

  • যদি কেউ শরীআতসম্মত সফরে থাকে তাহলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি আছে। পরে কাযা করে নিতে হবে । কিন্তু সফরে যদি কষ্ট না হয়, তাহলে রোযা রাখাই উত্তম । আর যদি কোনো ব্যক্তি রোযা রাখার নিয়ত করার পর সফর শুরু করে, তাহলে সে দিনের রোযা ভাঙ্গা জায়েয নয়, রাখা জরুরি ।
  • কোনো রোগী ব্যক্তি রোযা রাখলে যদি তার রোগ বেড়ে যাওয়ার আশংকা হয় অথবা অন্য কোনো নতুন রোগ দেখা দেয়ার আশংকা হয় অথবা রোগ মুক্তি বিলম্বিত হওয়ার আশংকা হয়, তাহলে রোযা ছেড়ে দেয়ার অনুমতি আছে । সুস্থ হওয়ার পর কাযা করে নিতে হবে । তবে অসুস্থ অবস্থায় রোযা ছাড়তে হলে কোনো দ্বীনদার পরহেযগার চিকিৎসকের পরামর্শ থাকা শর্ত, কিংবা নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানের ভিত্তিতে হতে হবে, শুধু নিজের কাল্পনিক খেয়ালের বশীভূত হয়ে আশংকাবোধ করে রোযা ছাড়া দুরস্ত হবে না । তাহলে কাযা কাফ্ফারা উভয়টা ওয়াজিব হবে ।
  • রোগ মুক্তির পর যে দুর্বলতা থাকে তখন রোযা রাখলে যদি পুনরায় রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রবল আশংকা হয়, তাহলে তখন রোযা না রাখার অনুমতি আছে, পরে কাযা করে নিতে হবে ।
  • গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীলোক রোযা রাখলে যদি নিজের জীবনের ব্যাপারে বা সন্তানের জীবনের ব্যাপারে আশংকা বোধ করে বা রোযা রাখলে দুধ শুকিয়ে যাবে আর সন্তানের সমূহ কষ্ট হবে এরূপ নিশ্চিত হয়, তাহলে তার জন্য তখন রোযা ছাড়া জায়েয, পরে কাযা করে নিতে হবে ।
  • হায়েয-নেফাস অবস্থায় রোযা ছেড়ে দিতে হবে এবং পবিত্র হওয়ার পর কাযা করে নিতে হবে ।

যেসব কারণে রোযা রাখার পর ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি আছে

  • যদি এমন পিপাসা বা ক্ষুধা লাগে যাতে প্রাণের আশংকা দেখা দেয়, তাহলে রোযা শুরু করার পর তা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি আছে। পরে কাযা করে নিতে হবে।
  • যদি এমন কোনো রোগ বা অবস্থা দেখা দেয় যে, ওষুধ-পত্র গ্রহণ না করলে জীবনের আশা ত্যাগ করতে হয়, তাহলেও অনুরূপ মাসআলা।
  • গর্ভবতী স্ত্রীলোকের যদি এমন অবস্থা হয় যে, নিজের বা সন্তানের প্রাণ নাশের আশংকা হয়, তাহলেও অনুরূপ মাসআলা ।
  • বেহুঁশ বা পাগল হয়ে গেলেও অনুরূপ মাসআলা ।
  • উল্লেখ্য যে, এসব অবস্থায় যে রোযা ছেড়ে দেয়া হবে তার কাযা করে নিতে হবে ।
  • কেউ যদি অন্যকে দিয়ে কাজ করাতে পারে বা জীবিকা অর্জনের জন্য অন্য কোনো কাজ করতে পারে, তা সত্ত্বেও সে টাকার লোভে রোদে গিয়ে কাজ করল। এ কারণে অনুরূপ পিপাসায় আক্রান্ত হল কিংবা বিনা অপারগতায় আগুনের কাছে যাওয়ার কারণে পিপাসায় আক্রান্ত হল, তাহলে তার জন্যে রোযা ছাড়ার অনুমতি নেই।

রোযা সম্পর্কে আরও জানতে পড়ুন

আশা করছি আপারা বুঝতে পেরেছেন কখন রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। কখন রোযা ভেঙ্গে ফেলার অনুমতি রয়েছে। আমরা যেন সঠিকভাবে রোযা রাখতে পারি। আল্লাহ তওফিক দান করুন আমিন।

Source
আহকামে যিন্দেগি (৫ম সংস্করণ)উইকিপিডিয়া

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button