প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকে তৎপুরুষ সমাস নিয়ে আলোচনা করব। তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি এবং তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ সবকিছু নিয়ে বিস্তারিতভ
প্রিয় শিক্ষার্থী বন্ধুরা, আজকে তৎপুরুষ সমাস নিয়ে আলোচনা করব। তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি এবং তৎপুরুষ সমাসের উদাহরণ সবকিছু নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে?
পূর্বপদের বিভক্তির লোপের যে সমাস হয় এবং যে সমাসে পরপদের অর্থ প্রধানভাবে বুঝায় তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোন বিভক্তি থাকতে পারে। আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে এদের নামকরণ হয়। তৎপুরুষ সমাসকে কারকলোপী সমাসও বলা হয়। যেমনঃ বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন। এখানে দ্বিতীয়া বিভক্তি 'কে' লোপ পেয়েছে বলে এর নাম দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস।

- পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে।
- পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত বিভক্তির লোপে এ সমাস হয়।
তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ
বিভক্তি লোপ অনুসারে তৎপুরুষ সমাস ছয় প্রকার। তবে ছয় প্রকার তৎপুরুষ সমাস ছাড়াও আরও তিন প্রকার তৎপুরুষ সমাস দেখা যায়। সুতরাং তৎপুরুষ সমাস মোট নয় প্রকার।
- দ্বিতীয়া তৎপুরুষ
- তৃতীয়া তৎপুরুষ
- চতুর্থী তৎপুরুষ
- পঞ্চমী তৎপুরুষ
- ষষ্ঠী তৎপুরুষ
- সপ্তমী তৎপুরুষ
- উপপদ তৎপুরুষ
- নঞ্ তৎপুরুষ ও
- অলুক তৎপুরুষ
দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস
পূর্বপদে দ্বিতীয়া বিভক্তি (কে, রে ইত্যাদি) লোপ হয়ে যে তৎপুরুষ সমাসে উত্তরপদের অর্থ প্রাধান্য থাকে তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।
- প্রাপ্ত, আশ্রিত, গত, আপন্ন, অতীত, প্রবিষ্ট, সংক্রান্ত ইত্যাদি শব্দযোগে এই সমাস হয়। যেমন:
-
প্রাপ্তঃ হর্ষকে প্রাপ্ত = হর্ষপ্রাপ্ত, বয়ঃকে প্রাপ্ত =
বয়ঃপ্রাপ্ত, সাহায্যকে প্রাপ্ত = সাহায্যপ্রাপ্ত, দুঃখকে প্রাপ্ত =
দুঃখপ্রাপ্ত, জ্ঞানকে অর্জন = জ্ঞানার্জন
- আশ্রিতঃ দেবকে আশ্রিত = দেবাশ্রিত, চরণকে আশ্রিত = চরণাশ্রিত।
- গতঃ ব্যক্তিকে গত = ব্যক্তিগত, মর্মকে গত = মর্মগত, পুঁথিকে গত = পুঁথিগত, পরলোকে গত = পরলোকগত।
- আপন্নঃ বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন, বিস্ময়কে আপন্ন = বিস্ময়াপন্ন।
- অতীতঃ মরণকে অতীত = মরণাতীত, বর্ণনাকে অতীত = বর্ণনাতীত, লােককে অতীত = লােকাতীত
- প্রবিষ্টঃ গৃহকে প্রবিষ্ট = গৃহপ্রবিষ্ট।
- আরূঢ়ঃ অশ্বকে আরূঢ় = অশ্বারূঢ়, সিংহাসনকে আরূঢ় = সিংহাসনারূঢ়।
- সংক্রান্তঃ ধর্মকে সংক্রান্ত = ধর্ম সংক্রান্ত।
- ব্যাপ্তি বােঝালে কালবাচক শব্দের সঙ্গে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। অর্থাৎ, ব্যাপ্তি বোঝালে পূর্বপদে কালবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ যুক্ত হলে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমনঃ চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী, চিরকাল ব্যাপিয়া বসন্ত = চিরবসন্ত, ক্ষণকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী = ক্ষণস্থায়ী, জীবন ব্যাপিয়া আনন্দ = জীবনানন্দ, বহুকাল ব্যাপিয়া প্রচলিত = বহুপ্রচলিত।
- ভাবে, রূপে, যথা তথা - এ ধরনের শব্দের ব্যবহারে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ হয়। যেমনঃ ঘনভাবে সন্নিবিষ্ট = ঘনসন্নিবিষ্ট, দৃঢ়রূপে বদ্ধ = দৃঢ়বদ্ধ, অবশ্য যথা তথা কর্তব্য = অবশ্যকর্তব্য, দ্রত যথা তথা গামী = দ্রতগামী।
- অন্যান্য দৃষ্টান্ত - গা-কে ঢাকা = গাঢাকা, রথকে দেখা = রথদেখা, কলাকে বেচা = কলাবেচা ইত্যাদি। এরকম- ভাতরাধা, ছেলে-ভুলানাে (ছড়া), নভেল-পড়া ইত্যাদি।
মন্তব্যগুলো দেখান