ভূমিকা
সুস্থতা মানবজীবনের অমূল্য সম্পদ। আর এ সম্পদ ধরে রাখার প্রধান নিয়ামক হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। শরীরের রােগপ্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সংক্রামক রােগ প্রতিরােধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোনাে বিকল্প নেই। বর্তমানে সারাবিশ্ব নভেল করােনাভাইরাসের প্রভাবে বিপর্যস্ত। মারাত্মক ছোঁয়াচে এ ভাইরাসের উত্তম প্রতিকার হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা।
স্বাস্থ্যবিধি কী
স্বাস্থ্যবিধি বলতে সেসব নিয়মাবলি ও অনুশীলনকে বােঝায় যেগুলাে সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে এবং রােগ সংক্রমণ প্রতিরােধে সহায়তা করে। ‘স্বাস্থ্যবিধি’ শব্দটির ইংরেজি পরিভাষা ‘Hygiene’, যা গ্রিক শব্দ ‘Hygienous’ থেকে এসেছে। এর অর্থ স্বাস্থ্য বা সুস্বাস্থ্য সংরক্ষণ। মূলত স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আবশ্যকীয় স্বাস্থ্যচর্চা ও পরিচ্ছন্নতা অনুসরণ করা। অন্যভাবে বলা যায়, সুস্থ জীবনের জন্য নিজে এবং নিজের চারপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন এবং রােগের সংক্রমণ প্রতিরােধের জন্য যে অভ্যাস চর্চা করা হয় তাই স্বাস্থ্যবিধি ।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে করণীয়
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা একটি ভালাে অভ্যাস। নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেকেরই উচিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা । সুস্বাস্থ্যের জন্য যেসব নিয়মাবলি অনুসরণ করা আবশ্যকীয় তার মধ্যে উল্লেখযােগ্য হলােঃ-
- নিজেকে সবসময় পরিচ্ছন্ন ও জীবাণুমুক্ত থাকতে হবে এবং আশপাশের পরিবেশকে পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
- খাবারদাবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে।
- সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে বিশ সেকেন্ড ধরে হাত ধুতে হবে। বাড়ির বাইরে গেলে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে।
- সুষম ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে।
- নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
- হাচি-কাশির সময় টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহৃত টিস্যু ময়লা রাখার নির্দিষ্ট স্থানে ফেলতে হবে।
- মাস্ক পরিধান করতে হবে।
- শারীরিক দূরত্ব মেনে চলতে হবে। এজন্য অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব মেনে চলাফেরা করতে হবে।
- গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
- খাবার অবশ্যই ভালােমতাে রান্না করে খেতে হবে। এবং খাওয়ার আগে ও পরে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
বর্তমান বিশ্বের প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্যবিধির গুরুত্ব
বর্তমানে প্রাণঘাতী করােনাভাইরাসের থাবায় পুরাে পৃথিবী বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই ভাইরাসকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এ ভয়াবহ পরিস্থিতি সামলাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিকল্প নেই। একমাত্র স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই পৃথিবীর মানুষ আবারও ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়। করােনা মহামারিকে রুখতে বিশ্বের সব দেশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিশেষ করে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধােয়া, মাস্ক ব্যবহার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা, হ্যান্ডশেক বা কোলাকুলি করা থেকে বিরত থাকা বা সংস্পর্শে না আসা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে নেওয়া, কাপড় জীবাণুমুক্ত রাখা ইত্যদি। এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমরা যেকোনাে সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিজেদের সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি অন্যদেরও সুরক্ষিত রাখতে পারি।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের উপকারিতা
শরীরের রােগ-প্রতিরােধ ক্ষমতা বৃদ্ধি, রােগের প্রাদুর্ভাব রােধ, মহামারি বা সংক্রামক রােগের বিস্তার রুখতে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা জরুরি। জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার সুরক্ষা, পরিবেশ দূষণ রােধ ও রােগ-জীবাণুর আক্রমণ থেকে প্রতিরােধ গড়ে তুলতে স্বাস্থ্যবিধি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে ডায়রিয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের রােগ, ত্বকের ইনফেকশন, কৃমির সংক্রমণ প্রতিরােধ করা যায়। করােনাভাইরাসের মতাে ভয়ংকর জীবাণুকে প্রতিরােধ। করতেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরি।
স্বাস্থ্যবিধি অবহেলার পরিণাম
স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্যবিধি অবহেলা করলে মানুষ বিভিন্ন ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রােগে ভুগতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চললে শরীরের রােগ-প্রতিরােধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে মানুষ সহজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। শারীরিকভাবে অসুস্থ মানুষ মনের দিক থেকেও হয়ে পড়ে বিকল, মেজাজ হয় খিটখিটে। এতে কাজের প্রতি অনীহা আসে। তার কাছে জীবন হয়ে পড়ে অর্থহীন।
স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনে গৃহীত পদক্ষেপ
WHO স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছে। বিশ্বের সব দেশ ব্যক্তিগত ও সামাজিক স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে গুরুত্বারােপ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে জনগণকে উৎসাহিত করছে। করােনাকালীন প্রতিটি এলাকার জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য প্রচারণা চালানাে হয়েছে। টিভি, পত্রিকা, লিফলেটের মাধ্যমে জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সচেতন থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। মাস্ক পরিধান না করলে, গণপরিবহণে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে, সামাজিক দূরত্ব না মানলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জরিমানা করছে। জনগণ সচেতন হলে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে যেকোনাে দুর্যোগমহামারি প্রতিরােধ সম্ভব। এতে সবার সুস্থতা নিশ্চিত হয়।
উপসংহার
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা একটি ভালাে অভ্যাস। অন্তত নিজেদের সুস্থতার কথা ভেবে সবাই যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে তাহলেই সবার সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। এতে ভয়াবহ রােগ-জীবাণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। পরিবার ও সমাজের সকলকে স্বাস্থ্যবিধি অনসন সচেতন ও উৎসাহিত করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি অনুশীলনের অভ্যাস রপ্ত করতে হবে।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
