আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান অনুচ্ছেদ ৬ ৭ ৮ ৯ শ্রেণি
আধুনিক প্রযুক্তিবিজ্ঞান
প্রযুক্তিবিদ্যা বলতে আমরা বিভিন্ন শিল্পে বিজ্ঞানের নীতিগুলাের ব্যাবহারিক প্রয়ােগ-সংক্রান্ত বিদ্যাকে বুঝে থাকি। তাই স্বভাবতই বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রযুক্তিবিদ্যারও অগ্রগতি ঘটেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ও তার পর থেকে আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার যুগান্তকারী অগ্রগতির সূত্রপাত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হবার পরপরই আবিষ্কৃত হলাে ট্রানজিস্টার। ট্রানজিস্টার নির্ভর বেতার গ্রাহকযন্ত্র অল্প শক্তির ব্যাটারির সাহায্যেই চালানাে যায়। ফলে দেশের যেখানে বিদ্যুৎশক্তি পৌছেনি, সেসব দূরদূরান্তরের গ্রামাঞ্চলেও বেতার মারফত তথ্য, সংবাদ ও অন্যান্য অনুষ্ঠান পৌছানাে সম্ভব হয়েছে। বেতারের মতাে আর একটি ব্যাপক জনসংযােগের প্রযুক্তি মাধ্যম হলাে টেলিভিশন। বিশ শতকের ছয়-এর দশকের আগে টেলিভিশনের পালা ছিল সীমিতটেলিভিশনের ছবি দেশ থেকে দেশান্তরে পৌঁছতে পারতাে না। কিন্তু মহাকাশ সংক্রান্ত প্রযুক্তিবিদ্যার উন্নতির সাহায্যে মানুষ সেই বাধা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের সাহায্যে টেলিভিশনের ছবি মুহূর্তের মধ্যে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। মহাকাশ প্রযুক্তিবিদ্যার সাহায্যে যােগাযােগ ব্যবস্থারও প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়েছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক যােগাযােগ ব্যবস্থার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে হয়ে থাকে। মহাকাশ প্রযুক্তির সাহায্যে আবহাওয়াবিদরা এখন অনেক বেশি নির্ভরতার সঙ্গে আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে পারছেন। তারপর আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার কম্পিউটার। জটিল গণনার কাজ সহজে ও অল্প সময়ে এর দ্বারা সমাধান হয়। মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স প্রযুক্তিবিদ্যার বিস্ময়কর অগ্রগতির ফলে কম্পিউটার যন্ত্রের আকার ও মূল্য এখন আগের থেকে অবিশ্বাস্য রকম কমে গেছে। শিল্পের নানা ক্ষেত্রে কম্পিউটারের ব্যবহারে কেবল যে উৎপাদনের পরিমাণই বেড়েছে তাই নয়, উৎপন্ন সামগ্রীর গুণগত উৎকর্ষও বেড়েছে আগের চেয়ে অনেক গুণ বেশি। এই সবকিছুর মূলে রয়েছে ইলেকট্রনিক্স । বস্তুত বিজ্ঞানের এ শাখাটির প্রয়ােগ ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যা অনেক ক্ষেত্রেই অচল। কৃষিক্ষেত্রে উন্নত সার ও বীজ ব্যবহারের ফলে ফসলের ফলন অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বস্ত্রশিল্পে কৃত্রিম তন্তু সৃষ্টির ফলে মানুষ আজ আর কেবল প্রকৃতিজাত বস্তুর ওপর নির্ভরশীল নয়। কেননা, প্রযুক্তিবিদ্যার জাদুদণ্ডে সৃষ্ট কৃত্রিম সম্ভার আজ তার হাতে। এমনিভাবে প্রযুক্তি বিজ্ঞানের অবদান আজ মানবজীবনের সর্বক্ষেত্রে বিস্তার লাভ করেছে। আধুনিক প্রযুক্তি মানুষেরই মেধা এবং পরিশ্রমের দ্বারা সৃষ্ট। তাই মানুষেরই লক্ষ রাখা উচিত, যাতে সেই প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে কোনাে বিশেষ দেশ নয়, সামগ্রিকভাবে মানব সমাজের কল্যাণ সাধিত হয়ে গড়ে ওঠে মৈত্রভাব। আর তখনই প্রযুক্তিবিদ্যার সার্থকতা হয়ে ওঠবে ভাস্বর ও মহিমান্বিত।
এই রকম আরও তথ্য পেতে আমাদের ফেসবুক পেজে লাইক দিয়ে যুক্ত থাকুন। এর পাশাপাশি গুগল নিউজে আমাদের ফলো করুন।
