ইসলাম ও জীবন

কেমন ছিল প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা

Rate this post

কেমন ছিল প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা
ছবি সূত্রঃ iStockphoto

 

এর আগের আমরা প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের সামাজিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করব। ইনশাআল্লাহ্‌। 

প্রাক-ইসলামী যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা

কেন্দ্রীয় শাসনের অভাব

অজ্ঞতার যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থাও ছিল নানা দিক থেকে খুবই নৈরাশ্যজনক ও চরম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ। আরবে কোন কেন্দ্রীয় শাসন না থাকায় তৎকালীন সাম্রাজ্যবাদী দুই পরাশক্তি রােমান ও পারস্যের লােলুপ দৃষ্টির শিকার ছিল। উত্তর আরব রােমানদের এবং দক্ষিণ আরব ছিল পারসিকদের কর্তৃত্ব বলয়ে। আবিসিনীয় আগ্রাসন দৃষ্টিও আরবকে সদা শঙ্কিত করে রাখতাে। ইয়ামেনের দখলদার আবিসিনীয় খ্রিস্টান শাসক আবরাহার বিশাল হস্তিবাহিনী নিয়ে পবিত্র কাবা শরীফ আক্রমণ এর প্রমাণ বহন করে।

গােত্ৰতান্ত্রিক শাসন 

প্রাচীন গােত্ৰতান্ত্রিক শাসনই ছিল আরবদের রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিমূল। তাদের গােত্রপ্রীতি ও বন্ধন ছিল সুদৃঢ়। প্রত্যেক গােত্রে একজন গােত্রপতি বা শাইখ নির্বাচিত হতেন। প্রার্থীর বংশ গৌরব, মহানুভবতা, বীরত্ব, বিচার-বুদ্ধি, বয়স, পদমর্যাদা ও আর্থ-সামাজিক দিক দিয়ে অগ্রসরতার দিক বিবেচনা করে গণতান্ত্রিকভাবে ‘শাইখ’ নির্বাচিত হতেন। গােত্রপতির প্রতি আনুগত্য ছিল অপরিহার্য। গােত্রীয় শাসনে কোন সুনির্দিষ্ট বিধান ছিল না। গােত্রপতিদের পরামর্শ সভার (মালা) মতানুসারে শাসন, বিচার, যুদ্ধ ও অন্যান্য কার্যাবলী সম্পাদন করতেন। সাধারণ সমস্যাগুলাে “দারুন্ নাদওয়ার” সভায় আলােচনার মাধ্যমে সমাধান করা হত। 

কা’বা শরীফের কারণে মক্কানগর ও নগরবাসী-কুরাইশদের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। এ কারণে কুরাইশ গােত্রের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখা এবং পার্শ্ববর্তী আরাে কিছু গােত্রের মধ্যে একটি মৈত্রী-জোট বা গোত্র কমনওয়েলথের রূপ লাভ করে। এ জোটের নেতাদের পরামর্শ অনুযায়ী একটি আন্তঃগােত্রীয় শাসন ব্যবস্থাও গড়ে ওঠে।

গােত্রীয় দ্বন্দ্ব-কলহ

এ সময়ে কেন্দ্রীয় শাসনব্যবস্থা না থাকায় গােত্রে গোত্রে দ্বন্দ্ব-কলহ এক ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। গােত্রের মান-সন্ত্রম ও স্বার্থ রক্ষার জন্য সদস্যগণ জীবন পর্যন্ত বিসর্জন দিত। এ গােত্র-কলহ ও বিসংবাদ কখনাে বংশানুক্রমিকভাবে চলত। “খুনের বদলে খুন” (Blood for Blood) এ ধারায় রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ত বছরের পর বছর। গােত্রে গােত্রে যুদ্ধের ভয়াবহ দিনগুলােকে “আইয়ামুল আরব” (Ayam al Arab) বলা হত।” ঐতিহাসিক গীবনের মতে “অন্ধকার যুগে আরবে গােত্রীয় দ্বন্দ্বের কারণে ১৭০০ যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। বুয়াসের যুদ্ধ, ফিজারের যুদ্ধ, বসুসের যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধ্যে ছিল উল্লেখযােগ্য। উটকে পানি খাওয়ানাের সামান্য ঘটনা কেন্দ্র করে বনু বকর ও বনু গলিব গােত্রের মধ্যে সুদীর্ঘ ৪০ বছর ব্যাপী যুদ্ধ চলে ছিল।

রাজনৈতিক ঐক্য ছিল না

আরবে কোন কেন্দ্রীয় শাসন ছিল না। তাই সেখানে কোন সুষ্ঠু রাজনৈতিক ধারা চালু হয়নি। রাজনৈতিক ঐক্য বলতেও কিছু ছিল না। গােটা আরব ছিল শতধা বিভক্ত। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, অনৈক্য, অস্থিরতা, নৈরাজ্য, সন্ত্রাসবাদ ছিল তাদের রাজনৈতিক জীবনের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। “জোর যার মুল্লুক তার”– এ ছিল তাদের রাজনৈতিক দর্শন।

মক্কার নগররাষ্ট্র

ধর্মীয় ও বাণিজ্যিক গুরুত্বের কারণে মক্কা নগরে প্রাগ্রসর রাজনীতির উন্মেষ ও নগররাষ্ট্রের সূচনা হয়। কুরাইশ গােত্রপতিদের সমন্বয়ে গঠিত মালা বা মন্ত্রণা পরিষদ নামে গঠিত একটি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এ নগর-রাষ্ট্রের প্রশাসন ব্যবস্থা পরিচালনা ও তদারক করা হত। বিভিন্ন গােত্রের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করা এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের বেদুঈনদের সাথে মৈত্রীজোট গঠন করাও এ পরিষদের কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিল।

ইসলাম পূর্ব যুগে আরবের রাজনৈতিক অবস্থা ছিল খুবই নৈরাশ্যজনক ও বিশৃঙ্খলা পূর্ণ। কেন্দ্রিয় সরকারের অভাবে গােত্রপ্রধান স্ব স্ব গােত্রকে শাসন করত। আরবদের মধ্যে ঐক্য, সভ্রাব ও সম্প্রীতি ছিল না। কেন্দ্রিয় শাসনের অভাবে আন্তঃ গােত্রীয় কলহ ভয়াবহ আকার ধারণ করে। জোর যার মুলুক তার নীতি সর্বত্র বিরাজমান ছিল। তাই সুষ্ঠু  রাজনৈতিক নিয়ম-নীতি গড়ে উঠতে পারেনি।


 এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন। 

Google News

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Related Articles

Back to top button