শিষ্টাচার অনুচ্ছেদ
বিষয়ঃ অনুচ্ছেদ
শ্রেণিঃ ৬ ৭ ৮ ৯ ১০
সুন্দর আচরণ বা ব্যবহারই হল শিষ্টাচার। সে আচরণ কথাবার্তায়, কাজকর্মে, চলনে-বলনে, রীতিনীতিতে সর্বোপরি জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। যাকে বলে আদব-কায়দা মেনে চলা ভদ্র ব্যবহার ও সৌজন্যবােধ দেখানাে তাই মূলত শিষ্টাচার। শিষ্টাচার হলাে মনের সৌন্দর্যের বাহ্য উপস্থাপনা। বস্তুত সত্যিকারের মানুষের পরিচয় তার সুন্দর, সংযত ও বিনয়ী ব্যবহারে। আভিধানিক অর্থে রুচিপূর্ণ ভদ্র ব্যবহারই শিষ্টাচার-সৌজন্য। শিষ্টাচার কথাটির মধ্যেই তার তাৎপর্য লুকায়িত। শিষ্টাচার শব্দটিকে ভাঙলে যে দুটি শব্দ পাওয়া যায় তা হল: শিষ্ট + আচার। এর অর্থ বিনীত, সংযত, শােভন। আচার-ব্যবহার। ভদ্রতা ও সুরুচিবােধের যৌক্তিক মিলনের নাম শিষ্টাচার।
আত্মীয়-অনাত্মীয়, পরিচিত-অপরিচিত সকলের সঙ্গে প্রীতিপূর্ণ, রুচিসম্মত ব্যবহারই শিষ্টাচার। দেহের সৌন্দর্য অলঙ্কার কিন্তু আত্মার সৌন্দর্য শিষ্টাচার। অলঙ্কার বাইরের সামগ্রী আর শিষ্টাচার অন্তরের। মানুষ যতদিন অরণ্যচারী ছিল, ততদিন সে শিষ্টাচার বা সৌজন্যবােধ প্রকাশের প্রয়োজনবোধ করে নি। যখন থেকে মানুষ সমাজবদ্ধ হল, তখন থেকে শিষ্টাচার ও ভদ্রতাবােধের প্রয়ােজন অনুভূত হল। শিষ্টাচার শুধু আমাদের ব্যক্তিজীবনের সৌন্দর্যই নয়, আমাদের সমাজ জীবনেরও গৌরবজনক আভরণ। শিষ্টাচারের গুণেই মানুষের সঙ্গে মানুষের যে-কোনাে সম্পর্ক রাখা সম্ভবপর হয়। বড় ও বয়স্কদের সম্মান করা, সকলকে আচরণে তুষ্ট করা, ঔদ্ধত্যকে পরিহার করা এবং সবার সঙ্গে প্রীতিময় সম্পর্ক গড়ে তােলাই তাে মানবিক বৈশিষ্ট্য। মার্জিত রুচি ও সুন্দর মনের পরিচয় দিতে হলে কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে আমাদের হওয়া উচিত নম্র ও বিনয়ী।
শিষ্টাচার ও সৌজন্য সামাজিক মানুষের এক দুর্লভ সম্পদ তার সৌন্দর্য, তার অলঙ্কার। এ তার দীর্ঘ জীবনসাধনার পরিণত ফল। তার সিদ্ধি বহু যত্নে আহূত এক দুর্লভ ঐশ্বর্য। একে আয়ত্ত করেই মানুষের গর্ব, তার অহঙ্কার, তার গৌরব। যে-মানুষ এই সম্পদের অধিকারী, সে-মানুষই তত ভদ্র ও বিনয়ী। যে সমাজ একে সাদরে গ্রহণ করেছে, সে-সমাজই সে-পরিমাণে সভ্য। তার লােকব্যবহারও তত মার্জিত, সদ্ভাবমূলক। একে নির্বাসন দিয়ে মানবসভ্যতার অগ্রগতি সম্ভব নয়। উন্নত সভ্যতা তাে এরই অবদানপুষ্ট। এই শিষ্টাচার ও সৌজন্য কোনাে অর্থ বা ঐশ্বর্য দিয়েই কেনা যায় না। পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে শিষ্টাচারের গুরুত্ব অপরিসীম। শিষ্টাচারের অভাবে মানুষে মানুষে, জাতিতে জাতিতে বিরােধ ও দ্বন্দ্বযুদ্ধ লেগেই থাকে। তাই আচার-ব্যবহারে যেমন শিষ্টতা বজায় রাখতে হবে, তেমনি রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং নেতৃত্ব প্রদানে শিষ্টতার পরিচয় দেয়া অপরিহার্য। সমাজের প্রতিটি পেশার মানুষ তার নিজ নিজ কর্মে শিষ্টতা বজায় রাখলে সমাজে সুশৃঙ্খল পরিবেশ বিরাজ করে। সামাজিক সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শিষ্টাচারের কোনাে বিকল্প নেই। যে জাতি যত বেশি সভ্য সে জাতি তত বেশি শিষ্টাচার। শিষ্টাচারহীন সমাজ ও জাতি ক্রমেই নিমজ্জিত হয় অন্ধকারে।
বিকল্প
শিষ্টাচার হলাে মানুষের এমন এক ধরনের মানবীয় গুণ যা মানব চরিত্রের উন্নয়ন ঘটায়। যেসব গুণাবলি মানব চরিত্রকে সুন্দর, আকর্ষণীয় ও গৌরবান্বিত করে তােলে তার মধ্যে শিষ্টাচার বিশেষ গুরুত্ববহ। স্বাভাবিক অর্থে ‘শিষ্ট’ কথাটির অর্থ সুশীল, ভদ্র বা বিনয়ী। অর্থাৎ মানুষ তার কথা-বার্তায়, চাল-চলনে, আচার-আচরণে যে সৌজন্য ও শালীনতার পরিচয় দিয়ে থাকে, তা-ই শিষ্টাচার বা আদব-কায়দা। শিষ্টাচার মানব চরিত্রের অলঙ্কার। সুন্দর আদব-কায়দা মানবজীবনের সম্পদ। জীবনকে যথার্থভাবে বিকশিত করা এবং যথার্থরূপে উপভােগ্য করার জন্য শিষ্টাচার অপরিহার্য। আচরণে যে জাতি যত বেশি সভ্য সে জাতি তত বেশি সুশৃঙ্খল ও উন্নত। কেবল পশুপাখির মতাে বেড়ে ওঠাই মানুষের লক্ষ্য নয়; বরং আত্মােন্নয়নের পাশাপাশি সমাজ, দেশ তথা জাতির উন্নয়নে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করার মধ্য দিয়েই মানবজীবন সার্থক হয়ে ওঠে। আর এর মাধ্যমে সুন্দর, সুশৃঙ্খল ও আদর্শ সমাজ বিনির্মাণ করা যায়। এ ছাড়া এটি মানব চরিত্রের মহৎ গুণাবলির বহিঃপ্রকাশ। শিষ্টাচারেই নিহিত রয়েছে মানবজীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি। ইংরেজিতে প্রবাদ রয়েছে- “The greatest ornament of an illustrious life is modesty and humanity” । সুতরাং শিষ্টাচারের মাঝেই মানবজীবনের সকল কল্যাণ নিহিত। এর মাধ্যমে সমাজের সকলের সাথে সৌহার্দপূর্ণ ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাই জীবনের সকল ক্ষেত্রে নিজেকে সকলের কাছে আকর্ষণীয় করে তুলতে এবং সমাজকে সুন্দর করার জন্য শিষ্টাচার চর্চার কোনাে বিকল্প নেই।
3 vag kora dilan na kano?