ভাবসম্প্রসারণ

ভাবসম্প্রসারণঃ দুঃখ যে পাপের ফল তাহা কে বলিল, পুণ্যেরও ফল হইতে পারে

Rate this post

দুঃখ যে পাপের ফল তাহা কে বলিল, পুণ্যেরও ফল হইতে পারে। কত ধর্মাত্মা আজীবন দুঃখে কাটাইয়া গিয়াছেন।

ভাবসম্প্রসারণঃ দুঃখ যে পাপের ফল তাহা কে বলিল, পুণ্যেরও ফল হইতে পারে


ভাব-সম্প্রসারণঃ অনেকেরই ধারণা পাপের কারণেই দুঃখ পেতে হয়, দুঃখ পাপেরই ফসল। কিন্তু এ ধারণা সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়। দুঃখ থেকেই সুখের জন্ম। দুঃখ না থাকলে এ পৃথিবীর সবকিছুই মূল্যহীন। দুঃখের দহনেই মানুষ প্রকৃত মানুষে পরিণত হয়। মহামনীষিগণের জীবনে এর নিদর্শন সুস্পষ্ট।

দুঃখের পরে সুখ আসে, দুঃখ নয়- এটাই জগতের চিরায়ত নিয়ম। দুঃখ ছাড়া প্রকৃত সুখ অর্জনের বিকল্প কোন পথ নেই। দুঃখ ও সংগ্রামের মধ্যে মানুষ যখন সামনের দিকে এগিয়ে যায়, দুঃখকে জয় করে অগ্রসর হয় তার মধ্যে থাকে আনন্দ। দুঃখ যেন মানবজীবনের এক কঠিন পরীক্ষা। দুঃখের স্পর্শ মানুষকে দুঃখ জয়ী হওয়ার শিক্ষা দেয়, সাহসী হওয়ার ভরসা দেয়, জীবনযুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার দীক্ষা পায়। দুঃখই মানুষের সকল দৈন্য দূর করে তাকে খাটি মানুষে পরিণত করে। মনীষীগণ দুঃখকে পরশপাথরের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পরশ পাথরের ছোঁয়ায় লােহা যেমন সােনায় পরিণত হয়, তেমনি দুঃখরূপ পরশপাথরের ছোঁয়ায় মানুষের সব গ্লানি দূর হয়ে যায়। মানুষ লাভ করে জীবনের সার্থকতা। জগতের সব সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে সীমাহীন দুঃখের মর্মান্তিক ইতিহাস। দুঃখবােধ থেকেই প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের উন্মেষ ঘটে। দুঃখের দারুণ দহন শেষে যে সুখ আবির্ভূত হয়, তা অনাবিল ও অতুলনীয়। দুঃখের আগুনই মানুষের মনুষ্যত্ব ও বিবেককে খাটি সােনায় পরিণত করে। পৃথিবীর সব মূল্যবান সম্পদ দুঃখ-কষ্টের বিনিময়েই অর্জিত হয়েছে। বাংলা প্রবাদে আছে ‘কষ্ট ছাড়া কেষ্ট মেলে না’। দুঃখ, কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও অধ্যবসায় ছাড়া জীবনে প্রার্থিত স্বর্ণশিখরে আরােহণ অসম্ভব। প্রসঙ্গত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উক্তিটি প্রণিধানযােগ্য- “দুঃখই জগতে একমাত্র সকল পদার্থের মূল। মাতৃস্নেহের মূল্য দুঃখে, পাতিব্রত্যের মূল্য দুঃখে, শৌর্য-বীর্যের মূল্য দুঃখে, পুণ্যের মূল্য দুঃখে”। বস্তুত মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ পাশাপাশি বিরাজ করে। অনেকে দুঃখে ভেঙে পড়ে। দুঃখবােধের যন্ত্রণায় কারও জীবন ব্যর্থ হয়ে যায়। কিন্তু সাহসী মানুষ দুঃখকে মােকাবিলা করে। তারা দুঃখকে দুঃখই মনে করে না। বরং দুঃখ দেখে সুখের সাধনায় নিয়ােজিত হয়। বলিষ্ঠ প্রত্যয়ে দুঃখকে জয় করে সুখকে ছিনিয়ে আনে। বস্তুত দুঃখ মােকাবিলা করার শক্তি দিয়েই মানুষ আপন শক্তির পরিচয় দিতে পারে। বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিবর্গের জীবনী পর্যালােচনা করলে এ-সত্যের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়। রুটির দোকানের নজরুল দুঃখ-দারিদ্র্যের এক বাস্তব উদাহরণ। জীবন চলার প্রতিটি পর্যায়ে দুঃখ-দারিদ্র্য তাকে কুরে কুরে খেয়েছে। বিনিময়ে তাকে দিয়েছে প্রতিষ্ঠা। তাই তার মুখে ফুটে উঠেছে- “হে দারিদ্র্য! তুমি মােরে করেছ মহান । তুমি মােরে দানিয়াছ খ্রীষ্টের সম্মান”। পৃথিবীর বহু মনীষী দুঃখকে বরণ করে নিয়েছিলেন বলেই আজও তারা স্মরণীয়-বরণীয় হয়ে আছেন। মহানবী হযরত মুহম্মদ (স.), যিশু খ্রিস্ট, গৌতম বুদ্ধ প্রমুখ মহান ধর্মবেত্তা জীবনের প্রতিটি পদে দুঃখকে জয় করে সমগ্র মানব জাতির মঙ্গলের জন্যে কাজ করে গেছেন। দুঃখ মানুষের সকল জড়তা ও দৈন্য দূর করে তাকে করে সুন্দর। দুঃখের ভেতর দিয়েই মানুষ জীবন-সাধনায় সিদ্ধি লাভ করে। সুতরাং জাগতিক সকল প্রাপ্তির পূর্বশর্ত দুঃখের পরশ।

বস্তুত লােভী মানুষেরাই সুখের কাঙাল। তারা দুঃখকে ভয় পায়। কিন্তু মহৎ ব্যক্তিত্বের কাছে সুখ-দুঃখ বাস্তব জীবনসত্য হিসেবেই মান্য। এ জন্যেই অনেক মহাপুরুষ নিজেকে পরিপূর্ণ মহৎ মানুষ হিসেবে গড়ে তােলার সাধনায় আজীবন দুঃখের আগুনে পুড়তে থাকেন।

Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button