বাংলা রচনা

সংবাদপত্র রচনা (১৭ পয়েন্ট)

3.5/5 - (201 votes)

প্রিয় ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১২ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা আজকে বাংলা ২য় পত্রের রচনা বিভাগ থেকে সংবাদপত্র রচনা নিয়ে আলোচনা করব। রচনাটি বিভিন্ন বই থেকে পয়েন্ট সহকারে সহজ ভাষায় লিখা হয়েছে। আশা করি সংবাদপত্র প্রবন্ধটি তোমাদের ভালো লাগবে।

সূচনা

নিত্যদিন সারাবিশ্বে নানান ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে। সেসব ঘটনা-দুর্ঘটনা সম্পর্কে আমরা জানতে চাই বা জানতে পারি। আর তা-ই হলো খবর বা সংবাদ। যেসব উপকরণ মানবজীবনে যুগান্তকারী পরিবর্তন সূচিত করেছে তার অন্যতম হচ্ছে সংবাদপত্র। আধুনিক জীবনে সংবাদপত্রের ভূমিকা অপরিহার্য। সংবাদপত্র যে কেবল সংবাদ পরিবেশন করে তা নয়, জনমতের প্রতিফলন ও জনমত গঠনেও সংবাদপত্রের রয়েছে ইতিবাচক ভূমিকা। গণতান্ত্রিক সমাজব্যাবস্থায় মত প্রকাশের মৌলিক অধিকার সংবাদপত্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে ওঠে। এক্ষেত্রে সংবাদপত্র বহু দল ও মতের ধারক-বাহক হিসেবেও কাজ করে। এভাবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগনের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধন। কাজ করে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে।

সংবাদপত্র কি

কত অজানারে জানাইলে তুমি

কত ঘরে দিলে ঠাঁই

দূরকে করিলে নিকট বন্ধ

পরকে করিলে ভাই। – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

প্রতিদিনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, বিরহ-ব্যথার বার্তা বহন করে যে কাগজটি ভাের হতে না হতেই আমাদের দ্বারে প্রবেশ করে, তার নাম সংবাদপত্র। প্রতিদিন সারা বিশ্বের বার্তাসহ কাগজখানি আমাদের দ্বারে দ্বারে উপনীত হয় বলে, মানবজীবনের সঙ্গে সংবাদপত্রের এত বেশি সম্পৃক্ততা যে সংবাদপত্র ছাড়া আধুনিক জনজীবন অচল হয়ে পড়ার উপক্রম হয়, বিশ্বের সঙ্গে ব্যক্তি মানুষের সংযােগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সংবাদপত্র হল সারা বিশ্বের একটা দর্পণ স্বরূপ। বিশ্বের কোথায় কী ঘটছে এক পলকে ভেসে ওঠে আমাদের চোখের সামনে সংবাদপত্রের মাধ্যমে। অতি অল্প পয়সায় এর মত প্রয়ােজনীয় ও মূল্যবান বস্তু দ্বিতীয়টি আর নেই, এর সম্পর্কে সঙ্গত কারণেই বলা হয় “Newspaper is the storehouse of knowledge.” আধুনিককালে এটি সুস্থ গণতান্ত্রিক দেশের দর্পণ। গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বহু দল ও মতের ধারক-বাহক হিসেবে সংবাদপত্র সরকার ও জনগণের মধ্যে রচনা করে সেতুবন্ধন।

সংবাদপত্রের উৎপত্তি

সংবাদপত্রের প্রথম দিকের উৎপত্তির ইতিহাস পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও, একথা জোর দিয়ে বলা যায় যে, চীন দেশেই সর্বপ্রথম সংবাদপত্রের বিকাশ লাভ ঘটে। চীন দেশেই প্রথম কাগজ ও মুদ্রণ যন্ত্র আবিষ্কৃত হয়েছিল। ইউরােপেও প্রথম সংবাদপত্রের আত্মপ্রকাশ ঘটল নবজাগরণের অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ইতালিতে। সেখান থেকেই সংবাদপত্র অতি দ্রুত বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ল। মুদ্রণযন্ত্র আবিষ্কারের ফলেই সংবাদপত্রের দ্রুত প্রসার সম্ভব হল। উন্মােচিত হল বর্তমান সভ্যতার এক নব-দিগন্ত।

বাংলাদেশের ইতিহাসে সংবাদপত্র

বাংলাদেশে ১৭৮০ সালের ২৯শে জানুয়ারি সর্বপ্রথম সর্বসাধারণের জন্য সংবাদপত্রের প্রচলন করা হয়। জেমস অগাস্টাস হিকি’র সম্পাদনায় পত্রিকাটির নাম ছিল

বেঙ্গল গেজেট

বেঙ্গল গেজেট’। বাংলা ভাষায় প্রথম সাময়িক পত্র ‘দিগদর্শন’ ১৮১৮ সালের এপ্রিল মাসে জন ক্লার্ক মার্শম্যানের সম্পাদনায় শ্রীরামপুর মিশন থেকে প্রকাশিত হয়। বাঙালি পরিচালিত প্রথম পত্রিকা ‘সাপ্তাহিক গেজেট’ গঙ্গাকিশাের ভট্টাচার্য কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায় প্রথম দৈনিক ছিল ঈশ্বর গুপ্তের ‘সংবাদ প্রভাকর’। ‘সংবাদ প্রভাকর’ ১৮৩১ সালে সাপ্তাহিক এবং ১৮৩৯ সালে দৈনিক হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে।

১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা যুদ্ধে বিজয়ের মুহূর্তে বাংলাদেশে দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল ১০। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ১৯৯৭-৯৮ খ্রিস্টাব্দে সারাদেশে ২৮৬টি দৈনিকসহ মােট ১,৫২২টি সাময়িকী প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে ১৮০০-এর বেশি দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশিত হলেও গােটা দেশের শতকার ১৫ ভাগ লােক সপ্তাহে একবার পত্রিকা পাঠ করে। শহরাঞ্চলে পাঠক সংখ্যার হার বেশি (শতকরা ৩২%) এবং পল্লী অঞ্চলে, বিশেষ করে পল্লী রমণীদের মধ্যে এই হার শতকরা ২ ভাগ। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের একটি সমীক্ষায় দেখা যায় যে, মাত্র ১২ শতাংশ পাঠক পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর বিশ্বাসযােগ্য বলে মনে করেন এবং মাত্র ৫৫ শতাংশ পাঠক মনে করেন যে দেশের পত্রিকাগুলাের মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে।

সংবাদপত্রের প্রকারভেদ

প্রকাশের বৈশিষ্ট্য অনুসারে সংবাদপত্র নানা প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন: দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষান্মাসিক ও বার্ষিক। তবে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক সংবাদ পত্রগুলাের মধ্যে সংবাদের চেয়ে গল্প, প্রবন্ধ, সমালােচনা, বৈজ্ঞানিক আলােচনা ইত্যাদি বেশি থাকে।

বাংলাদেশের সংবাদপত্র

বর্তমানে বাংলাদশে অসংখ্য সংবাদপত্র রয়েছে। বাংলাদেশের দৈনিক ইত্তেফাক, দৈনিক ইনকিলাব, দৈনিক বাংলা, বাংলার বাণী , সংবাদ, যুগান্তর, জনকণ্ঠ, আজকের কাগজ, ভােরের কাগজ, বর্তমান দিনকাল, প্রথম আলাে, মানবজমিন, বাংলাদেশ অবজারভার, মর্নিং নিউজ ইত্যাদি পত্রিকা এবং বিচিত্রা, বেগম, রােববার ইত্যাদি সাপ্তাহিক পত্রিকা বিশেষ উল্লেখযােগ্য। তাছাড়া জেলাভিত্তিকভাবেও অনেক সংবাপত্র আমাদের দেশে ছাপানো হয়।

বাংলাদেশের সংবাদসংস্থা

পাকিস্তান আমলের সরকার বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তান (এপিপি) স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) নামে পরিচালিত হয়ে আসছে। এ ছাড়া রয়েছে বেসরকারি বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব বাংলাদেশ (ইউএনবি); চট্টগ্রামের বাংলাদেশ নিউজ এজেন্সী (বিএনএ), ঢাকাকেন্দ্রিক প্রেস বার্তা সংস্থা, মিডিয়া সিন্ডিকেট, নিউজ মিডিয়া, আবাস এবং অতি সম্প্রতি আবির্ভূত অ্যাসােসিয়েটেড প্রেস অব বাংলাদেশ উল্লেখযােগ্য।

পৃথিবীর বিভিন্ন সংবাদ প্রতিষ্ঠান

গােটা পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে পৃথিবীর সর্বত্র সংবাদ প্রচার করতে পারে। পৃথিবীর বৃহত্তর সংবাদ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নাম রয়টার্স। বাংলাদেশের বড় সংবাদ সংগ্রহ ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের নাম ‘বাসস’ বা ‘বাংলাদেশের সংবাদ সংস্থা (Bangladesh Sangbad Sangstha)। এছাড়া রয়েছে ইউ. এন. বি., এনা, ইরনা, এপিপি, পিটিআই ইত্যাদি।

আধুনিক সংবাদপত্রের বিষয়-বিস্তার

সংবাদপত্রের পরিধি বা পরিসর বর্তমানে ব্যাপক। আধুনিক সংবাদপত্রের পরিধি কেবল সংবাদ পরিবেশনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক-অর্থনৈতিক নানা সংবাদ ছড়াও তা পরিবেশন করে বিচিত্র তথ্য প্রতিবেদন। শিল্প-সাহিত্যের আলোচনা, গণবিজ্ঞানের নানা তথ্য এবং সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও বিনোদন জগতের বিচিত্র কর্মধারা এখন সংবাদপত্রের আকর্ষণীয় বিষয় হয়ে উঠেছে।

সংবাদ সংগ্রহ

সংবাদ সংগ্রহের জন্যে সারা বিশ্বে উপযােগী ব্যবস্থা রয়েছে। বিশেষ বিশেষ বার্তা সংস্থা সংবাদ সংগ্রহ করে সংবাদপত্রের জন্যে পাঠানাের ব্যবস্থা করে। টেলিপ্রিন্টার যন্ত্রের সাহায্যে পত্রিকা অফিসে সংবাদ গ্রহণ করা হয়। সাম্প্রতিককালে সংবাদ আদান-প্রদানের জন্যে আরও উন্নত ধরনের পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। ভূ-উপগ্রহের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে যােগাযােগের যে নতুন দিগন্ত উন্মােচিত হয়েছে তাতে খুব সহজেই মুহূর্তকালের মধ্যে সারা বিশ্বের খবর সংবাদপত্র অফিসে পৌছে থাকে। বিশ্বজুড়ে তথ্য প্রবাহের যে সুযােগ সৃষ্টি হয়েছে তা সংবাদপত্রকে সমৃদ্ধ করছে। তবে সংবাদ সংগ্রহের জন্যে রিপাের্টারের ভূমিকাটিই মুখ্য। প্রত্যেক সংবাদপত্রের নিজস্ব সংবাদদাতা রয়েছে। তারা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে পত্রিকা অফিসে পাঠায়। সেসব খবর রাতারাতি পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়ে পরের দিন সকালে ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়।

সংবাদপত্রের প্রয়ােজনীয়তা

একটি দেশের গণতন্ত্র রক্ষার পিছনে সংবাদপত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা : সংবাদপত্র গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। মহাবিচারপতির বিচারশালায় সে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ সমর্থন করে। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা লুণ্ঠিত হলে, কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোনাে কারণে কলুষিত হলে, সংবাদপত্রের নির্ভীক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে উঠে। সংবাদপত্র তাই জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের সর্বদা দায়িত্বশীল অভিভাবক।

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সংবাদপত্রের ভূমিকা

সংবাদপত্র গণতন্ত্রের সদা জাগ্রত প্রহরী। মহাবিচারপতির বিচারশালায় সে নিপীড়িত মানুষের পক্ষ সমর্থন করে। কোথাও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হলে, গণতন্ত্রের মর্যাদা লুণ্ঠিত হলে, কিংবা গণতন্ত্রের পবিত্রতা কোনাে কারণে কলুষিত হলে, সংবাদপত্রের নির্ভীক কণ্ঠ সেখানে সোচ্চার হয়ে উঠে। সংবাদপত্র তাই জনগণের পবিত্র গণতান্ত্রিক অধিকার সংরক্ষণের সর্বদা দায়িত্বশীল অভিভাবক।

সংবাদপত্রের নানা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

সংবাদপত্র বর্তমান সভ্যতার অপরিহার্য অঙ্গ। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানব ভাগ্যে যখন দুর্দিন নেমে আসে, তখন সংবাদপত্রই সেই দুঃসংবাদ গণ-দুয়ারে পৌছায়ে দিয়ে ত্রাণকার্যকে করে ত্বরান্বিত। দ্বন্দ্ব সংঘাতময় ভূমণ্ডল, মহাসাগরের দুস্তর ব্যবধান কিংবা গিরিকান্তার ও মরুপ্রান্তরে দুঃসাধ্য দুর্গমতাকে তুচ্ছ করে সে বিশ্ববার্তা সংগ্রহ করে আনে। রােগ জর্জর পৃথিবীর শিয়রে বসে সে মহাত্রাসীর মত অনুভব করে তার বক্ষ স্পন্দন এবং পৃথিবীর মানুষের কানে পৌছে। দেয় তার সকল সংবাদ, দূর করে মানুষের উৎকণ্ঠা ও ব্যাকুল সংবাদ-তৃষ্ণা। বিশ্বের রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিজ্ঞান, বাণিজ্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, খেলাধুলা, আমােদ-প্রমােদ সকল ক্ষেত্রেই তার অবাধ পদসঞ্চার। সংবাদপত্রের নির্ভীক ধিক্কার বাণী যখন ধ্বনিত হয়ে ওঠে, সংগে সংগে পৃথিবীর লক্ষ কোটি মুখ কণ্ঠস্বরও প্রবল বিক্ষোভে সোচ্চার হয়ে ওঠে। শক্তিমদমত্ত অত্যাচারীর দল সেই প্রবল গণবিক্ষোভের সম্মুখে দাঁড়াতে পারে না। তখন ভীত সন্ত্রস্ত অত্যাচারীর দলনীতি স্বীকার করে সেই জাগ্রত জনমতের কাছে। অন্যায়ের পরাভবে ন্যায়ের অম্লান অমর্যাদা হয় পুনঃপ্রতিষ্ঠিত। পরাজিত হয় অত্যাচারী স্বৈরতন্ত্র , জয় হয় মানবতার। নির্ভীক সংবাদপত্রই সেই কৃতিত্বের কারিগর। তাছাড়া জনসাধারণের চিঠিপত্র প্রকাশনার মাধ্যমে জাগ্রত জনমতকে প্রতিফলিত করে সংবাদপত্র পালন করে তার পবিত্র নৈতিক দায়িত্ব। তাই বলা হয়— “It is the people’s parliament always in sessions.” মন্তব্যটি সর্বোতভাবে সার্থক। সংবাদপত্র আক্ষরিক অর্থেই জনগণের সদাজাগ্রত জাতীয় সংসদ।

সংবাদপত্রের উপকারিতা

আধুনিক সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা কেবল সংবাদই পরিবেশন করি না। দেশ-বিদেশের রাজনীতি ও সামাজিক-অর্থনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংবাদ পরিবেশন ছাড়াও এতে থাকে বিচিত্র তথ্য প্রতিবেদন। পৃথিবীর পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক আলোচনা, গবেষণা, প্রতিক্রিয়া প্রভৃতি জানতে পারি। সংবাদপত্র পাঠে সাহিত্যের উন্নতি, শিল্পের অগ্রগতি, বাজার দর, যুদ্ধ বিগ্রহ, খেলাধুলা, আবহাওয়ার খবর ইত্যাদি জানা যায়। এতে নানা ধরনের বিজ্ঞপ্তি ও বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। ছাত্র, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, ক্রীড়ামোদী ব্যবসায়ী সবাই সংবাদপত্র পাঠে উপকৃত হয়। শিশু-কিশাের ও ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য থাকে আলাদা বিভাগ, আলাদা পাতা। আসলে সংবাদপত্র এখন জনজীবনের প্রায় সব দিককেই তার আওতায় নিয়ে আসতে চাইছে। সংবাদপত্র বর্তমানে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় পরিপূরক ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট পাঠক্রমভিত্তিক এবং পরীক্ষা-নির্ভর সার্টিফিকেট প্রদানের শিক্ষায় শিক্ষার্থীর জ্ঞানের ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়ছে। সংবাদপত্র এখন যেহেতু জ্ঞান-বিজ্ঞানের সর্বক্ষেত্রকেই তার আওতায় এনেছে তার ফলে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত সংবাদপত্র পাঠে বহুমুখী জ্ঞান অর্জনের সুযােগ পায়। এতে তাদের জ্ঞানের ক্ষেত্র যেমন সম্প্রসারিত ও বিকশিত হয় তেমনি বিষয়জ্ঞানের পাশাপাশি ভাষাজ্ঞানও বাড়ে। সংবাদপত্রের কল্যাণে বিশাল এ পৃথিবী ক্রমেই ছােট হয়ে আসছে। এছাড়া রাষ্ট্রের বিধিবিধান প্রচারের ক্ষেত্রে ও জাতি গঠনের কাজে সংবাদপত্রের অবদান অপরিসীম।

সংবাদপত্রের দুর্বলতা

সংবাদপত্রের গুরুত্নের পাশাপাশি দুর্বলতাও রয়েছে। সংবাদপত্র নির্দিষ্ট ব্যক্তি, সরকার, গােষ্ঠী বা দলের মালিকানায় প্রকাশিত হয়। সুতরাং মালিকের প্রভাব এখানে প্রাধান্য পায়। এরূপ অবস্থা অনেক সময় ব্যক্তিগত স্বার্থ বৃদ্ধি ও কলহের রূপ ধারণ করে এবং এর ফলে দেশবাসীকে ভুল পথে পদক্ষেপ নেয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

সংবাদপত্রের স্বাধীনতা

Anthony Maskurenhus বলেন,

The freedom of the newspaper could preserve democracy, constitutionalism & good governance.

সংবাদপত্র একটি সমাজের সামগ্রিক পরিচয়ের প্রাত্যহিক দলিল। তাই সংবাদপত্রকে অবশ্যই স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হতে হবে। সংবাদপত্রকে হতে হবে জনসাধারণের স্বার্থ রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী। জনগণের স্বার্থে সংবাদপত্র যেমন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে, তেমনি ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্যেও করবে সংগ্রাম। একে নির্ভীক ও অকপট হতে হবে। ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জাতির বৃহত্তর কল্যাণ কামনায় আত্মনিয়ােগ করতে হবে। আমাদের দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা আশানুরুপ নয়। ক্ষমতাসীন প্রতিটি সরকারই স্বীয় দলের স্বার্থে সংবাদপত্রের উপর আধিপত্য বিস্তারের অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে বারবার সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে ক্ষুন্ন করেছে।

জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা

গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় প্রকৃত ক্ষমতা থাকে জনগণের হাতে। ফলে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ও ভূমিকা জাতীয় অগ্রগতির পক্ষে কতটা সহায়ক এবং কতটা জনস্বার্থের পরিপূরক তা নিয়ে জনগণের মধ্যে অনেক সময় দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। ক্ষমতাসীনরা সবসময় তাদের পদক্ষেপকে জোর গলায় ইতিবাচক বলে প্রচার করে এবং বিরােধীরা তাকে একেবারেই প্রত্যাখ্যান করেন। কিন্তু সংবাদপত্র উভয় পক্ষের মতামত, যুক্তি ও তথ্যনির্ভর আলােচনা প্রকাশ করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে নিজেদের অভিমত গঠন করতে পারে। সংবাদপত্রের পাতায় জ্ঞানীগুণী বিশেষজ্ঞদের লেখা প্রবন্ধ ও অভিমত, সম্পাদকীয়, চিঠিপত্র, কলাম লেখকদের তর্কবিতর্ক, যুক্তিপ্রদান ও যুক্তিখণ্ডন ইত্যাদি জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আমাদের দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন, দুর্নীতি দমন, সন্ত্রাস দমন, সড়ক দুর্ঘটনা, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ও প্রতিকার, সেনাবাহিনীর ভূমিকা ইত্যাদি বিষয়ে জনমত গঠনে সংবাদপত্র অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। অবশ্য কখনাে কখনাে কোনাে কোনাে সংবাদপত্র বিশেষ গােষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থে জনমতকে তাদের পক্ষে টানার জন্য সঙ্কীর্ণ উদ্দেশ্যপূর্ণ নানারকম প্রচারণায় লিপ্ত হয়। কিন্তু পাঠকসমাজ সচেতন হলে শেষ পর্যন্ত এসব সংবাদপত্রের অপপ্রচারের চেষ্টা ও হীন উদ্দেশ্য সফল হতে পারে না।

উপসংহার

বর্তমান সভ্য জগৎ সংবাদপত্রের অস্তিত্বহীনতার কথা কল্পনা করতে পারে না। প্রকৃত জনকল্যাণই সংবাদপত্রের একমাত্র কার্য ও লক্ষ্য। সেজন্য সংবাদপত্রের কাজে যারা নিয়ােজিত তাদের নিরপেক্ষ ও সত্যনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করা উচিত। নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশিত হলে জনগণের মঙ্গল সাধন হবে, এতে কোনাে সন্দেহ নেই। সংবাদপত্র এবং সংবাদপত্রের কর্মকর্তারা যত দলনিরপেক্ষ, নির্ভীক শিক্ষিত ও সভ্য হবেন, ততই দেশের মঙ্গল। এ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

2 Comments

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button