
দোয়া ইউনুস সম্পর্কে জানার পূর্বে এর ইতিহাস সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন। কারন, বিষয়বস্তুটি জানা থাকলে তা আমাদের কাছে অধিক গুরুত্ব পাবে।
দোয়া ইউনুস এর ইতিহাস
আমরা সবাই নবী ইউনুস (আ) এর কথা জানি। তিনি আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। প্রত্যেক নবীদের কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছিল। ইউনুস (আ) যখন আল্লাহর নির্দেশের পূর্বে তিনি তাঁর গোত্র থেকে হিজরত এর জন্য নিনেভা ত্যাগ করেন, তখন আল্লাহ নবীর উপর নারাজ হন। আর পরবর্তীতে তাকে মাছের পেটে যেতে হয়। কঠিন বিপদে নবী তখন আল্লাহর নিকট তার অপরাধ স্বীকার করে বিপদ মুক্তির জন্য দোয়া করলেন। দোয়াটি “দোয়া ইউনুস” নামে পরিচিত।
দোয়া ইউনুস বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ
দোয়া ইউনুস পবিত্র কুরআন শরীফের ২১ তম সূরা আল-আম্বিয়ার ৮৭ নং আয়াত। দোয়াটি হলঃ
দোয়া ইউনুস এর ফজিলত
আমি নবী ইউনুসের প্রার্থনা মঞ্জুর করেছি। তাকে দু:খ থেকে মুক্তি দিয়েছি। অনুরূপভাবে যে মুমিনরা এ দোয়া পড়বে আমি তাদেরও বিভিন্ন বালা-মুসিবত থেকে মুক্তি দিব।
হাদিসের অলোকে দোয়া ইউনুস এর ফজিলত তুলে ধরা হল-
২। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি হজরত ইউনুস (আ.) এর ভাষায় দোয়া করবে, সে যে সমস্যায়ই থাকুক আল্লাহতায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন। -তিরমিজি: ৩৫০৫
৩। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেছেন, আমার ভাই ইউনুসের দোয়াটি খুব সুন্দর। এর প্রথম অংশে আছে কালিমায়ে তায়্যিবা। মাঝের অংশে আছে তাসবিহ। আর শেষের অংশে আছে অপরাধের স্বীকারোক্তি। যে কোনো চিন্তিত, দু:খিত, বিপদগ্রস্থ ব্যক্তি প্রতি দিন এ দোয়া তিন বার পাঠ করবে আল্লাহতায়ালা তার ডাকে সাড়া দিবেন। -কানজুল উম্মাল: ৩৪২৮
৪। হযরত সা’দ ইবনে আবি ওক্কাস (রা.) রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মরফু সূত্রে বর্ণনা করেন যে, মাছের পেটে থাকা অবস্থায় হজরত ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া ছিল, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ্ জালিমীন। যে কোনো প্রয়োজনে কোনো মুসলমান যদি এই দোয়া পড়ে তার প্রতিপালককে ডাকে তাহলে অব্যশই আল্লাহ তায়ালা তার ডাকে সাড়া দেবেন। [তিরমিজি-৩৫০৫, সুনানে কাবুরা-১০৪৯২, মুসনাদে আহমদ-১৪২ ও রূহুল মাআনি-৮/১০৯]
৫। হযরত ইবনে আবি হাতেম রহ. নকল করেন যে কোনো ব্যক্তি দোয়ায়ে ইউনুস পড়ে দোয়া করলে সে দোয়া কবূল করা হয়। কারণ এ আয়াতের শেষে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, وكذلك ننجى المؤمنين অর্থাৎ এভাবেই আমি মুমিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।
৬। ইবনে জারির তাবারি রহ. একটি মরফু হাদিসে নকল করেন, আল্লাহর একটি নাম আছে, যে নামটি নিয়ে কেউ দোয়া করলে তা কবূল করা হয়, এবং এই নামের উছিলায় কিছু চাওয়া হলে তা দেয়া হয়, তা হলো দোয়ায়ে ইউনুস।
৭। হযরত সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.) বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রসূলাল্লাহ! এই দোয়াটি কি হযরত ইউনুস (আ) বৈশিষ্ঠ্য নাকি সব মুসলমানের জন্যই? তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি কি পড়নি, ونجينه من الغم وكذلك ننجى المؤمنين (অর্থাৎ আমি তাকে চিন্তা থেকে মুক্তি দিয়েছি আর আমি এভাবেই মুমিনদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।) অতএব যে কোনো ব্যক্তিই এইভাবে দোয়া করবে আল্লাহ তায়ালা সে দোয়া কবূল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
৮। হযরত ইবনে আবি হাতিম রহ. হযরত কাসির ইবেন সা’দ থেকে নকল করেন, তিনি বলেন, আমি হাসান বসরি রহ. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আল্লাহর ইসমে আযম কোনটি, যে নামের দ্বারা দোয়া করলে দোয়া কবূল হয় এবং কোনো কিছু চাইলে তা দেয়া হয়? উত্তরে তিনি বললেন, ভাতুষপুত্র! তুমি কি আল্লাহর এই বানীটি পড়নি? অতপর তিনি এই আয়াত দুটি তেলাওয়াত করে বললেন, এটাই হলো সে ইসমে আযম, যার দ্বারা দোয়া করলে দোয়া কবূল হয় এবং কোনো কিছু চাওয়া হলে তা দেয়া হয়। [তাফসিরে ইবনে কাসির:৩/৩৯৫-৩৯৬]
৯। এক হাদিসে এসেছে, কোনো মুসলমান যদি অসুস্থ অবস্থায় এ আয়াতটি চল্লিশ বার পড়ে তাহলে ওই অসুখে সে মারা গেলে চল্লিশজন শহিদের সওয়াব পাবে। আর সুস্থ হয়ে গেলে তার যাবতীয় গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে। [হিসনে হাসিন-২৪১]
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।

inna er jaygay inni hobe maybe ektu quran sharif deikha songshodhon korun