Uncategorized
৮ম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা সপ্তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ | Class Eight 7th week Islam
৮ম শ্রেণির ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা সপ্তম সপ্তাহের অ্যাসাইনমেন্ট ২০২১ | Class Eight 7th week Islam Sikkha Assignment 2021 Answer Solution
যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত – প্রদেয় যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণ – চাচার এলাকায় যাদেরকে যাকাত দেয়া যায় – যাকাত হিসাবে চাচা কী কী দিতে পারেন তার তালিকা
নির্ধারিত কাজ
নমুনা উত্তর
আরবি শব্দ যাকাতের অর্থ হল বৃদ্ধি, পবিত্রতা, পরিচ্ছন্নতা। ইসলামের পাঁচটি রুকনের মধ্যে যাকাত অন্যতম। ইসলামি পরিভাষায় ধনী ব্যক্তিদের নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকলে নির্দিষ্ট অংশ গরিব ও অভাবী লোকদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়াকে যাকাত বলে। অর্থ সম্পদ মানুষের হাতে পুঞ্জিভূত থাকুক আল্লাহ্ তা পছন্দ করেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহপাক বলেনঃ
وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ
তোমরা নামায কায়েম কর, এবং যাকাত প্রদান কর। (সূরা মুযযামমিল, আয়াত ২০)
যাকাত হল আল্লাহপাক প্রদত্ত দরিদ্রদের অধিকার। ধনীদের অনুগ্রহ নয়। যাকাত আদায় করা ধনীদের উপর আল্লাহপাক ফরজ করে দিয়েছেন। আল্লাহপাক আরও বলেনঃ
وَفِي أَمْوَالِهِمْ حَقٌّ لِّلسَّائِلِ وَالْمَحْرُومِ
এবং তাদের (ধনীদের) ধন-সম্পদে দরিদ্র ও বঞ্চিতের হক রয়েছে। (সূরা আয-যারিয়াত, আয়াত ১৯)
১। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তঃ যাকাত সবার উপর ফরজ নয়। শুধুমাত্র ধনীদের উপর ফরজ করা হয়েছে। যদি কারও নিসাব (নির্ধারিত) পরিমাণ সম্পদ থাকে তাঁকে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। যাকাত ফরজ হওয়ার শর্ত সাতটি। শর্তগুলোর বিবরণ নিচে দেওয়া হলোঃ
- মুসলিম হওয়াঃ যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্ব শর্ত হলো মুসলিম হওয়া। অমুসলিমদের উপর যাকাত ফরজ নয়। যদি কোন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করে তাহলে তাঁকে অতীত জীবনের যাকাত দিতে হবে না। যেদিন থেকে সে মুসলিম হয়েছে সেদিন থেকে হিসেব করে যাকাত দিতে হবে।
- নিসাবের মালিক হওয়াঃ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা রুপা কমপক্ষে সাড়ে বায়ান্ন তোলা অথবা ঐ মূল্যের অর্থ বা সম্পদ থাকে তাঁকে যাকাত আদায় করতে হবে।
- নিসাব পরিমাণ সম্পদ প্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়াঃ জীবনযাপনে প্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমনঃ বাসগৃহ, জমি, গাড়ি, কৃষি সরঞ্জাম ইত্যাদির উপর যাকাত ফরজ নয়।
- ঋণগ্রস্ত না হওয়াঃ ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার উপর যাকাত ফরজ নয়। তবে ঋণ পরিশোধ করার পর যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ কারো থাকে তাহলে তাঁকে যাকাত দিতে হবে।
- সম্পদ বা অর্থ এক বছর স্থায়ী থাকাঃ নিসাব পরিমাণ সম্পদ যদি কারও হাতে এক বছর কাল স্থায়ী না হয় তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ নয়। এই বিষয়ে একটি হাদিস রয়েছে,
“ঐ সম্পদের যাকাত নেই যা পূর্ণ এক বছর মালিকানায় না থাকে।” (ইবনে মাজাহ) - জ্ঞানসম্পন্ন হওয়াঃ জ্ঞানবুদ্ধিহীন তথা পাগলের উপর যাকাত ফরজ নয়। যাকাত ফরজ হওয়ার পূর্ব শর্ত হল জ্ঞানসম্পন্ন হওয়া ।
- বালেগ হওয়াঃ শিশু, নাবালেগ থাকা অবস্থায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তার উপর যাকাত ফরজ নয়। কেবলমাত্র প্রাপ্তবয়স্ক বালেগদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে।
উপরের উল্লেখিত সাতটি শর্ত যার সাথে মিলে যাবে ইসলামের বিধান মোতাবেক তাঁকে অবশ্যই যাকাত দিতে হবে। অন্যথায় পরকালে কঠিন শাস্তির হুশিয়ারি দিয়ে আল্লাহপাক কুরআনে বলেনঃ
وَوَيْلٌ لِّلْمُشْرِكِينَ الَّذِينَ لَا يُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُم بِالْآخِرَةِ هُمْ كَافِرُونَ
আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ, যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে। (সূরা হা-মীম সেজদাহ, আয়াত ৬-৭)
২. প্রদেয় যাকাতের পরিমাণ নির্ধারণঃ ইসলামি শরিয়তের বিধান অনুযায়ী নিসাব পরিমাণ অর্থ বা সম্পদ থাকলে তার উপর যাকাত দিতে হয়। অর্থাৎ কমপক্ষে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা রুপা কমপক্ষে সাড়ে বায়ান্ন তোলা অথবা ঐ মূল্যের অর্থ বা সম্পদ এক বছর স্থায়ী থাকে তাহলে তাঁকে ঐ সম্পদ বা অর্থের ৪০ ভাগের এক ভাগ বা ২.৫০% যাকাত দিতে হবে।
আমার চাচার এক বছরের নগদ টাকার পরিমাণ ৪,০০,০০০ টাকা।
তাহলে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী আমার চাচা নিসাব পরিমাণ অর্থের মালিক হওয়ায় তাঁকে অবশ্যই যাকাত আদায় করতে হবে। চাচার যাকাতের পরিমাণ হবে = (৪,০০,০০০ x ২.৫০%) = ১০,০০০ টাকা।
৩. চাচার এলাকায় যাদেরকে যাকাত দেয়া যায়ঃ ইসলামি শরিয়তে কোন কোন খাতে যাকাতের অর্থ দিতে হবে তা স্বয়ং আল্লাহপাক নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে বলেনঃ
إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ ۖ فَرِيضَةً مِّنَ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
যাকাত হল কেবল ফকির, মিসকীন, যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মচারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং দাস মুক্তির জন্যে, ঋণ গ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যে, এই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। (সূরা আত তাওবাহ, আয়াত ৬০)
সুতরাং, চাচা তার নিন্ম লিখিত লোকদেরকে যাকাত দিতে পারেনঃ
- ফকির বা অভাবগ্রস্ত লোক যাদের প্রয়োজনের তুলনায় সম্পদের পরিমাণ যথেষ্ট নয়, যাদের জীবনধারনের জন্য ওপরের সাহায্যের দরকার হয়।
- মিসকিন যারা নিঃস্ব, অভাবে থাকার পরেও সম্মানের ভয়ে কারো নিকট সাহায্য চাইতে পারে না তাদেরকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে।
- যাকাতের কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের যাকাত দেওয়া যেতে পারে।
- সদ্য মুসলিম হয়েছেন এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে।
- ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে।
- যারা আল্লাহর পথে জিহাদ করেন এবং ইসলাম প্রচার ও প্রসার ও খেদমতের কাজে নিয়োজিত তাদেরকে যাকাত দেওয়া যেতে পারে।
- কোন ব্যক্তি যিনি সফরে গিয়ে অসহায় অবস্থায় পড়লে বা যাত্রা পথে আর্থিক সংকটের কারণে বিপদে পড়লে তাঁকে যাকাতের অর্থ দেওয়া যেতে পারে।
৪। যাকাত হিসাবে চাচা কী কী দিতে পারেন তার তালিকাঃ
- যাকাতের টাকা জনে জনে না দিয়ে বরং সম্পূর্ণ টাকা একটি পরিবারেকে দিলে ওই পরিবারটি স্বাবলম্বী হতে পারবে।
- যাকাতের টাকা দিয়ে কোনো গরিবকে শিক্ষা অর্জন ও তাবলিগ ইত্যাদি দ্বীনি কাজে পাঠায় তাহলে তার যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
- যাকাতের টাকা দিয়ে গরিবদের ভরণ-পোষণ বাবদ খরচ করা যাবে।
- নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক না হলে ভাই-বোন, চাচা, মামা, ফুফু, খালা ও তাদের সন্তানদেরকে জাকাতের টাকা দিতে পারবে।
- দরিদ্র শ্রমিককে তার কাজের প্রয়োজনীয় উপকরণ যাকাতের টাকা দিয়ে কিনে দেওয়া যেতে পারে।
- এতিমখানায় ও দরিদ্রদের জন্য প্রতিষ্ঠিত দাতব্য চিকিৎসালয়ে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে।
- বিভিন্ন যাকাত ফান্ডে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে।
যাকাত গরীবদের অন্তর থেকে ধনীদের প্রতি হিংসা ও বিদ্বেষ দূর করে দেয়। কারণ গরীবরা যখন দেখে ধনীরা তাদের সম্পদ দ্বারা যাবতীয় প্রয়োজন পূরণ করছে, কিন্তু তাদের সম্পদ থেকে তারা কোনভাবে উপকৃত হয় না, এতে অনেক সময় ধনীদের প্রতি তাদের অন্তরে হিংসা ও বিদ্বেষের জন্ম নেয়। কিন্তু ধনীরা যদি বছর শেষে গরীবদের যাকাত দেয়, তাহলে তাদের অন্তর থেকে তা দূরীভূত হয় এবং উভয় শ্রেণির মধ্যে মহব্বত ও ভালবাসার সৃষ্টি হয়। যাকাত দ্বারা আল্লাহ পাপসমূহ দূরীভূত করেন, যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘সদকা পাপ মোচন করে দেয়, যেমন পানি আগুন নির্বাপিত করে দেয়।’ (সুনানে তিরমিযি)
thanks
Some speeches are not exact as in textbook but the overall writing is very good.