অনুচ্ছেদ “শীতকাল”
শীতকাল
শীর্ণ শুষ্ক প্রকৃতি কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ধরে রিক্ত মূর্তি। শুষ্ক হয়ে ওঠে আবহাওয়া, স্তব্ধ রুপল্লব, নিঝুম চারিধার। শূন্য মাঠের অনেক জমিতেই বিছিয়ে থাকে খড়। বাড়ির কাছাকাছি মাঠগুলাের মধ্যে কৃষকেরা বােরা ধানের বীজতলা করে। দেখতে দেখতে মাঠ সবুজ হয়ে ওঠে চৈতালি ফসলে। মাসকলাই, মটরশুটি, মুগ, রাই, সরিষা, গম, পিঁয়াজ, রসুন, ধনেপাতা, ছােলা আর রকমারি শাকসবজি। শীতের শুরুতেই গ্রামবাংলায় আরম্ভ হয় খেজুর গাছ কাটা, আখ মাড়াই। পৌষে পিঠাপুলির উৎসবে মুখর হয় গ্রাম বাংলা। পুলি, ভাপা, চিতই, পায়েস, পাকান, দুধকলি, রসে ভেজানাে পিঠা, পাটিসাপটা, নকশি পিঠা এবং আরও রকমারি পিঠা তৈরি হতে থাকে শীতকালে। অন্যদিকে কবিগান, জারি-সারি, পালাগান, নাটক, যাত্রা সবই জমজমাট হয়ে ওঠে শীতকালে। নানান জাতের ফুল ফোটে এ ঋতুতে। বাড়ির আঙিনাতেই ফুটে থাকে অসংখ্য রক্তগাঁদা, হলুদগাঁদা, সূর্যমুখী, গােলাপ, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, দোপাটি, কুন্দ ফুলসহ নানা রকম ফুল। শীতের দিনে শাক-সবজি আর তরকারিতে সয়লাব হয়ে যায় হাট-বাজার। শিম, বরবটি, ফুলকপি, মুলা, গাজর, টমেটো, কুমড়া বেগুন ছাড়াও পালংশাক, মূলাশাক, বাথুয়ার শাক, লালশাক ইত্যাদি খুব কম দামে পাওয়া যায় হাতের নাগালেই। তাছাড়া ফলের মধ্যে কমলা, কুল, পেঁপে, কলা এবং ডালিম পাওয়া যায় এই শীতে। শীতকালে রােগবালাই কম হয়। শীতকালে নানা জাতের পাখি ছুটে আসে এ দেশের নদী-নালা, বিল-ঝিল আর হাওরে। অতিথি পাখিদের মধ্যে দল বেঁধে আসে বিভিন্ন জাতের হাঁস, মরাল, নীল ডানা হাঁস, জোয়ারি পাখি, সবুজ খঞ্জন, সাদা সারস, ধূসর বটের পাখি, চখাচখি ছাড়াও থাকে নানান জাতের পাখি। শীত শেষে এরা ফিরে যায় আপন দেশে। শীতকালে গরিবদের অনেক কষ্ট হয়। গ্রামের চেয়ে শহরে শীত অনেক কম। শহরের গরিব লােকেরা কিছু সাহায্য সহযােগিতা পেলেও গ্রামের অসহায়দের দিকে তাকাবার লােক নেই বললেই চলে। শীত শেষ হতে না হতেই বসন্তের আগমনী বার্তা ধ্বনিত হয়। আসে বসন্ত ফুলবনে।
তরপ