![]() |
ফাইল ছবি |
ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু, অন্যান্য নেতৃত্ব ও নারী সমাজের ভূমিকা
মূলত বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার দাবি অর্থাৎ ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক তৎপরতার বিকাশ ঘটে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমউদ্দিন গণ-পরিষদের ১৯৪৮ সনের ফেব্রুয়ারি ২৩ তারিখে অধিবেশনে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা বলার পরিপেক্ষিতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
তখন বঙ্গবন্ধু এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৮ সালে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হলে এর সঙ্গে তিনি যুক্ত হন। এ বছর ১১ই মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে হরতাল পালনের সময় তিনি গ্রেফতার ও কারারুদ্ধ হন। ‘বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে সুপারিশ করে পূর্ববঙ্গ পরিষদে একটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে’- এ মর্মে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে পূর্ববঙ্গের নাজিমুদ্দিন সরকার চুক্তিবদ্ধ হলে তিনি মুক্তি লাভ করেন।
ভাষা আন্দোলন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এক সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলে। অনেক রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদ এই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। ফলে পূর্ববাংলায় স্বাধিকারের চিন্তাচেতনা শুরু হয়। পরবর্তী আন্দোলনসমুহে ভাষা আন্দোলন প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। ভাষা আন্দোলন একধরনের প্রাদেশিকতাবাদের জন্ম দেয়। এরপর যখনই পূর্ব বাংলার স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোনাে দাবি উচ্চারণ বা হয়েছে তখনই পূর্ববাংলাবাসীর সমর্থন অর্জন করেছে।
ভাষা আন্দোলন ছাত্রসমাজকে প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। ছাত্ররা প্রত্যক্ষভাবে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। ভাষা আন্দোলনের মাত্র দুইমাসের মধ্যেই (এপ্রিল, ১৯৫২) ‘পূর্ববাংলায় ছাত্র ইউনিয়ন’ নামে ছাত্র সংগঠন জন্মলাভ করে। পরবর্তীকালের আন্দোলনসমূহে ছাত্রসমাজই ছিল মূল শক্তি।
ভাষা আন্দোলন ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শ্রমিক, কর্মচারী প্রভৃতি সকল পেশার লােকদের মধ্যে ঐক্যের এক ঐতিহ্য সৃষ্টি করে। পরবর্তী আন্দোলনসমূহে আমরা তার পুনরাবৃত্তি দেখি।
৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে স্কুল-কলেজের ছাত্রীরা অংশগ্রহণ করে। এর ফলে ছাত্রীদের | বােরখা পরার অভ্যাস কমে যায়। পরবর্তী সভা সমিতিতে মেয়েদের অংশগ্রহণের ধারা সৃষ্টি হয়। রাজনীতিতেও মেয়েরা সক্রিয় অংশগ্রহণ করতে থাকে। ঢাকার বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশেষ করে কামরুন্নেসা স্কুল এবং ইডেন কলেজের ছাত্রীদের ভূমিকা ছিল সংগ্রামী। মিছিল মিটিংয়ে উপস্থিত থেকে নাদিরা চৌধুরীসহ আরও অনেকে পােস্টার, ফেস্টুন লিখন এবং নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
