ইসলাম ও জীবন
মুসলিম হয়ে হিন্দুদের পূজায় যাওয়া কি হারাম?
কিছুদিন আগে এক ভাই আমাকে অনুরোধ করেছিলেন হিন্দুদের পূজায় মুসলিম সম্প্রদায় অংশগ্রন করেন এটা নিয়ে একটি পোস্ট করার জন্য। প্রথম দিকে বিষয়টি এতোটা গুরুত্ব দেই নি। কিন্তু পরে অনুধাবন করতে পারলাম বিষয়টি সরাসরি ঈমানের সাথে সম্পর্কিত। মনে মনে ভাবলাম আজ যে ইসলাম আমরা পেয়েছি তার জন্য কত তাজা প্রাণ মাটিতে লুটেছে, কতো মরুভূমি রক্তে রঞ্জিত হয়েছে । নবীজি (সঃ) তো চাইলেই নিজের ধর্মকে নিজেই পালন করতে পারতেন? তবে কেন মক্কা মদিনা সিরিয়ার মতো মাইলকে মাইল হেঁটে ইসলামের বানী মানুষের কানে পৌঁছে দিতেন? কেনো জিহাদ করলেন? এই প্রশ্নের উত্তর তো আমাদের অজানা নয়। তাহলে কেন আমারা জেনে বুঝে ওই জায়গায় যাই যেখানে আল্লাহ্র সাথে শিরক করা হয়? এইবার মূল বিষয়ে আসি
আমাদের অনেক মুসলিম ভাই-বোনদের দেখা যায় যে হিন্দুদের বিভিন্ন পূজা এবং অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন! আমি নিজেও একটাসময় অংশগ্রহণ করেছিলাম। কিন্তু এইটা কি মুসলিমদের জন্য বৈধ? আপনি হয়তো বলবেন আমিতো দেখতে যাচ্ছি আর তেমন কিছু করছি না। যদি এটাই আমাদের উত্তর হয় তাহলে বলবো আপনি কি কোনো হিন্দু কে দেখেছেন মসজিদে গিয়ে দেখতে যে মুসলিমরা মসজিদে কি করে? কিভাবে নামাজ আদায় করে? নিশ্চয়ই না।
যদি কোনো হিন্দু ভাইকে প্রশ্ন করা হয় পূজা কি উৎসব অনুষ্ঠান নাকি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। তিনি অবশ্যই বলবেন ধর্মীয় অনুষ্ঠান। পূজার মধ্য দিয়ে তারা তাদের ঈশ্বরকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে।তাহলে মুসলিমদের কি মহান আল্লাহ কে খুঁজে পাওয়ার জন্য পদ্ধতির কি অভাব আছে যে, হিন্দুদের পূজায় গিয়ে ঈশ্বরকে খুঁজতে হবে? ইসলামে এমন কোনো মুহূর্ত নেই যে আপনি আল্লাহ কে খুঁজে পাবেন না। আপনি হাঁটছেন, মনে মনে আল্লাহ কে একবার স্মরণ করুন আল্লাহ আপনাকে ১০ বার স্মরণ করবেন। তাহলে কেন প্রাণহীন মূর্তির কাছে গিয়ে আপনি ঈশ্বরকে খুঁজে বেড়ান।
উমার ইবনে খাত্তাব (র:) (Omar) বলেছেন “তোমরা মুশরিকদের উপসনালয়ে তাদের উৎসবের দিনগুলোতে প্রবেশ করোনা। কারন সেই সময় তাদের উপর আল্লাহর গযব নাযিল হতে থাকে”।
মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
“তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৪৩)
“তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।” (সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত ৪৩)
এখানে স্পষ্ট করেই আল্লাহ বলেছেন তোমরা সালাত আদায় তাদের সাথে যারা আমার নিকট মাথা নত করে (সিজদাহ)। অথচ আমরা এমন জায়গায় গিয়ে ঈশ্বরকে খুঁজি যেখানে কিছু মূর্তির উপাসনা করা হয়।
এইবার সিজদাহ নিয়ে বলা যাক। এই সম্পর্কে অসংখ্য হাদিস রয়েছে। যেমনঃ
একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে সিজদা করতে চাই। মহানবী (সা.) বলেছেন, (আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সিজদা করা বৈধ নয়) আমি যদি কাউকে কারো উদ্দেশে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের বলতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে।’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৪৬৪)
একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ (স) এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে সিজদা করতে চাই। মহানবী (সা.) বলেছেন, (আল্লাহ ছাড়া কারো জন্য সিজদা করা বৈধ নয়) আমি যদি কাউকে কারো উদ্দেশে সিজদা করার নির্দেশ দিতাম, তাহলে স্ত্রীদের বলতাম তারা যেন তাদের স্বামীদের সিজদা করে।’ (সুনানে দারেমি, হাদিস : ১৪৬৪)
উল্লিখিত হাদিসে পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করা যাবে না।
পবিত্র কুরআনেও বলা হয়েছে –
‘…তোমরা সূর্যকে সিজদা কোরো না, চন্দ্রকেও নয়। সিজদা করো আল্লাহকে, যিনি এগুলো সৃষ্টি করেছেন..।’ (সুরা-৪১ : হা-মিম সিজদা, আয়াত : ৩৭)
তাহলে কেন আমরা মুসলিম হয়ে পূজায় যাই আর এটা উপভোগ করি কিছু মানুষ নিজ হাতে প্রাণহীন মূর্তি বানিয়ে তাকেই সিজদাহ করছে যার কিনা কথা বলতো দূরের কথা একটু নড়াচড়া করার ক্ষমতা নেই।
সাহাবীরা ঈমানের শক্তি নিয়ে জিহাদ করেছেন নিজের পরিবারের কথা না ভেবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। আর আমার সেই ঈমান নিয়ে পূজায় যাই। আমাদের ঈমানের শক্তি এতটাই কম যে পূজায় যাচ্ছি শুনে মনে আনন্দের উদগ্রীব হয়। শিরক দেখেও আমাদের আমাদের অন্তর আত্মা তুষ্ট হয়। চরম বিতৃষ্ণা ও হাহাকারের অনুভুতি আমাদের আসে না। আমরা কোন সম্প্রদায়ে বাস করছি? ইসলাম ভ্রান্তিত্বের ধর্ম। এই দোহাই দিয়ে পূজায় গেলে কি সমস্যা আছে? আমিতো আর অমুসলিম হয়ে যাচ্ছি না। এমন ধারণা আসতেই পারে। আসুন জেনে নেই আমাদের নবীজি (স) কি বলেছেন:
“যদি কেউ কোণ সম্প্রদায়ের অনুকরন করে ,তাহলে সে উক্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত বলে গন্য হবে” (আবু দাউদ, আস সুনান ৪/৪৪)
আমরা অনেক উৎসুক হয়ে বন্ধুদের সাথে পূজায় যাই। পূজার প্রসাদও খাই। যদি জানতে চাওয়া হয় বুক ফুলিয়ে বলে পূজায় গেছি তো কি হয়েছে। আমার তো আর ঈমান নষ্ট হয় নাই, আমিতো আর সিজাদও দেয় নাই ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন একটু ভেবে দেখুন, মূর্তিপূজা হচ্ছে আল্লাহর সাথে শির্ক করা। আর শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়, সবচেয়ে বড় অপরাধ। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহর সাথে শির্ক হচ্ছে সবচেয়ে বড় অন্যায়”। (সুরা লুকমানঃ ১৩)
আর শির্কের অপরাধ আল্লাহ্ কখনো ক্ষমা করবেন না। মহান আল্লাহ্ বলেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তাঁর সাথে অংশী স্থাপন করলে তাকে ক্ষমা করবেন না, কিন্তু এর চেয়ে ছোট পাপ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন, এবং যে কেউ আল্লাহর অংশী স্থির করে, সে মহাপাপে আবদ্ধ হয়েছে”। (সূরা নিসাঃ ৪৮)
আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে আমি তো আর শির্ক করছি না। শির্ক হয়তো করছে না কিন্তু নিজের অজান্তেই শির্ক করাকে সমর্থন করছেন। বিষয়টিকে উপভোগ করছেন। সবচেয়ে বড় অন্যায় আপনার সামনে হচ্ছে। অথচ নবীজি (স) বলেছেন:
“তোমাদের কেউ কোন গর্হিত/ অন্যায় কাজ হতে দেখলে সে যেন নিজের হাতে (শক্তি প্রয়োগে) তা সংশোধন করে দেয়, যদি তার সে ক্ষমতা না থাকে তবে যেন মুখ দ্বারা তা সংশোধন করে দেয়, আর যদি তাও না পারে তবে যেন সে ঐ কাজটিকে অন্তর থেকে ঘৃণা করবে। আর এটা হল ঈমানের নিম্নতম স্তর”। (সহিহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়, হাদিস নং ৭৮)
অথচ আপনি ঐ অন্যায়কে বাঁধা তো দেনই না, মনথেকেও ঘৃণা করেন না বরং ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে মনে মনে উপভোগ করেন। অন্তত মন থেকে ঘৃণা করলেও দুর্বলতম ঈমানদার হিসেবে আপনার ঈমান থাকত কিন্তু ঐ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করে তাদের অনুষ্ঠান মনে মনে উপভোগ করার পরেও কি আপনি দাবী করবেন যে- আপনার ঈমান ঠিক আছে? তাই হিন্দুদের পূজার উৎসবে কোন মুসলিমের যাওয়া অবশ্যই হারাম।
অনেক ভালো লাগলো।
রিমন ভাই আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। খুবই সুন্দর করে লিখেছেন। সাথে হাদিসের কথা।
অতীতে আমিও যেতাম। লিখাটি পরে উপকৃত হলাম।
ধারুন লিখছেন। আশা করি এইরকম লিখা আরও আমাদেরকে উপহার দিবেন। এম্মিনিতে আমি আপনার অনেক বড় একজন ফ্যান। আপনার লিখার মধ্যে যাদু আছে। অনেক ভালো লিখেন আপনি।
রিমন ভাই, অনেক দিন পর জোশ একটা লিখা পড়লাম। খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দিলেন। সবাই লিখাটি পড়ে উপকৃত হবে।