বাংলা রচনা

রচনা : নৈতিক মূল্যবােধ ও অবক্ষয় | SSC HSC JSC PSC

4.8/5 - (21 votes)

নৈতিক মূল্যবােধ ও অবক্ষয় অথবা, নৈতিক মূল্যবােধ অথবা, যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ ও প্রতিকার অথবা, তরুনসমাজের বিপদ্গামিতার কারন। 

বিষয়ঃ রচনা
শ্রেণিঃ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০ ১১ ১২ SSC HSC JSC PSC


নৈতিক মূল্যবােধ ও অবক্ষয় 

নৈতিক মূল্যবােধ ও অবক্ষয়



ভূমিকা

যুগে যুগে যৌবন-দূত তরুণের দলই জরাগ্রস্ত পৃথিবীর বুকে এনেছে নবজীবনের ঢল। তিমির রাত্রির অবসানে রক্ত-রাঙা প্রভাতের বন্দনা করেছে। তরুণদের কণ্ঠেই গীত হয় নতুন দিনের গান। তাদের চোখেই থাকে নতুন পৃথিবী গড়ার স্বপ্ন। যৌবনের উদ্দীপনা, সাহসিকতা, দুর্বার গতি, নতুন জীবন রচনার স্বপ্ন এবং কল্যাণব্রত— এসব বৈশিষ্ট্যের জন্যে কবি সুকান্ত জাতীয় জীবনে তারুণ্য ও যৌবনশক্তিকে আহ্বান করেছেন – 

এ বয়স জেনাে ভীরু, কাপুরুষ নয় / পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনাে সংশয়/ এ দেশের বুকে আঠারাে আসুক নেমে ।

কিন্তু হায়! কবির এ প্রার্থনা আজ অরণ্যে রােদন, যুবসমাজ আজ বিপথগামী হয়ে দেশ ও জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। আজ জাতির সামনে বিরাট প্রশ্ন- যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ কী? দু-এক কথার মধ্য দিয়ে এর উত্তর দেওয়া আদৌ সম্ভব নয়। কেননা যুবসমাজের এ অবক্ষয় একদিনে সৃষ্টি হয় নি এবং এর কারণও বহুবিধ। তবে সবচেয়ে বড় কথা যেটা, তা হল— যে কোনাে উপায়েই হােক না কেন, এ অবক্ষয় রােধ করতে না পারলে সমাজজীবনে, এমনকী গােটা জাতি ভয়াবহ সংকটের মুখােমুখি হবে। Youth & Development গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘The decadence of the south is due to the environmental reflection, bad effects of science & technology, state’s apathy & above all, family’s indifference.’ 

নৈতিক অবক্ষয় কী

অবক্ষয় শব্দের আভিধানিক অর্থ ‘ক্ষয়প্রাপ্তি’ অর্থাৎ জীবনকে সুন্দর এবং কল্যাণের প্রতীক হিসেবে গড়ে তােলার জন্যে, মানবজীবনে যে সমস্ত গুণ থাকা প্রয়ােজন, তা যখন লােপ পায় বা নষ্ট হয়ে যায় তখনই জীবনে অবক্ষয় আসে। 

যুবসমাজের অবক্ষয়ের কারণ

নানা কারণে যুবসমাজ অবক্ষয়ের শিকার হতে পারে। যেমনঃ

নৈতিক মূল্যবােধ ও অবক্ষয়

প্রথমেই দৃষ্টি দেওয়া যাক নৈতিক মূল্যবোধ বলতে কী বুঝি? নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের জীবনে অনুসরণযােগ্য এমন কিছু আচরণবিধি, যা মানুষের জীবনব্যবস্থা ও জীবনপদ্ধতিকে করে তােলে সুন্দর, নির্মল ও রুচিস্নিগ্ধ। এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে সততা, কর্তব্যনিষ্ঠা, শ্রম, উত্তম চরিত্র, শিষ্টাচার, সৌজন্যবােধ, নিয়মানুবর্তিতা, অধ্যবসায়, সর্বোপরি সত্য ও ন্যায়ের পথে পরিচালিত হওয়া ইত্যাদি বিশেষ কতকগুলাে গুণ। নৈতিক মূল্যবােধ মানবচরিত্রকে করে তােলে সুষমামণ্ডিত। তাই মানুষের আত্মিক সামাজিক উৎকর্ষের জন্যে এবং জাতীয় জীবনে উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্যে সমাজে নৈতিক মূল্যবােধের লালন, চর্চা ও বিকাশের বিশেষ গুরুত্ব আছে। এই কারণে শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্যই হচ্ছে মানবচিত্তে নৈতিক মূল্যবােধের উৎসারণ এবং তার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবােধসম্পন্ন মানুষ গড়ে তােলা। 

বর্তমানে আমাদের সমাজজীবনে চরম অবক্ষয়ের চিত্র জীবন্ত হয়ে আছে। এ অবক্ষয় যুবসমাজকেও প্রভাবিত করছে, দোলা দিচ্ছে তাদের মন-মানসিকতাকে। আমাদের যুবসমাজের সামনে আজ কোনাে আদর্শ নেই। নেই অনুপ্রাণিত করার মতন কোনাে মহৎ-প্রাণ মানুষ। ঘরে-বাইরে সর্বত্রই আজ মনুষ্যত্বের দীনতার চিত্র। বর্তমান সমাজব্যবস্থায় বড়দের কাছ থেকে ভালাে কিছু শেখার আশা করা যায় না। বড়রা শিক্ষা বলতে বােঝেন পরীক্ষা ও ডিগ্রি এবং জীবনে উন্নতি বলতে বােঝেন টাকা ও প্রতিপত্তি। ফলে শিক্ষার মধ্যে তরুণ সমাজ খুঁজে পায় না মহত্তর কোনাে জীবন-বােধ। যুব সমাজকে নতুন চেতনায় উদ্দীপ্ত করার মতাে কোনাে পরিকল্পনা নেই, ফলে তারা প্রতিনিয়ত অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসরমান।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়ই আমাদের যুবসমাজের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাও যুবসমাজের অবক্ষয়ের আরও একটি কারণ। একদিকে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-কলহ, অপরদিকে অর্থনৈতিক দুর্দশা, ফলে শিক্ষাজগতে নৈরাজ্য, সমাজসেবার নামে নিজের স্বার্থ হাসিল এবং স্বেচ্ছাচারিতা যুবসমাজকে বিপথগামী করছে। তরুণসমাজ অবাক বিস্ময়ে প্রত্যক্ষ করে, সমাজে সমাজবিরােধীর যে সম্মান, যে প্রতিপত্তি, সেখানে একজন জ্ঞানী, সৎ মানুষের মূল্য তুচ্ছ। সততা সেখানে লাঞ্ছিত, অসহায়। বিবেক সেখানে বিবর্জিত। জ্ঞানী-গুণীরাও তাদের খাতির করে। রাজনৈতিক নেতাদের তারা ডান হাত। জঘন্য, নিষ্ঠুর কাজকর্ম করেও তারা আইনের চোখে নিরাপদ। প্রশাসন প্রয়ােজনে ওদের ব্যবহার করে। কী তাদের মূলধন? তারা অনায়াসে মানুষ খুন করে, ডাকাতি করে, জনজীবনে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এই মূলধন নিয়েই ওরা সমাজের বিশিষ্ট মানুষ। আজ তাই মানবিক ও ধর্মীয় মূল্যবােধও গৌণ হয়ে উঠেছে।

বস্তুত সমাজের সর্বস্তরে আজ যে মূল্যবােধের অভাব, তার মারাত্মক প্রতিক্রিয়া যুবকদের মাঝে প্রতিনিয়ত বিস্তৃতি ঘটছে। গােটা প্রশাসনকে দুর্নীতিবাজদের অবাধ বিচরণ ক্ষেত্র বানিয়ে একশ্রেণীর রাজনীতিক-আমলা-অসাধু ব্যবসায়ী এবং দেশের আইন প্রয়ােগকারী সংস্থাসহ বিভিন্ন সংস্থার দুর্নীতিবাজেরা বিদেশি অর্থ, সাধারণের বাস্তুভিটা, খাল-বিল-নদী-নালা-পাহাড়, বন-বাদাড় দখল করে বিলাস-ব্যাসনে মত্ত হয়েছে। ওইদিকে সেদিনের টগবগে যুবকটি শিক্ষা শেষে চাকরি না পেয়ে ধুকে ধুকে মরছে। ক্লিষ্ট, ক্লান্ত, ধ্বত জীবনকে আঁকড়ে ধরে কোনােমতে সে বেঁচে আছে। জীবনযুদ্ধে পরাজিত দিশেহারা এই যুবকটি যদি পথ খুঁজতে খুঁজতে বিপথগামী হয়ে পড়ে কিংবা অজ্ঞাতে কোনাে নৈতিক অবক্ষয়ের পথে পা বাড়ায়, তবে সে দোষ কার? কে নেবে তার ভার? আজ বেকারের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে হয়েছে চার কোটি পৌনে চার কোটি। বেকারত্বের অভিশাপ যে কতটা কষ্টদায়ক, তা ভুক্তভােগীরাই জানে। লেখাপড়া শেষ করেও যখন চাকরি মেলে না, তখন হতাশা আর অর্থনৈতিক সংকটের মুখে অসহায় এই যুবকটির করণীয় কী? এভাবে তরুণসমাজকে বিপথগামী করার জন্যে আরও নানা উপকরণ সদা-সক্রিয়। নিচে এর বিশেষ কয়েকটি দিক উল্লেখ করা হল

ইতিহাস বিকৃতিকরণ

কত নির্মম অত্যাচার-অবিচারের বাঁকে বাঁকে সালাম-বরকত, মনুমিয়া, জোহা-জহুর-শম্ভু, আনােয়ারা, দীপালী, বসুনিয়ারা বুকের রক্ত ঝরিয়ে দিয়ে গেল, একাত্তরে দেশে রক্তের বান ডেকে গেল কিন্তু হায় তা সবই বুঝি আজ নব্য লুটেরা ও সন্ত্রাসীদের হিংস্র থাবায় বিস্মৃতির অতলান্তে হারিয়ে যাবার জোগাড়। যে রক্তের বানে ইতিহাস হল লাল— সে ইতিহাসকে বিকৃতি, কাটা-হেঁড়া আর গোঁজামিলে গোঁজামিলে ভরে তােলা হলাে। আমরা ইতিহাসের দিকে তাকানাে ভুলে গেলাম। অতীতের গৌরব-মহিমার কথা ভুলিয়ে দিতে ওই ভুইফোড় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ রাজনীতিক আমলা-ব্যবসায়ীরা সব শিয়ালের একই রা গােছের ভূমিকা পালন করে চলেছে। আর এজন্য আমাদের তরুণ প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করাটাকেই তারা অগ্রাধিকার বিবেচনা করে। ফলে শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিকড়হীন সস্তা-স্থূল বিনােদনের রমরমা আজ। 

অবক্ষয়ে চলচ্চিত্রের প্রভাব

সিনেমার চটুল কাহিনিতে, নাচে-গানে, চলনে-বলনে, পােশাকে-আশাকে মার্জিত রুচির অভাব। সিনেমার উদ্ভট কাহিনিকে তারা অনেক সময় বাস্তব বলে ভুল করে। সেই অবাস্তব জীবন-মরীচিকার পেছনে ছুটে ছুটে তারা ক্লান্ত হয়। নিঃশেষ হয় তাদের প্রাণশক্তি। পােশাক-আশাকের অন্ধ অনুকরণে প্রকট হয় হৃদয়ের অন্তঃসারশূন্যতা। বাস্তবের রূঢ় কঠিন আঘাতে তাদের সেই স্বপ্নের পৃথিবী টুকরাে টুকরাে হয়ে যায়। দুঃসহ বেদনা আর সীমাহীন দীর্ঘশ্বাসে ভরে ওঠে সেই জীবন। অধিকাংশ ছায়াছবিতেই খুন-জখম, রাহাজানি-ডাকাতি, শালীনতা-বর্জিত নাচগান, নায়ক-নায়িকার উদ্দাম প্রণয়চিত্র দেখানাে হয় যা তরুণ মনে দীর্ঘ রেখাপাত করে। 

টেলিভিশনের প্রভাব

টেলিভিশন আধুনিক বিজ্ঞানের একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার। বর্তমানে এ টেলিভিশনের সঙ্গে ডিশ অ্যান্টেনার সংযােগ হয়ে আমাদের ঘরে এসে গেছে বিজাতীয় সংস্কৃতি যা আমাদের সমাজব্যবস্থার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। ফলে এসব সস্তা-বিনােদনে আকৃষ্ট হয়ে আমাদের যুবসমাজ অবক্ষয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। 

পত্র-পত্রিকার প্রভাব

সংবাদপত্র একটি শক্তিশালী গণযােগাযােগ মাধ্যম। কিন্তু আমাদের দেশে এমন কিছু পত্র-পত্রিকা আছে যা আমাদের সুস্থ জ্ঞানকে অসুস্থ করে তােলে। উদ্ভট নগ্নছবি ও অশ্লীল আজগুবি কল্প-কাহিনী এমনভাবে পরিবেশিত হয় যা বিদেশি অপসংস্কৃতিকেও হার মানায়। এসব নগ্ন ছবি দেখে এবং কুরুচিপূর্ণ কাহিনী পাঠ করে যুব সম্প্রদায় এগিয়ে যায় ধ্বংসাত্মক অবক্ষয়ের দিকে। 

বেকারত্বের প্রভাব

বেকারত্ব একটি মারাত্মক অভিশাপ। লেখাপড়া শেষ করেও যারা চাকরি পায় না, তারা সবাই হতাশায় ভােগে এবং অর্থনৈতিক সংকটের মুখােমুখি হয়। দীর্ঘ সময় এ অবস্থা চলতে থাকলে তারা নিগৃহীত হয় এবং ক্রমে ক্রমে মনের ভেতরে ক্ষোভ জন্ম নেয়। এ ক্ষোভ থেকেই তারা ধাবিত হয় অন্যায়ের দিকে। লিপ্ত হয় খুন, ডাকাতি, ছিনতাই ইত্যাদি জঘন্যতম কর্মে। ফলে যুবসমাজের চরিত্রের অবক্ষয় ঘটে। 

শিক্ষাঙ্গনের প্রভাব

এক সময় শিক্ষাঙ্গন ছিল সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। কিন্তু আজকাল আর সেরকমটি নেই। এখন প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষাঙ্গনে মারামারি, খুনাখুনি ও বােমাবাজি হয়। এর প্রধান কারণ রাজনীতি। ভর্তিসংকট, পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া, ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব ইত্যাদি কারণেও ছাত্রদের মধ্যে হতাশা ও বিপর্যয় দেখা দেয়। 

নৈতিক মূল্যবোধের প্রয়ােজনীয়তা

নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধ দ্বারা সমাজকে সুন্দর করে তােলা যায়। সত্যকে সত্য বলা, অন্যায়কে অন্যায় বলা এবং ন্যায়-অন্যায় ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্য জেনে ও বুঝে চলা নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধসম্পন্ন মানুষের দ্বারাই সম্ভব। নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধসম্পন্ন মানুষ দেশ ও জাতির গর্ব। সমাজে এই ধরনের মানুষের সংখ্যা যত বাড়বে সেই সমাজ ও জাতির গৌরব ততই বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমাদের প্রত্যেকেরই নৈতিকতার চর্চা করা উচিত। নৈতিক মূল্যবােধের অভাব হলে সমাজে অশান্তি দেখা দেয়। সামাজিক অসাম্য, অবিচার, সীমাহীন দুর্নীতি ইত্যাদি বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সমাজজীবনেকে বিপর্যস্ত করে তােলে, মানবকল্যাণ ব্যাহত হয়। যুদ্ধবিগ্রহ, হত্যা, লুণ্ঠন ও সন্ত্রাস বেড়ে যায়। নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধের অভাব আছে বলেই বর্তমানে বিশ্বজুড়ে অশান্তি ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় প্রত্যেকের উচিত নৈতিক মূল্যবােধের সঠিক চর্চা করা। 

ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্ৰীয় জীবনে মূল্যবােধের গুরুত্ব

ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোেধের গুরুত্ব অত্যধিক। ব্যক্তিগত জীবনে যদি কোনাে মানুষ নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ মেনে না চলে তাহলে তার জীবনে বিভিন্ন ধরনের হতাশা ও সমস্যা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধের অভাবে সামাজিক জীবনে নানা বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা দেখা দেয়। অথচ নৈতিকতা ও সামাজিক মূল্যবােধের চর্চা থাকলে সমাজে শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে, যার প্রভাব প্রত্যেকের ওপর পড়ে। তাই সমাজের সকল মানুষের উচিত নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধের ভিত্তিতে জীবন পরিচালনা করা। অর্থাৎ ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্রীয় তথা জীবনের সর্বত্র নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবােধের ওপর গুরুত্ব দেওয়া।

নৈতিক মূল্যবােধহীনতার পরিণাম

নৈতিক মূল্যবােধহীনতার পরিণাম ভয়াবহ। বর্তমান বিশ্বে যুদ্ধবিগ্রহ, হত্যা, সন্ত্রাস, খুনখারাবি, ছিনতাই, ঘুস, দুর্নীতি বেড়েই চলেছে। পত্রিকার পাতা খুললেই দেখা যায় সমাজ, রাষ্ট্র, বিশ্বের অসুস্থতা আর মানবিক হাহাকারের খবর। এই অবস্থার নিরসন না হলে মানবসভ্যতা একদিন সত্যি সত্যি ধ্বংস হয়ে যাবে। সারাবিশ্ব পরিণত হবে ভয়ানক এক স্থানে। 

অবক্ষয় প্রতিকারের উপায়

যুবকদের সুসংগঠিত করে সত্য এবং ন্যায়ের পথে পরিচালিত করতে হলে তাদের মধ্যে নীতিজ্ঞান ও সচেতনতা জাগিয়ে তুলতে হবে। তারা সচেতন হলে কোনাে রকম অন্যায় কুমন্ত্রণা তাদের বশীভূত করতে পারবে না। সমাজে যতদিন অন্যায় অবিচার মাথা উঁচু করে থাকবে ততদিন যুব সমাজকে সুপথে আনা কষ্টকর। ধর্ম ও শিক্ষার আলাে ছড়িয়ে দিয়ে তাদের সামনে থেকে অন্ধকার দূর করতে হবে। রীতিমত শরীরচর্চা এবং নানারকম খেলাধুলার ব্যবস্থা করতে হবে। দ্রুত কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেকার সমস্যা দূর করতে হবে। তাছাড়া যারাই সমাজে অপরাধকর্মে লিপ্ত হয় তাদের জন্যে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। যুবকরাই দেশের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং জাতির কর্ণধার। তাদের মনে এ চেতনাবােধ জাগিয়ে তুলতে হবে। একইসঙ্গে তাদের কণ্ঠে তুলে দিতে হবে কবি সুকান্তের বাণী

“এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান, 
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্থূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ ,
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযােগ্য করে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

উপসংহার

অবক্ষয় একটি মারাত্মক ব্যাধি। বর্তমানে আমাদের যুব সমাজকে এ ব্যাধি গ্রাস করতে বসেছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে জাতির ভবিষ্যৎ অচিরেই তলিয়ে যাবে গভীর অন্ধকারে। কাজেই যে কোনাে মূল্যে অবক্ষয়ের হাত থেকে আমাদের তরুণসমাজকে রক্ষা করতে হবে। যুবসমাজকে অবক্ষয়ের কবল থেকে রক্ষা করতে পারলেই আমরা একটি সমৃদ্ধজাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারব। পথভ্রষ্ট যুবকরা আলাের পথে ফিরে আসুক, সমাজ থেকে দূর হােক সব অন্ধকার, মুছে যাক অবক্ষয়ের চিত্র, তারুণ্য শক্তির জয় হােক এটিই আমাদের প্রত্যাশা।


Rimon

This is RIMON Proud owner of this blog. An employee by profession but proud to introduce myself as a blogger. I like to write on the blog. Moreover, I've a lot of interest in web design. I want to see myself as a successful blogger and SEO expert.

মন্তব্য করুন

Related Articles

Back to top button