ভাবসম্প্রসারণঃ জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাক্ষা দুয়েরই মাত্রা বাড়িয়া গেলে বিনাশের কারণ ঘটে

ভাব-সম্প্রসারণঃ জাতীয় জীবনে সন্তোষ এবং আকাঙক্ষা দুয়ের প্রয়ােজন অনস্বীকার্য। জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা থেকেই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং তা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে জাতি সন্তুষ্টি লাভ করে। কিন্তু এই সন্তুষ্টি যদি নতুন নতুন পরিকল্পনার ক্ষেত্রে সহায়ক না হয়, তাহলে জাতি হয়ে পড়ে স্থবির ও নিশ্চল। আবার জাতির আকাঙ্ক্ষা যদি সম্পদ ও সামর্থ্য-নির্ভর না হয়, তবে তা বাস্তবায়নের কোনাে সম্ভাবনা থাকে না বলে জাতীয় জীবনে নেমে আশে ব্যর্থতা ও হতাশা।
অধিক প্রাপ্তির ক্ষমতা ও সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও যখন কোনাে জাতি নিরাসক্তভাবে নিজের অবস্থাতেই পরিতৃপ্ত তখন বুঝতে হবে যে, জাতীয় জীবনের ওই উন্নত অবস্থার মূলে রয়েছে সন্তোষ। কিন্তু এ অবস্থায় সন্তুষ্ট থাকলে এবং জাতীয় জীবনে অভাববােধ না থাকলে কর্মোদ্যম নষ্ট হয়। নব নব অভাববােধই সৃষ্টির জননী। তাই, প্রবাদ রয়েছে, ‘প্রয়ােজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক’। প্রয়ােজনবােধের তাগিদ জাতিকে আত্মশক্তিতে বলীয়ান করে তােলে। সন্তোষের ফলে যেমন স্থবিরতা আসে তেমনি অত্যাকাঙ্ক্ষা বা উচ্চাকাঙ্ক্ষাতেও জাতি দিশেহারা হয়ে পড়ে। আকাঙ্ক্ষার পর আকাঙ্ক্ষা বাড়তে থাকলে আগুনে ঘৃতাহুতি দানের মতাে হয়। ফলে জাতীয় জীবনে ধ্বংসের তাণ্ডবলীলা শুরু হয়। আকাঙ্ক্ষার আগুনও তেমনি একটি পূর্ণ হলে নতুন নতুন আকাঙ্ক্ষা শিখা বিস্তার করে দাবানল হয়ে জ্বলে ওঠে। উচ্চাকাঙ্ক্ষার পরিণতি দুরাকাঙ্ক্ষা। তাই সন্তোষের আতিশয্যের ন্যায় অত্যাকাঙ্ক্ষাও পরিহার করা বাঞ্ছনীয়। তাই জাতীয় জীবনে সাধনার পথে সহজেই সন্তোষ লাভ অথবা দুরুহ আকাঙ্ক্ষা রক্ষা- উভয়ই ক্ষতিকর। এ প্রসঙ্গে ইংরেজিতে একটি প্রবাদ আছে, ‘Excess of anything is bad’– এ কথা সন্তুষ্টি ও আকাঙ্ক্ষার ক্ষেত্রেও প্রযােজ্য।
অতিরিক্ত সন্তুষ্টি ও আকাঙ্ক্ষা কাজের গতিকে যেমন মন্থর করে দেয়, তেমনি জাতীয় অগ্রগতির ধারাকে ভবিষ্যৎ সংকটের দিকে ঠেলে দেয়। বস্তুত সুপরিমিত সন্তোষ ও আকাঙ্ক্ষা জাতীয় অগ্রগতির পরিপূরক ও সহায়ক।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
