বাংলা রচনা

সমবায় আন্দোলন || রচনা

4.8/5 - (502 votes)
সমবায় আন্দোলন || রচনা
সমবায় আন্দোলন || রচনা

সমবায় আন্দোলন

প্রিয় শিক্ষার্থী, তোমরা অনেকেই সমবায় আন্দোলন রচনাটির জন্য অনুরোধ করেছিলে। তাই তোমাদের মাঝে রচনাটি উপস্থাপন করলাম। সমবায় আন্দোলন রচনাটির সহজ ও সাবলীল ভাষায় বিভিন্ন তথ্য দিয়ে লিখা হয়েছে। আশা করছি তোমাদের উপকারে আসবে।

ভূমিকা

সমবায় অর্থ সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মানবজীবনে সম্মিলিত প্রয়াস আনে বিপুল সম্ভাবনা। একক প্রচেষ্টায় কোন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে সমবেত প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়ে। সকলে সম্মিলিতভাবে যে কাজটি যত সহজে ও অল্প সময়ে করা যায়, পৃথক পৃথক প্রচেষ্টায় তা করা সহজ হয় না। সকলে মিলে কাজ করতে পারলে তাতে সাফল্য অনিবার্য হয়ে ওঠে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ কালভার্ট বলেছেনঃ

কিছু সংখ্যক লোক যখন কোন অর্থনৈতিক স্বার্থ সাধনের জন্য স্বেচ্ছায় সম্মিলিত হয় তখন তাকে “সমবায়” বলা হয়।

সমবায় এর উপর ভিত্তি করেই সমবায় আন্দোলনের উদ্ভব ও বিকাশ সাধিত হয়েছে।

সমবায় কি?

নিজেদের অর্থনৈতিক কল্যাণ অর্জনের সম্মিলিত প্রচেষ্টাকে সহজ অর্থের সমবায় বলে। প্রকৃত অর্থে একই শ্রেণীর কতিপয় ব্যক্তি নিজেদের আর্থিক কল্যাণ সাধনের লক্ষ্যে সঙ্গবদ্ধ হয়ে সম-অধিকারের ভিত্তিতে সমবায় আইনের আওতায় যে ব্যবসায় সংগঠন গড়ে তোলে তাকে সমবায় সংগঠন বলা হয়ে থাকে। সকলের তরে সকলে, একতাই বল,স্বাবলম্বন শ্রেষ্ঠ অবলম্বন ইত্যাদি হল সমবায়ের মূলমন্ত্র। হেনরি কালভার্ট বলেছেনঃ

সমবায় হলো এমন একটি সংগঠন যার ফলে সমবায় ভিত্তিতে অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষার জন্য বিভিন্ন ব্যক্তি স্বেচ্ছাকৃতভাবে একত্রিত হয়।

পরিশেষে বলা হয়, পারস্পরিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে একই এলাকার সমশ্রেণীভুক্ত সমমনা কিছু ব্যক্তি সম্মিলিত প্রচেষ্টা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় যে গণতান্ত্রিক রীতি সমৃদ্ধ প্রতিষ্ঠান গড়ে তােলে তাকে সমবায় বলে। বাংলাদেশে বর্তমানে ২০০১ সালের সমবায় আইন ও ২০০৪ সালের সমবায় সমিতির বিধিমালার আওতায় এরূপ সমিতি গঠন ও পরিচালনা করা হয়।

সমবায় আন্দোলনের ইতিহাস

জার্মানিকে সমবায় আন্দোলনের জন্মভূমি বলা হয়। ১৮৪৮ সালে জার্মানিতে সমবায় আন্দোলন সূত্রপাত হয়। মহাজনদের নিষ্ঠুর অত্যাচার থেকে কৃষকদের বাঁচাতে জার্মান সমাজ সংস্কারক অর্থনীতিবিদ ফ্রেডরিক রাইফিজেন মবায় আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আমাদের উপমহাদেশে উইলিয়াম নিকলসন সমবায় নীতি গ্রহণ করেন এবং একটি ঋণদান সমিতি আইন পাস করেন। এই আইনের ভিত্তিতে শহর-গ্রাম-বন্দরে কৃষক, কারিগর ও নিম্ন আয়ের মানুষের মধ্যে সমবায় প্রচেষ্টা সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।

১৯০৪ সালে উপমহাদেশে সর্বপ্রথম সমবায় আইন পাস করা হয়। কিন্তু ভুলত্রুটি পরিলক্ষিত হওয়ার কারণে ১৯০৪ সালের সমবায় আইন ১৯১২ সালে নতুন করে প্রবর্তন করা হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অর্থনীতিক মন্দার কারণে উপমহাদেশের সমবায় আন্দোলন স্থবির হয়ে যায়। সমবায় আন্দোলনকে ব্যাপকতর করার জন্যে ১৯১২ সালে নতুন কো-অপারেটিভ অ্যাক্ট জারি করা হয় এবং এই আইনে ঋণদান সমিতি ব্যতীত ক্রয়-বিক্রয়, উৎপাদন প্রভৃতি ক্ষেত্রে কার্যরত অনুরুপ সমিতিগুলােকেও সমবায় সমিতিরুপে স্বীকার করা হয়।

বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন

১৯১৯ সালের ভারত সরকারের আইন দ্বারা সমবায়গুলিকে প্রাদেশিক সরকারে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। পাকিস্তান আমলে সমবায় কৃষি ব্যাংক, সমবায় বীমা সমিতি, সমবায় ঋণদান সমিতি, বিক্রেতা সমবায় সমিতি ইত্যাদি গঠিত হয়েছিল। তবে সরকারি উদ্যোগের অভাবে জনগণের মধ্যে সমবায় আন্দোলন শক্তিশালী না হলেও এর ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল।

সমবায় আইনকে পুনরায় যুগােপযােগী করার লক্ষ্যে ১৯৪০ সালে পুনরায় ১৯১২ সালের সমবায় আইন পরিবর্তন করা হয়। আন্দোলন স্থবির হয়ে পড়ে। ১৯৪৭ সালে পাক-ভারত বিভক্তির পর তত্ত্বালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৪০ সালের সমবায় আইনে স্বীকৃতি প্রদান করে। তখন পূর্ব পাকিস্তানের সমবায় সমিতির সংখ্যা ছিল প্রায় ৩২ হাজার।

১৯৭১ সালের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন তেমন অগ্রগতি লাভ করেনি। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশে নতুন করে সমবায় আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। তখনও এদেশের সমবায় সমিতিগুলাে ১৯৪০ সালের সমবায় আইন এবং ১৯৪২ সালের সমবায় বিধি অনুযায়ী পরিচালিত হতাে। কিন্তু পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে ১নং অধ্যাদেশ বলে সমবায় সমিতি অধ্যাদেশ ১৯৮৪ জারি করা হয় এবং ১৯৪২ সালের সমবায় বিধির পরিবর্তে সমবায় সমিতি বিধি ১৯৮৭ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালের সমবায় বিধি সংশােধন হয়ে সমবায় বিধি ২০০৪ অনুযায়ী ২০০১ সালের সমবায় সমিতি আইন এবং সংশােধিত সমবায় নীতি ২০০৩ এর পরিবর্তে সমবায় নীতি ২০১০ বলে বর্তমানে সমবায় সমিতি গঠিত, পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

সমবায়ের বৈশিষ্ট্য

অন্য যে কোন ব্যবসায় সংগঠন হতে সমবায় সংগঠন সম্পূর্ণ ভিন্ন। সমবায়ের কতগুলো নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমনঃ

আত্মরক্ষার মাধ্যম

পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থায় ধনীদের দ্বারা দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণি অর্থনৈতিক শোষণের শিকার হয়। সমবায় শোষক শ্রেণীর হাত থেকে শোষিতদের আত্মরক্ষার মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।

গঠন প্রণালী

দরিদ্র ও মধ্যত্তি শ্রেণির কতিপয় লােক স্বেচ্ছায় মিলিত হয়ে কোনাে বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এরুপ সংগঠন করতে পারে। সমবায় আইন অনুসারে নিবন্ধকের নিকট এ ধরনের সমবায় প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন করতে হয়।

স্বেচ্ছাকৃত সংঘবদ্ধতা

শুধুমাত্র স্বেচ্ছাকৃতভাবে কতিপয় ব্যক্তি সমবায়ের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান গঠন করে, কোনাে রকম বাধ্যবাধকতার স্থান এখানে নেই।

সদস্যপদ

প্রত্যেক লােকের জন্যই এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের খােলা। অর্থাৎ সমঅর্থনৈতিক চরিত্র এবং একই বিষয়ে সমরূপ স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনাে ব্যক্তিই সমবায়ের সদস্য হতে পারে।

উদ্দেশ্য

ব্যবসায়ের কোনাে বিশেষ অংশে অর্থাৎ উৎপাদন, বণ্টন ইত্যাদিতে জড়িত হয়ে সম্মিলিতভাবে কার্য পরিচালনার মাধ্যমে সদস্যদের কল্যাণ সাধনই এরূপ প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য। মুনাফা অর্জন এর মূল উদ্দেশ্য নয়।

দায়দায়িত্ব

যৌথ মূলধনী ব্যবসায়ের মতাে সদস্যদের দায়দায়িত্ব তাদের ক্রয়কৃত শেয়ারের মূল্য দ্বারা সীমাবদ্ধ।

মূলধনের উৎস

সমবায় মূলধনের কোনাে সীমারেখা নেই। তবে যে পরিমাণ মূলধন নিয়ে সমবায় নিবন্ধিত হয় তার বেশি শেয়ার বিক্রয় করার অধিকার সমবায়ের নেই। কোনাে সদস্যই সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকা বা মােট মূলধনের ১/১০ অংশের বেশি মূল্যের শেয়ার কিনতে পারে না।

সদস্যদের পদমর্যাদা

সমবায়ে সদস্যদের পদমর্যাদা সমান থাকে। পারস্পরিক হৃদ্যতা, একতা ও সমঅধিকারের ভিত্তিতেই এরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে। সুতরাং শেয়ারের পরিমাণ যাই থাকুক না কেন সকলের পদমর্যাদা সমান।

সমবায়ের মূলনীতি

সমাজের স্বল্পবিত্ত সম্পন্ন মানুষের নানান সীমাবদ্ধতা নিয়ে পারস্পারিক অর্থনৈতিক কল্যাণের লক্ষ্যে এরূপ সংগঠন গঠন ও পরিচালিত হয়। এরূপ সংগঠন সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে এর পরিচালক ও সদস্যদের বেশ কিছু মূলনীতি বা আদর্শ মেনে চলতে হয়।

একতাই বল এ প্রধান মূলনীতির উপর সমবায় প্রতিষ্ঠিত। দরিদ্র ও সমশ্রেণির ব্যক্তিগণ ভবিষ্যতের আশায় নিজেদের সীমিত সামর্থ্যকে একত্রিত করে যেমনি সমবায় সংগঠন গঠন করে তেমনি সফলতা লাভে সকল অবস্থায়ই এর সদস্যদেরকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হয়। যে যেমনই হোক না কেন সকলের পদমর্যাদা সমান। সমবায়ের সকল সদস্যরা ‘দশে মিলে করি কাজ’ এই নীতিতে বিশ্বাসী।

সংগঠনের সদস্যরা সততাকে অবলম্বন করে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সকলের তরে সকলে আমরা‘-এ মূলনীতির ওপর সমবায় প্রতিষ্ঠিত। শুধুমাত্র ব্যক্তিস্বার্থ নয়, সকলের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়া উচিত। এজন্য সদস্যদের মধ্যে জনসেবার মানসিকতা থাকা আবশ্যক। সমবায় সমিতিকে সব-সময়ই গণতান্ত্রিক রীতি-নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়। এর ব্যবস্থাপনা পর্ষদের নির্বাচন ও সিদ্ধান্ত গ্রহনে গণতান্ত্রিক নীতিমালা অনুসরন করা হয়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সমবায় আন্দোলনের গুরুত্ব

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সমবায় আন্দোলনের গুরুত্ব তীব্রভাবে অনুভূত হয়। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মৌল নীতিমালার মধ্যে সামাজিক ন্যায় বিচারভিত্তিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তােলার লক্ষ্যে সমবায় আন্দোলনের গুরুত্ব নিঃসন্দেহে উত্তম পদক্ষেপ। বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। কাজেই অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে একটি পশ্চাৎপদ দেশের পক্ষে সমবায় নীতি খুবই ফলপ্রসূ ও কার্যকর ব্যবস্থা। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে কৃষিক্ষেত্রে সমবায়ের প্রয়ােজনীয়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের দেশের দরিদ্র, অসহায় কৃষককুল সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তাদের ক্ষুধার অন্ন সংগ্রহ করতে হিমশিম খায়। এর উপর তারা ঋণে জর্জরিত থাকে। কায়িক পরিশ্রমে উৎপাদিত ফসল শেষপর্যন্ত মহাজনের গােলায় ওঠে ঋণের দায়ে।

এছাড়া এদেশে কৃষিজাত পণ্য বাজারজাতকরণের ব্যবস্থাও ত্রুটিপূর্ণ। যে দেশের অর্থনীতি কৃষিনির্ভর এবং শতকরা ৮৫ ভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল সে দেশে সমবায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। সমবায়ের মাধ্যমে উন্নত বীজ, সার প্রয়ােগ এবং একত্রে চাষাবাদে অধিক উৎপাদন সম্ভবপর। কাজেই বাংলাদেশে সমবায় আন্দোলন জনপ্রিয় করে সমবায়ের মাধ্যমে উন্নত ধরনের বৈজ্ঞানিক চাষাবাদ, কুটিরশিল্পের প্রসার, মূলধন সংগ্রহ, কাঁচামাল সংগ্রহ, কৃষিপণ্য বিক্রি প্রভৃতি ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জন সম্ভব। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় সমবায়ী উদ্যোগগুলাে প্রবল বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। স্বাধীনতার পরে সমবায়ী উদ্যোগকে সর্বোচ্চ পৃষ্ঠপােষকতা দেওয়া হয়। ১৯৭২ থেকে দুই ধরনের সমবায়ী নীতি অনুসৃত ও অনুশীলিত হতে দেখা যায়।

  • সমবায় বিভাগের অধীনে চিরায়ত সমবায়
  • সমন্বিত পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচির (IRDB) অধীনে দ্বিস্তরবিশিষ্ট নতুন সমবায় সমূহ

সমন্বিত পল্লি উন্নয়ন কর্মসূচির (IRDB) এর নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বাের্ড (BRDB) নামে করা হলে প্রচুর সমবায় সমিতি গঠিত হতে থাকে। সমিতির সংখ্যা ১৯৮৮ সালে বেড়ে গিয়ে ১,২৪,৬০৪ এ দাঁড়ায়। যা ১৯৭১ সালে ছিল মাত্র ৩,৩৫৬ টি। সে সময় বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বাের্ড বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান যার ৬৫,০০২টি রেজিস্ট্রিকৃত কৃষক সমবায় সমিতি এবং ভূমিহীনদের সমিতি রেজিস্ট্রিভুক্ত হয়েছে ৩৪,৩৯৫টি। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশের সমবায় সমিতিগুলাের সম্পদের মূল্যের পরিমাণ ছিল ৭.৯৬ বিলিয়ন।

সমবায় আন্দোলনের পথে বাধাসমূহ

বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমবায় ব্যবস্থা চালু রয়েছে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই আশানুরূপ সাফল্য প্রত্যক্ষ করা যায় নি। বাংলাদেশের সমবায় আন্দোলনের পথে যেসব বাধা রয়েছে। যেমনঃ

শিক্ষার অভাব

দেশের অধিকাংশ মানুষই নিরক্ষর। সঠিক শিক্ষার অভাবে তারা নিজের ভালো মন্দ এবং সমবায়ের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও উপকারিতা সম্পর্কে বুঝতে পারে না। ফলে সমবায়ের অগ্রগতি হ্রাস পায়।

সমবায়ের নীতিমালা মানার অভাব

সমবায় সংগঠন কতগুলো মৌলিক নীতিমালার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। সংগঠনের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে নীতিমালা মেনে চলার উপর। দুঃখের বিষয় আমাদের দেশের সমবায়ীদের মধ্যে সমবায় নীতিমালা মেনে চলার মানসিকতা খুব কম। ফলে সমবায় সংগঠনগুলো ভালোভাবে চলতে পারে না।

স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির প্রভাব

আমাদের দেশের সমবায় সংগঠনগুলোতে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতি দেখা যায়। তুলনামূলক চতুর সদস্য দ্বারা ইহা পরিচালিত হয়। ফলে সকল ক্ষেত্রে সাধারণ সদস্যদের ঠকানোর প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।

সমবায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাব

আমাদের দেশের অধিকাংশ সমবায়ই অশিক্ষিত ও অদক্ষ। তাদের দক্ষ করে তোমার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে সমবায় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কিন্তু আমাদের দেশে এরূপ সুযোগ না থাকার ফলে সংগঠনগুলো দক্ষতা অর্জন করতে পারে না।

দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাব

সমবায়ের অধিকাংশ সদস্যই অশিক্ষিত ও অনভিজ্ঞ। তাদের মধ্য থেকে পরিচালনা পর্ষদ গঠিত হয়। যাদের প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসা চালানোর কোনো দক্ষতা বা অভিজ্ঞতা নেই। ফলে সমবায়গুলো প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হয়।

মূলধনের অভাব

আমাদের দেশে সমবায় সংগঠন স্বল্প ও মধ্যবিত্তদের সমন্বয়ে গঠিত হয়। তাদের আর্থিক সামর্থ্য খুব কম থাকার ফলে প্রয়োজনীয় মূলধন যোগান দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। ফলে সম্ভবনা থাকলেও পুঁজির অভাবে সফলতা লাভ করা সম্ভব হয় না।

এসব কারণে এদেশে সমবায় আশানুরুপ কোনাে ফল ফলাতে পারছে না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে। আমাদের দেশে এমন অনেক সমবায় সমিতি রয়েছে যার জন্ম, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, সুনাম দেশজোড়া। সেসব সমবায় অনেক দরিদ্র জনগােষ্ঠীর ভাগ্য নির্মাতাও বটে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের অভিমত এই যে, সমিতিগুলাের ব্যবস্থাপক সদস্যদের সমবায়ী মানসিকতা উল্লেখযােগ্যভাবে উন্নত। সমবায় সমিতিগুলাে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলাের সহযােগিতা এবং বেসরকারি সংগঠনগুলাে বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রচেষ্টায় গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষত ইক্ষু ও দুধ উৎপাদক, জেলে ও তাঁতি এবং নারীদের সমবায় প্রতিষ্ঠানগুলাে সমবায় আন্দোলনে বিশেষ সাফল্যের দৃষ্টান্ত।

সমবায় আন্দোলনের উপকারিতা

সমবায়ের উপকারিতা অপরিহার্য। ‘দশে মিলে করি কাজ হারি জিতি নাহি লাজ’ – এই মূলনীতি সামনে রেখে দশজনের সম্মিলিত কর্মপ্রচেষ্টার মাধ্যমে মূলধন বিনিয়োগ করে উৎপাদন ব্যবস্থাকে যেমন সহজ ও জনকল্যাণকর করে তোলা যায়, ঠিক তেমনি মধ্যবর্তী দালালদের অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ বন্ধ করা যায়। সমবায়ের মাধ্যমে উৎপাদিত শস্য সুলভ মূল্যে জনগণের মধ্যে বিতরণ সম্ভব। বর্তমান যুগে বৃহদায়তন শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শিল্প এঁটে উঠতে পারে না। সমবায়ের মাধ্যমে সে অসুবিধা দূর করে স্বল্পবিত্ত লোকেরা দশজনে মিলে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে।

সমবায় প্রতিষ্ঠানে অংশীদারগণ মালিক নয় বলে পরস্পরের মধ্যে সাম্যভাব গড়ে ওঠে এবং অধিকতর সহযোগিতার ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। সমবায়ের মাধ্যমে পুরুষানুক্রমে খণ্ডিত জমি একত্রীকরণ করে অধিক ফসল উৎপন্ন করা যায়। কৃষকেরা সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিঋণ, উন্নত সার ও বীজ সংগ্রহ করতে পারে। সমবায়ের মাধ্যমে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য পাওয়ার পাম্পের সাহায্যে সেচ ও পানি নিষ্কাশন সম্ভব হয়। এক কথায়, অভিন্ন স্বার্থে স্বল্পবিত্ত লোকেরা সামান্য সম্পদ বিনিয়োগ করে উপকৃত হয় বলে সমগ্র বিশ্বে সমবায় প্রতিষ্ঠান আজ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেছে।

উপসংহার

মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করতেই তারা ভালবাসে। সমাজের কেহই স্বয়ং সম্পূর্ণ নয়, পরস্পর নির্ভরশীল। এই পরস্পর নির্ভরশীলতা থেকে সমবায়ের সূত্রপাত। সমবায় দেশের শ্রমজীবী এবং মেহনতি মানুষের সংগঠন। কমপক্ষে ১০ জন সমমনা ব্যক্তি হলেই এরূপ সংগঠন গঠন করা যায়। তবে ধনী বণিক ও মহাজন শ্রেণীর হাত থেকে তারা রক্ষা পাবার জন্যই সদস্যরা এরূপ সংগঠন গঠন করে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বল্প আয়ের মানুষের স্বার্থ সংরক্ষণে সমবায়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের মতো দারিদ্র্য-পীড়িত দেশে কোটি কোটি দরিদ্র শ্রমজীবী মানুষের প্রয়োজনে পরস্পরের ক্ষুদ্র স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে সমবায় আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button