ইভটিজিং । অনুচ্ছেদ । বাংলা ২য়
ইভটিজিং অনুচ্ছেদ |
অনুচ্ছেদটি ইভটিজিং একটি সামাজিক ব্যাধি রচনা থেকে সংকলিত
বর্তমান সমাজে ইভটিজিং একটি ভয়াবহ সামাজিক সমস্যা। ইভটিজিং-এর বিষাক্ত ছােবলে আক্রান্ত আমাদের সমাজ। প্রতিদিনের খবরের কাগজ খুললেই ইভটিজিং-এর কারণে বর্বরতা, নির্মম প্রাণহানী ও আত্মহননের খবর দেখা যায়। ইভটিজিং-এর কারণে প্রতিদিনই কোনাে-না-কোনাে নারী হচ্ছে নিহত অথবা বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। সভ্য সমাজে
এটা কারাে কাম্য হতে পারে না।
বিশিষ্টজনের মতে- অশালীন চাহনির মাধ্যমে মেয়েকে উত্যক্ত করা, সিটি (বাশির শব্দ) বাজানো, আচমকা হাত তালি দেয়া, অপ্রত্যাশিতভাবে সামনে লাফিয়ে পড়া, ধরার ভান করা, অশালীন গান গেয়ে ওঠা, বাজে মন্তব্য ছুঁড়ে দেয়া, অনুমতি ছাড়া ক্যামেরা অথবা মােবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তােলা বা ভিডিও করা, মােবাইল ফোনে মিসড কল দেয়া বা ম্যাসেজ পাঠানো ইভটিজিংয়ের পর্যায়ে পড়ে।
ইভটিজিং মানসিক বিকৃতির ফলস্বরূপ, যা বর্তমান সমাজে একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবে অভিহিত ও চিহ্নিত। ইভটিজিং-এর ফলে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে পরিবারে, সমাজে নিরাপত্তাহীনতা ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। ইভটিজিং একটি মানসিক ও সামাজিক সমস্যা। এর নানা কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে বখাটে ছেলেদের/যুবকদের বিকৃত মানসিকতা এবং নৈতিক চরিত্রের অবনতি, নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধর অভাব, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ইভটিজিংয়ের কারণ। তবে ইভটিজিং এর মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হল যুব সমাজের একটা বড় অংশের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ বহুবিধ। কেননা তা একদিনে যেমন সৃষ্টি হয় নি, তেমনি এর পেছনে রয়েছে নৈতিক মূল্যবােধের অবক্ষয়।
ইভটিজিং প্রতিরােধে সামাজিক প্রতিরােধের কোনাে বিকল্প নেই। এটিকে মানবাধিকার লংঘন হিসেবে বিবেচনা করে সমাজের সকল শ্রেণি, পেশা ও বয়সের মানুষেরই উচিত এর প্রতিবাদে সম্মিলিত প্রতিরােধ গড়ে তােলা। ইভটিজিং আসলে কোনাে হালকা রসিকতা নয়, এটা এক ধরনের নারী নির্যাতন। এটি শাস্তিযােগ্য অপরাধ। সেজন্যই ইভটিজারদের শাস্তি বিধানের জন্য কঠোর আইনের প্রয়ােজন। তবে কেবল আইন দিয়েই এই মারাত্মক সামাজিক ব্যাধি দূর করা সম্ভব হবে না। এজন্য প্রয়ােজন সামাজিক জাগরণ ও রাজনৈতিক অঙ্গীকার। কঠোর আইন প্রণয়ন, আইনের যথাযথ প্রয়ােগ এবং প্রতিটি সচেতন নাগরিকের প্রতিরােধ ও প্রতিবাদের সমন্বয়েই ইভটিজিং -এর অবসান ঘটানাে সম্ভব।