বাংলা রচনা

বইমেলা / গ্রন্থমেলা | রচনা [পিডিএফ]

1/5 - (1 vote)
বইমেলা / গ্রন্থমেলা | রচনা [পিডিএফ]
বইমেলা – রচনা

বইমেলা রচনা

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা অনেকেই বইমেলা রচনাটির জন্য অনুরোধ করেছিলে। আজকের পোস্টে আমরা বইমেলা সম্পর্কে জানবো। রচনাটি বিভিন্ন বই থেকে তথ্য নিয়ে তোমাদের কাছে উপস্থাপন করা হল। 

ভূমিকা

জগত এবং জীবনের বিচিত্র মাধুর্য বই পড়ার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। বই মূলত জ্ঞানের বিশাল ভান্ডার। জ্ঞান আর আনন্দ এ দু’য়ের অভাব সম্পূর্ণরূপে পূরণ করে বই মানুষকে পরিপূর্ণ করে তোলে। পাঠক ও বইয়ের সাথে যোগসূত্র তৈরি করার বড় একটি মাধ্যম হল বইমেলা। বইমেলার প্রচলন আগে ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে তা নিয়ে প্রভূত উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষণীয়। প্রতিবছর আমাদের দেশে একুশে ফেব্রুয়ারির বইমেলাটি বেশ ঝাকজমকভাবে করা হয়ে থাকে।

বইমেলার তাৎপর্য

মেলার জগতে মিলন পিয়াসী মানুষের এক ঐতিহ্যপূর্ণ কৃষ্টি ‘বইমেলা’। বই জ্ঞানের প্রতীক, বই আনন্দের প্রতীক। বই জাতিকে সঠিক পথের দিশা দেয়।দুখ-বেদনার মুহূর্তে, মানসিক অশান্তিতে, নিঃসঙ্গতায় বই হয় মানুষের একান্ত অনুষঙ্গ। তাই কবি ওমর খৈয়ম বলেছেনঃ

রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে
প্রিয়ার কালচোখ বিবর্ণ হয়ে যাবে।
কিন্তু বই অনন্ত যৌবনা
বই থাকবে চিরদিন।

দেশে সুনাগরিক গড়ে তোলার সবচেয়ে উত্তম উপায় হলো সুলিখিত, সৃষ্টিশীল ও মননশীল বই। আর এ সকল বইয়ের সমাহার হল বইমেলা। বইমেলা হলো জ্ঞানের ভাণ্ডার। জাতিকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তুলতে বইমেলার ভূমিকা অপরিসীম। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেনঃ “মানুষ বই দিয়ে অতীত ও ভবিষ্যতের মধ্যে সাঁকো বেঁধে দিয়েছে।” কাজেই বইমেলা যুগের সেতুবন্ধন। বইমেলার মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষের মধ্যে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, সংস্কৃতি ও সাহিত্য সম্পর্কে হৃদয়কে জাগিয়ে তোলা। দেশের শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির প্রসার ও সমৃদ্ধিতে বইমেলার উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। বইমেলার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো পাঠককে শুধু বই পড়া নয়, পাশাপাশি বই কেনার প্রতিও আগ্রহী করা।

বইমেলার ইতিহাস

আমেরিকার কোম্পানি অব বুক সেলার্সের পরিচালনায় এবং ম্যাথু কেরীর উদ্যোগে ১৮০২ খ্রিষ্টাব্দে নিউইয়র্ক শহরে সর্বপ্রথম বইমেলার পূর্ণাঙ্গ আসর বসে। এরপর ১৮৭৫ সালে একশ জন প্রকাশক মিলে নিউইয়র্কের ক্লিনটন শহরে আয়ােজন করলেন বইমেলার। ত্রিশ হাজার গ্রন্থ ঐ মেলায় প্রদর্শিত হয়েছিল। বইয়ের একক ও একমাত্র উপস্থিতি নিয়ে ১৯২৪ সালে আয়ােজিত হয় লাইপজিগের বইমেলা। ১৯৪৯ সালে শুরু হয় জার্মানির ফ্রাঙ্কফুটের বৃহত্তম বইমেলা। সেখানে থেকেই আধুনিক বইমেলার স্মরণীয় শােভাযাত্রা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে বিশ্বের দেশে দেশে বইমেলা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আমাদের দেশে বইমেলা প্রথম শুরু হয় বাংলা একাডেমি চত্বরে।

বাংলাদেশে বইমেলার ইতিহাস

বাংলাদেশের বইমেলার ইতিহাস খুব বেশি দিনের নয়। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অমর শহিদদের স্মৃতিকে বাঙালি জাতির মানসে চির অম্লান করে রাখার প্রয়াসেই প্রথম বইমেলার আয়ােজন করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৫ সালে ‘মুক্তধারা’ নিজেদের উদ্যোগে প্রথম বইমেলা চালু করে। পরে আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নেয়। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত মাত্র সাত দিনের জন্য এ মেলা অনুষ্ঠিত হতো। বাংলা একাডেমি প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বইমেলার আয়ােজন করে ১৯৭৮ সাল থেকে। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে এই বইমেলার নাম দেওয়া হয় ‘একুশে বইমেলা’

১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে নিয়মিত আয়ােজিত হচ্ছে ‘ঢাকা বইমেলা’। এ বইমেলাগুলােতে দেশি-বিদেশি কবি, সাহিত্যিক, সমাজসংস্কারক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বই স্থান পায়। এছাড়াও ঢাকায় প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ‘জাতীয় গ্রন্থমেলা’ যা এদেশের বইমেলার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। এদেশে বইমেলার আয়ােজনে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা পালন করে থাকে।

দেশের বইমেলার চিত্র

বই মেলার প্রাঙ্গণে অনেক প্রকাশক স্টল খােলেন। স্টলে পরিচিত, অপরিচিত ও দুপ্রাপ্য বিচিত্র সব বই প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। এতে পাঠক অনুরাগীরা পছন্দ অনুযায়ী বই ক্রয় করতে পারে। অনেক লেখক তাদের পুরনাে বন্ধুবান্ধবদের দেখা পান এই বইমেলায়। বইমেলার আকর্ষণ বাড়ানাের জন আলােচনা, আবৃত্তি, গান প্রভৃতির ব্যবস্থা থাকে। সব মিলিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে আনন্দঘন ও উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।

মেলার বিচিত্র মানুষ ও বিচিত্র চিত্র

বইমেলায় বিচিত্র ধরনের বইয়ের পাশাপাশি বিচিত্র রকমের মানুষেরও সমাবেশ ঘটে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, তথ্যপ্রযুক্তি কম্পিউটার, রান্নার বই, মেয়েদের রূপচর্চার বই, ছােটদের বই ইত্যাদি। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে কিশাের-কিশােরী, যুবক-যুবতি, আবালবৃদ্ধবনিতা সকলেই বইমেলায় আসে। কেউ আসে বই দেখতে, কেউ আসে বই কিনতে।

আন্তর্জাতিক বইমেলা

সারা বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার বইয়ের মেলাকেই বলা হয় ‘আন্তর্জাতিক বইমেলা’। এ ধরনের মেলার অভিজ্ঞতা বড়ােই আকর্ষণীয়। এ ধরনের মেলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লেখকরা অংশগ্রহণ করেন। কর্তৃপক্ষ প্রত্যেক দেশ থেকে অতিথি নির্বাচন করে তাদেরকে মেলায় আমন্ত্রণ জানান। আমেরিকা, জার্মানি, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, জাপান, চীন, ভারতসহ আরও অনেক দেশেই আন্তর্জাতিক মানের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এগুলাের মধ্যে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বইমেলা হিসাবে স্বীকৃত। আমাদের দেশের খ্যাতিমান কবি-লেখকগণসহ অনেকেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বইমেলায় অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত হন। পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত কয়েকজন সাহিত্যিকও এ ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ করেন।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা

১৯৮৫ সালের ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা‘ প্রথম পূর্ণাঙ্গ একটি বইমেলা হিসেবে আয়োজিত হয়। এ বইমেলার আয়ােজন করে বাংলা একাডেমি ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি যৌথভাবে। এ মেলায় প্রায় ১৫০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল স্থান লাভ করে। এর আগে সর্বোচ্চ ৭০/৮০টি স্টল ছিল। ধীরে ধীরে অমর একুশের বইমেলায় আরও বেশি লােক সমাগম হতে থাকে। ফেব্রুয়ারি মাস এলে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীসহ সর্বস্তরের মানুষের আনন্দ-উচ্ছাসে। মেলা উপলক্ষ্যে বের হয়, গান ও আবৃত্তির ক্যাসেট। বইমেলায় ধীরে ধীরে প্রবেশ করতে থাকে সংস্কৃতির প্রতিটি শাখার উপস্থিতি। মেলায় কিছু খাবারের স্টলও বসে। স্টল সংখ্যা অত্যধিক বেড়ে যাওয়ার কারণে এক পর্যায়ে বাংলা একাডেমির বাইরে দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি মােড় পর্যন্ত মেলার আয়তন বেড়ে যায়। ২০১৫ সালে মেলার স্থান সম্প্রসারিত হয় সােহরাওয়ার্দী উদ্যানের একটি অংশ জুড়ে। দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি পর্যন্ত স্টল স্থাপন সম্পূর্ণ বন্ধ করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে বইমেলা পরিণত হয় বাঙালির সাংস্কৃতিক মেলায়।

বাংলাদেশের বইমেলা

১৯৯৫ সাল থেকে সরকারি উদ্যোগে আয়ােজিত ঢাকা বইমেলা জনপ্রিয়তা অর্জন করে। বর্তমানে ঢাকা বইমেলাকে আন্তর্জাতিক মেলার পর্যায়ে উন্নীত করার প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়াও, দেশের প্রতিটি জেলায় সাপ্তাহিক বা পাক্ষিক বইমেলার আয়ােজন করা হয়ে থাকে। পাঠকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিগত কয়েক বছরে বইমেলার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। যার ফলে বইমেলা বাণিজ্যিকভাবেও প্রসার লাভ করছে।

মেলার পরিবেশ

বইমেলায় বিভিন্ন ধরনের প্রকাশনার স্টল বসে। বই পিপাসু মানুষের ভিড়ে মেলার চারপাশ যেন মুখরিত হয়ে উঠে। দেখে মনে হয় যেন উৎসবের আমেজ। বইমেলায় পাঠক, লেখক, প্রকাশকসহ বিভিন্ন স্রেনি-পেশার মানুষের আগমন ঘটে। মিলন মেলায় পরিণত হয় মেলার চারিদিক। বইমেলায় অসখ্য রকম বইয়ের সমাবেশ ঘটায় ক্রেতারা খুব সহজে তাঁদের পছন্দের বইটি কিনতে পারেন।

উপসংহার

বইমেলা আমাদের দেশে দিন দিন জনপ্রিয়তা লাভ করছে। প্রতিবছর বইমেলায় একদিনে যেমন মানুষের উৎসাহ বাড়ছে অন্যদিকে বই বিক্রির পরিমাণও বাড়ছে। একুশের বইমেলা জাতির মনন ও কৃষ্টির বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এ মেলার সঙ্গে আমাদের ভাষা, সাহিত্য ও মননের গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনা ও জাতীয়তাবােধের উজ্জ্বল এক মিলন ক্ষেত্র অমর একুশে গ্রন্থমেলা। এই বইমেলা যাতে বারােয়ারি মেলায় পরিণত না হয় সেদিকেও লক্ষ রাখা উচিত। অমর একুশে বইমেলা আন্তর্জাতিক মানের বইমেলায় রূপান্তরিত হােক। বইমেলা আমাদেরকে গ্রন্থমনস্ক করে তুলুক। সকল প্রকার বৈষম্য দূর হােক, সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে বই হােক আমাদের নিত্যসঙ্গী।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button