বাংলা রচনা

রচনা “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর”

Rate this post

 “মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর” প্রবন্ধ রচনা থেকে আমরা জানব মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিতা করার কারণ, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রা কাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সাথে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্ক ও আমাদের জীবনের এর ভূমিকা। 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর রচনা

 

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
রচনা

আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায় রচিত হয় ১৯৭১ সালে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করে। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের সূতিকাগার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের এ গৌরবােজ্জ্বল ইতিহাস-ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বর্ণোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে পরিচিত করে তােলার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এখন দেশের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। সেগুনবাগিচায় ভাড়াবাড়িতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ২২শে মার্চ। এটি ছিল একেবারেই ব্যক্তিগত পর্যায়ের উদ্যোগ। বর্তমানে এটি ঢাকার আগারগাঁওয়ে অবস্থিত। এখন জাদুঘরের সংগ্রহে রয়েছে মুক্তিযােদ্ধা ও শহিদদের ব্যবহৃত সামগ্রী, অস্ত্র, দলিল, চিঠিপত্র  ইত্যাদি মিলিয়ে ১৭ হাজারেরও বেশি নিদর্শন।

আর ১০২ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের নয়তলা ভবন। ভবনের ভূগর্ভস্থ । তিনটি তলায় রয়েছে কার পার্কিং, আর্কাইভ, ল্যাবরেটরি, প্রদর্শনশালা ইত্যাদি। নিচতলায় জাদুঘর কার্যালয় ও মিলনায়তন। প্রথম তলায় শিখা অম্লান, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার ব্রোঞ্জনির্মিত ভাস্কর্য, মুক্তমঞ্ছ, ক্যানটিন, স্মারক বিক্রয়কেন্দ্র ও টিকিট কাউন্টার। এখানে একটি হেলিকপ্টার ও একটি বিমানও রয়েছে ছাদের সঙ্গে আটকানাে। এগুলাে ব্যবহৃত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে গবেষণাকেন্দ্র ও পাঠাগার। তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় চারটি মূল প্রদর্শনকক্ষ। পঞ্চম তলায় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনকক্ষ। প্রথম প্রদর্শনকক্ষের নাম ‘আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের সংগ্রাম’। এই প্রদর্শনকক্ষটিতে প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে ব্রিটিশবিরােধী আন্দোলন, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হয়ে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত দেশের ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে । ফসিল, প্রাচীন টেরাকোটা, মৃৎপাত্র, শিলাখণ্ডসহ নানা প্রকার নিদর্শনের সঙ্গে রয়েছে ঐতিহাসিক ঘটনা ও ব্যক্তির আলােকচিত্র । দ্বিতীয় প্রদর্শনকক্ষের নাম ‘আমাদের অধিকার, আমাদের ত্যাগ’। এই কক্ষটি থেকেই দর্শক সরাসরি ঢুকে পড়বেন মহান মুক্তিযুদ্ধের পর্বে। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়বে বিশাল এক সাদাকালাে ছবি। স্বাধীনতার দাবিতে রেসকোর্স ময়দানে অগণিত মানুষের বিশাল সমাবেশ, ১৯৭০ সালের ৩রা জানুয়ারি ছবিটি তুলেছিলেন শুক্কুর মিয়া নামের এক আলােকচিত্রী । যে ক্যামেরাটি দিয়ে দৃশ্যটি ধারণ করা হয়েছিল, সেই ক্যামেরাটিও আছে ছবির নিচে। এখানে আছে ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ঐতিহাসিক ভাষণের ছবি। এই গ্যালারির একটি অংশে চমৎকার স্থাপনাকর্মের মধ্য দিয়ে ফুটিয়ে তােলা হয়েছে ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ কালরাতের গণহত্যার ঘটনা।

অপারেশন সার্চলাইট নামে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ঢাকায় ঘুমন্ত বাঙালির ওপর ট্যাংক, কামান ও সাঁজোয়া যান নিয়ে অতর্কিতে হামলা চালায়। পরের দুটি প্রদর্শনকক্ষ চতুর্থ তলায়। এর প্রথমটির শিরােনাম ‘আমাদের যুদ্ধ, আমাদের মিত্র’। এখানে আছে ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীদের জীবনযাত্রা, বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের বড় আকারের ডিজিটাল প্রিন্ট। মুক্তিযােদ্ধাদের প্রশিক্ষণ, বিভিন্ন সেক্টরে ভাগ হওয়া ও রাজাকারদের তৎপরতা, মুক্তিযােদ্ধাদের গেরিলাযুদ্ধের আশ্রয়স্থল এসব। এর পাশাপাশি আছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে দেশি-বিদেশি যাঁরা,বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন, জনমত সৃষ্টি করেছেন সে দিকগুলাে। রয়েছে পণ্ডিত রবিশঙ্করের উদ্যোগে যুক্তরাষ্ট্রে আয়ােজিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ গানের জর্জ হ্যারিসনের (George Harrison) হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি, সুরের স্টাফ নােটেশন। শেষ প্রদর্শকক্ষটির নাম রাখা হয়েছে ‘আমাদের জয়, আমাদের মূল্যবােধ’। এতে আছে নৌযুদ্ধের বিভিন্ন নিদর্শন, বিলােনিয়ার যুদ্ধের রেলস্টেশনের রেলিং, ট্রলি, মিত্রবাহিনীর ছত্রীসেনাদের আক্রমণ, দগ্ধ বাড়িঘর প্রভৃতি। শেষ হয়েছে ১৯৭২ সালের স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবিধানের অনুলিপিটি দিয়ে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কে দেশের মানুষকে সচেতন করতে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নানা ধরনের কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। জাদুঘরের ব্যবস্থাপনায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী পরিবহন ও পরিদর্শন সুবিধা-সংবলিত কর্মসূচি পরিচালিত হয়। এছাড়া একটি গাড়িকে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়েছে, যাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে একটি ছােট প্রদর্শনশালাতেও উন্মুক্ত  রয়েছে। এখানে বিভিন্ন প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বিশ্বের অপরাপর আটটি দেশের সমভাবাপন্ন জাদুঘরের সঙ্গে মিলে গঠন করেছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অব হিস্টরিক মিউজিয়ামস অব কনসান্স’ । জাদুঘরের সংগৃহীত স্মারক সংখ্যা দশ হাজারের অধিক। . বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি তথা আমাদের গৌরবময় জাতীয় ইতিহাস-ঐতিহ্যের যথাযথ সংরক্ষণ এবং প্রদর্শনই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের লক্ষ্য। জাদুঘর দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে জনসমক্ষে তুলে ধরার মধ্য দিয়ে অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে সেতুবন্ধন স্থাপন করে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর বহুমাত্রিক জাদুঘর নয়, তবে বাংলাদেশের জাতীয় জীবন ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ সৃতি-স্বারক-দলিলপত্র ইত্যাদির একমাত্র ও অন্যতম সংগ্রহশালা। আমাদের ভবিষৎ প্রজন্ম যেন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভুলে না যায় এবং এর সঠিক ইতিহাস জানতে পারে এটাই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রধান লক্ষ্য।

বিভাগঃ রচনা

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button